এস কে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের তদন্ত অব্যাহত
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি অভিযানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এস কে) সুর চৌধুরীর বাসা থেকে ১৬ লাখ ২৫ হাজার নগদ টাকা, সাড়ে চার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র এবং স্থায়ী আমানতের নথি উদ্ধার করা হয়েছে। দুদক সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় এই অভিযান পরিচালিত হয়।
রোববার দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানান, সংস্থার পরিচালক মো. সাইমুজ্জামানের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে এস কে সুরের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও সম্পদের নথি জব্দ করা হয়।
২০২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি দল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে। আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এস কে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজের ও তার নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর তাকে তার সম্পদের বিস্তারিত বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তিনি বিবরণী দাখিল না করায় তার বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
এস কে সুরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো পিকে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদার নামে-বেনামে একাধিক কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেন।
পিকে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে উঠে আসে, তার এই কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার সহযোগিতা ছিল। অভিযোগ আছে, ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব পালনকালে এস কে সুর পিকে হালদারকে ঋণ কেলেঙ্কারিতে সহায়তা করেন এবং এতে সুবিধা নেন।
২০২১ সালের জুলাইয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এস কে সুর ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে। একই বছর মার্চ মাসে হাইকোর্ট প্রশ্ন তোলে, কেন এস কে সুরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
২০২২ সালে দুদক এস কে সুরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে এবং তাকে তলব করে। একই বছরের আগস্টে তার ও তার পরিবারের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ক্ষমতার পালাবদলের পর এস কে সুরের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে দুদক। পরে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ অর্থ, সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য সম্পদের নথি উদ্ধার করা হয়।
পিকে হালদার তার আর্থিক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু এবং সাবেক সহকর্মীদের প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদে বসিয়ে তিনি এসব কোম্পানি থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণের অর্থ বিদেশে পাচার করেন।
২০২২ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পিকে হালদার দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের একটি আদালত তাকে অর্থ পাচারের একটি মামলায় জামিন দিয়েছে।
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এস কে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত এখনো চলমান। তার অবৈধ সম্পদের উৎস, বেনামি সম্পদের মালিকানা এবং পিকে হালদারের সঙ্গে তার যোগসাজশ নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করা হচ্ছে।
এস কে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালে ডেপুটি গভর্নর হিসেবে অবসর নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের কেলেঙ্কারি আর্থিক খাতের প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস করে। তাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।
দুদক জানিয়েছে, এস কে সুর চৌধুরী ও তার পরিবারের সম্পদ জব্দ এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এস কে সুর চৌধুরীর গ্রেপ্তার ও পিকে হালদারের কেলেঙ্কারির তদন্ত শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য নয়, পুরো আর্থিক খাতের সংস্কারের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এস কে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের তদন্ত অব্যাহত
রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি অভিযানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এস কে) সুর চৌধুরীর বাসা থেকে ১৬ লাখ ২৫ হাজার নগদ টাকা, সাড়ে চার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র এবং স্থায়ী আমানতের নথি উদ্ধার করা হয়েছে। দুদক সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় এই অভিযান পরিচালিত হয়।
রোববার দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানান, সংস্থার পরিচালক মো. সাইমুজ্জামানের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে এস কে সুরের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও সম্পদের নথি জব্দ করা হয়।
২০২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি দল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে। আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এস কে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজের ও তার নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর তাকে তার সম্পদের বিস্তারিত বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তিনি বিবরণী দাখিল না করায় তার বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
এস কে সুরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো পিকে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদার নামে-বেনামে একাধিক কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেন।
পিকে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে উঠে আসে, তার এই কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার সহযোগিতা ছিল। অভিযোগ আছে, ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব পালনকালে এস কে সুর পিকে হালদারকে ঋণ কেলেঙ্কারিতে সহায়তা করেন এবং এতে সুবিধা নেন।
২০২১ সালের জুলাইয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এস কে সুর ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে। একই বছর মার্চ মাসে হাইকোর্ট প্রশ্ন তোলে, কেন এস কে সুরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
২০২২ সালে দুদক এস কে সুরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে এবং তাকে তলব করে। একই বছরের আগস্টে তার ও তার পরিবারের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ক্ষমতার পালাবদলের পর এস কে সুরের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে দুদক। পরে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ অর্থ, সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য সম্পদের নথি উদ্ধার করা হয়।
পিকে হালদার তার আর্থিক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু এবং সাবেক সহকর্মীদের প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদে বসিয়ে তিনি এসব কোম্পানি থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণের অর্থ বিদেশে পাচার করেন।
২০২২ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পিকে হালদার দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের একটি আদালত তাকে অর্থ পাচারের একটি মামলায় জামিন দিয়েছে।
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এস কে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত এখনো চলমান। তার অবৈধ সম্পদের উৎস, বেনামি সম্পদের মালিকানা এবং পিকে হালদারের সঙ্গে তার যোগসাজশ নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করা হচ্ছে।
এস কে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালে ডেপুটি গভর্নর হিসেবে অবসর নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের কেলেঙ্কারি আর্থিক খাতের প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস করে। তাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।
দুদক জানিয়েছে, এস কে সুর চৌধুরী ও তার পরিবারের সম্পদ জব্দ এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এস কে সুর চৌধুরীর গ্রেপ্তার ও পিকে হালদারের কেলেঙ্কারির তদন্ত শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য নয়, পুরো আর্থিক খাতের সংস্কারের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।