alt

জাতীয়

বায়ু দুষণে বছরে দেশে ১ লাখ ২ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

বায়ু দুষণের প্রভাবে প্রতিবছর দেশে ৫ হাজার ২৫৮ জন শিশুসহ ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া বায়ু দূষণের কারণে হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, হাপানি-শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ফুসফুস ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধীতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

শনিবার ‘বাংলাদেশে সূক্ষ্মকণা বায়ু দূষণে জনস্বাস্থ্য প্রভাব’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। জাতীয় প্রেসক্লাবে সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি এন্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস)একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

শিশু মারা যায় ৫ হাজার ২৫৮ জন

গবেষণা বলছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দুষিত দেশের তালিকায় স্থান পায়। যেখানে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বালু কণার বার্ষিক মান (২ দশমিক ৫ পিএম) ৭৯দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম। যা বার্ষিক জাতীয় মানদণ্ড ৩৫ মাইক্রোগ্রামের দ্বিগুণের বেশি। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ(ডব্লিউএইচও) এর মানদণ্ড ৫ মাইক্রোগ্রামের ১৫ গুণ বেশি। বায়ুর এমন চরম দুষণ জনস্বাস্থ্যের ওপর অনিবার্য পরিণতি ডেকে আনছে। এমন দূষণের কারণে বিভিন্ন বয়সীরা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হবার পাশাপাশি ৫ বছর কম বয়সী শিশুদের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।

বায়ুমানের উন্নতি হলে ৮০ হাজার মানুষের জীবন রক্ষা সম্ভব

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে বায়ু দূষণের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়। যা কার্যকর করতে রাষ্ট্রীয় নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন গবেষকরা।

দেশ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে রাক্ষা পাবে

সিআরইসিএ-এর বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের জাতীয় বায়ু মানের উন্নতি করা গেলে মৃত্যুহার ১৯ শতাংশ কমবে, আয়ু ২১ শতাংশ বাড়বে ও অক্ষমতার সাথে বসবাস করা বছর (ওয়াইএলডি) ১২ শতাংশ কমানো সম্ভব।

এছাড়া ২০২১ সালের ডব্লিউএইচও নির্দেশিত বায়ুর মান প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম অর্জন করা সম্ভব হলে মৃত্যুহার ৭৯ শতাংশ কমানো সম্ভব। ফলে প্রতি বছর ৮১ হাজার ২৮২ মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে। এরফলে, হাপানি-শ্বাসকষ্ট, জরুরী চিকিৎসা, অকাল প্রসব ও বার্ষিক ২৬ কোটি ৩০ লাখ অসুস্থতাজনিত ছুটি এড়ানো সম্ভব হবে।

দেশে হাঁপানির কারণে বার্ষিক ৬ লাখ ৭০ হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বার্ষিক ২৬ কোটি ৩০ লাখ কর্মদিবস হারায়। বার্ষিক ৯ লাখ অকাল প্রসবের কারণে ৭ লাখ শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এসব স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে বিরাট অর্থনৈতিক ব্যয় জড়িত। এরমধ্যে উচ্চ চিকিৎসা ব্যয় ও কর্মক্শমতা কমে যায়। এসব হিসেব ধরে ২০১৯ সালের হিসেব মতে ব্যয়গুলি ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। যা দেশের জিডিপির প্রায় ৫শতাংশ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বায়ু দষণ কমার জন্য বিভিন্ন নীতি সুপারিশ:

কয়লা ও ডিজেলের মত কার্বণ নিঃসরণকারী জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহিত করা। এছাড়া ক্লিন পরিবহন ব্যবস্থা ও শিল্প সম্প্রসারণ দীর্ঘমেয়াদে পিএম ২ দশমিক ৫ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।কঠোরভাবে শিল্পে নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো শহরগুলোতে ধাপে ধাপে দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অধিক দুষণকারী শিল্প যেমন ইট ভাটা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিঃসরণ বন্ধ করতে হবে। এসব কাজ করতে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে হবে। ভূমিভিত্তিক ও স্যাটেলাইট ডেটা একত্রিত করে জাতীয় পর্যবেক্ষণ কাঠামো তৈরি করতে হবে।

