alt

মিডিয়া

আহমদুল কবিরের ১০৩তম জন্মদিন আজ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশে সেই পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগ থেকে দৈনিক সংবাদপত্র আধুুনিক, প্রগতিশীল ও সাধারণ মানুষের খবর প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে নূতন আঙ্গিকে প্রকাশের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছিল। সংবাদপত্রের সেই যাত্রার পথিকৃৎ ছিলেন দৈনিক সংবাদ-এর কর্ণধার আহমদুল কবির। তার চিন্তা-চেতনার হাত ধরেই ১৯৫৪ সালে আজকের বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রবীণ দৈনিক সংবাদপত্র- ‘সংবাদ’ নূতন আদর্শিক ধারা ও প্রগতিশীল মুক্তচিন্তার দৈনিক হিসেবে পাঠকসমাজকে আলোড়িত করেছিল।

দৈনিক সংবাদ-এর সেই প্রাণপুরুষ আহমদুল কবিরের ১০৩তম জন্মদিন আজ ৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার। জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ আহমদুল কবিরের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর ঘোড়াশালে মিয়াবাড়িতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে : আহমদুল কবিরের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, এতিম শিক্ষার্থীদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটা, দুস্থদের মধ্যে উন্নত খাবার বিতরণ, দিনব্যাপী কোরানখানি ও দেয়া মাহফিল।

বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রকাশনার পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব আহমদুল কবির পাকিস্তান আমলে পঞ্চাশের দশকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সব ধরনের খবর পৌঁছে দেয়ার প্রক্রিয়ায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন দৈনিক সংবাদ-এর মধ্য দিয়ে। তার প্রচলিত ধারায় বাংলাদেশে সংবাদপত্র প্রকাশের ভিন্নরকম চেতনা জাগরিত হয়েছিল।

আহমদুল কবির ছিলেন সংবাদ-এর প্রধান সম্পাদক ও দেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ১৯২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর ঘোড়াশালের ঐতিহ্যবাহী মিয়া বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির ছিলেন ঘোড়াশালের জমিদার। মায়ের নাম মরহুমা সুফিয়া খাতুন। ২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আহমদুল কবির ছিলেন ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা অঙ্গনের এক প্রতিভাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। আপসহীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্য পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ছিলেন একজন ভিন্নমাত্রার রাজনীতিক। মূলত তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল এদেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করা। তদানীন্তন পাকিস্তানের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল যে ধারা এদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপুল জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক চেতনাকে নাড়া দিয়েছিল, সেই একই ধারার পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন আহমদুল কবির। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী রাজনীতির নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন আহমদুল কবির। দেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন আদর্শবান এবং নীতিনিষ্ঠ এক নেতা হিসেবে। তিনি সত্তরের দশকে গণতন্ত্রী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুকাল পর্যন্ত তিনি পার্টির সভাপতি ছিলেন।

আহমদুল কবির ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর প্রথম ভিপি। ১৯৬৫ সালে আহমদুল কবির ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। সংবাদপত্রকে তিনি তার রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার ও স্বকীয় প্রতিভা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন।

সাংবাদিকতায় তার অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল এবং বস্তুনিষ্ঠ চেতনার প্রতিরূপ হলো দৈনিক ‘সংবাদ’। দৈনিক সংবাদ-এ বস্তুনিষ্ঠ খবর ও মতামত প্রকাশের মধ্য দিয়ে তিনি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন। আমৃত্যু তিনি তার এই আদর্শ লালন করে গেছেন। কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়নের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতির পদও অলঙ্কৃত করেছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। আহমদুল কবির দেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তাও ছিলেন। এ দেশের শিল্প-বাণিজ্য প্রসারে তার সক্রিয় অবদান রয়েছে।

আহমদুল কবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৪৫-৪৬ সালে ডাকসুর প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৯৪২-৪৩ সালে তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৫ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে নরসিংদী-২ (পলাশ-শিবপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে নরসিংদী-২ (পলাশ) নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। আহমদুল কবির অর্থনীতিতে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করার পর রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় যোগদান করেন এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০ সালে তিনি পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন এবং ১৯৫১ সালে গ্যাটে সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি নিজের ব্যবসায় যোগদান করেন। আহমদুল কবির তদানীন্তন পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি কৃষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। আশির দশকে তার নেতৃত্বে গণতন্ত্রী পার্টি গঠিত হয় এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ছিলেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সময়ে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান করেন। রোমে ফাও-এর কনফারেন্সে প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। ইইসি দেশগুলোতে তিনি বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সরকার ‘সংবাদ’ অফিস পুড়িয়ে দেয় এবং আহমদুল কবিরকে গ্রেপ্তার করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা সংবাদ প্রকাশের জন্য অনেক প্রলোভন দেখায়; কিন্তু আহমদুল কবির পত্রিকা প্রকাশ করেননি। স্বাধীনতার পরপরই তিনি জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন এবং সংবাদ পুনঃপ্রকাশ করেন।

