alt

জাতীয়

শাহপরীর দ্বীপ-সেন্টমার্টিন সীমান্তে গোলাগুলি, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার : শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

সীমান্তে সতর্ক পাহারায় বিজিবি-সংবাদ

এবার কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিন সীমান্তে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। বিকট শব্দে কাঁপলো এপারের বাড়িঘর। স্থানীয়দের মাঝে আবারও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তিন থেকে চার ঘণ্টা বিরতির পর থেমে থেমে আবারও গোলাগুলি শুরু হয়।

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মায়ানমার থেকে মর্টার শেল ও গোলাগুলির ভারি শব্দ শোনা যাওয়ায় এপারে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। সীমান্তের এই পরিস্থিতিতে নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজের পাশাপাশি স্থানীয়দের বহনকারী নৌযান চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা নুর হোসাইন বলেন, গোলাগুলির শব্দে ভয়ে বাসা-বাড়িতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে বসবাস করা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে এমন ঘটনায় তুমব্রুতে একজন স্থানীয় মহিলাসহ দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে। আল্লাহ না করুক এখানেও যদি এমনটি হয় তার দায় কে নেবে? আমরা অত্যন্ত ভয়ের মধ্যে রয়েছি। তিনি আরও বলেন, ‘মায়ানমারের গুলি এসে পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয়দের রান্না ঘরের ডেক্সির ঢাকনায়।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আবদুস সালাম বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনতে শুরু করেছেন তারা। তিনি মায়ানমারের মংডু এলাকা থেকে এই আওয়াজ আসছে বলে ধারণা করছেন।

এ নিয়ে টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, টেকনাফ উপজেলা পরিষদেই তিনি রয়েছেন এবং সেখান থেকে বোমার প্রচ- শব্দ শোনা যাচ্ছে। নাফনদী থেকে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের দূরত্ব এক কিলোমিটারের মতো বলে তিনি জানান। আদনান চৌধুরী বলেন, প্রচ- বোমার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। শুক্রবার থেকে চলছে, এখনও চলছে।

এদিকে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে ১০ লাখ রোহিঙ্গা। মায়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতনের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের তখন মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই রোহিঙ্গাদের কারণে এখন নানাবিধ সমস্যায় রয়েছে স্থানীয়রা। সেই সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বার বার সংঘাত বন্ধ করে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার আবেদন করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এই ইস্যুতে নীরব ছিল ভারতসহ অনেক মিত্র রাষ্ট্র।

সচেতন মহল মনে করছেন, মায়ানমারের এবারের পরিস্থিতি ২০১৭ সালের মতো নয়। মায়ানমারের সংঘাতের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এখন মায়ানমারের সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরিতে বাংলাদেশকে কাজ করে যেতে হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মায়ানমার সীমান্তরক্ষীসহ ৩৩০ জনকে ১০ দিনের মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতায় মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত হোক এমনটি প্রত্যাশা করছেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা।

১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা গুরামিয়া (৫৫) বলেন, নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে থাকতে কারো ভালো লাগার কথা নয়। আমরাও মানুষ। আমাদেরও দেশের প্রতি ভালোবাসা আছে। আমরা স্বাধীনভাবে নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিয়ে দেশে ফিরে যেতে চাই। সীমান্তের পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে আবার স্বাভাবিক হচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্তে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পুরো অংশ এখন আরাকান আর্মির দখলে। আরাকান আর্মির প্রতিপক্ষ যেমন মায়ানমার সেনাবাহিনী জান্তা সরকারের। ঠিক তেমনি তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে আছে এখন রোহিঙ্গাভিত্তিক সংগঠনগুলো। তারাও কিন্তু ভয়ে গোলাগুলি করছে এবং মর্টার শেল নিক্ষেপ করার চেষ্টা করছে।

এদিকে, ঘুমধুমের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, আজ সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা দোকানপাট খুলেছে। পাশাপাশি তারা ক্ষেত খামারে কৃষি কাজে যাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সীমান্তের পরিস্থিতিতে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধানের চারা ও সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। বাংলাদেশে দু’জন নিহতের ঘটনাও ঘটেছে সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ সরকারিভাবে সাহায্য সহযোগিতা পায়নি।

