alt

জাতীয়

অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ঋণ ও বিনিয়োগ গুরুত্ব পাবে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে

কূটনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ জুলাই সোমবার ৩ দিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন যাচ্ছেন। সফরকালে তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে চুক্তি ও সমঝোতা সই হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের চীন সফরকালে ১০ থেকে ১৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিয়েছে দুই দেশ। তবে শেষ পর্যন্ত কতটি চুক্তি-সমঝোতা স্বাক্ষর হবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তবে শীর্ষ পর্যায়ের এ সফরে বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি, বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনা, বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে চীনের বিনিয়োগ বাড়ানো এবং তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীন ও ভারতের বিষয় নিয়ে আলোচনায় গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালের পরও বাংলাদেশে রপ্তানি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ।

এবারের সফর এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে চীনের কাছে প্রায় ৭শ’ কোটি ডলার বিশেষ ঋণ দেয়ার অনুরোধ জানাতে পারে। বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের জুন মাসে সর্বশেষ চীন সফরে গিয়েছিলেন। ৫ বছর পর আবারও চীন সফরে যাচ্ছেন তিনি।

সমকালীন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বাস্তবতায় শেখ হাসিনার এবারের চীন সফর অত্যন্ত গুরুত্ববহ বলে মেন করছেন দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, চীন আমাদের বড় উন্নয়ন অংশীদার। আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন যেমন কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা সেতুসহ অনেক আইকনিক স্থাপনায় চীন আমাদের সহায়তা করেছে। আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় চীন ভূমিকা পালন করে আসছে। উন্নয়ন অভিযাত্রা যেন বেগবান হয়, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে এটাই প্রাধান্য পাবে।

অন্যদিকে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফর হবে আরেকটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর হবে গেম চেঞ্জার।

তিনি বলেন,‘এই সফর আগামী পাঁচ বছর বা তারও বেশি সময় চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।’ সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি নতুন রূপরেখা দেবে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে দুই দেশের অবস্থানের সমন্বয় করার সুযোগ দেবে বলে আশা ব্যক্ত করেন চীনা রাষ্ট্রদূত।

প্রধানমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক রাজনৈতিক বিশ্বাসকে আরও গভীর করতে চায় দেশটি। একই সঙ্গে দুই দেশের উন্নয়ন কৌশলগুলোকে আরও একত্রিত, বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতার উচ্চ অগ্রগতি, বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে গতি বাড়ানো, বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি নতুন স্তরে উন্নীত করতে চায় বেইজিং।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন। চীন থেকে বছরে প্রায় ২ হাজার ৪শ’ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। কিন্তু চীনে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ১০০ কোটি ডলার। এ বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। যদি চীন বাংলাদেশে শিল্প খাতে আরো বিনিয়োগ করে শিল্প-কারখানা স্থাপন করে তবে বাণিজ্য বৈষম্য কমানোর সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে চীনা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য ৯৮ শতাংশ শুল্ক অব্যাহতি দিয়ে চীনে বা যেকোনো দেশে পাঠানোর সুযোগ দিতে সম্মত বাংলাদেশ। এ বিষয় প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে আলোচনার টেবিলে তুলবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে এখন রিজার্ভ সংকট অত্যন্ত প্রকট। এ সংকট কাটাতে বাংলাদেশ চীনের সহযোগিতা চাইতে পারে এবার সফরকালে। এ সম্পর্কে ঢাকায় চীনের সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা দিতে চায় চীন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকালে এ বিষয়ে যুগান্তরকারী সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করি।

বাংলাদেশ বেশ কিছুদিন ধরেই ব্রিকসের সদস্য হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য সম্প্রতি ভারতে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিকসের সদস্য হতে সমর্থন চেয়েছেন। এবার সফরকালে চীনের সমর্থনের অনুরোধ জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য এ ব্যাপারে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ব্রিকসের অংশীদার দেশ হতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে চীন। বাংলাদেশ শীঘ্রই ব্রিকসের সদস্য হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চীনের বিশেষ সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হবে। এই খাতে অন্তত ৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে এই গ্যাস আনার জন্য পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হবে একশ’ কোটি মার্কিন ডলার। সফরকালে চীনের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি হতে পারে।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে চরম সংকটে আছে বাংলাদেশ। এ সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ, মায়ানমার ও চীন ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে একযোগে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের আরো বেশি সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে একটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করবে বাংলাদেশ। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই) ও বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস যৌথভাবে এই বাণিজ্য সামিটের আয়োজন করছে।

