alt

জাতীয়

বিচারপতিদের অপসারণ, ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ শুনানি ১১ জুলাই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ১১ জুলাই দিন ধার্য করেছে সর্বোচ্চ আদালত।

সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়েছিল বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দশম সংসদে এটি বিল আকারে পাস করা হয়। ওই বছর ২২ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে তা আইনে পরিণত হয়।

সংবিধানে এই সংশোধনী মৌলিক কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ‘ক্ষুণ্ণ’ করবে; এমন যুক্তিতে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন।

ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল শুনানিতে ‘অ্যামিকাস কিউরি’ বা ‘আদলতের বন্ধু বা সহায়তাকারী’ নিয়োগ দেয় আপিল বিভাগ। আদালত যদি কোনো বিষয় না বোঝে অথবা আংশিক বোঝে এবং আরও বোঝার বা জানার প্রয়োজন মনে করে, তখন সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মতামত নিতে পারে। এই বিশেষজ্ঞকে বলা হয় ‘অ্যামিকাস কিউরি’।

আপিল শুনানি শুরু হয় ৮ মে, চলে ১১ দিন। শুনানিতে দশজন ‘অ্যামিচি কিউরি’র মধ্যে শুধু আজমালুল হোসেন কিউসি ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন।

অন্য নয়জন ‘অ্যামিচি কিউরি (অ্যমিকাস কিউরির বহুবচন)’ ড. কামাল হোসেন, এম আই ফারুকী, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ এম হাসান আরিফ, এম. আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

এরপর, ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে রায় ঘোষণা করে। ফলে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল করে দেয়া হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয় ১ আগস্ট; যা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।

রায়ে আদলতের পর্যবেক্ষণ

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছিল, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ‘ইতিহাসের দুর্ঘটনা’ মাত্র।

কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর ৬৩ শতাংশের অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ ছিল।

আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের ফলে দলের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারেন না। তারা দলের হাই কমান্ডের কাছে জিম্মি। নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা নেই। ৭০ অনুচ্ছেদ রাখার ফলে সংসদ সদস্যদের সবসময় দলের অনুগত থাকতে হয়। বিচারপতি অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তারা দলের বাইরে যেতে পারেন না; যদিও বিভিন্ন উন্নত দেশে সাংসদদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা আছে।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, মানুষের ধারণা হলো, বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণœ হবে। সেক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল হয়ে যাবে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ক্ষমতাসীনদের প্রতিক্রিয়া

সাত বিচারকের ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ে তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের পর্যবেক্ষণের অংশে দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন,নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।

ওই রায় এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেন।

পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে ‘খাটো করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থী আইনজীবীরা। বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবি তোলেন অনেক নেতা।

আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য একাধিক নেতা বলেন, ‘সংবিধানের ওই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল, যা বাহত্তরের সংবিধানে ছিল। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিচারপতিদের অপসারনের ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ওই কাউন্সিলকে দেন। এখন উচ্চ আদালতের রায়ে আবার জিয়াউর রহমানের আইন ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’

অন্যদিকে এই রায়কে স্বাগত জানায় বিএনপি

তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ছুটি নিয়ে বিদেশে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। ছুটি শেষে কানাডা যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনে এসে পৌঁছায়। পরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিচারপতি সিনহার পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেন।

পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের রায় বাতিল চেয়ে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করে। ২০২২ সালের আগস্টে তা আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠায়। এরপর বেশ কয়েকবার রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে।

রিভিউ শুনানি ১১ জুলাই

গতকাল আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকার ২৭ নম্বরে থাকা এই আইটেমটি (রিভিউ আবেদন) শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।

পরে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বেঞ্চে না থাকায় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ বিষয়টি শুনানির জন্য আগামী ১১ জুলাই দিন ধার্য করে।

এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

পরে মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের কার্যতালিকায় ছিল। এটি শুনানির জন্য সকালে মেনশন করেছিলাম। কিন্তু প্রধান বিচারপতি আজ বেঞ্চে না থাকায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ আবেদনটি শুনানির জন্য আগামী ১১ জুলাই দিন ধার্য করেছেন।’

ছবি

তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে ‘লাভজনক’ প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

‘পদ্মা সেতু থেকে ২ বছরে আয় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি’

ছবি

সাপে কাটা ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত সংরক্ষণ চেয়ে সরকারকে নোটিশ

ছবি

অষ্টম শ্রেণি চালুর জন্য প্রস্তুত ১৫৪ স্কুল

ছবি

দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার পথ নিয়ে আলোচনা করেছি : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

দিল্লি সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন আজ

ছবি

নিবন্ধিত সিমের প্রায় অর্ধেক নিস্ক্রিয়: আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক

ছবি

সংসদ ভবনে স্থাপিত হলো ‘মুজিব ও স্বাধীনতা’, উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

পলকের নির্দেশে টাকা ফেরৎ পাচ্ছে পারুল বেগম

ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফর খুবই ফলপ্রসূ হবে বলে চীনা মন্ত্রীর আশাবাদ

ছবি

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা নিয়ে আলোচনা

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন কাল

ছবি

অসংক্রামক ব্যাধি থেকে পরিত্রাণে সচেতনতা প্রয়োজন : স্পিকার

ছবি

স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা অসৎ উপায়ে ভূমি ক্রয়ের প্রচেষ্টা প্রতিহত করবে: ভূমিমন্ত্রী

ছবি

ঢাকায় চীনা মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও

ছবি

বাংলাদেশের যত অর্জন তা আওয়ামী লীগের হাত ধরেই : শেখ হাসিনা

কে হচ্ছেন পুলিশের নতুন আইজি?