আহমদুল কবির ১৯৫৪ সালে সংবাদ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালে প্রধান সম্পাদক হন এবং আমৃত্যু এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আহমদুল কবির স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী এবং রাজনৈতিক অনুসারী রেখে গেছেন। প্রয়াত আহমদুল কবিরের স্ত্রী লায়লা রহমান কবির দেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তার বড় ছেলে আলতামাশ কবির ‘সংবাদ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সম্পাদক, দ্বিতীয় ছেলে আরদাশির কবির দেশের বিশিষ্ট চা ব্যবসায়ী এবং একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টার নিহাদ কবির সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত।

বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মোঃ আব্দুল জলিল

ছবি

ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষের বিবৃতি : ‘বিশেষ একটি মহল’ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভোরের কাগজের ‘কর্তৃত্ব দখল ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত

ফারজানা রূপার জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান, নতুন ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

ছবি

গণমাধ্যমে প্রতিবেদন তৈরিতে জেন্ডার নীতিমালা অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান

ছবি

নারায়ণগঞ্জ ফটো জার্নালিস্ট ক্লাবের আত্মপ্রকাশ

ছবি

‘ভোরের কাগজ’ প্রকাশিত হয়নি, প্রধান কার্যালয়ে তালা

ছবি

ইরাব সভাপতি আকতারুজ্জামান ও সম্পাদক সেলিম

ছবি

ডিক্যাবের নতুন সভাপতি মঈন, সাধারণ সম্পাদক মামুন

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বাতিল স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায়: সম্পাদক পরিষদ

ছবি

জনবাণী সম্পাদক শফিকসহ সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

সংবাদমাধ্যমে জেন্ডার সমতা ও সংবেদনশীলতা নিশ্চিতের অঙ্গীকার সনদ প্রকাশ

ছবি

গণমাধ্যমসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে মব-জাস্টিস কঠোর হস্তে দমনের আহ্বান সম্পাদক পরিষদের

ছবি

প্রথম আলো কার্যালয়গুলোর ওপর হামলা ও বিক্ষোভ

ছবি

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা চরম আক্রমনের মুখে : নোয়াব

ছবি

প্রথম আলো অফিসের সামনে ‘গরু জবেহ’ কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষ,সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ পুলিশের

ছবি

শতাধিক অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলে নোয়াব-এর উদ্বেগ

ছবি

ইমরুল কায়েসকে নিউইয়র্কে বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে পাবনা সমিতি ইউএসএ ইনক্

ছবি

জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে

ছবি

দেশ টিভির এমডি আরিফ গ্রেপ্তার

ছবি

ঢালাওভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায়: সম্পাদক পরিষদ

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ

ছবি

গ্রেপ্তারের পর কারাগারে একাংশের ‘সাংবাদিক নেতা’ মোল্লা জালাল

ছবি

আরও ৩০ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল

ছবি

মুক্তাগাছা প্রেসক্লাবে ৪২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

ছবি

২০ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে পিআইডি

ছবি

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

ছবি

সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত ৬ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে

ছবি

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সংস্কারের দাবি: বিশেষজ্ঞদের মতামত

ছবি

সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত থেকে বাদ র‌্যাব, টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ

ছবি

সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত ময়মনসিংহ সীমান্ত এলাকায় আটক

ছবি

‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও হত্যা মামলা অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে’: সম্পাদক পরিষদ

ছবি

‘হ্যাকড’ প্রথম আলোর ওয়েবসাইট ‘শুভাকাঙ্ক্ষীর’ হাত থেকে ‘মুক্ত’

ছবি

সোনারগাঁ প্রেস ক্লাবের ৩৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন

ছবি

হাতিরঝিল থেকে নারী সাংবাদিকের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার

ছবি

দ্রুত সাগর-রুনি হত্যা মামলার চার্জ গঠনের দাবি সম্পাদক পরিষদের

ছবি

‘বৈষম্য’ নিরসনের দাবীতে বাংলাদেশ বেতারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মানববন্ধন

tab

মিডিয়া

আহমদুল কবিরের ১০৩তম জন্মদিন আজ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশে সেই পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগ থেকে দৈনিক সংবাদপত্র আধুুনিক, প্রগতিশীল ও সাধারণ মানুষের খবর প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে নূতন আঙ্গিকে প্রকাশের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছিল। সংবাদপত্রের সেই যাত্রার পথিকৃৎ ছিলেন দৈনিক সংবাদ-এর কর্ণধার আহমদুল কবির। তার চিন্তা-চেতনার হাত ধরেই ১৯৫৪ সালে আজকের বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রবীণ দৈনিক সংবাদপত্র- ‘সংবাদ’ নূতন আদর্শিক ধারা ও প্রগতিশীল মুক্তচিন্তার দৈনিক হিসেবে পাঠকসমাজকে আলোড়িত করেছিল।

