alt

জাতীয়

গুলিবিদ্ধ অনেকেই হারিয়েছেন পা

মোস্তাফিজুর রহমান : শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪

রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোটা আন্দোলনে আহতরা-সংবাদ

বেডে শুয়ে থরথর করে কাঁপছে নাদিম (১৬)। হাঁটুতে গুলি লাগায় তার ডান পা কেটে ফেলা হয়েছে।

গত শনিবার (২০ জুলাই) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ চিটাগাংরোড এলাকায় তার পায়ে গুলি লাগে। তখন কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ চলছিল। আহত হওয়ার পর কয়েক হাসপাতাল ঘুরে এখন সে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ক্যাজুয়ালিটি ২নং ওয়ার্ডের জি-১৯ নাম্বার বেডে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরের পর ছেলে পাশে বসেছিলেন বাবা দুলাল হোসেন (৪৮) ও মা মরিয়ম (৪২)।

ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। দুলাল হোসেন বলে উঠেন, ‘আমার ছেলে আন্দোলনে ছিল না। সে অ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ করে। সেদিন সে ১ নম্বর ওয়ার্ডের (সিদ্ধিরগঞ্জ) গলির ভেতরে ছিল। কিন্তু হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হলে দৌড়াদৌড়ির মধ্যেই পেছন থেকে গুলি লাগে তার।

‘গুলি এমন জায়গায় লাগছে যে ছেলের পা কেটে ফেলতে হয়েছে। কোনোদিন আর সে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। আর কোনোদিন হাঁটতে পারবে না।

‘ছেলের এই পরিস্থিতিতে কোনো বাবা ঠিক থাকতে পারে? আমি আল্লাহ কাছে বিচার চাই।’

এই ওয়ার্ডেই নাদিমের সঙ্গে ভর্তি ছিল আরও ৫৫ জন। তারা সবাই কোটা আন্দোলনের সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হয়েছেন। তাদের প্রায় সবারই গুলিবিদ্ধ বলে জানান হাসপাতালের দায়িত্বরতরা।

ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা যায়, রোগীদের কারো শরীরে এক গুলি, কারো শরীরে দুই গুলি, আবার কারো শরীরে বহু গুলি লেগেছে। আবার কেউ কেউ মারধরেরও শিকার হয়েছেন। এ ধরনের আরো রোগী রয়েছেন হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ড ও ক্যাবিনেও।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ১৭ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত কোটা আন্দোলনে আহত ৩৩০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ জুলাই ৩ জন, ১৮ জুলাই ১৭ জন, ১৯ জুলাই ১৮৬ জন, ২০ জুলাই ৭০ জন, ২১ জুলাই ৩৭ জন ও ২২ জুলাই ১৭ জন রোগী ভর্তি হন।

জানতে চাইলে হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম শুক্রবার সংবাদকে বলেন, ‘যেসব আহত রোগী ভর্তি হয়েছিলেন তাদের অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। বর্তমানে ৬৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে প্রায় সবাই বুলেট ইঞ্জুরড।’

গুলিবিদ্ধদের প্রসঙ্গে ডা. জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘প্রথম দুই দিনের (১৭ ও ১৮ জুলাই) রোগীরা বলেছেন, আন্দোলন চলাকালে তাদের ওপর গুলি হয়েছে। তবে পরবর্তীতে যে রোগীরা আসেন, তারা বলছেন তারা কেউই আন্দোলনকারী নন। আর তাদের গুলি কোথায় থেকে এসে লেগেছে, তাও বলতে পারছেন না।’

গুলিবিদ্ধরা কারা

শেরে-ই-বাংলা নগরের বেশকিছু হাসপাতাল থাকায় ছুটির দিনেও মানুষের আনাগোনা থাকে বেশি। কিন্তু শুক্রবার অনেকটাই জনশূন্য ছিল। তবে পঙ্গু হাসপাতালের কাছাকাছি এলেই মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে। হাসপাতালে ঢুকলে রোগীর স্বজনদের ছুটাছুটি চোখে পড়ে।

হাসপাতালের অনুসন্ধ্যান রুমে গিয়ে কথা বললে দায়িত্বরতরা জানান, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডেই কোটা আন্দোলনের জেরে আহতরা ভর্তি রয়েছেন। তবে ক্যাজুয়ালিটি ২ নং ওয়ার্ডে বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। যেখানে সব রোগীই আন্দোলনের জেরে আহত।

