alt

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতিতে বদল

ইউরোপের ক্ষুব্ধ নেতারা কীভাবে সাড়া দিচ্ছেন

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে প্রতিপক্ষ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটা সমঝোতায় উপনীত হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে আটলান্টিক অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছে তাঁর প্রশাসন। ট্রাম্পের এমন সব পদক্ষেপ ইউরোপের নেতাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। মঙ্গলবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের নেতৃত্বে রাশিয়ার এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের আলাপ ও ইউরোপীয় মিত্রদের ছাড়াই তাঁর শান্তি আলোচনায় বসার আগ্রহে শুধু যে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ জন্ম নিয়েছে তা নয়, উদ্বিগ্ন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, কিয়েভকে যুক্ত না করে কোনো চুক্তি করা হলে তা ইউক্রেন মেনে নেবে না। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এটি এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হলো, যখন গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাপ করেন। আলাপে তিন বছরের ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ইউরোপীয় মিত্রদের ছাড়াই শান্তি আলোচনায় বসতে সম্মত হন তাঁরা। ট্রাম্প এ–ও বলেছেন, তিনি সৌদি আরবে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন।

পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের এ আলাপ ও ইউরোপীয় মিত্রদের ছাড়াই তাঁর শান্তি আলোচনায় বসার আগ্রহে শুধু যে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ জন্ম নিয়েছে তা নয়, উদ্বিগ্ন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, কিয়েভকে যুক্ত না করে কোনো চুক্তি করা হলে তা ইউক্রেন মেনে নেবে না। সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠিত মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে ইউক্রেন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয় ইউরোপকে নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে অবশ্যই ইউরোপের জন্য আসন থাকতে হবে।’

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি কী এবং নতুন বাস্তবতায় কীভাবে সাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন ইউরোপের নেতারা?ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে ইউক্রেন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয় ইউরোপকে নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে অবশ্যই ইউরোপের জন্য আসন থাকতে হবে। রিয়াদে লাভরভের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে মার্কো রুবিও ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।

ওয়াশিংটন–মস্কোর চিড় ধরা সম্পর্ক মেরামতের লক্ষ্য ছাড়াও ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে একটি সম্ভাব্য বৈঠকের প্রস্তুতির ক্ষেত্র তৈরি করেছে রিয়াদের বৈঠক। এ প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় প্রাথমিকভাবে রুশ–মার্কিন সম্পর্কের জটিলতা কাটানোর ওপর মনোযোগ দেওয়া হবে। মস্কো থেকে আল–জাজিরার সংবাদদাতা ইয়ুলিয়া শাপোভালোভা বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন, যা একেবারে তলানিতে পৌঁছেছে, তা–ই এ বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে।’ সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করা জেলেনস্কি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বৈঠকে ইউক্রেন নিয়ে গ্রহণ করা কোনো সিদ্ধান্ত মানবেন না তিনি।

এ সংক্রান্ত আলোচনাগুলোয় ইউরোপ ও ইউক্রেনকে বাদ দেওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারাও। নিজেরা আলোচনার অংশ হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন তাঁরা।

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বুধবার পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের একপক্ষীয় আলাপ–আলোচনার পর জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, ‘বেঁধে দেওয়া কোনো শান্তি (শান্তি উদ্যোগ) কখনোই আমাদের সমর্থন পাবে না।’ পরে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলোচনায় জেলেনস্কি অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।’ তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। ইউক্রেনবিষয়ক মার্কিন দূত কিথ কেলগও এই বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন যে ইউক্রেনের ওপর কোনো চুক্তি চাপিয়ে দেওয়া হবে না।

প্যারিসে ইউরোপের নেতাদের নিয়ে এক বৈঠক আয়োজনের পরদিন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘ইউক্রেনে আমরা জোরালো ও টেকসই শান্তি চাই। এটি অর্জনে রাশিয়াকে অবশ্যই হামলা বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইউক্রেনবাসীর জন্য শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তাও অবশ্যই থাকতে হবে।’ তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত ইউক্রেন নীতি ট্রাম্প প্রশাসনের বদলে ফেলা ও ১৯৪৯ সাল থেকে চলে আসা ট্রান্স–আটলান্টিক জোটের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন আনার পর ইউরোপের নেতারা প্রতিক্রিয়া দেখাতে হিমশিম খাচ্