ঘুমধুম ইউনিয়নে ২০ হাজারেরও বেশি স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশিরভাগই মায়ানমারের সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মায়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলের গোলা স্থানীয় বাড়ির রান্না ঘরে এসে পড়ে। এতে প্রাণ হারায় দুই সন্তানের জননী হোসনে আরা। এই ক্ষতিপূরণ কে দেবে আর এই বিচার কে করবে জানা নেই হোসনে আরার অবুঝ দুই সন্তানের। মায়ানমারের বর্ডারগার্ডকে বিতাড়িত করে এখন সেখানে অবস্থান করছে আরাকান আর্মি।

তুমব্রু সীমান্ত থেকে তাদের চলাফেরা স্পষ্টই দেখা যায়। বাংলাদেশ সীমান্তে কাটাতারের খুব কাছেই তারা অবস্থান করছে। সীমান্ত অঞ্চলে তারা বর্ডার গার্ড পুলিশকে হটিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত পথের প্রায় অর্ধেকেরই বেশি অংশ তারা দখলে রেখে নিয়ন্ত্রণ করছে। ৩৩০ জনকে ফিরিয়ে নেয়ার পর তুমব্রু সীমান্ত পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে বৃহস্পতিবার তাদের ফিরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম শুরু হলে সকাল ১০টায় শাহপরীর দ্বীপের অন্য প্রান্ত থেকে মায়ানমারের ওই অংশে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শুনতে পায় বলে জানান সীমান্তে বসবাসরত জয়নাল আবেদীন।

৩৩০ জনকে ফিরিয়ে নেয়ার পর পুনরায় যদি তাদের ঘাটি দখল করতে চায় তখন কিন্তু আরও বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সীমান্ত এলাকার লোকজন।

বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মায়ানমারের অভ্যন্তরের যুদ্ধ চলছে। গোলাবর্ষণের শব্দ তারা শুক্রবার সকালেও শুনতে পেয়েছেন। তিনি বলেন, মায়ানমারের ভেতরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা না গেলেও গোলাবর্ষণ যে হচ্ছে, তার শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে এটি ক্রমাগত হচ্ছে না, থেমে থেমে কিছুক্ষণ পর পর এই শব্দ শোনা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত থেকে সাত-আট মাইল দূরে মায়ানমারের অভ্যন্তরে যুদ্ধ চলছে বলে ধারণা করছে বিজিবি। বিজিবির এই অধিনায়ক জানান, বিজিবি সব সময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য তারা তৎপর রয়েছেন।

উল্লেখ্য, মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় একটা অংশই পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়।

ছবি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত, বিচার না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ

এখনও কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ, অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা

শ্রীপুরে শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও শেষ হচ্ছে না খুলনার ১৮৩ সড়কের কাজ

ছবি

মরু অঞ্চলের দুম্বার খামার করে স্বাবলম্বী ভৈরবের সবুজ

ছবি

গাজীপুরে বাস থেকে ফেলে ছাত্র হত্যা, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

ছবি

সংগীতজ্ঞ মুস্তাফা জামান আব্বাসীর মৃত্যু

ছবি

শ্রীমঙ্গল, আখাউড়ায় ট্রেন লাইনচ্যুত

ছবি

৩২ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই

ছবি

রংপুরে ৩ জনের হিট স্ট্রোক, গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

টানা তিন দিন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা

কর-জিডিপি অনুপাতে লক্ষ্যমাত্রা অপর্যাপ্ত মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা

ছবি

এবার ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে অবরোধ ছাত্র-জনতার

পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসন না এলে ‘সংকট সৃষ্টি হবে’: ইউপিডিএফ

মাদকের টাকা যুদ্ধে জোগান দিচ্ছে আরাকান আর্মি

ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন হবে: আসিফ নজরুল

ছবি

যুদ্ধবিরতিতে ‘সম্মত’ ভারত-পাকিস্তান

ছবি

আ’লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা

ছবি

ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন হবে: আসিফ নজরুল

ছবি

ভারতে বন্ধ ছয়টি টিভির ইউটিউব সম্প্রচার: ব্যাখ্যা না পেলে পাল্টা পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি

ছবি

জনদুর্ভোগ কমাতে সড়ক ছাড়ার অনুরোধ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

