alt

জাতীয়

রেন্টালের অভাব পূরণে টেকসই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঘাটতি

ফয়েজ আহমেদ তুষার : মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

ব্যয়বহুল রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চুক্তি শেষে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এসব কেন্দ্র বন্ধ করে দিলে বিদ্যুৎ চাহিদার যে ঘাটতি তৈরি হবে তা পূরণে দেশে বেশকিছু টেকসই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজন বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মাঝারি ও বড় সক্ষমতার কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল প্রায় দেড় দশক আগে। যথাসময়ে সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার যোগান দিতে ৩-৫ বছর মেয়াদী চুক্তিতে ২০১১-১২ সালে উৎপাদনে আসা দ্রুত ভাড়াভিত্তিক (কুইক রেন্টাল) ও ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে।

এসব রেন্টাল-কুইক রেন্টালের কারণে পিডিবির হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসানের বিষয়ে আলোচনা, সমালোচনা আছে। লোকসান পোষাতে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের ‘পকেট কাটা’ হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিগত দ্বাদশ সংসদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার কমিটির এক বৈঠকে রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আর না বাড়াতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছিলেন।

তবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই বৈঠকে বলা হয়েছিল, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়িত না হওয়ায় ভাড়াভিত্তিক কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

পায়রা, রামপালের মত বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসার পর রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বন্ধ করে দেয়ার সময় এসেছে বলে আভাস দিতে শুরু করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধও করা হয়। তবে রামপাল প্রত্যাশা অনুযায়ী টেকসই না হওয়ায় চাহিদার ঘাটতি রয়েই যায় এবং রেন্টাল কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ আবার বাড়ানো হয়।

কয়েক মাস আগেও সামিট, ওরিয়নসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপের রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ায় তৎকালীন সরকার।

পায়রা, রামপাল
বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা-তাপভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। এই কেন্দ্রটি সর্বোচ্চ ১২৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে পারে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিকানায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব।

পায়রার প্রথম ইউনিটটি ২০২০ সালের ১৫ মে এবং দ্বিতীয় ইউনিটটি একই বছর ৮ ডিসেম্বর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে।

আর রামপালের প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসে ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় ইউনিটটি আসে ২০২৪ সালের ১২ মার্চে।

বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হয়। কেন্দ্রটিতে বাংলাদেশ ও ভারতের রাষ্ট্রীয় দুই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানে পিডিবি ও এনটিপিসির সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব। এই কেন্দ্রটি সর্বোচ্চ ১২৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে পারে।

মাতারবাড়ি, এস এস পাওয়ার
এরপর উৎপাদনে আসে কক্সবাজারের মহেশখালিতে নির্মিত মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে নির্মিত এস আলমের ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

এরমধ্যে মাতারবাড়ির প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে যথাক্রমে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ে। জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়ন এবং রাষ্ট্রীয় কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) অধীনে এই কেন্দ্রটি নির্মিত হয়। এই কেন্দ্রটি সর্বোচ্চ ১১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে পারে।

দেশীয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ এবং চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রি ও এইচটিজির যৌথ উদ্যোগে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) গঠিত কোম্পানি ‘এস এস পাওয়ার ওয়ান’ বাঁশখালীতে নির্মাণ করে ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। দ্বিতীয় ইউনিটটি রয়েছে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে। এস এস পাওয়ার ওয়ান কোম্পানিতে এস আলমের অধীনস্থ ৬টি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব ৭০ শতাংশ। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ চীনের দুই কোম্পানির। এই কেন্দ্রটি সর্বোচ্চ ১২২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে পারে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের হাজর হাজার কোটি টাকা পাচারের তথ্য বেরিয়ে এলে জটিলতায় পড়ে এস এস পাওয়ার। বিদ্যুৎকেন্দ্রেটির এলসি আটকে যাওয়ায় কয়লা আমদানিতে সংকট তৈরি হয়।

**টেকসই কতটুকু**
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গত বুধবার সংবাদকে বলেন, ‘সাসটেইনেবল যদি ধরি তাহলে পায়রা। উৎপাদন বিবেচনায় এটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার বিচারেও সফল। এটি আমাদের গ্রিডে নির্ভরযোগ্য অবদান রাখছে। অধিকাংশ সময় সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ আমরা পায়রা থেকে নিচ্ছি, যা মোট চাহিদার দশ শতাংশ বলতে পারেন। ডলার সংকটে কয়লার বিল পরিশোধে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় একবার পায়রার উৎপাদন কিছুদিন বন্ধ ছিল। তখন বোঝা গেছে কেন্দ্রটির অবদান। লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছিল।’

রামপাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের আশা ছিল এই কেন্দ্রটিও বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। কিন্তু তা হয়নি। একে তো এটি উৎপাদনে এসেছে অনেক দেরি করে। তার উপর, কখনো ইলেকট্রিক্যাল প্রোটেকশন সিস্টেমে ত্রুটি, কখনো বয়লারের টিউব ফেটে যাওয়া, কুলিং হিটারে ছিদ্রসহ কারিগরি নানা কারণে এটি অন-অফের মধ্যে রয়েছে। জ্বালানি সংকট তো রয়েছেই। ফলে প্রত্যাশা অনুযায়ি সর্ভিস পাওয়া যাচ্ছে না রামপাল থেকে।’

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং এস আলমের এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুটোই নতুন, সবেমাত্র এসেছে। অবজারভেশন করতে হবে। একটার নির্মাতারাতো আবার মান্ডি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে বেকায়দায়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর বলা যাবে এগুলো কতটুকো সাসটেইনেবল।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘রামপাল, মাতারবাড়ি, এসএস পাওয়ার যদি পায়রার মতো সাপোর্ট দিতে পারে তাহলে রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সবগুলোই বন্ধ করে দেয়া যাবে।’

**বিদ্যুৎ চাহিদা**
গরমের দিন এবং সেচ মৌসুমে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৬-১৭ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছালেও অন্যান্য সময় দৈনিক গড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো চাহিদা থাকে। এটি কখনও সাড়ে ১১ হাজারে নেমে যায় আবার কখনও সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াটেও উঠে। যদিও শীতকালে এই চাহিদা ৭-৯ হাজার মেগাওয়াটে ওঠা-নামা করে।

কয়লাভিত্তিক বড় চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারলে গরমের সময়ও দেশে দৈনিক মোট চাহিদার প্রায় ৩৩ শতাংশ পূরণ হওয়ার কথা।

**এনএলডিসি ও পিডিবির তথ্য**
পিডিবির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কারিগরি ত্রুটি, জ্বালানি সংকটসহ নানা জটিলতায় অন্য তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ধারাবাহিক উৎপাদন ব্যহত হলেও পায়রা এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।

ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্য অনুযায়ি, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র দৈনিক গড়ে ১২০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। যা গড়ে দেশের দৈনিক মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ।

বিভিন্ন সময় এনএলডিসির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পায়রা থেকে পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ ১২৪৪ মেগাওয়াট এবং অফ-পিক আওয়ারে ১২০০ মেগাওয়াট বা কখনও এরচেয়ে কিছু কম বিদ্যুৎ নিয়েছে পিডিবি।

এতে আরও দেখা যায়, গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে অবদান বিবেচনায় পায়রার তুলনায় অন্য তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পিছিয়ে আছে।

পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত শুক্রবার পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হয়েছে ১২০০-১২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। একই দিনে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়েছে ৫০৮-৫১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

ওই দিন মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পাওয়া গেছে ৩৫০-৩৫২ মেগাওয়াট এবং এস আলমের এস এস পাওয়ার থেকে পাওয়া গেছে ৪০০-৫৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

এর আগের দিন বৃহস্পতিবার পায়রা থেকে সর্বোচ্চ ১২২০ মেগাওয়াট, রামপাল থেকে ৫১২ মেগাওয়াট, মাতারবাড়ি থেকে ৩৭৪ মেগাওয়াট, এস এস পাওয়ার থেকে ৬১২ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।

এর আগে বুধবার পায়ারা থেকে পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ১২৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। রামপাল থেকে ৫১৫ মেগাওয়াট, মাতারবাড়ি থেকে ৪০২ মেগাওয়াট এবং এস এস পাওয়ার থেকে পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ৬১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

গত বুধ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পায়রা থেকে প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে ১২২৮ মেগাওয়াট; রামপাল থেকে ৫১৩ মেগাওয়াট; এস এস পাওয়ার থেকে ৬০১ মেগাওয়াট এবং মাতারবাড়ি থেকে ৩৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। এর আগের দিনগুলোতেও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে।

**মেয়াদ বৃদ্ধি ১৪টির, বন্ধ ২৪টি**
আইপিপি, রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে গত এক যুগে মেয়াদোত্তীর্ণ ফার্নেস তেলভিত্তিক ৭৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৯টি এবং গ্যাসভিত্তিক ৫৫৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

