alt

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

এআই এর নৈতিক ব্যবহার সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) নিরাপদ, বিশ্বস্ত এবং নৈতিক ব্যবহার সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) এবং এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) এর সহযোগিতায় একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত ১০ জুলাই ঢাকার আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি অডিটরিয়ামে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী, শিক্ষাবিদ, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন তাদের মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য উদ্ভাবনী সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে কাজ করছে। ইউনেস্কো এবং ইউএনডিপি’সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে, বাংলাদেশ সরকার এআই সংক্রান্ত সক্ষমতা বৃদ্ধি, নীতি কাঠামোর উন্নয়ন ও তার প্রসার, এবং এর নিরাপদ-বিশ্বস্ত-নৈতিক ব্যবহার সম্পর্ক অবগতির জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত হয়ে এটুআই বিভিন্ন সেক্টরে নীতিনির্ধারণ এবং এআই-সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছে।

উদ্বোধনী অধিবেশনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এআই প্রযুক্তির রূপান্তরের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য নৈতিক চ্যালেঞ্জের বিষয় তুলে ধরেন। তিনি প্রযুক্তিগত সমাধান, সময়োপযোগী নীতি কাঠামো, নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এআই প্রযুক্তি যেন আমাদের সমাজে প্রযুক্তি বৈষম্য বৃদ্ধি না করে, বরং এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বিভাজন কমিয়ে আনার পাশাপাশি সমাজের সকলের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্য আইসিটি বিভাগের সচিব মোঃ শামসুল আরেফিন বলেন, আমরা সকলের সুবিধার জন্য নৈতিক এআই-এর রূপান্তরকারী শক্তিকে কাজে লাগাতে চাই। আমরা চাই এমন একটি নতুন ভবিষ্যত তৈরি করতে, যেখানে এআই প্রযুক্তি আমাদের সমাজে নৈতিকভাবে অবদান রেখে একটি টেকসই স্মার্ট সমাজ কাঠামো গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মোঃ মাহমুদুল হোসেন খান বলেন, এআই-এর সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে আমাদের করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এখন আমাদের সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কার্যকর ও টেকসই কর্মকৌশল প্রণয়নে এআই অভিযোজনের সমস্যা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও এজেন্সি টু ইনোভেট-এর প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রশীদ ভূঞা তাঁর বক্তব্যে এআই নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তুতির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা ২০১৮ সাল থেকে এআই নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম, এর ফলে ২০১৯ সালে ‘এআই ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ২০১৯’ তৈরি হয়। এখন আমরা এআই নীতিমালা এবং এআই আইনে নৈতিকতার বিষয়টি সংযুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করছি।’

বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউনেস্কোর এআই রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট মেথডলজির মতো উদ্যোগগুলোকে সমর্থন করে।

এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি এআই প্রস্তুতির বিভিন্ন ধাপের মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে আইন, সামাজিক সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত বিবেচনা করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

ঢাকায় ইউনেস্কো অফিসের প্রধান মিস হুহুয়া ফ্যান ওআইসি বলেন, ‘আমাদের আজকের সংলাপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করা হয়েছে। এই আলোচনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে র‍্যাম কান্ট্রি রিপোর্ট ও এর নীতিগত সুপারিশ তৈরি করার সুযোগ তৈরি করবে বলে আশা করছি।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের ডেপুটি আবাসিক প্রতিনিধি মিস সোনালী দয়ারত্নে বলেন, সব দেশই এআই দ্বারা প্রভাবিত, এবং উদীয়মান অর্থনীতির বৈশ্বিক এআই রেসে একটি কণ্ঠস্বর প্রয়োজন। সেই আওয়াজ দিয়ে আমরা বাংলাদেশের ক্ষমতায়ন করতে চাই।

ইউনেস্কোর সামাজিক ও মানব বিজ্ঞানের সহকারী মহাপরিচালক মিস গ্যাব্রিয়েলা রামোস বলেন, ইউনেস্কোতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত কথোপকথনকে কেবল একটি প্রযুক্তিগত হিসেবে না দেখে একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। এই প্রযুক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা কোন উদ্দেশ্য নয় বরং এর যথাযথ পরিচালনার মাধ্যমে মানুষের লক্ষ্য পূরণ করে সামগ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করাই মূল লক্ষ্য।

মতবিনিময় সভায় শিক্ষা, পরিবহন, গার্মেন্টস, কৃষি এবং বাণিজ্যসহ সকল সেক্টরে এআই কৌশল, নীতি প্রণয়ন ও প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়। এইসব সেক্টরে সুনির্দিষ্টি এআই কৌশল মানা না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। একই সাথে কৌশল ও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক এআই নীতি কাঠামোর সাথে সমন্বয়ের প্রয়োজনীতার বিষয় উল্লেখ করেন বক্তারা।

