alt

জাতীয়

৭ দফা দাবিতে অনড় অভ্যুত্থানে আহতরা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : রোববার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মিরপুর সড়কে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের অবরোধ-সংবাদ

উন্নত চিকিৎসাসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর শিশুমেলা সংলগ্ন মিরপুর সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন জুলাই আন্দোলনে আহতরা। এতে বন্ধ হয়ে গেছে এই রুটে যান চলাচল। দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। ভোগান্তিতে পড়েছেন এ রুটে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ। গতকাল বেলা ১১টার পর থেকেই শিশুমেলা সড়কে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ে আন্দোলন শুরু করেন জুলাই আন্দোলনে আহত পঙ্গু হাসপাতাল ও চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতরা। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে বলেও জানান তারা।

আন্দোলনকারী মো. আইয়ুব হোসেন বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা সড়কে অবস্থান করবো। যদি উপদেষ্টারা কেউ এসে আমাদের আশ্বস্ত করেন তবুও আমরা রাস্তা ছাড়বো না। তাদের ওপর থেকে আমাদের আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। এখন আর আশ্বাসে চলবে না। রাতের মধ্যে আমাদের দাবি আদায় না হলে আমরা সচিবালয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবো।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর শ্যামলী শিশুমেলার ফুটওভার ব্রিজের নিচে অবরোধ করে দাবি আদায়ের কর্মসূচি পালন করছেন তারা। ফলে গাবতলী থেকে ধানমন্ডিগামী ও ধানমন্ডিথেকে গাবতলী গামী সড়কের দুই পাশে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ গাড়ির জট। টানা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির ফলে গাড়ি থেকে নেমে শত শত মানুষ পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

রাজধানীর গাবতলী থেকে গুলিস্তানে যাচ্ছেন আরিফ হাসান। তিনি বলেন, গাবতলী থেকে গাড়িতে উঠেছিলাম গুলিস্তান যাবো। কিন্তু টেকনিক্যাল পার হতেই যানজটে আটকে যায় বাস। টেকনিক্যাল থেকে হাঁটতে হাঁটতে শ্যামলী পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আরও কতদূর হাঁটতে হবে কে জানে!

পরিবার নিয়ে আজিমপুর থেকে শিশু হাসপাতালে এসেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাচ্চাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য শিশু হাসপাতালে এসেছি। ধানমন্ডি পর্যন্ত এসে গাড়ি বন্ধের কারণে যানজটে পড়ি। পরে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে মোহাম্মদপুরের ভেতর দিয়ে অনেক কষ্টে এই পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি। এখানে সড়ক অবরোধের কারণে মোহাম্মদপুরের ভেতর দিয়েও অনেক যানজট লেগে গেছে।

দুপুর ২টা পর্যন্ত সরকারের তরফে কেউ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ওই সময় শ্যামলী এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে ছিলেন বৈষমবিরোধী আন্দোলনে আহতরা। তাদের একজন মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন নামে বলেন, তারা চান উপদেষ্টারা এখানে আসুক, তাদের সমস্যা সমাধান করুক। ‘আমরা শনিবার বিকেল থেকে রাস্তায় আছি, কিন্তু কেউ আসছে না। আমরা চাই, আমাদের দাবিগুলো পূরণ করা হোক। কেউ না আসলে আমরা রাস্তা ছাড়ব না। আমাদের কর্মসূচি চলবে।’ সড়কে অবস্থান নেয়া নাঈম শেখ নামের একজন বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত আশ্বাস পাইছি, কিন্তু কোনো আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি। রাতে রাস্তায় নামছি, কিন্তু এখনও আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। দাবি পূরণের ব্যবস্থা নেয়নি।

ডিএমপির শেরেবাংলা নগর ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার উদয় কুমার সাহা বলেন, ‘আগারগাঁও থেকে শ্যামলী ও শিশুমেলাগামী ছোট গাড়িগুলো ৬০ ফিট দিয়ে ঘুরিয়ে দিচ্ছি, আর বড় গাড়িগুলো পাসপোর্ট অফিসের সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ‘আর যেহেতু এখন শিশুমেলায় মিরপুরের মেইন রোড বন্ধ করে দিয়েছে, এখন ইনকামিং গাড়িগুলো আসা সম্ভব হচ্ছে না।’

ক্ষোভ ঝেড়ে আন্দোলনকারী মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘রাস্তা অবরোধ করে দেয়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। ‘অন্তর্বর্তী সরকার রাস্তা বন্ধ করতে আমাদের বাধ্য করেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা কী করছে, কী খাচ্ছে, কোথায় থাকছে সেই খবর কেউ নিচ্ছে না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা বুঝে গেছে সব শালারা বাটপার।’

