২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার জবাবে ইসরাইল গাজায় আগ্রাসন চালায়। নির্বিচার হামলা শুরু করে। এই ১৫-১৬ মাসে তাদের সেই হামলায় বিপুল সংখ্যক প্যালেস্টাইনি নিহত হয়েছেন। গোটা গাজা বলতে গেলে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। স্কুল ও হাসপাতাল কোনো কিছু বাদ দেয়নি ইসরায়েলিরা। এমনকি এই সময়টাতে প্যালেস্টাইনিদের কাছে ত্রাণও ঠিকমতো পৌঁছতে দেয়নি তারা।
অবশেষে মূলত যুক্তরাষ্ট্র কাতার মিশরসহ আরও কয়েকটি দেশের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির একটি চুক্তি হয়েছে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে। রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে ইসরাইল তা কার্যকর করে ঘোষণা দিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৬ সপ্তাহের জন্য কার্যকর হবে এই যুদ্ধবিরতি।
বহু কাক্সিক্ষত যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর ক্ষণে যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকা গাজায় ইসরায়েলি হামলার ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন করেছে। সে প্রতিবেদনে অনুযায়ী এই যুদ্ধে ৪৬ হাজারের বেশি প্যালেস্টাইনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ। সংখ্যাটি গাজার যুদ্ধ-পূর্ব জনসংখ্যার প্রায় ২%। অর্থাৎ, সেখানে প্রতি ৫০ জনে একজন করে মানুষ নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়। আহত হয়েছেন ১ লক্ষ ১০ হাজারের বেশি, যাদের এক চতুর্থাংশ চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। হয় অঙ্গ হারিয়েছেন বা দগ্ধ ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন। কারো কারো আঘাত মাথায়।
ইসরায়েল হামলা শুরু করার পর থেকে প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অর্থাৎ গাজার মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এখন তাবুতে অথবা তীব্র জনাকীর্ণ কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন তারা, সেখানে পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। খাবার পানির প্রচ- অভাব।
হামলার বিষয়ে ইসরাইল সেনাবাহিনী বারবারই বলেছে, তাদের এই ‘যুদ্ধ’ গাজাবাসীর বিরুদ্ধে নয় হামাসের বিরুদ্ধে। হামাসের হুমকির প্রেক্ষিতেই হামলা চালানো হচ্ছে। আর হামলা করার আগে বারবার বেসামরিক মানুষদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।
যুদ্ধের এই দীর্ঘ সময়ে বেঁচে থাকার জন্য প্যালেস্টাইনির একমাত্র ভরসা ছিল ত্রাণ সাহায্য। ইসরায়েলিরা সেই ত্রাণের ট্রাকগুলোকে আটকে দিতো। কৃষি উৎপাদন তো আগেই ধ্বংস করে দেয়। জাতিসংঘ জানায় ২০২৪ সালের নভেম্বরে গাজায় ত্রাণ প্রবাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায় এবং উত্তর গাজা আক্ষরিকভাবেই দুর্ভিক্ষাবস্থায় পৌঁছে যায়।
ইসরাইলের দাবি, তারা ত্রাণ সরবরাহে কোনো বাধা দেয়নি। বরং বলেছে, যে সংস্থাগুলো ত্রাণ দিচ্ছিল এটা তাদের ব্যর্থতা। একই সঙ্গে এর পেছনে হামাসের খাদ্য চুরিও দায়ী বলে অভিযোগ করেছে।
জাতিসংঘের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গাজা ভূখণ্ডের প্রতি দশটি বাড়ির মধ্যে নয়টিই ধ্বংস করে ফেলেছে ইসরায়েলিরা। স্কুল হাসপাতাল মসজিদ গোরস্থান দোকান অফিস সব কিছুর ওপর নির্বিচারে তারা বারবার বোমা হামলা করেছে। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তারা বলেছে হামলাগুলো শুধুই হামাস ‘জঙ্গি’দেরকে লক্ষ্য করে। হামাসের জঙ্গিরা এইসব ভবনে আশ্রয় নিয়েছে এবং বেসামরিক লোকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।
গার্ডিয়ানের সচিত্র প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, দক্ষিণের যে রাফাহ একসময় নিরাপদ শহর বলে বিবেচিত হতো তার বিশাল অংশ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
শরণার্থী শিবিরগুলো রেহাই তো পায়ইনি, এক জাবালিয়া শরণার্থী শিবির কে লক্ষ্য করেই তিনদফা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে গত বছর জুনে তোলা শরণার্থী শিবিরটির একটি ড্রোন ফুটেজে সংযোজন করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, গাজার উত্তরের অবস্থিত এই শরণার্থী শিবিরটি এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেটিকে চেনার উপায় নেই।
প্রতিবেদনে যুদ্ধের আগে ও পরে তোলা খান ইউনিসের শহরের আল দাহরা এলাকার একটি রাস্তার ছবি দেয়া হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে একসময় সারি সারি দালানের মাঝে প্রশস্ত রাস্তা, মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে প্রাণচঞ্চল, এখন সেখানে শুধুই ভবনের ধ্বংসাবশেষ। কোন গাড়ি নেই। এবড়োথেবড়ে ধুলোর রেখার ওপর শুধু কিছু মানুষের বিষন্ন হাঁটাচলা করতে দেখা যাচ্ছে।
অন্তত ৬৫৪টি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির আর নেই, বলা হচ্ছে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে। গাজার প্রত্যেকটা স্কুলের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলোর একটাও এখন আর চালু নেই। ধ্বংস হওয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গাজার ইসরা ইউনিভার্সিটিও রয়েছে। গত বছর বোমা মেরে এটিকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি নিরাপত্তাবাহিনী।
সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার জবাবে ইসরাইল গাজায় আগ্রাসন চালায়। নির্বিচার হামলা শুরু করে। এই ১৫-১৬ মাসে তাদের সেই হামলায় বিপুল সংখ্যক প্যালেস্টাইনি নিহত হয়েছেন। গোটা গাজা বলতে গেলে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। স্কুল ও হাসপাতাল কোনো কিছু বাদ দেয়নি ইসরায়েলিরা। এমনকি এই সময়টাতে প্যালেস্টাইনিদের কাছে ত্রাণও ঠিকমতো পৌঁছতে দেয়নি তারা।
অবশেষে মূলত যুক্তরাষ্ট্র কাতার মিশরসহ আরও কয়েকটি দেশের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির একটি চুক্তি হয়েছে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে। রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে ইসরাইল তা কার্যকর করে ঘোষণা দিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৬ সপ্তাহের জন্য কার্যকর হবে এই যুদ্ধবিরতি।
বহু কাক্সিক্ষত যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর ক্ষণে যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকা গাজায় ইসরায়েলি হামলার ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন করেছে। সে প্রতিবেদনে অনুযায়ী এই যুদ্ধে ৪৬ হাজারের বেশি প্যালেস্টাইনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ। সংখ্যাটি গাজার যুদ্ধ-পূর্ব জনসংখ্যার প্রায় ২%। অর্থাৎ, সেখানে প্রতি ৫০ জনে একজন করে মানুষ নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়। আহত হয়েছেন ১ লক্ষ ১০ হাজারের বেশি, যাদের এক চতুর্থাংশ চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। হয় অঙ্গ হারিয়েছেন বা দগ্ধ ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন। কারো কারো আঘাত মাথায়।
ইসরায়েল হামলা শুরু করার পর থেকে প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অর্থাৎ গাজার মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এখন তাবুতে অথবা তীব্র জনাকীর্ণ কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন তারা, সেখানে পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। খাবার পানির প্রচ- অভাব।
হামলার বিষয়ে ইসরাইল সেনাবাহিনী বারবারই বলেছে, তাদের এই ‘যুদ্ধ’ গাজাবাসীর বিরুদ্ধে নয় হামাসের বিরুদ্ধে। হামাসের হুমকির প্রেক্ষিতেই হামলা চালানো হচ্ছে। আর হামলা করার আগে বারবার বেসামরিক মানুষদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।
যুদ্ধের এই দীর্ঘ সময়ে বেঁচে থাকার জন্য প্যালেস্টাইনির একমাত্র ভরসা ছিল ত্রাণ সাহায্য। ইসরায়েলিরা সেই ত্রাণের ট্রাকগুলোকে আটকে দিতো। কৃষি উৎপাদন তো আগেই ধ্বংস করে দেয়। জাতিসংঘ জানায় ২০২৪ সালের নভেম্বরে গাজায় ত্রাণ প্রবাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায় এবং উত্তর গাজা আক্ষরিকভাবেই দুর্ভিক্ষাবস্থায় পৌঁছে যায়।
ইসরাইলের দাবি, তারা ত্রাণ সরবরাহে কোনো বাধা দেয়নি। বরং বলেছে, যে সংস্থাগুলো ত্রাণ দিচ্ছিল এটা তাদের ব্যর্থতা। একই সঙ্গে এর পেছনে হামাসের খাদ্য চুরিও দায়ী বলে অভিযোগ করেছে।
জাতিসংঘের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গাজা ভূখণ্ডের প্রতি দশটি বাড়ির মধ্যে নয়টিই ধ্বংস করে ফেলেছে ইসরায়েলিরা। স্কুল হাসপাতাল মসজিদ গোরস্থান দোকান অফিস সব কিছুর ওপর নির্বিচারে তারা বারবার বোমা হামলা করেছে। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তারা বলেছে হামলাগুলো শুধুই হামাস ‘জঙ্গি’দেরকে লক্ষ্য করে। হামাসের জঙ্গিরা এইসব ভবনে আশ্রয় নিয়েছে এবং বেসামরিক লোকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।
গার্ডিয়ানের সচিত্র প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, দক্ষিণের যে রাফাহ একসময় নিরাপদ শহর বলে বিবেচিত হতো তার বিশাল অংশ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
শরণার্থী শিবিরগুলো রেহাই তো পায়ইনি, এক জাবালিয়া শরণার্থী শিবির কে লক্ষ্য করেই তিনদফা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে গত বছর জুনে তোলা শরণার্থী শিবিরটির একটি ড্রোন ফুটেজে সংযোজন করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, গাজার উত্তরের অবস্থিত এই শরণার্থী শিবিরটি এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেটিকে চেনার উপায় নেই।
প্রতিবেদনে যুদ্ধের আগে ও পরে তোলা খান ইউনিসের শহরের আল দাহরা এলাকার একটি রাস্তার ছবি দেয়া হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে একসময় সারি সারি দালানের মাঝে প্রশস্ত রাস্তা, মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে প্রাণচঞ্চল, এখন সেখানে শুধুই ভবনের ধ্বংসাবশেষ। কোন গাড়ি নেই। এবড়োথেবড়ে ধুলোর রেখার ওপর শুধু কিছু মানুষের বিষন্ন হাঁটাচলা করতে দেখা যাচ্ছে।
অন্তত ৬৫৪টি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির আর নেই, বলা হচ্ছে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে। গাজার প্রত্যেকটা স্কুলের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলোর একটাও এখন আর চালু নেই। ধ্বংস হওয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গাজার ইসরা ইউনিভার্সিটিও রয়েছে। গত বছর বোমা মেরে এটিকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি নিরাপত্তাবাহিনী।