প্যানেল আলোচনা এবং ব্রেকআউট গ্রুপ সেশনের মাধ্যমে নিরাপদ এবং বিশ্বস্ত এআই সম্পর্কিত ধারণা, এর নৈতিক ব্যবহার এবং এআই প্রযুক্তির সামাজিক প্রভাবের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে এআই টেকনোলজির গ্লোবাল গভর্নেন্সের উপর একটি প্যানেল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ইউনেস্কো সদর দফতরের সেকশন ফর বায়োইথিকস অ্যান্ড দ্য এথিক্স অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি-এর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট জেমস রাইট এবং ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের এডুকেশন প্রোগ্রাম সেক্টরের প্রধান হুহুয়া ফ্যান ।

আলোচনাটি পরিচালনা করেন ইউএনডিপির সিনিয়র গভর্নেন্স স্পেশালিস্ট শীলা হক। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন মোঃ আফজাল হোসেন সারওয়ার, হেড অব ফিউচার অব এডুকেশন, এটুআই; ড. জুলকারিন জাহাঙ্গীর, রিসার্চ স্পেশালিস্ট, এটুআই।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিশাস্ত্র সম্পর্কিত ইউনেস্কোর বৈশ্বিক সুপারিশের প্রাসঙ্গিকতা এবং গুরুত্ব মাথায় রেখে বিভিন্ন সেক্টরে এইআই ব্যবহারের এর নৈতিক প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।

মোঃ মামুনুর রশীদ ভূঞা, জনাব রুমানা শারমিন এবং ইউনসং কিমের নেতৃত্বে গ্রুপ প্রেজেন্টেশন এবং এইআই ব্যবহারে বাংলাদেশের প্রস্তুতি বিষয়ক একটি মূল্যায়ন অধিবেশনের মাধ্যমে মতবিনিময় সভা সম্পন্ন হয়।

‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিশাস্ত্র সম্পর্কিত সুপারিশ’ ২০২১ সালের নভেম্বরে ইউনেস্কোর ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় যা প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক ব্যবহার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণ।

এছাড়া অনুষ্ঠানে ডঃ ফারিগ ইউসুফ সাদেক , ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর সহযোগী অধ্যাপক, এআই প্রযুক্তির মৌলিক ধারণা এবং তাদের সম্ভাব্য ঝুঁকির নানা দিক উপস্থাপন করেন। সেই সাথে এআই উন্নয়নে নৈতিক মাত্রা বিবেচনা করার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন ইউনেস্কো দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক অফিসের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ইউনসং কিম।

ছবি

আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড-এ বাংলাদেশের স্বর্ণপদক জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা

ছবি

দেশে এআই ফিচারের নতুন স্মার্টফোন অপো রেনো১২ এফ ৫জি

ছবি

চীন সফরে ‘উইমেন ইন টেক’ এর তিন বিজয়ী

ছবি

ইউআইটিএস-এ নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের অ্যাক্টিভেশন প্রোগ্রাম

ছবি

মানুষ নয়, আওয়ামী লীগের পক্ষে ফেসবুকে মন্তব্য করেছিল ‘বট’ : গবেষনা প্রতিবেদন

ছবি

নতুন এআই ক্যামেরা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে ইনফিনিক্স