টিমোথি অ্যাশ চাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের একজন সহযোগী ফেলো। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, ইউরোপের নেতারা এ জন্য উদ্বিগ্ন যে ইউক্রেন বা ইউরোপ—কাউকেই রিয়াদ বৈঠকে ডাকা হয়নি। তাঁদের ধারণা, ইউক্রেনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন ট্রাম্প। গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বার্তায়ও একই রকম ফলাফল আসার আশঙ্কা তাঁদের।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ট্রাম্প ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ে তাঁর এক পরিকল্পনায় বলেন, এ উপত্যকার বাসিন্দাদের অন্য দেশে চলে যেতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র এ ভূখন্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এটিকে মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রসৈকতে রূপ দেবে। তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত ইউক্রেন নীতি ট্রাম্প প্রশাসনের বদলে ফেলা ও ১৯৪৯ সাল থেকে চলে আসা ট্রান্স–আটলান্টিক জোটের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন আনার পর ইউরোপের নেতারা প্রতিক্রিয়া দেখাতে হিমশিম খাচ্ছেন। রোববার মার্কিন দূত কেলগ ঘোষণা দেন, ইউক্রেন নিয়ে শান্তি আলোচনার টেবিলে ইউরোপকে ডাকা হবে না। এর আগে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ অযৌক্তিক। রাশিয়ার সঙ্গে কোনো চুক্তি হলে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা পাঠানোর সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন তিনি। ইতিমধ্যে ট্রাম্পও বলেছেন, ন্যাটোতে ইউরোপের ব্যয় বাড়ানো উচিত।

ইউরোপের নেতারা এ জন্য উদ্বিগ্ন যে ইউক্রেন বা ইউরোপ—কাউকেই রিয়াদ বৈঠকে ডাকা হয়নি। তাঁদের ধারণা, ইউক্রেনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন ট্রাম্প। গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বার্তাতেও একই রকম ফলাফল আসার আশঙ্কা তাঁদের। ট্রাম্প ও তাঁর শীর্ষ সহযোগীদের কাছ থেকে এ ধরনের বার্তা পেয়ে সোমবার প্যারিসে সমবেত হন ইউরোপের নেতারা। লক্ষ্য ছিল, ট্রাম্পের উদ্যোগে নিজেদের সাড়া কী হবে, তা ঠিক করা। মাখোঁর সঙ্গে এ বৈঠকে যোগ দেন জার্মানি, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, ইতালি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের নেতারা। ছিলেন ন্যাটো ও ইইউর নেতারাও।

চাথাম হাউসের অ্যাশ বলেন, ইউরোপ এখন বুঝতে শুরু করেছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছে আস্থায় রাখার মতো অংশীদার নয়। ইউরোপের নেতাদের পাশ কাটিয়ে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের চালানো আলাপ–আলোচনাকে জোটের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের (যুক্তরাষ্ট্র) বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবেও দেখছেন কেউ কেউ। এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার এক্সে পোস্ট করা বার্তায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, ‘আমাদের ইউরোপের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরালো করা দরকার।’

ছবি

পেন্টাগনে ট্রাম্পের ঝাঁকুনি, শীর্ষ এক জেনারেল ও নৌপ্রধান বরখাস্ত

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী প্রধানকে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প

ছবি

জেলেনস্কি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নয়, বললেন ট্রাম্প

৫০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা সিআইএর

ছবি

সাগরের তলদেশে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট ক্যাবল স্থাপন করছে মেটা

ছবি

মায়ানমারে আরেকটি জান্তা ঘাঁটির পতন, অন্যটি দখলে তীব্র লড়াই

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত ৫০ শিশুকে আশ্রয় দেবে কোস্টারিকা

ছবি

বাস বিস্ফোরণ: পশ্চিম তীরে সেনা অভিযানের নির্দেশ নেতানিয়াহুর

ছবি

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ খুব বেশি দূরে নয় : ট্রাম্প

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে সতর্ক করলেন ট্রাম্প

ছবি

তুতানখামুনের পর প্রথমবারের মতো মিসরে ফারাওয়ের সমাধি আবিষ্কার

ছবি

দিল্লি সরকারের নেতৃত্বে ফের নারী মুখ্যমন্ত্রী

বার্ড ফ্লু : যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ হাজার টন ডিম পাঠাচ্ছে তুরস্ক

গাজায় ১১ শতাধিক মসজিদ ধ্বংস করেছে ইসরায়েল

ছবি

জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ বললেন ট্রাম্প, তীব্র দ্বন্দ্বে দুই নেতা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ হাজার টন ডিম রপ্তানি করছে তুরস্ক

ছবি

চলতি বছরেই যুদ্ধের অবসান চান জেলেনস্কি

ছবি

ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয় : মাহমুদ আব্বাস

ছবি

সীমান্তের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক অভিযান, ৩০ জঙ্গি নিহত