দৈনিক সংবাদ-এর সেই প্রাণপুরুষ আহমদুল কবিরের ১০৩তম জন্মদিন আজ ৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার। জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ আহমদুল কবিরের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর ঘোড়াশালে মিয়াবাড়িতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে : আহমদুল কবিরের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, এতিম শিক্ষার্থীদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটা, দুস্থদের মধ্যে উন্নত খাবার বিতরণ, দিনব্যাপী কোরানখানি ও দেয়া মাহফিল।

বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রকাশনার পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব আহমদুল কবির পাকিস্তান আমলে পঞ্চাশের দশকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সব ধরনের খবর পৌঁছে দেয়ার প্রক্রিয়ায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন দৈনিক সংবাদ-এর মধ্য দিয়ে। তার প্রচলিত ধারায় বাংলাদেশে সংবাদপত্র প্রকাশের ভিন্নরকম চেতনা জাগরিত হয়েছিল।

আহমদুল কবির ছিলেন সংবাদ-এর প্রধান সম্পাদক ও দেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ১৯২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর ঘোড়াশালের ঐতিহ্যবাহী মিয়া বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির ছিলেন ঘোড়াশালের জমিদার। মায়ের নাম মরহুমা সুফিয়া খাতুন। ২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আহমদুল কবির ছিলেন ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা অঙ্গনের এক প্রতিভাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। আপসহীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্য পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ছিলেন একজন ভিন্নমাত্রার রাজনীতিক। মূলত তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল এদেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করা। তদানীন্তন পাকিস্তানের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল যে ধারা এদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপুল জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক চেতনাকে নাড়া দিয়েছিল, সেই একই ধারার পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন আহমদুল কবির। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী রাজনীতির নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন আহমদুল কবির। দেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন আদর্শবান এবং নীতিনিষ্ঠ এক নেতা হিসেবে। তিনি সত্তরের দশকে গণতন্ত্রী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুকাল পর্যন্ত তিনি পার্টির সভাপতি ছিলেন।

আহমদুল কবির ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর প্রথম ভিপি। ১৯৬৫ সালে আহমদুল কবির ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। সংবাদপত্রকে তিনি তার রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার ও স্বকীয় প্রতিভা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন।

সাংবাদিকতায় তার অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল এবং বস্তুনিষ্ঠ চেতনার প্রতিরূপ হলো দৈনিক ‘সংবাদ’। দৈনিক সংবাদ-এ বস্তুনিষ্ঠ খবর ও মতামত প্রকাশের মধ্য দিয়ে তিনি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন। আমৃত্যু তিনি তার এই আদর্শ লালন করে গেছেন। কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়নের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতির পদও অলঙ্কৃত করেছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। আহমদুল কবির দেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তাও ছিলেন। এ দেশের শিল্প-বাণিজ্য প্রসারে তার সক্রিয় অবদান রয়েছে।

আহমদুল কবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৪৫-৪৬ সালে ডাকসুর প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৯৪২-৪৩ সালে তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৫ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে নরসিংদী-২ (পলাশ-শিবপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে নরসিংদী-২ (পলাশ) নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। আহমদুল কবির অর্থনীতিতে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করার পর রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় যোগদান করেন এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০ সালে তিনি পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন এবং ১৯৫১ সালে গ্যাটে সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি নিজের ব্যবসায় যোগদান করেন। আহমদুল কবির তদানীন্তন পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি কৃষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। আশির দশকে তার নেতৃত্বে গণতন্ত্রী পার্টি গঠিত হয় এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ছিলেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সময়ে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান করেন। রোমে ফাও-এর কনফারেন্সে প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। ইইসি দেশগুলোতে তিনি বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সরকার ‘সংবাদ’ অফিস পুড়িয়ে দেয় এবং আহমদুল কবিরকে গ্রেপ্তার করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা সংবাদ প্রকাশের জন্য অনেক প্রলোভন দেখায়; কিন্তু আহমদুল কবির পত্রিকা প্রকাশ করেননি। স্বাধীনতার পরপরই তিনি জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন এবং সংবাদ পুনঃপ্রকাশ করেন।

আহমদুল কবির ১৯৫৪ সালে সংবাদ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালে প্রধান সম্পাদক হন এবং আমৃত্যু এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আহমদুল কবির স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী এবং রাজনৈতিক অনুসারী রেখে গেছেন। প্রয়াত আহমদুল কবিরের স্ত্রী লায়লা রহমান কবির দেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তার বড় ছেলে আলতামাশ কবির ‘সংবাদ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সম্পাদক, দ্বিতীয় ছেলে আরদাশির কবির দেশের বিশিষ্ট চা ব্যবসায়ী এবং একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টার নিহাদ কবির সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত।

back to top