সিআরইএ এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশ্লেষক ড্যানিয়েল নেসান বলেন, ‘সিআরইএ-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিভিন্ন বায়ু মানের মানদণ্ড, বাংলাদেশের বর্তমান মান এবং ২০০৫ ও ২০২১ সালের ডব্লিউএইচও এর নির্দেশিকা তুলনা করে দেখা গেছে যে, পিএম ২ধশমিক ৫ স্তরে সামান্য উন্নতিও জাতীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সুবিধা এনে দিতে পারে। কঠোর নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি গ্রহণের মাধ্যমে বায়ু দূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।’

ক্যাপস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এটি শুধু মানবদেহকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাই, এ মুহূর্ত থেকেই দূষণ পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ এবং নীতিমালা গ্রহণ করা না হলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বায়ুদূষণের কারণে গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হবে।’

সুইডিশ দূতাবাস বাংলাদেশ-এর ফার্স্ট সেক্রেটারি (পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন) মিসেস নায়োকা মার্টিনেজ –ব্যাকস্ট্রম বলেন, ‘বায়ুদূষণের পরিবেশগত সমস্যা মোকাবিলায় অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিষ্কার উৎপাদন ব্যবস্থা, জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা ও প্রণোদনা তৈরি, কার্যকর গণপরিবহন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ। সুইডিশ সরকার অন্যান্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের সাথে মিলে বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন- সামাজিক নিরাপত্তা জাল, নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণসহ নানাক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে সহায়তা প্রদান করছে এবং বাংলাদেশে গুরুতর বায়ুদূষণ হ্রাসে আরও সহযোগিতার আশা করছে।’

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দুষণ নিয়ন্ত্রণ ও আইন অনুবিভাগ) তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বায়ু দূষণ কমাতে সরকার সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে কাজ করছে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স-এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন দর্শনে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন। নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় জনস্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এ জন্য আইন সংস্কারসহ এর কঠোর প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।’

ছবি

শিগগিরই ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে পুতুলকে সরাতে দুই মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবে দুদক

ছবি

আরাকান আর্মির বিরুদ্ধেও তদন্ত হবে: জাতিসংঘ দূত

বিচারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে ট্রাইব্যুনালে জাতিসংঘের সহযোগিতা

ছবি

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কে চিড় ধরবে না : রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন

ছবি

দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ডেপুটি গভর্নরের বাসায় নগদ টাকা ও সঞ্চয়পত্র উদ্ধার

ছবি

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

ছবি

রূপপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ শোধের সুরাহা হয়ে যোবে : রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত

ছবি

বিডিআর বিদ্রোহ : বিস্ফোরক মামলায় দুই শতাধিক আসামির জামিন

ছবি

সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সময়সূচি অনুযায়ী নির্বাচন হবে: সিইসি

ছবি

সুন্দরবনে বেড়েছে হরিণ, তবে থেমে নেই শিকার

প্রশাসনের সব স্তরে ‘অনিয়ম ও অসমতা’ নিরসনের দাবি

বাংলাদেশকে নিয়ে ২০২৪ সালে ভারতীয় অপতথ্যের প্রবাহ: বিশ্লেষণে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

ছবি

শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদের সংকট: আদিবাসী গ্রাফিতি বিতর্কে প্রতিবাদ

ছবি

বনের ক্ষতি ও পরিবেশ সংকট: সরকারি–বেসরকারি প্রকল্পের প্রভাব

ছবি

উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কোটার সমালোচনা

ছবি

এক বছরে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, মেয়েদের সংখ্যা বেশি