জরুরি বিভাগ ভবনের নিচতলায় এই ক্যাজুয়ালিটি ২ ওয়ার্ড। ওয়ার্ড ঢুকতেই জি-২৪ নং বেডে শুয়ে আছেন রাকিব (১৯)। পেশায় সেলুনকর্মী। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। শনিবার (২০ জুলাই) গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ চিটাগাংরোড এলাকায়। বুলেটের কারণে তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছে।

কথা হলে শুয়ে থেকেই রাকিব বলেন, ‘ শনিবার বিকেলে চিটাগাং রোড গলির ভেতরে ছিলাম। কোন দিক থেকে এসেছে বলতে পারবো না। ১টা গুলি লাগে পায়ে।’

জি-৩৭ নম্বর বেডে শুয়ে ছিলেন মেহেদী হাসান (১৮)। পেশায় ইলেকট্রিক ম্যান। তার বাড়ি বরিশাল ঝালকাঠি।

মেহেদী বলেন, ‘গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে শনিরআখড়া কাজে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হই। হাঁটুর নিচে ১টা গুলি লেগেছে। গুলি লেগে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। তবে গুলি কোন দিক থেকে এসে লাগে বলতে পারে না।’

জি-১৭নং বেডে শুয়ে ছিলেন নূর ইসলাম (২৫)। পেশায় গামেন্টসকর্মী (আল মুসলিম)। বাড়ি কুড়িগ্রাম। তবে আহত হয়েছেন সাভার এলাকায়।

‘শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। তখন আন্দোলন চলছিল। হঠাৎ একটি বুলেট এসে লাগে।’

‘আমার বউ ৯ মাসের আন্তঃসত্ত্বা। বাবা, মা, ভাই, বোন আছে। সংসার আমাকে চালাতে হয়। এখন কি করবো বুঝতে পরছি না।’

জি-১৮নং বেডে ছিলেন ড্রাইভার সজিব খান (৩২)। বরিশাল সদরে তার বাড়ি। তবে তার কাজের এলাকা রাজধানীর গুলশান। থাকেন উত্তর বাড্ডা এলাকায়।

‘শুক্রবার গুলশান থেকে বাসায় ফেরা পথে বুলেট লাগে। ছররা গুলিও লাগে। এর মধ্যে একটি বুলেট পেছন থেকে এসে লাগে।’

সজিবের স্ত্রী-ছেলে নিয়ে সংসার। বাবা মা তিন ভাই বোন রয়েছে। কিন্তু আহত হয়ে সংসার চালানো নিয়ে চিন্তায় আছেন বলে জানান।

জি-০৪নং বেডে ভর্তি মো. বাদশা (২৫)। গাজীপুর র‌্যাংকস কোম্পানিতে কাজ করেন। গত শুক্রবার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন গাজীপুরের শিববাড়ি এলাকায়।

‘রাত পৌনে ৯টার দিকে শিববাড়ি মোড়ে বাজার করতে এসেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ এলোপাতারি গুলি আসতে থাকে। ছররা গুলি, আসল গুলি সবই লেগেছে,’ ভাষ্য বাদশার।

জি-০৩ নং বেডে ছিলেন ইলেকট্রেশিয়ান নাছির উদ্দিন (৩৫)। তার বাড়ি কুমিল্লায়। দুই ছেলে, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে থাকেন রামপুরা বনশ্রী এলাকায়।

বিছানায় শুয়ে থেকে নাছির বলেন, ‘বি-ব্লক রোড ৫ এর গলির মধ্যেই ছিলাম। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চা খেতে নেমে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ ওপর থেকে গুলি আসে। একটা মেইন বুলেট এসে লাগে।’

জি-২১ বেডে ভর্তি ছিলেন শিক্ষার্থী নাদিম (১৬)। তার বড় ভাই নাঈম বলেন, ‘সে মাতুয়াইল ভয়েস স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ে। শুক্রবার বিকেলে রায়েরবাগ এলাকায় ডান পায়ের হাঁটুতে হঠাৎ ১টা বুলেট।’

জি-২০ এ ভর্তি ছিলেন নাছির (১৭)। মিরপুর এলাকায় সে মোটর মেকানিক দোকানে কাজ করে বলে জানায়।

‘জুমার নামাজের পর বাসায় খেতে যাওয়ার সময় মিরপুর-১ তেলের পাম্পের ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এর মধেই গুলি লাগে।’