এই সময়ের মধ্যে ডিজেলভিত্তিক মোট ১৪০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১২টি, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক মোট ৩৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি এবং গ্যাসভিত্তিক মোট ৬১৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আটটিসহ সর্বমোট ২৩৯৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৪টি আইপিপি, রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অবসর দেয়া (বন্ধ করা) হয়েছে। এরমধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা একেবারেই কমে গেছে এমন কেন্দ্রও রয়েছে।

**সিপিডির যুক্তি**
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সম্প্রতি ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার: সিপিডি’র প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর দাবি জানায়।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের দেশে ৪০ শতাংশ উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্যাপাসিটি আছে। নতুন করে আর এক মেগাওয়াট যুক্ত না হলেও ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতে ঘাটতি হবে না। তাই রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও লো-এফিশিয়েন্ট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়া দরকার। তবে সেটা এই মুহূর্তে নয়; নতুন করে যেন আর চুক্তি করা না হয়।’

ছবি

ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র আতিক গ্রেফতার

ছবি

১২ বিচারপতি ‘বিচারিক দায়িত্ব’ পালন করতে পারবেন না

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভুটানের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

ছবি

১০ অতিরিক্ত আইজিপি’র বদল

ছবি

৭ মার্চ, ১৫ আগস্টসহ জাতীয় আট দিবস বাতিল হচ্ছে

ছবি

মাইনাস টু’ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

ছবি

সাগরে নিম্নচাপ, বন্দরে দূরবর্তী সতর্ক সংকেত

শনিবার আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে ফের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

পার্বত্য চট্টগ্রামের সহিংসতায় নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘের

ছবি

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ: আইনি প্রক্রিয়া মেনে পদক্ষেপ নেবে প্রসিকিউশন টিম

হাইকোর্ট ঘেরাওয়ের ঘোষণা সারজিস-হাসনাতের

ছবি

বেসিসের সাবেক সভাপতি আলমাস কবীর গ্রেপ্তারের পর জামিন পেলেন

ছবি

বিচারকের অসৌজন্যমূলক আচরণ : বেঞ্চ ভেঙে দিলেন প্রধান বিচারপতি

ছবি

জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসা-পুনর্বাসনে সরকার বদ্ধপরিকর: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যোগ দিলেন চেয়ারম্যানসহ বিচারিক প্যানেল

ছবি

আব্দুর রাজ্জাক ও ফারুক খান ২ দিনের রিমান্ডে

ছবি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাকচাপায় শিশুসহ নিহত ৩

ছবি

বেসিসের সাবেক সভাপতি আলমাস কবীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার

ছবি

সাকিবের দেশে আসা-যাওয়ায় আইনি বাধা নেই : আসিফ মাহমুদ

ছবি

শপথ নিয়েছেন পিএসসির চেয়ারম্যান

ছবি

মিরপুর ১০ মেট্রো স্টেশন চালু, সংস্কারে খরচ ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা

ছবি

সাবেক বিমানমন্ত্রী ফারুক খান গ্রেপ্তার

ছবি

বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ জানালেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ রওনক হাসান রিটন নিহত

গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়দের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা

ছবি

নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি: ডিম সংকটে বাজারে বিশৃঙ্খলা

ছবি

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হতে আবেদনের ‘ভিড়’: সাড়ে ৪ হাজার পদের বিপরীতে ‘৬০ হাজার’ আবেদন

ছবি

রাখাইনে বাস্তুচ্যুতদের জন্য ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

সেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির এবার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ছবি

পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান গোলাম মর্তূজা মজুমদার

ছবি

সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গ্রেফতার

সিলেটে ‘সুযোগসন্ধানী’ এক সমন্বয়ককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা একাংশের

ছবি

মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশন চালু হচ্ছে কাল

ছবি

নোয়াখালীতে গ্রেপ্তার তিনজনকে নিয়ে যা বললেন সারজিস

ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশে পুরুষের ৩৫, নারীর ৩৭ বছর করার সুপারিশ

tab

জাতীয়

রেন্টালের অভাব পূরণে টেকসই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঘাটতি

ফয়েজ আহমেদ তুষার

মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

ব্যয়বহুল রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চুক্তি শেষে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এসব কেন্দ্র বন্ধ করে দিলে বিদ্যুৎ চাহিদার যে ঘাটতি তৈরি হবে তা পূরণে দেশে বেশকিছু টেকসই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজন বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মাঝারি ও বড় সক্ষমতার কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল প্রায় দেড় দশক আগে। যথাসময়ে সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার যোগান দিতে ৩-৫ বছর মেয়াদী চুক্তিতে ২০১১-১২ সালে উৎপাদনে আসা দ্রুত ভাড়াভিত্তিক (কুইক রেন্টাল) ও ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে।