চীন ও বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনার জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়িক অধিবেশনে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন।

ছবি

ঢাকার যানজট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১১ প্রস্তাব

ছবি

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক

ছবি

বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

দুর্গাপূজায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ৭টি বিশেষ ট্রেন

ছবি

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

ছবি

দুপুরের মধ্যে ঝড় হতে পারে যেসব অঞ্চলে

ছবি

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী মারা গেছেন

বাবা-মায়ের পর মারা গেলো অগ্নিদগ্ধ শিশু বায়জিদও

ছবি

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সম্পর্ক ‘নতুন উচ্চতায়’ নিতে চান মুহাম্মদ ইউনূস-আনোয়ার ইব্রাহিম

ছবি

আরও বাংলাদেশি জনশক্তি মালয়েশিয়ায় নিতে সহযোগিতা চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি

ছবি

নিত্যপণ্যের ‘আগুন’ দামে পুড়ছে কম আয়ের মানুষ

ছবি

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ৩১৭ জন, মৃত্যু নেই

ছবি

মালয়েশিয়ায় ১৮ হাজার বাংলাদেশিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ

ছবি

কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ ৩ দিনের রিমান্ডে

ছবি

ঢাকায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী

ছবি

ওয়াশিংটন-নিউইয়র্ক সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব

ছবি

বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে গ্যাসকূপ খননের কাজ দেওয়া হবে না: সরকারের সিদ্ধান্ত

ছবি

সাইবার নিরাপত্তা আইনে ১৪টি সংশোধন প্রস্তাব: বিতর্কের মধ্যে সরকারের উদ্যোগ

ছবি

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতির’ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিজিবি

ছবি

বাংলাদেশ-মালদ্বীপ-কাতার বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু

টাইম ১০০ নেক্সট ২০২৪-এ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম

ছবি

সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গ্রেপ্তার

ছবি

৫ সংস্কার কমিশনের সদস্যদের নাম দিয়ে প্রজ্ঞাপন, থাকবে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিও

‘আয়নাঘরের’ আলামত নষ্টের প্রমাণ পেয়েছে গুম কমিশন

ছবি

গবেষণা: শিশুদের খেলনায় ক্ষতিকর রাসায়নিক

ছবি

অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত থেকে জনগণের স্বার্থ রক্ষার তাগিদ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের

গজারিয়ায় আওয়ামী লীগের ৫ কর্মী আটক,হত্যা মামলায় জেল হাজতে প্রেরণ

ছবি

ডিসি নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ

ছবি

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হচ্ছে: আইন উপদেষ্টা

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কের পদত্যাগ

ছবি

পাহাড়ে সাম্প্রতিক ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ তিন দফা সুপারিশ জনসংহতি সমিতির

ছবি

বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির তথ্য জনগণের কাছে চাইল পর্যালোচনা কমিটি

সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত

ছবি

শুক্রবার ঢাকা আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী

ছবি

সাবেক এমপি মাসুদা সিদ্দিক রোজী ২ দিনের রিমান্ডে

tab

জাতীয়

অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ঋণ ও বিনিয়োগ গুরুত্ব পাবে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে

কূটনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ জুলাই সোমবার ৩ দিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন যাচ্ছেন। সফরকালে তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে চুক্তি ও সমঝোতা সই হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের চীন সফরকালে ১০ থেকে ১৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিয়েছে দুই দেশ। তবে শেষ পর্যন্ত কতটি চুক্তি-সমঝোতা স্বাক্ষর হবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তবে শীর্ষ পর্যায়ের এ সফরে বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি, বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনা, বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে চীনের বিনিয়োগ বাড়ানো এবং তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীন ও ভারতের বিষয় নিয়ে আলোচনায় গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালের পরও বাংলাদেশে রপ্তানি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ।