ছবি

পুলিশে রদবদল, ১৪ জেলায় নতুন এসপি

ছবি

দুর্নীতির মাধ্যমে এভাবে সম্পদ অর্জন করা কখনো সমীচীন নয়

ছবি

সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিলেন লে. জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান

ছবি

মিন্টুকে গ্রেপ্তার করে কোনো চাপে নেই ডিবি

ছবি

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ডেপুটি স্পিকারের শ্রদ্ধা

ছবি

আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা

ছবি

১০ সমঝোতা স্মারক সই

ছবি

ভারতের রাষ্ট্রপতি, শেখ হাসিনার সঙ্গে আবারও সাক্ষাতে আনন্দিত

ছবি

ই-মেডিকেল ভিসা পাবে বাংলাদেশিরা মোদী

ছবি

ভারতের সঙ্গে উন্নয়ন ও বন্ধুত্বের পথে নবযাত্রা শুরু হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ছবি

বাংলাদেশিদের জন্য ই-মেডিকেল ভিসা চালু করছে ভারত

ছবি

শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি

ছবি

রাসেলস ভাইপার নিয়ে জরুরি নির্দেশনা দিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ডিএনএ পরীক্ষার জন্য এমপি আজীমের স্বজনদের ডেকেছে কলকাতার পুলিশ

ছবি

দিল্লি পৌঁছেছেন শেখ হাসিনা, কাল মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক

ছবি

৪১৯ হজযাত্রী দেশে ফিরলেন আজ

ছবি

আইসিটি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে আগ্রহী মালয়েশিয়া: প্রতিমন্ত্রী পলক

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ৫৪ কোটি টাকার বাজেট

tab

জাতীয়

বিচারপতিদের অপসারণ, ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ শুনানি ১১ জুলাই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ১১ জুলাই দিন ধার্য করেছে সর্বোচ্চ আদালত।

সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়েছিল বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দশম সংসদে এটি বিল আকারে পাস করা হয়। ওই বছর ২২ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে তা আইনে পরিণত হয়।

সংবিধানে এই সংশোধনী মৌলিক কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ‘ক্ষুণ্ণ’ করবে; এমন যুক্তিতে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন।

ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল শুনানিতে ‘অ্যামিকাস কিউরি’ বা ‘আদলতের বন্ধু বা সহায়তাকারী’ নিয়োগ দেয় আপিল বিভাগ। আদালত যদি কোনো বিষয় না বোঝে অথবা আংশিক বোঝে এবং আরও বোঝার বা জানার প্রয়োজন মনে করে, তখন সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মতামত নিতে পারে। এই বিশেষজ্ঞকে বলা হয় ‘অ্যামিকাস কিউরি’।

আপিল শুনানি শুরু হয় ৮ মে, চলে ১১ দিন। শুনানিতে দশজন ‘অ্যামিচি কিউরি’র মধ্যে শুধু আজমালুল হোসেন কিউসি ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন।

অন্য নয়জন ‘অ্যামিচি কিউরি (অ্যমিকাস কিউরির বহুবচন)’ ড. কামাল হোসেন, এম আই ফারুকী, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ এম হাসান আরিফ, এম. আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

এরপর, ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে রায় ঘোষণা করে। ফলে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল করে দেয়া হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয় ১ আগস্ট; যা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।

রায়ে আদলতের পর্যবেক্ষণ

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছিল, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ‘ইতিহাসের দুর্ঘটনা’ মাত্র।

কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর ৬৩ শতাংশের অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ ছিল।

আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের ফলে দলের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারেন না। তারা দলের হাই কমান্ডের কাছে জিম্মি। নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা নেই। ৭০ অনুচ্ছেদ রাখার ফলে সংসদ সদস্যদের সবসময় দলের অনুগত থাকতে হয়। বিচারপতি অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তারা দলের বাইরে যেতে পারেন না; যদিও বিভিন্ন উন্নত দেশে সাংসদদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা আছে।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, মানুষের ধারণা হলো, বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণœ হবে। সেক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল হয়ে যাবে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ক্ষমতাসীনদের প্রতিক্রিয়া

সাত বিচারকের ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ে তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের পর্যবেক্ষণের অংশে দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন,নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।

ওই রায় এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেন।

পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে ‘খাটো করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থী আইনজীবীরা। বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবি তোলেন অনেক নেতা।

আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য একাধিক নেতা বলেন, ‘সংবিধানের ওই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল, যা বাহত্তরের সংবিধানে ছিল। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিচারপতিদের অপসারনের ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ওই কাউন্সিলকে দেন। এখন উচ্চ আদালতের রায়ে আবার জিয়াউর রহমানের আইন ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’

অন্যদিকে এই রায়কে স্বাগত জানায় বিএনপি

তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ছুটি নিয়ে বিদেশে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। ছুটি শেষে কানাডা যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনে এসে পৌঁছায়। পরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিচারপতি সিনহার পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেন।

পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের রায় বাতিল চেয়ে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করে। ২০২২ সালের আগস্টে তা আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠায়। এরপর বেশ কয়েকবার রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে।

রিভিউ শুনানি ১১ জুলাই

গতকাল আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকার ২৭ নম্বরে থাকা এই আইটেমটি (রিভিউ আবেদন) শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।

পরে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বেঞ্চে না থাকায় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ বিষয়টি শুনানির জন্য আগামী ১১ জুলাই দিন ধার্য করে।

এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

পরে মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের কার্যতালিকায় ছিল। এটি শুনানির জন্য সকালে মেনশন করেছিলাম। কিন্তু প্রধান বিচারপতি আজ বেঞ্চে না থাকায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ আবেদনটি শুনানির জন্য আগামী ১১ জুলাই দিন ধার্য করেছেন।’

back to top