এসব রেন্টাল-কুইক রেন্টালের কারণে পিডিবির হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসানের বিষয়ে আলোচনা, সমালোচনা আছে। লোকসান পোষাতে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের ‘পকেট কাটা’ হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিগত দ্বাদশ সংসদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার কমিটির এক বৈঠকে রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আর না বাড়াতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছিলেন।

তবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই বৈঠকে বলা হয়েছিল, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়িত না হওয়ায় ভাড়াভিত্তিক কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

পায়রা, রামপালের মত বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসার পর রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বন্ধ করে দেয়ার সময় এসেছে বলে আভাস দিতে শুরু করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধও করা হয়। তবে রামপাল প্রত্যাশা অনুযায়ী টেকসই না হওয়ায় চাহিদার ঘাটতি রয়েই যায় এবং রেন্টাল কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ আবার বাড়ানো হয়।

কয়েক মাস আগেও সামিট, ওরিয়নসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপের রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ায় তৎকালীন সরকার।

পায়রা, রামপাল
বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা-তাপভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। এই কেন্দ্রটি সর্বোচ্চ ১২৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে পারে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিকানায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব।

পায়রার প্রথম ইউনিটটি ২০২০ সালের ১৫ মে এবং দ্বিতীয় ইউনিটটি একই বছর ৮ ডিসেম্বর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে।

আর রামপালের প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসে ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় ইউনিটটি আসে ২০২৪ সালের ১২ মার্চে।

বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হয়। কেন্দ্রটিতে বাংলাদেশ ও ভারতের রাষ্ট্রীয় দুই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানে পিডিবি ও এনটিপিসির সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব। এই কেন্দ্রটি সর্বোচ্চ ১২৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে পারে।

মাতারবাড়ি, এস এস পাওয়ার
এরপর উৎপাদনে আসে কক্সবাজারের মহেশখালিতে নির্মিত মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে নির্মিত এস আলমের ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

এরমধ্যে মাতারবাড়ির প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে যথাক্রমে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ে। জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়ন এবং রাষ্ট্রীয় কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) অধীনে এই কেন্দ্রটি নির্মিত হয়। এই কেন্দ্রটি সর্বোচ্চ ১১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে পারে।

দেশীয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ এবং চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রি ও এইচটিজির যৌথ উদ্যোগে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) গঠিত কোম্পানি ‘এস এস পাওয়ার ওয়ান’ বাঁশখালীতে নির্মাণ করে ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। দ্বিতীয় ইউনিটটি রয়েছে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে। এস এস পাওয়ার ওয়ান কোম্পানিতে এস আলমের অধীনস্থ ৬টি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব ৭০ শতাংশ। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ চীনের দুই কোম্পানির। এই কেন্দ্রটি সর্বোচ্চ ১২২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে পারে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের হাজর হাজার কোটি টাকা পাচারের তথ্য বেরিয়ে এলে জটিলতায় পড়ে এস এস পাওয়ার। বিদ্যুৎকেন্দ্রেটির এলসি আটকে যাওয়ায় কয়লা আমদানিতে সংকট তৈরি হয়।

**টেকসই কতটুকু**
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গত বুধবার সংবাদকে বলেন, ‘সাসটেইনেবল যদি ধরি তাহলে পায়রা। উৎপাদন বিবেচনায় এটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার বিচারেও সফল। এটি আমাদের গ্রিডে নির্ভরযোগ্য অবদান রাখছে। অধিকাংশ সময় সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ আমরা পায়রা থেকে নিচ্ছি, যা মোট চাহিদার দশ শতাংশ বলতে পারেন। ডলার সংকটে কয়লার বিল পরিশোধে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় একবার পায়রার উৎপাদন কিছুদিন বন্ধ ছিল। তখন বোঝা গেছে কেন্দ্রটির অবদান। লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছিল।’

রামপাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের আশা ছিল এই কেন্দ্রটিও বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। কিন্তু তা হয়নি। একে তো এটি উৎপাদনে এসেছে অনেক দেরি করে। তার উপর, কখনো ইলেকট্রিক্যাল প্রোটেকশন সিস্টেমে ত্রুটি, কখনো বয়লারের টিউব ফেটে যাওয়া, কুলিং হিটারে ছিদ্রসহ কারিগরি নানা কারণে এটি অন-অফের মধ্যে রয়েছে। জ্বালানি সংকট তো রয়েছেই। ফলে প্রত্যাশা অনুযায়ি সর্ভিস পাওয়া যাচ্ছে না রামপাল থেকে।’

