বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গ্যাস ফিল্ড, জ্বালানি তেলের ডিপোসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিশেষায়িত ও পৃথক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কেপিআইয়ের আওতায় এসব স্থাপনায় আনসার বাহিনীর সদস্য নিযুক্ত থাকলেও তা বড় ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এ বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। ওই আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের সাব-স্টেশন ও বিদ্যুৎ অফিসে হামলা, ভাঙচুর, বিতরণ লাইন ও কমিউনিকেশন সিস্টেমের ক্ষতি করেছে নাশকতাকারীরা। আগুন দেয়া হয়েছে জরুরি বিদ্যুৎ সেবায় নিয়োজিত যানবাহনে।
ওই সময় দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরোপুরি অচল করে দেয়ার পরিকল্পনা নাশকতাকারীদের ছিল বলেও দাবি করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সংবাদকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অচল করে দেয়া।’
পরিকল্পিত এসব হামলায় বিদ্যুৎ খাতে এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ওপর ভর করে ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা’ এসব হামলা চালিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অতীতেও আমরা দেখেছি সরকার হটানোর আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা একই ধরণের নাশকতা করেছে।’
রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এসব (বিদ্যুৎ-জ্বালানি) স্থাপনার নিরাপত্তা রক্ষায় একটি বিশেষ বাহিনী গঠন করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই এই খাতে পৃথক নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে। বাংলাদেশেও এটি আরও আগেই করা প্রয়োজন ছিল।
এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, তিনি ২০১৬ সালে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তবে সেটি আলোর মুখ দেখেনি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বিদ্যুতের যেসব স্থাপনায় ভাঙচুর ও হামলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগ আলী অফিস, সেখানকার উপকেন্দ্র, জাপান গার্ডেন সিটি উপকেন্দ্র, আজিমপুর উপকেন্দ্র, নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, সেখানকার বিদ্যুৎ বিতরণের আঞ্চলিক অফিস, মাদারীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২। ওই সময় জরুরি বিদ্যুৎ সেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন যানবাহনেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
বিকল্প যোগাযোগ, সাইবার সিকিউরিটি
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের বিভিন্ন সেবা দিন দিন ডিজিটাইজড হচ্ছে। বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডকে স্মার্ট গ্রিডে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিতরণ কোম্পানিগুলোকে স্ক্যাডা (সুপারভাইজরি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা একুইজিসন) সিস্টেমের আওতায় আনা হচ্ছে, যা পাওয়ার গ্রিড অটোমেশনের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। গ্রাহকদের দেয়া হচ্ছে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার। এসব কারণে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ইন্টারনেট প্রযুক্তির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছ।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনে নাশকতা যুক্ত হলে দেশে অচল অবস্থা তৈরি হয়। ঢাকায় ডাটা সেন্টারে আগুন দেয়ায় বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট সেবা।
ফলে বিদ্যুতের ও গ্যাসের প্রিপেইড গ্রাহকদের রিচার্জ সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। গ্যাস, বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন লাখো গ্রাহক। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর জোনাল অফিসে বিল প্রদানে হাজার হাজার মানুষের জটলা তৈরি হয়।
সংকট কাটাতে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নির্দেশে ২৪ ঘণ্টা বিল গ্রহণের সেব চালু করা হয়। পাশাপাশি প্রিপেইড গ্রাহকদের ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স বাড়িয়ে ভোগান্তি হ্রাস করার নির্দেশ দেন তিনি। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় জানিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিমন্ত্রীর তড়িৎ সিদ্ধান্তে এবং নির্দেশনায় এটা সম্ভব হয়েছে।
তবে এটা টেকসই সমাধান নয় মন্তব্য করে নসরুল হামিদ বলেন, ইমার্জেন্সির (জরুরি) সময় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা (অল্টারনেটিভ কমিউনিকেশন সিস্টেম) চালু করাও দরকার। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট সেবা ডিজিটাইজ থেকে স্মার্ট প্রযুক্তির দিকে এগুচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কারণে সাইবার সিকিউরিটি আরও শক্তিশালী করতে হবে। gf
বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪
বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গ্যাস ফিল্ড, জ্বালানি তেলের ডিপোসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিশেষায়িত ও পৃথক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কেপিআইয়ের আওতায় এসব স্থাপনায় আনসার বাহিনীর সদস্য নিযুক্ত থাকলেও তা বড় ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এ বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। ওই আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের সাব-স্টেশন ও বিদ্যুৎ অফিসে হামলা, ভাঙচুর, বিতরণ লাইন ও কমিউনিকেশন সিস্টেমের ক্ষতি করেছে নাশকতাকারীরা। আগুন দেয়া হয়েছে জরুরি বিদ্যুৎ সেবায় নিয়োজিত যানবাহনে।
ওই সময় দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরোপুরি অচল করে দেয়ার পরিকল্পনা নাশকতাকারীদের ছিল বলেও দাবি করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সংবাদকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অচল করে দেয়া।’
পরিকল্পিত এসব হামলায় বিদ্যুৎ খাতে এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ওপর ভর করে ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা’ এসব হামলা চালিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অতীতেও আমরা দেখেছি সরকার হটানোর আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা একই ধরণের নাশকতা করেছে।’
রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এসব (বিদ্যুৎ-জ্বালানি) স্থাপনার নিরাপত্তা রক্ষায় একটি বিশেষ বাহিনী গঠন করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই এই খাতে পৃথক নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে। বাংলাদেশেও এটি আরও আগেই করা প্রয়োজন ছিল।
এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, তিনি ২০১৬ সালে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তবে সেটি আলোর মুখ দেখেনি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বিদ্যুতের যেসব স্থাপনায় ভাঙচুর ও হামলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগ আলী অফিস, সেখানকার উপকেন্দ্র, জাপান গার্ডেন সিটি উপকেন্দ্র, আজিমপুর উপকেন্দ্র, নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, সেখানকার বিদ্যুৎ বিতরণের আঞ্চলিক অফিস, মাদারীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২। ওই সময় জরুরি বিদ্যুৎ সেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন যানবাহনেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
বিকল্প যোগাযোগ, সাইবার সিকিউরিটি
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের বিভিন্ন সেবা দিন দিন ডিজিটাইজড হচ্ছে। বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডকে স্মার্ট গ্রিডে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিতরণ কোম্পানিগুলোকে স্ক্যাডা (সুপারভাইজরি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা একুইজিসন) সিস্টেমের আওতায় আনা হচ্ছে, যা পাওয়ার গ্রিড অটোমেশনের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। গ্রাহকদের দেয়া হচ্ছে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার। এসব কারণে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ইন্টারনেট প্রযুক্তির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছ।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনে নাশকতা যুক্ত হলে দেশে অচল অবস্থা তৈরি হয়। ঢাকায় ডাটা সেন্টারে আগুন দেয়ায় বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট সেবা।
ফলে বিদ্যুতের ও গ্যাসের প্রিপেইড গ্রাহকদের রিচার্জ সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। গ্যাস, বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন লাখো গ্রাহক। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর জোনাল অফিসে বিল প্রদানে হাজার হাজার মানুষের জটলা তৈরি হয়।
সংকট কাটাতে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নির্দেশে ২৪ ঘণ্টা বিল গ্রহণের সেব চালু করা হয়। পাশাপাশি প্রিপেইড গ্রাহকদের ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স বাড়িয়ে ভোগান্তি হ্রাস করার নির্দেশ দেন তিনি। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় জানিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিমন্ত্রীর তড়িৎ সিদ্ধান্তে এবং নির্দেশনায় এটা সম্ভব হয়েছে।
তবে এটা টেকসই সমাধান নয় মন্তব্য করে নসরুল হামিদ বলেন, ইমার্জেন্সির (জরুরি) সময় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা (অল্টারনেটিভ কমিউনিকেশন সিস্টেম) চালু করাও দরকার। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট সেবা ডিজিটাইজ থেকে স্মার্ট প্রযুক্তির দিকে এগুচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কারণে সাইবার সিকিউরিটি আরও শক্তিশালী করতে হবে। gf