এই ওয়ার্ডের জি-২৩ বেডে ছিলেন মো. আরফান আলী (৪০)। তার বাড়ি মানিকগঞ্জ। তিনি ট্রাফিক পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার মিরপুর ট্রাফিক বক্সে ছিলেন। তখন আন্দোলনকারীরা তাকে মেরে আহত করে।

‘আমরা কয়েকজন ছিলাম। কিন্তু আন্দোলনকারীরা অনেক ছিল। তারা এসেই এলোপাতারি মারা শুরু করে। আমি সেন্সলেস হলে ড্রেনে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। ভাগ্য ভালো বেঁচে আছি।’

ছবি

গুম তদন্তে জাতিসংঘের সহায়তা চাইলেন মুহাম্মদ ইউনূস

সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুলসহ ১০ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

কোভিড: আরও ২৫ জন শনাক্ত, মৃত্যু ১

শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ভাড়া : আরও ৪ রুটে চালু করলো বিমান

স্বামীসহ সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু

হাসিনাকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ

আগামী ৫ দিন অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, কমবে তাপমাত্রা

গ্রেপ্তারের পর দুই মামলার আসামিকে ছেড়ে দিলো পুলিশ

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ২৩৪ জন আক্রান্ত, মোট মৃত্যু ৩০ জনের

ছবি

বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের ছেলেদের সম্পত্তির তথ্য জানিয়ে যুক্তরাজ্যে চিঠি

ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে বন্দরের কন্টেইনার জট

ছবি

নগর ভবনে ইশরাকের সভা, ব্যানারে ‘মাননীয় মেয়র’ লেখা

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা ফের শুরু মঙ্গলবার

ছবি

ঈদযাত্রার ১৫ দিনে সড়কে নিহত ৩৯০, আহত ১১৮২

ছবি

লন্ডন বৈঠকের সিদ্ধান্ত দ্রুত নির্বাচন কমিশনকে জানান: সরকারকে সালাহউদ্দিন

ছবি

বিতর্কিত তিন নির্বাচনে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

গুম ঠেকাতে স্থায়ী কমিশন গঠনে দ্রুতই আইন হচ্ছে

ছবি

ঈদের ছুটির পর ফের আন্দোলনে সচিবালয়ের কর্মচারীরা

ছবি

ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে এনটিআরসিএর রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ

ছবি

‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্তের পথে, প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়েও ভাবছে সরকার

লেবানন প্রবাসী বাংলাদেশীদের চলাফেরায় সতর্ক থাকার অনুরোধ

ছবি

ব্রিটিশ রাজার সম্মাননা পেলেন সিআরপি প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি টেইলরসহ তিন জন স্বেচ্ছাসেবক

ছবি

গুম প্রতিরোধ ও অভিযোগ নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশকে আরও সহযোগিতা করবে জাতিসংঘ

ছবি

গুম নিয়ে জাতিসংঘের প্রশংসা, আইন আসছে জুলাইয়ের আগেই: আসিফ নজরুল

ছবি

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের কিছু কিছু জায়গায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে: আইন উপদেষ্টা

হাজারীবাগে তরুণ খুন, পরিবারের দাবি বাবাই হত্যাকারী

আ’লীগ নেতার কারাগারে আত্মহত্যার চেষ্টা, ঢামেকে মৃত্যু

এক ঘরে দুই পীর হতে পারে না: বদিউল

‘মেয়েকে বিয়ে না দেয়ায়’ বাবাকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ৩

ছবি

কুয়াকাটায় এক কোরাল বিক্রি ২৪ হাজার ১শ’ ৫০ টাকায়

দেড় লাখ টাকায় ৫ যুবককে ছাড়ার অভিযোগ

করোনাভাইরাসে আরও ২৬ জন শনাক্ত, মৃত্যু ১

জয়সহ অনেকে জাতীয় পতাকা পরিবর্তনের গুজব ছড়াচ্ছেন: প্রেস উইং

সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সংকট

ছবি

ঈদের ছুটি শেষে খুলেছে কুয়েট, ক্লাস শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা

ছবি

এনটিআরসিএ সনদধারীদের সচিবালয়মুখী মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিপেটা

tab

জাতীয়

গুলিবিদ্ধ অনেকেই হারিয়েছেন পা

মোস্তাফিজুর রহমান

রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোটা আন্দোলনে আহতরা-সংবাদ

শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪

বেডে শুয়ে থরথর করে কাঁপছে নাদিম (১৬)। হাঁটুতে গুলি লাগায় তার ডান পা কেটে ফেলা হয়েছে।