ছবি

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরও ৪৭ বাংলাদেশি

ছবি

বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার

ছবি

সাড়ে পাঁচ মাসে ৪০ মাজারে হামলার তথ্য পেয়েছে পুলিশ : প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

ছবি

পদ্ধতিগত সংস্কার ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘন থামবে না: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্তে অভিমত নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

অবিবেচকভাবে ভ্যাট বাড়ানোয় আশ্চার্য হয়েছি : দেবপ্রিয়

ছবি

বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ গ্রেপ্তার

ছবি

পুলিশের বহরে যুক্ত হচ্ছে রাশিয়ান হেলিকপ্টার

ছবি

প্রতিদিন ফ্যাসিবাদ পুনরুৎপাদিত হচ্ছে, সতর্ক থাকতে বললেন সলিমুল্লাহ খান

ছবি

‘আদিবাসী’ শব্দ সরানো কর্তৃত্ববাদের এজেন্ডা বহাল রাখার ঘৃণ্য প্রয়াস: টিআইবি

ছবি

বাংলাদেশের জন্য পাঁচ বড় ঝুঁকি, শীর্ষে মূল্যস্ফীতি: ডব্লিউইএফ

ছবি

মায়ানমার থেকে এলো ২২ হাজার মেট্রিক টন চাল

ছবি

পুলিশের গুলিতেই মুগ্ধের মৃত্যু হয়েছে: স্নিগ্ধ

জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় যা আছে

ছবি

ঘোষণাপত্র: আরও আলোচনা চান সবাই

ছবি

সুইজারল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

শেখ পরিবারের নামে থাকা ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন

ছবি

‘ঢাকা-দিল্লির চুক্তিগুলো ভারত প্রকাশ করলেও বাংলাদেশ করে না’

tab

জাতীয়

বায়ু দুষণে বছরে দেশে ১ লাখ ২ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

বায়ু দুষণের প্রভাবে প্রতিবছর দেশে ৫ হাজার ২৫৮ জন শিশুসহ ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া বায়ু দূষণের কারণে হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, হাপানি-শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ফুসফুস ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধীতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

শনিবার ‘বাংলাদেশে সূক্ষ্মকণা বায়ু দূষণে জনস্বাস্থ্য প্রভাব’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। জাতীয় প্রেসক্লাবে সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি এন্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস)একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

শিশু মারা যায় ৫ হাজার ২৫৮ জন

গবেষণা বলছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দুষিত দেশের তালিকায় স্থান পায়। যেখানে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বালু কণার বার্ষিক মান (২ দশমিক ৫ পিএম) ৭৯দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম। যা বার্ষিক জাতীয় মানদণ্ড ৩৫ মাইক্রোগ্রামের দ্বিগুণের বেশি। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ(ডব্লিউএইচও) এর মানদণ্ড ৫ মাইক্রোগ্রামের ১৫ গুণ বেশি। বায়ুর এমন চরম দুষণ জনস্বাস্থ্যের ওপর অনিবার্য পরিণতি ডেকে আনছে। এমন দূষণের কারণে বিভিন্ন বয়সীরা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হবার পাশাপাশি ৫ বছর কম বয়সী শিশুদের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।

বায়ুমানের উন্নতি হলে ৮০ হাজার মানুষের জীবন রক্ষা সম্ভব

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে বায়ু দূষণের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়। যা কার্যকর করতে রাষ্ট্রীয় নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন গবেষকরা।

দেশ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে রাক্ষা পাবে

সিআরইসিএ-এর বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের জাতীয় বায়ু মানের উন্নতি করা গেলে মৃত্যুহার ১৯ শতাংশ কমবে, আয়ু ২১ শতাংশ বাড়বে ও অক্ষমতার সাথে বসবাস করা বছর (ওয়াইএলডি) ১২ শতাংশ কমানো সম্ভব।