ছবি

মাস শেষের আগেই পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা: ট্রাম্প

ছবি

ঢাকার বাতাস আজ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

ছবি

ইউক্রেনে ন্যাটো সেনাদের মেনে নেবে না রাশিয়া : ল্যাভরভ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সরাসরি বৈঠক: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা শুরু

ছবি

কানাডায় ৮০ আরোহী নিয়ে অবতরণের সময় উল্টে গেল বিমান

ইউক্রেনে শান্তি রক্ষায় সেনা পাঠাতে প্রস্তুত যুক্তরাজ্য

আরও শতাধিক অবৈধ ভারতীয়কে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল বৃষ্টি-বন্যায় নিহত ৯, বিদ্যুৎহীন ৪ লাখ মানুষ

মস্কোর প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নমনীয় মনোভাবে দিশাহারা নেটো

ছবি

গাজায় ধ্বংসস্তূপে প্রতিদিনই মিলছে লাশ, বাড়ছে নিহতের সংখ্যা

ছবি

ইউক্রেনে তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ার ড্রোন হামলা, শীতে বিপর্যস্ত মানুষ

ছবি

বিশ্বের প্রথম সমকামী ইমাম মুহসীন হেনড্রিক্সকে দক্ষিণ আফ্রিকায় গুলি করে হত্যা

ছবি

মস্কোর প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নমনীয় মনোভাবে দিশাহারা ন্যাটো

ছবি

গাজায় ধ্বংসস্তূপে প্রতিদিনই মিলছে লাশ, বাড়ছে নিহতের সংখ্যা

গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরও ২৫ প্যালেস্টাইনির লাশ উদ্ধার

ইউক্রেন নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছেন ইউরোপীয় নেতারা

যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি, ইরানি উড়োজাহাজ নামতে দিল না লেবানন

tab

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতিতে বদল

ইউরোপের ক্ষুব্ধ নেতারা কীভাবে সাড়া দিচ্ছেন

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে প্রতিপক্ষ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটা সমঝোতায় উপনীত হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে আটলান্টিক অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছে তাঁর প্রশাসন। ট্রাম্পের এমন সব পদক্ষেপ ইউরোপের নেতাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। মঙ্গলবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের নেতৃত্বে রাশিয়ার এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের আলাপ ও ইউরোপীয় মিত্রদের ছাড়াই তাঁর শান্তি আলোচনায় বসার আগ্রহে শুধু যে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ জন্ম নিয়েছে তা নয়, উদ্বিগ্ন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, কিয়েভকে যুক্ত না করে কোনো চুক্তি করা হলে তা ইউক্রেন মেনে নেবে না। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এটি এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হলো, যখন গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাপ করেন। আলাপে তিন বছরের ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ইউরোপীয় মিত্রদের ছাড়াই শান্তি আলোচনায় বসতে সম্মত হন তাঁরা। ট্রাম্প এ–ও বলেছেন, তিনি সৌদি আরবে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন।

পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের এ আলাপ ও ইউরোপীয় মিত্রদের ছাড়াই তাঁর শান্তি আলোচনায় বসার আগ্রহে শুধু যে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ জন্ম নিয়েছে তা নয়, উদ্বিগ্ন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, কিয়েভকে যুক্ত না করে কোনো চুক্তি করা হলে তা ইউক্রেন মেনে নেবে না। সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠিত মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে ইউক্রেন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয় ইউরোপকে নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে অবশ্যই ইউরোপের জন্য আসন থাকতে হবে।’

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি কী এবং নতুন বাস্তবতায় কীভাবে সাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন ইউরোপের নেতারা?ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে ইউক্রেন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয় ইউরোপকে নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে অবশ্যই ইউরোপের জন্য আসন থাকতে হবে। রিয়াদে লাভরভের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে মার্কো রুবিও ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।

ওয়াশিংটন–মস্কোর চিড় ধরা সম্পর্ক মেরামতের লক্ষ্য ছাড়াও ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে একটি সম্ভাব্য বৈঠকের প্রস্তুতির ক্ষেত্র তৈরি করেছে রিয়াদের বৈঠক। এ প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় প্রাথমিকভাবে রুশ–মার্কিন সম্পর্কের জটিলতা কাটানোর ওপর মনোযোগ দেওয়া হবে। মস্কো থেকে আল–জাজিরার সংবাদদাতা ইয়ুলিয়া শাপোভালোভা বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন, যা একেবারে তলানিতে পৌঁছেছে, তা–ই এ বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে।’ সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করা জেলেনস্কি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বৈঠকে ইউক্রেন নিয়ে গ্রহণ করা কোনো সিদ্ধান্ত মানবেন না তিনি।