ছবি

কর্মজীবনে মানুষের চেয়ে ৪৪ শতাংশ এগিয়ে এআই

ছবি

বাজারে নতুন স্মার্টফোন রিয়েলমি সি৬১

ই-ক্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির ৯ সদস্যের পদত্যাগ

ছবি

সাইবার জগতের নতুন হুমকির তথ্য দিয়েছে ক্যাসপারস্কি

ছবি

ইনফিনিক্সের এনএফসি প্রযুক্তিতে যেকোন অ্যাঙ্গেল থেকে কার্ড রিড এর সুবিধা

ছবি

র‌্যানসমওয়্যার ও সাইবার-স্যাবোটাজ হামলার আশংকা বাড়ছে: ক্যাসপারস্কি

ছবি

বুয়েট গ্র্র্যাজুয়েটস ক্লাবে লাফার্জ হোলসিমের সেমিনার

ছবি

রিবুট স্পাইরালের প্রভাবে ৮৫ লাখেরও বেশি উইন্ডোজ অচল

ছবি

নগদের ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল প্রক্রিয়াধীন

ছবি

৩২০ ওয়াট সুুপারসনিক প্রযুক্তি নিয়ে হাজির রিয়েলমি

ছবি

ডিজিটালি সেলস ট্র্যাকিং ও টিম ম্যানেজমেন্টের সুবিধা নিয়ে এলো কোথায় অ্যাপ

ইন্টারনেট বন্ধ হয়েছিল পলক ও এনটিএমসি’র নির্দেশনায়

ছবি

হিয়ারিং এইড কি এবং কীভাবে কাজ করে

২ ঘণ্টা পর চালু ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট

২ ঘণ্টা পর চালু ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট

ছবি

ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম বন্ধের নির্দেশ

ছবি

মোবাইল নেটওয়ার্কে আবার বন্ধ ফেসবুক-টেলিগ্রাম

গত ১৩ দিনে ই-কমার্স খাতে প্রায় ১৭শ কোটি টাকার ক্ষতি: ই-ক্যাব

ছবি

গণতন্ত্র সুসংহত নয়, এমন দেশ ইন্টারনেট বন্ধ রাখে

ছবি

৫ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট প্যাকেজ কখন, কারা পাবে

ছবি

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ইন্টারনেট না থাকার প্রভাব

ছবি

বেসিস আমেরিকা ডেস্ক চালু

ছবি

বাংলাদেশে এআই চালিত আইইএলটিএস প্রস্তুতির সহায়ক প্ল্যাটফর্ম চালু

ছবি

বিটিআরসিতে দুই দিনব্যাপী আইক্যান আউটরিচ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত

ছবি

বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট আগামী ২৭-২৮ জুলাই অনুষ্টিত হবে

ছবি

অনলাইন কনটেন্টে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিচ্ছে ক্যাসপারস্কি সেফ কিডস

ছবি

২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭২ লাখ ভিডিও সরিয়েছে টিকটক

ছবি

বাজারে ১৩ জেনারেশনের ডেল ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ

ছবি

প্রযুক্তি ব্যবহারে তরুণ প্রজন্মের উৎসাহের বড় উদাহরণ দয়াল চন্দ্র বর্মন

ছবি

মিরপুর ১০-এ ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের নতুন শাখা

tab

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

এআই এর নৈতিক ব্যবহার সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) নিরাপদ, বিশ্বস্ত এবং নৈতিক ব্যবহার সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) এবং এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) এর সহযোগিতায় একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত ১০ জুলাই ঢাকার আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি অডিটরিয়ামে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী, শিক্ষাবিদ, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন তাদের মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য উদ্ভাবনী সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে কাজ করছে। ইউনেস্কো এবং ইউএনডিপি’সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে, বাংলাদেশ সরকার এআই সংক্রান্ত সক্ষমতা বৃদ্ধি, নীতি কাঠামোর উন্নয়ন ও তার প্রসার, এবং এর নিরাপদ-বিশ্বস্ত-নৈতিক ব্যবহার সম্পর্ক অবগতির জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত হয়ে এটুআই বিভিন্ন সেক্টরে নীতিনির্ধারণ এবং এআই-সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছে।

উদ্বোধনী অধিবেশনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এআই প্রযুক্তির রূপান্তরের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য নৈতিক চ্যালেঞ্জের বিষয় তুলে ধরেন। তিনি প্রযুক্তিগত সমাধান, সময়োপযোগী নীতি কাঠামো, নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এআই প্রযুক্তি যেন আমাদের সমাজে প্রযুক্তি বৈষম্য বৃদ্ধি না করে, বরং এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বিভাজন কমিয়ে আনার পাশাপাশি সমাজের সকলের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্য আইসিটি বিভাগের সচিব মোঃ শামসুল আরেফিন বলেন, আমরা সকলের সুবিধার জন্য নৈতিক এআই-এর রূপান্তরকারী শক্তিকে কাজে লাগাতে চাই। আমরা চাই এমন একটি নতুন ভবিষ্যত তৈরি করতে, যেখানে এআই প্রযুক্তি আমাদের সমাজে নৈতিকভাবে অবদান রেখে একটি টেকসই স্মার্ট সমাজ কাঠামো গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মোঃ মাহমুদুল হোসেন খান বলেন, এআই-এর সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে আমাদের করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এখন আমাদের সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কার্যকর ও টেকসই কর্মকৌশল প্রণয়নে এআই অভিযোজনের সমস্যা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও এজেন্সি টু ইনোভেট-এর প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রশীদ ভূঞা তাঁর বক্তব্যে এআই নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তুতির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা ২০১৮ সাল থেকে এআই নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম, এর ফলে ২০১৯ সালে ‘এআই ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ২০১৯’ তৈরি হয়। এখন আমরা এআই নীতিমালা এবং এআই আইনে নৈতিকতার বিষয়টি সংযুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করছি।’

বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউনেস্কোর এআই রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট মেথডলজির মতো উদ্যোগগুলোকে সমর্থন করে।

এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি এআই প্রস্তুতির বিভিন্ন ধাপের মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে আইন, সামাজিক সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত বিবেচনা করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

ঢাকায় ইউনেস্কো অফিসের প্রধান মিস হুহুয়া ফ্যান ওআইসি বলেন, ‘আমাদের আজকের সংলাপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করা হয়েছে। এই আলোচনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে র‍্যাম কান্ট্রি রিপোর্ট ও এর নীতিগত সুপারিশ তৈরি করার সুযোগ তৈরি করবে বলে আশা করছি।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের ডেপুটি আবাসিক প্রতিনিধি মিস সোনালী দয়ারত্নে বলেন, সব দেশই এআই দ্বারা প্রভাবিত, এবং উদীয়মান অর্থনীতির বৈশ্বিক এআই রেসে একটি কণ্ঠস্বর প্রয়োজন। সেই আওয়াজ দিয়ে আমরা বাংলাদেশের ক্ষমতায়ন করতে চাই।

ইউনেস্কোর সামাজিক ও মানব বিজ্ঞানের সহকারী মহাপরিচালক মিস গ্যাব্রিয়েলা রামোস বলেন, ইউনেস্কোতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত কথোপকথনকে কেবল একটি প্রযুক্তিগত হিসেবে না দেখে একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। এই প্রযুক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা কোন উদ্দেশ্য নয় বরং এর যথাযথ পরিচালনার মাধ্যমে মানুষের লক্ষ্য পূরণ করে সামগ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করাই মূল লক্ষ্য।

মতবিনিময় সভায় শিক্ষা, পরিবহন, গার্মেন্টস, কৃষি এবং বাণিজ্যসহ সকল সেক্টরে এআই কৌশল, নীতি প্রণয়ন ও প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়। এইসব সেক্টরে সুনির্দিষ্টি এআই কৌশল মানা না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। একই সাথে কৌশল ও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক এআই নীতি কাঠামোর সাথে সমন্বয়ের প্রয়োজনীতার বিষয় উল্লেখ করেন বক্তারা।

প্যানেল আলোচনা এবং ব্রেকআউট গ্রুপ সেশনের মাধ্যমে নিরাপদ এবং বিশ্বস্ত এআই সম্পর্কিত ধারণা, এর নৈতিক ব্যবহার এবং এআই প্রযুক্তির সামাজিক প্রভাবের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে এআই টেকনোলজির গ্লোবাল গভর্নেন্সের উপর একটি প্যানেল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ইউনেস্কো সদর দফতরের সেকশন ফর বায়োইথিকস অ্যান্ড দ্য এথিক্স অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি-এর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট জেমস রাইট এবং ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের এডুকেশন প্রোগ্রাম সেক্টরের প্রধান হুহুয়া ফ্যান ।

আলোচনাটি পরিচালনা করেন ইউএনডিপির সিনিয়র গভর্নেন্স স্পেশালিস্ট শীলা হক। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন মোঃ আফজাল হোসেন সারওয়ার, হেড অব ফিউচার অব এডুকেশন, এটুআই; ড. জুলকারিন জাহাঙ্গীর, রিসার্চ স্পেশালিস্ট, এটুআই।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিশাস্ত্র সম্পর্কিত ইউনেস্কোর বৈশ্বিক সুপারিশের প্রাসঙ্গিকতা এবং গুরুত্ব মাথায় রেখে বিভিন্ন সেক্টরে এইআই ব্যবহারের এর নৈতিক প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।

মোঃ মামুনুর রশীদ ভূঞা, জনাব রুমানা শারমিন এবং ইউনসং কিমের নেতৃত্বে গ্রুপ প্রেজেন্টেশন এবং এইআই ব্যবহারে বাংলাদেশের প্রস্তুতি বিষয়ক একটি মূল্যায়ন অধিবেশনের মাধ্যমে মতবিনিময় সভা সম্পন্ন হয়।

‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিশাস্ত্র সম্পর্কিত সুপারিশ’ ২০২১ সালের নভেম্বরে ইউনেস্কোর ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় যা প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক ব্যবহার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণ।

এছাড়া অনুষ্ঠানে ডঃ ফারিগ ইউসুফ সাদেক , ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর সহযোগী অধ্যাপক, এআই প্রযুক্তির মৌলিক ধারণা এবং তাদের সম্ভাব্য ঝুঁকির নানা দিক উপস্থাপন করেন। সেই সাথে এআই উন্নয়নে নৈতিক মাত্রা বিবেচনা করার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন ইউনেস্কো দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক অফিসের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ইউনসং কিম।

back to top