এছাড়া ২০২১ সালের ডব্লিউএইচও নির্দেশিত বায়ুর মান প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম অর্জন করা সম্ভব হলে মৃত্যুহার ৭৯ শতাংশ কমানো সম্ভব। ফলে প্রতি বছর ৮১ হাজার ২৮২ মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে। এরফলে, হাপানি-শ্বাসকষ্ট, জরুরী চিকিৎসা, অকাল প্রসব ও বার্ষিক ২৬ কোটি ৩০ লাখ অসুস্থতাজনিত ছুটি এড়ানো সম্ভব হবে।

দেশে হাঁপানির কারণে বার্ষিক ৬ লাখ ৭০ হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বার্ষিক ২৬ কোটি ৩০ লাখ কর্মদিবস হারায়। বার্ষিক ৯ লাখ অকাল প্রসবের কারণে ৭ লাখ শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এসব স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে বিরাট অর্থনৈতিক ব্যয় জড়িত। এরমধ্যে উচ্চ চিকিৎসা ব্যয় ও কর্মক্শমতা কমে যায়। এসব হিসেব ধরে ২০১৯ সালের হিসেব মতে ব্যয়গুলি ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। যা দেশের জিডিপির প্রায় ৫শতাংশ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বায়ু দষণ কমার জন্য বিভিন্ন নীতি সুপারিশ:

কয়লা ও ডিজেলের মত কার্বণ নিঃসরণকারী জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহিত করা। এছাড়া ক্লিন পরিবহন ব্যবস্থা ও শিল্প সম্প্রসারণ দীর্ঘমেয়াদে পিএম ২ দশমিক ৫ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।কঠোরভাবে শিল্পে নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো শহরগুলোতে ধাপে ধাপে দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অধিক দুষণকারী শিল্প যেমন ইট ভাটা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিঃসরণ বন্ধ করতে হবে। এসব কাজ করতে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে হবে। ভূমিভিত্তিক ও স্যাটেলাইট ডেটা একত্রিত করে জাতীয় পর্যবেক্ষণ কাঠামো তৈরি করতে হবে।

সিআরইএ এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশ্লেষক ড্যানিয়েল নেসান বলেন, ‘সিআরইএ-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিভিন্ন বায়ু মানের মানদণ্ড, বাংলাদেশের বর্তমান মান এবং ২০০৫ ও ২০২১ সালের ডব্লিউএইচও এর নির্দেশিকা তুলনা করে দেখা গেছে যে, পিএম ২ধশমিক ৫ স্তরে সামান্য উন্নতিও জাতীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সুবিধা এনে দিতে পারে। কঠোর নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি গ্রহণের মাধ্যমে বায়ু দূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।’

ক্যাপস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এটি শুধু মানবদেহকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাই, এ মুহূর্ত থেকেই দূষণ পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ এবং নীতিমালা গ্রহণ করা না হলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বায়ুদূষণের কারণে গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হবে।’

সুইডিশ দূতাবাস বাংলাদেশ-এর ফার্স্ট সেক্রেটারি (পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন) মিসেস নায়োকা মার্টিনেজ –ব্যাকস্ট্রম বলেন, ‘বায়ুদূষণের পরিবেশগত সমস্যা মোকাবিলায় অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিষ্কার উৎপাদন ব্যবস্থা, জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা ও প্রণোদনা তৈরি, কার্যকর গণপরিবহন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ। সুইডিশ সরকার অন্যান্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের সাথে মিলে বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন- সামাজিক নিরাপত্তা জাল, নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণসহ নানাক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে সহায়তা প্রদান করছে এবং বাংলাদেশে গুরুতর বায়ুদূষণ হ্রাসে আরও সহযোগিতার আশা করছে।’

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দুষণ নিয়ন্ত্রণ ও আইন অনুবিভাগ) তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বায়ু দূষণ কমাতে সরকার সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে কাজ করছে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স-এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন দর্শনে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন। নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় জনস্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এ জন্য আইন সংস্কারসহ এর কঠোর প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।’

back to top