গত শনিবার (২০ জুলাই) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ চিটাগাংরোড এলাকায় তার পায়ে গুলি লাগে। তখন কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ চলছিল। আহত হওয়ার পর কয়েক হাসপাতাল ঘুরে এখন সে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ক্যাজুয়ালিটি ২নং ওয়ার্ডের জি-১৯ নাম্বার বেডে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরের পর ছেলে পাশে বসেছিলেন বাবা দুলাল হোসেন (৪৮) ও মা মরিয়ম (৪২)।

ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। দুলাল হোসেন বলে উঠেন, ‘আমার ছেলে আন্দোলনে ছিল না। সে অ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ করে। সেদিন সে ১ নম্বর ওয়ার্ডের (সিদ্ধিরগঞ্জ) গলির ভেতরে ছিল। কিন্তু হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হলে দৌড়াদৌড়ির মধ্যেই পেছন থেকে গুলি লাগে তার।

‘গুলি এমন জায়গায় লাগছে যে ছেলের পা কেটে ফেলতে হয়েছে। কোনোদিন আর সে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। আর কোনোদিন হাঁটতে পারবে না।

‘ছেলের এই পরিস্থিতিতে কোনো বাবা ঠিক থাকতে পারে? আমি আল্লাহ কাছে বিচার চাই।’

এই ওয়ার্ডেই নাদিমের সঙ্গে ভর্তি ছিল আরও ৫৫ জন। তারা সবাই কোটা আন্দোলনের সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হয়েছেন। তাদের প্রায় সবারই গুলিবিদ্ধ বলে জানান হাসপাতালের দায়িত্বরতরা।

ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা যায়, রোগীদের কারো শরীরে এক গুলি, কারো শরীরে দুই গুলি, আবার কারো শরীরে বহু গুলি লেগেছে। আবার কেউ কেউ মারধরেরও শিকার হয়েছেন। এ ধরনের আরো রোগী রয়েছেন হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ড ও ক্যাবিনেও।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ১৭ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত কোটা আন্দোলনে আহত ৩৩০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ জুলাই ৩ জন, ১৮ জুলাই ১৭ জন, ১৯ জুলাই ১৮৬ জন, ২০ জুলাই ৭০ জন, ২১ জুলাই ৩৭ জন ও ২২ জুলাই ১৭ জন রোগী ভর্তি হন।

জানতে চাইলে হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম শুক্রবার সংবাদকে বলেন, ‘যেসব আহত রোগী ভর্তি হয়েছিলেন তাদের অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। বর্তমানে ৬৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে প্রায় সবাই বুলেট ইঞ্জুরড।’

গুলিবিদ্ধদের প্রসঙ্গে ডা. জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘প্রথম দুই দিনের (১৭ ও ১৮ জুলাই) রোগীরা বলেছেন, আন্দোলন চলাকালে তাদের ওপর গুলি হয়েছে। তবে পরবর্তীতে যে রোগীরা আসেন, তারা বলছেন তারা কেউই আন্দোলনকারী নন। আর তাদের গুলি কোথায় থেকে এসে লেগেছে, তাও বলতে পারছেন না।’

গুলিবিদ্ধরা কারা

শেরে-ই-বাংলা নগরের বেশকিছু হাসপাতাল থাকায় ছুটির দিনেও মানুষের আনাগোনা থাকে বেশি। কিন্তু শুক্রবার অনেকটাই জনশূন্য ছিল। তবে পঙ্গু হাসপাতালের কাছাকাছি এলেই মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে। হাসপাতালে ঢুকলে রোগীর স্বজনদের ছুটাছুটি চোখে পড়ে।

হাসপাতালের অনুসন্ধ্যান রুমে গিয়ে কথা বললে দায়িত্বরতরা জানান, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডেই কোটা আন্দোলনের জেরে আহতরা ভর্তি রয়েছেন। তবে ক্যাজুয়ালিটি ২ নং ওয়ার্ডে বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। যেখানে সব রোগীই আন্দোলনের জেরে আহত।

জরুরি বিভাগ ভবনের নিচতলায় এই ক্যাজুয়ালিটি ২ ওয়ার্ড। ওয়ার্ড ঢুকতেই জি-২৪ নং বেডে শুয়ে আছেন রাকিব (১৯)। পেশায় সেলুনকর্মী। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। শনিবার (২০ জুলাই) গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ চিটাগাংরোড এলাকায়। বুলেটের কারণে তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছে।