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং এস আলমের এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুটোই নতুন, সবেমাত্র এসেছে। অবজারভেশন করতে হবে। একটার নির্মাতারাতো আবার মান্ডি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে বেকায়দায়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর বলা যাবে এগুলো কতটুকো সাসটেইনেবল।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘রামপাল, মাতারবাড়ি, এসএস পাওয়ার যদি পায়রার মতো সাপোর্ট দিতে পারে তাহলে রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সবগুলোই বন্ধ করে দেয়া যাবে।’

**বিদ্যুৎ চাহিদা**
গরমের দিন এবং সেচ মৌসুমে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৬-১৭ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছালেও অন্যান্য সময় দৈনিক গড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো চাহিদা থাকে। এটি কখনও সাড়ে ১১ হাজারে নেমে যায় আবার কখনও সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াটেও উঠে। যদিও শীতকালে এই চাহিদা ৭-৯ হাজার মেগাওয়াটে ওঠা-নামা করে।

কয়লাভিত্তিক বড় চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারলে গরমের সময়ও দেশে দৈনিক মোট চাহিদার প্রায় ৩৩ শতাংশ পূরণ হওয়ার কথা।

**এনএলডিসি ও পিডিবির তথ্য**
পিডিবির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কারিগরি ত্রুটি, জ্বালানি সংকটসহ নানা জটিলতায় অন্য তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ধারাবাহিক উৎপাদন ব্যহত হলেও পায়রা এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।

ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্য অনুযায়ি, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র দৈনিক গড়ে ১২০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। যা গড়ে দেশের দৈনিক মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ।

বিভিন্ন সময় এনএলডিসির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পায়রা থেকে পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ ১২৪৪ মেগাওয়াট এবং অফ-পিক আওয়ারে ১২০০ মেগাওয়াট বা কখনও এরচেয়ে কিছু কম বিদ্যুৎ নিয়েছে পিডিবি।

এতে আরও দেখা যায়, গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে অবদান বিবেচনায় পায়রার তুলনায় অন্য তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পিছিয়ে আছে।

পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত শুক্রবার পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হয়েছে ১২০০-১২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। একই দিনে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়েছে ৫০৮-৫১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

ওই দিন মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পাওয়া গেছে ৩৫০-৩৫২ মেগাওয়াট এবং এস আলমের এস এস পাওয়ার থেকে পাওয়া গেছে ৪০০-৫৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

এর আগের দিন বৃহস্পতিবার পায়রা থেকে সর্বোচ্চ ১২২০ মেগাওয়াট, রামপাল থেকে ৫১২ মেগাওয়াট, মাতারবাড়ি থেকে ৩৭৪ মেগাওয়াট, এস এস পাওয়ার থেকে ৬১২ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।

এর আগে বুধবার পায়ারা থেকে পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ১২৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। রামপাল থেকে ৫১৫ মেগাওয়াট, মাতারবাড়ি থেকে ৪০২ মেগাওয়াট এবং এস এস পাওয়ার থেকে পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ৬১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

গত বুধ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পায়রা থেকে প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে ১২২৮ মেগাওয়াট; রামপাল থেকে ৫১৩ মেগাওয়াট; এস এস পাওয়ার থেকে ৬০১ মেগাওয়াট এবং মাতারবাড়ি থেকে ৩৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। এর আগের দিনগুলোতেও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে।

**মেয়াদ বৃদ্ধি ১৪টির, বন্ধ ২৪টি**
আইপিপি, রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে গত এক যুগে মেয়াদোত্তীর্ণ ফার্নেস তেলভিত্তিক ৭৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৯টি এবং গ্যাসভিত্তিক ৫৫৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

এই সময়ের মধ্যে ডিজেলভিত্তিক মোট ১৪০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১২টি, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক মোট ৩৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি এবং গ্যাসভিত্তিক মোট ৬১৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আটটিসহ সর্বমোট ২৩৯৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৪টি আইপিপি, রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অবসর দেয়া (বন্ধ করা) হয়েছে। এরমধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা একেবারেই কমে গেছে এমন কেন্দ্রও রয়েছে।

**সিপিডির যুক্তি**
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সম্প্রতি ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার: সিপিডি’র প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর দাবি জানায়।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের দেশে ৪০ শতাংশ উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্যাপাসিটি আছে। নতুন করে আর এক মেগাওয়াট যুক্ত না হলেও ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতে ঘাটতি হবে না। তাই রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও লো-এফিশিয়েন্ট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়া দরকার। তবে সেটা এই মুহূর্তে নয়; নতুন করে যেন আর চুক্তি করা না হয়।’

back to top