এ সংক্রান্ত আলোচনাগুলোয় ইউরোপ ও ইউক্রেনকে বাদ দেওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারাও। নিজেরা আলোচনার অংশ হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন তাঁরা।

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বুধবার পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের একপক্ষীয় আলাপ–আলোচনার পর জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, ‘বেঁধে দেওয়া কোনো শান্তি (শান্তি উদ্যোগ) কখনোই আমাদের সমর্থন পাবে না।’ পরে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলোচনায় জেলেনস্কি অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।’ তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। ইউক্রেনবিষয়ক মার্কিন দূত কিথ কেলগও এই বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন যে ইউক্রেনের ওপর কোনো চুক্তি চাপিয়ে দেওয়া হবে না।

প্যারিসে ইউরোপের নেতাদের নিয়ে এক বৈঠক আয়োজনের পরদিন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘ইউক্রেনে আমরা জোরালো ও টেকসই শান্তি চাই। এটি অর্জনে রাশিয়াকে অবশ্যই হামলা বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইউক্রেনবাসীর জন্য শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তাও অবশ্যই থাকতে হবে।’ তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত ইউক্রেন নীতি ট্রাম্প প্রশাসনের বদলে ফেলা ও ১৯৪৯ সাল থেকে চলে আসা ট্রান্স–আটলান্টিক জোটের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন আনার পর ইউরোপের নেতারা প্রতিক্রিয়া দেখাতে হিমশিম খাচ্

টিমোথি অ্যাশ চাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের একজন সহযোগী ফেলো। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, ইউরোপের নেতারা এ জন্য উদ্বিগ্ন যে ইউক্রেন বা ইউরোপ—কাউকেই রিয়াদ বৈঠকে ডাকা হয়নি। তাঁদের ধারণা, ইউক্রেনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন ট্রাম্প। গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বার্তায়ও একই রকম ফলাফল আসার আশঙ্কা তাঁদের।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ট্রাম্প ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ে তাঁর এক পরিকল্পনায় বলেন, এ উপত্যকার বাসিন্দাদের অন্য দেশে চলে যেতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র এ ভূখন্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এটিকে মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রসৈকতে রূপ দেবে। তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত ইউক্রেন নীতি ট্রাম্প প্রশাসনের বদলে ফেলা ও ১৯৪৯ সাল থেকে চলে আসা ট্রান্স–আটলান্টিক জোটের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন আনার পর ইউরোপের নেতারা প্রতিক্রিয়া দেখাতে হিমশিম খাচ্ছেন। রোববার মার্কিন দূত কেলগ ঘোষণা দেন, ইউক্রেন নিয়ে শান্তি আলোচনার টেবিলে ইউরোপকে ডাকা হবে না। এর আগে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ অযৌক্তিক। রাশিয়ার সঙ্গে কোনো চুক্তি হলে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা পাঠানোর সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন তিনি। ইতিমধ্যে ট্রাম্পও বলেছেন, ন্যাটোতে ইউরোপের ব্যয় বাড়ানো উচিত।

ইউরোপের নেতারা এ জন্য উদ্বিগ্ন যে ইউক্রেন বা ইউরোপ—কাউকেই রিয়াদ বৈঠকে ডাকা হয়নি। তাঁদের ধারণা, ইউক্রেনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন ট্রাম্প। গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বার্তাতেও একই রকম ফলাফল আসার আশঙ্কা তাঁদের। ট্রাম্প ও তাঁর শীর্ষ সহযোগীদের কাছ থেকে এ ধরনের বার্তা পেয়ে সোমবার প্যারিসে সমবেত হন ইউরোপের নেতারা। লক্ষ্য ছিল, ট্রাম্পের উদ্যোগে নিজেদের সাড়া কী হবে, তা ঠিক করা। মাখোঁর সঙ্গে এ বৈঠকে যোগ দেন জার্মানি, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, ইতালি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের নেতারা। ছিলেন ন্যাটো ও ইইউর নেতারাও।

চাথাম হাউসের অ্যাশ বলেন, ইউরোপ এখন বুঝতে শুরু করেছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছে আস্থায় রাখার মতো অংশীদার নয়। ইউরোপের নেতাদের পাশ কাটিয়ে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের চালানো আলাপ–আলোচনাকে জোটের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের (যুক্তরাষ্ট্র) বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবেও দেখছেন কেউ কেউ। এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার এক্সে পোস্ট করা বার্তায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, ‘আমাদের ইউরোপের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরালো করা দরকার।’

back to top