কথা হলে শুয়ে থেকেই রাকিব বলেন, ‘ শনিবার বিকেলে চিটাগাং রোড গলির ভেতরে ছিলাম। কোন দিক থেকে এসেছে বলতে পারবো না। ১টা গুলি লাগে পায়ে।’

জি-৩৭ নম্বর বেডে শুয়ে ছিলেন মেহেদী হাসান (১৮)। পেশায় ইলেকট্রিক ম্যান। তার বাড়ি বরিশাল ঝালকাঠি।

মেহেদী বলেন, ‘গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে শনিরআখড়া কাজে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হই। হাঁটুর নিচে ১টা গুলি লেগেছে। গুলি লেগে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। তবে গুলি কোন দিক থেকে এসে লাগে বলতে পারে না।’

জি-১৭নং বেডে শুয়ে ছিলেন নূর ইসলাম (২৫)। পেশায় গামেন্টসকর্মী (আল মুসলিম)। বাড়ি কুড়িগ্রাম। তবে আহত হয়েছেন সাভার এলাকায়।

‘শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। তখন আন্দোলন চলছিল। হঠাৎ একটি বুলেট এসে লাগে।’

‘আমার বউ ৯ মাসের আন্তঃসত্ত্বা। বাবা, মা, ভাই, বোন আছে। সংসার আমাকে চালাতে হয়। এখন কি করবো বুঝতে পরছি না।’

জি-১৮নং বেডে ছিলেন ড্রাইভার সজিব খান (৩২)। বরিশাল সদরে তার বাড়ি। তবে তার কাজের এলাকা রাজধানীর গুলশান। থাকেন উত্তর বাড্ডা এলাকায়।

‘শুক্রবার গুলশান থেকে বাসায় ফেরা পথে বুলেট লাগে। ছররা গুলিও লাগে। এর মধ্যে একটি বুলেট পেছন থেকে এসে লাগে।’

সজিবের স্ত্রী-ছেলে নিয়ে সংসার। বাবা মা তিন ভাই বোন রয়েছে। কিন্তু আহত হয়ে সংসার চালানো নিয়ে চিন্তায় আছেন বলে জানান।

জি-০৪নং বেডে ভর্তি মো. বাদশা (২৫)। গাজীপুর র‌্যাংকস কোম্পানিতে কাজ করেন। গত শুক্রবার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন গাজীপুরের শিববাড়ি এলাকায়।

‘রাত পৌনে ৯টার দিকে শিববাড়ি মোড়ে বাজার করতে এসেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ এলোপাতারি গুলি আসতে থাকে। ছররা গুলি, আসল গুলি সবই লেগেছে,’ ভাষ্য বাদশার।

জি-০৩ নং বেডে ছিলেন ইলেকট্রেশিয়ান নাছির উদ্দিন (৩৫)। তার বাড়ি কুমিল্লায়। দুই ছেলে, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে থাকেন রামপুরা বনশ্রী এলাকায়।

বিছানায় শুয়ে থেকে নাছির বলেন, ‘বি-ব্লক রোড ৫ এর গলির মধ্যেই ছিলাম। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চা খেতে নেমে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ ওপর থেকে গুলি আসে। একটা মেইন বুলেট এসে লাগে।’

জি-২১ বেডে ভর্তি ছিলেন শিক্ষার্থী নাদিম (১৬)। তার বড় ভাই নাঈম বলেন, ‘সে মাতুয়াইল ভয়েস স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ে। শুক্রবার বিকেলে রায়েরবাগ এলাকায় ডান পায়ের হাঁটুতে হঠাৎ ১টা বুলেট।’

জি-২০ এ ভর্তি ছিলেন নাছির (১৭)। মিরপুর এলাকায় সে মোটর মেকানিক দোকানে কাজ করে বলে জানায়।

‘জুমার নামাজের পর বাসায় খেতে যাওয়ার সময় মিরপুর-১ তেলের পাম্পের ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এর মধেই গুলি লাগে।’

এই ওয়ার্ডের জি-২৩ বেডে ছিলেন মো. আরফান আলী (৪০)। তার বাড়ি মানিকগঞ্জ। তিনি ট্রাফিক পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার মিরপুর ট্রাফিক বক্সে ছিলেন। তখন আন্দোলনকারীরা তাকে মেরে আহত করে।

‘আমরা কয়েকজন ছিলাম। কিন্তু আন্দোলনকারীরা অনেক ছিল। তারা এসেই এলোপাতারি মারা শুরু করে। আমি সেন্সলেস হলে ড্রেনে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। ভাগ্য ভালো বেঁচে আছি।’

back to top