নিউ মার্কেট এলাকায় দখল, চাঁদাবাজির ঘটনার তদন্ত দাবি

পাকিস্তানের আকাশসীমা পরিহার, বিমানের ৩ ফ্লাইটের সূচি পরিবর্তন

ছবি

তরমুজ চাষে ভাগ্য ফিরেছে রাঙ্গাবালীর কৃষকদের

এপ্রিলে মায়ানমারের ৪৬৪ নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি

দক্ষিণাঞ্চলে রাতে কুয়াশা আর দুপুরে অসহনীয় গরম

ছবি

জাবিতে ডাইনিং সংকট, ৬ হাজার শিক্ষার্থীর ভোগান্তি

এক্সপ্রেসওয়ে দুর্ঘটনা: মৃত্যুশোকের মধ্যেই জন্ম শিশুর

ছবি

টানা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

গরমের দাপট আরও থাকবে আজ-কালও, তীব্র তাপপ্রবাহের আভাস

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই, আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা

কালক্ষেপণ করে সরকার স্বৈরাচারদের নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ করে দিচ্ছে: বিএনপি

সাবেক রাষ্ট্রপতির বিদেশযাত্রা ঠেকানোর ‘দায়িত্ব’ আইন মন্ত্রণালয়ের নয় : উপদেষ্টা

গুম হওয়া বিএনপি নেতার পরোয়ানা, এসআই প্রত্যাহার

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি সরকারের বিবেচনায়: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

ছবি

‘সৎ রাজনীতি আর সততার কীসের মূল্যায়ন?’ প্রশ্ন আইভীর

tab

জাতীয়

শাহপরীর দ্বীপ-সেন্টমার্টিন সীমান্তে গোলাগুলি, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

সীমান্তে সতর্ক পাহারায় বিজিবি-সংবাদ

শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

এবার কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিন সীমান্তে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। বিকট শব্দে কাঁপলো এপারের বাড়িঘর। স্থানীয়দের মাঝে আবারও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তিন থেকে চার ঘণ্টা বিরতির পর থেমে থেমে আবারও গোলাগুলি শুরু হয়।

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মায়ানমার থেকে মর্টার শেল ও গোলাগুলির ভারি শব্দ শোনা যাওয়ায় এপারে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। সীমান্তের এই পরিস্থিতিতে নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজের পাশাপাশি স্থানীয়দের বহনকারী নৌযান চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা নুর হোসাইন বলেন, গোলাগুলির শব্দে ভয়ে বাসা-বাড়িতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে বসবাস করা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে এমন ঘটনায় তুমব্রুতে একজন স্থানীয় মহিলাসহ দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে। আল্লাহ না করুক এখানেও যদি এমনটি হয় তার দায় কে নেবে? আমরা অত্যন্ত ভয়ের মধ্যে রয়েছি। তিনি আরও বলেন, ‘মায়ানমারের গুলি এসে পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয়দের রান্না ঘরের ডেক্সির ঢাকনায়।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আবদুস সালাম বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনতে শুরু করেছেন তারা। তিনি মায়ানমারের মংডু এলাকা থেকে এই আওয়াজ আসছে বলে ধারণা করছেন।

এ নিয়ে টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, টেকনাফ উপজেলা পরিষদেই তিনি রয়েছেন এবং সেখান থেকে বোমার প্রচ- শব্দ শোনা যাচ্ছে। নাফনদী থেকে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের দূরত্ব এক কিলোমিটারের মতো বলে তিনি জানান। আদনান চৌধুরী বলেন, প্রচ- বোমার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। শুক্রবার থেকে চলছে, এখনও চলছে।

এদিকে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে ১০ লাখ রোহিঙ্গা। মায়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতনের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের তখন মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই রোহিঙ্গাদের কারণে এখন নানাবিধ সমস্যায় রয়েছে স্থানীয়রা। সেই সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বার বার সংঘাত বন্ধ করে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার আবেদন করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এই ইস্যুতে নীরব ছিল ভারতসহ অনেক মিত্র রাষ্ট্র।