এবারের সফর এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে চীনের কাছে প্রায় ৭শ’ কোটি ডলার বিশেষ ঋণ দেয়ার অনুরোধ জানাতে পারে। বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের জুন মাসে সর্বশেষ চীন সফরে গিয়েছিলেন। ৫ বছর পর আবারও চীন সফরে যাচ্ছেন তিনি।

সমকালীন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বাস্তবতায় শেখ হাসিনার এবারের চীন সফর অত্যন্ত গুরুত্ববহ বলে মেন করছেন দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, চীন আমাদের বড় উন্নয়ন অংশীদার। আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন যেমন কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা সেতুসহ অনেক আইকনিক স্থাপনায় চীন আমাদের সহায়তা করেছে। আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় চীন ভূমিকা পালন করে আসছে। উন্নয়ন অভিযাত্রা যেন বেগবান হয়, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে এটাই প্রাধান্য পাবে।

অন্যদিকে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফর হবে আরেকটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর হবে গেম চেঞ্জার।

তিনি বলেন,‘এই সফর আগামী পাঁচ বছর বা তারও বেশি সময় চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।’ সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি নতুন রূপরেখা দেবে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে দুই দেশের অবস্থানের সমন্বয় করার সুযোগ দেবে বলে আশা ব্যক্ত করেন চীনা রাষ্ট্রদূত।

প্রধানমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক রাজনৈতিক বিশ্বাসকে আরও গভীর করতে চায় দেশটি। একই সঙ্গে দুই দেশের উন্নয়ন কৌশলগুলোকে আরও একত্রিত, বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতার উচ্চ অগ্রগতি, বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে গতি বাড়ানো, বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি নতুন স্তরে উন্নীত করতে চায় বেইজিং।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন। চীন থেকে বছরে প্রায় ২ হাজার ৪শ’ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। কিন্তু চীনে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ১০০ কোটি ডলার। এ বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। যদি চীন বাংলাদেশে শিল্প খাতে আরো বিনিয়োগ করে শিল্প-কারখানা স্থাপন করে তবে বাণিজ্য বৈষম্য কমানোর সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে চীনা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য ৯৮ শতাংশ শুল্ক অব্যাহতি দিয়ে চীনে বা যেকোনো দেশে পাঠানোর সুযোগ দিতে সম্মত বাংলাদেশ। এ বিষয় প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে আলোচনার টেবিলে তুলবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে এখন রিজার্ভ সংকট অত্যন্ত প্রকট। এ সংকট কাটাতে বাংলাদেশ চীনের সহযোগিতা চাইতে পারে এবার সফরকালে। এ সম্পর্কে ঢাকায় চীনের সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা দিতে চায় চীন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকালে এ বিষয়ে যুগান্তরকারী সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করি।

বাংলাদেশ বেশ কিছুদিন ধরেই ব্রিকসের সদস্য হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য সম্প্রতি ভারতে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিকসের সদস্য হতে সমর্থন চেয়েছেন। এবার সফরকালে চীনের সমর্থনের অনুরোধ জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য এ ব্যাপারে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ব্রিকসের অংশীদার দেশ হতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে চীন। বাংলাদেশ শীঘ্রই ব্রিকসের সদস্য হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চীনের বিশেষ সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হবে। এই খাতে অন্তত ৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে এই গ্যাস আনার জন্য পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হবে একশ’ কোটি মার্কিন ডলার। সফরকালে চীনের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি হতে পারে।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে চরম সংকটে আছে বাংলাদেশ। এ সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ, মায়ানমার ও চীন ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে একযোগে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের আরো বেশি সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে একটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করবে বাংলাদেশ। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই) ও বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস যৌথভাবে এই বাণিজ্য সামিটের আয়োজন করছে।

চীন ও বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনার জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়িক অধিবেশনে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন।

back to top