সচেতন মহল মনে করছেন, মায়ানমারের এবারের পরিস্থিতি ২০১৭ সালের মতো নয়। মায়ানমারের সংঘাতের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এখন মায়ানমারের সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরিতে বাংলাদেশকে কাজ করে যেতে হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মায়ানমার সীমান্তরক্ষীসহ ৩৩০ জনকে ১০ দিনের মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতায় মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত হোক এমনটি প্রত্যাশা করছেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা।

১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা গুরামিয়া (৫৫) বলেন, নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে থাকতে কারো ভালো লাগার কথা নয়। আমরাও মানুষ। আমাদেরও দেশের প্রতি ভালোবাসা আছে। আমরা স্বাধীনভাবে নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিয়ে দেশে ফিরে যেতে চাই। সীমান্তের পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে আবার স্বাভাবিক হচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্তে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পুরো অংশ এখন আরাকান আর্মির দখলে। আরাকান আর্মির প্রতিপক্ষ যেমন মায়ানমার সেনাবাহিনী জান্তা সরকারের। ঠিক তেমনি তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে আছে এখন রোহিঙ্গাভিত্তিক সংগঠনগুলো। তারাও কিন্তু ভয়ে গোলাগুলি করছে এবং মর্টার শেল নিক্ষেপ করার চেষ্টা করছে।

এদিকে, ঘুমধুমের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, আজ সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা দোকানপাট খুলেছে। পাশাপাশি তারা ক্ষেত খামারে কৃষি কাজে যাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সীমান্তের পরিস্থিতিতে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধানের চারা ও সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। বাংলাদেশে দু’জন নিহতের ঘটনাও ঘটেছে সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ সরকারিভাবে সাহায্য সহযোগিতা পায়নি।

ঘুমধুম ইউনিয়নে ২০ হাজারেরও বেশি স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশিরভাগই মায়ানমারের সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মায়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলের গোলা স্থানীয় বাড়ির রান্না ঘরে এসে পড়ে। এতে প্রাণ হারায় দুই সন্তানের জননী হোসনে আরা। এই ক্ষতিপূরণ কে দেবে আর এই বিচার কে করবে জানা নেই হোসনে আরার অবুঝ দুই সন্তানের। মায়ানমারের বর্ডারগার্ডকে বিতাড়িত করে এখন সেখানে অবস্থান করছে আরাকান আর্মি।

তুমব্রু সীমান্ত থেকে তাদের চলাফেরা স্পষ্টই দেখা যায়। বাংলাদেশ সীমান্তে কাটাতারের খুব কাছেই তারা অবস্থান করছে। সীমান্ত অঞ্চলে তারা বর্ডার গার্ড পুলিশকে হটিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত পথের প্রায় অর্ধেকেরই বেশি অংশ তারা দখলে রেখে নিয়ন্ত্রণ করছে। ৩৩০ জনকে ফিরিয়ে নেয়ার পর তুমব্রু সীমান্ত পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে বৃহস্পতিবার তাদের ফিরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম শুরু হলে সকাল ১০টায় শাহপরীর দ্বীপের অন্য প্রান্ত থেকে মায়ানমারের ওই অংশে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শুনতে পায় বলে জানান সীমান্তে বসবাসরত জয়নাল আবেদীন।

৩৩০ জনকে ফিরিয়ে নেয়ার পর পুনরায় যদি তাদের ঘাটি দখল করতে চায় তখন কিন্তু আরও বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সীমান্ত এলাকার লোকজন।

বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মায়ানমারের অভ্যন্তরের যুদ্ধ চলছে। গোলাবর্ষণের শব্দ তারা শুক্রবার সকালেও শুনতে পেয়েছেন। তিনি বলেন, মায়ানমারের ভেতরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা না গেলেও গোলাবর্ষণ যে হচ্ছে, তার শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে এটি ক্রমাগত হচ্ছে না, থেমে থেমে কিছুক্ষণ পর পর এই শব্দ শোনা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত থেকে সাত-আট মাইল দূরে মায়ানমারের অভ্যন্তরে যুদ্ধ চলছে বলে ধারণা করছে বিজিবি। বিজিবির এই অধিনায়ক জানান, বিজিবি সব সময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য তারা তৎপর রয়েছেন।

উল্লেখ্য, মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় একটা অংশই পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়।

back to top