শরীফ বলেন, ‘আমরা বলতে চাই আন্দোলন গতবারের আন্দোলনের মতো নয়। হাসিনার বন্দুকের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলাম। ‘অন্ধ হয়ে গেছি, খোঁড়া হয়ে গেছি, ভয় করি নাই। যদি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে বেঈমানি করা হয়, হাসিনা গেছে যে পথে তারাও যাবে সেই পথে।’

উন্নত চিকিৎসার দাবি জানালেও এ বিষয়ে কেউ ‘গুরুত্ব দিচ্ছেন না’ অভিযোগ করে শনিবার রাত ১০টার পর সড়কে নেমে আসেন পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন থাকা আহতরা। রোববার ২ফেব্রুয়ারি সকালে তাদেরকে পঙ্গু হাসপাতালের দুই পাশে রাস্তার ওপর বেঞ্চ, চেয়ার ও বাঁশ ফেলে আটকে রাখতে দেখা গেছে। আহতদের কেউ কেউ সড়কে বিছানা পেতে শুয়ে পড়েন। তাতে শিশু মেলা থেকে আগারগাঁও ট্রাফিক সিগন্যাল পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা শিশুমেলা মোড়ে অবস্থান নিলে মিরপুরে রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আন্দোলনকারীদের নেতা কোরবান শেখ হিল্লোল বলেন, ‘আজকে বিদেশি ডাক্তার এসেছিল। তারা আমাদের পরীক্ষা করে একটা মতামত দিয়েছে। আমাদের মধ্যে যাদের বিদেশ পাঠানো হয়েছে, তাদের আর আমাদের শারীরিক অবস্থা একই বলে ডাক্তারদের মতামতে ওঠে এসেছে। ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে আমাদের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু তারা কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। এ কারণে আবার পথে নেমেছি।’

হিল্লাল বলেন, ‘আমাদের কথা কেউ শুনছে না। আমাদের ভালো চিকিৎসার প্রয়োজন।’ উন্নত চিকিৎসার দাবিতে এর আগে নভেম্বরে সড়ক অবরোধ করেন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা। সরকার ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে তাদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি চিকিৎসার বিষয়টিও দেখভাল করা হচ্ছে। তবে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের অভিযোগ, তারা ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। সহায়তাও পেয়েছেন ‘সামান্য’।

এর আগে শনিবার রাতে পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেন জুলাই আন্দোলনে আহতরা। এসময় তারা সাত দফা দাবি জানান। সেগুলো হলো ১. চব্বিশের যোদ্ধাদের মধ্যে আহত এবং শহীদদের হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ বিচার করতে হবে। ২. বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের সরকারের বিভিন্ন পদ থেকে অপসারণ ও গ্রেপ্তার করতে হবে। ৩. আহতদের ক্যাটাগরি সঠিকভাবে প্রণয়ন। ৪. আহতদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে বাস্তবায়ন। ৫. আহতদের চিকিৎসার সর্বোচ্চ সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ৬. আহত এবং শহীদদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননাসহ প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং

৭. আহতদের আর্থিক অনুদানের অঙ্ক বৃদ্ধিসহ ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার বিষয় সুসংহত করতে হবে।

ছবি

বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেছিল ভাষা আন্দোলন

ছবি

অভিযানে সাদা পোশাকে মুখোশ পরিহিত ৫ ব্যক্তিকে শনাক্তের দাবি পরিবারের

এলপি গ্যাস: ১২ কেজিতে দাম বাড়লো ১৯ টাকা

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনা: সিলেটে একই পরিবারের ৪ জনসহ দুই জেলায় ৭ জনের মৃত্যু

ছবি

তোফাজ্জল হত্যা: অভিযোগপত্রে নারাজি ঢাবির, আদেশ ১৮ ফেব্রুয়ারি

ছবি

তিতুমীর: দাবির মুখে নত হবে না সরকার, জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা

ছবি

মোংলা বন্দরের উন্নয়নে চীনের সহায়তায় নতুন প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

ট্যাক্স রিটার্ন না দিলে নোটিস, শুরু হলো এনবিআরের অভিযান

ছবি

রমজানে পণ্যের সংকট হবে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি, আত্মহত্যার হুমকি দিলেন আহতরা

ছবি

নিবন্ধনকেন্দ্রে নিরাপত্তা দিতে আইজিপিকে ইসির নির্দেশ

ছবি

ইজতেমার কারণে ‘ব্লকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি শিথিল করলো শিক্ষার্থীরা

ছবি

আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণকালে ২ জন আটক

ছবি

আজ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের শীর্ষে ঢাকা

ছবি

‘আমিন, আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হলো টঙ্গীর তুরাগ তীর

ছবি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্তা ‘প্রত্যাখ্যান’, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ছাড়া রাস্তা ছাড়বেন না তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

ছবি

প্রতি হাজারে ক্যান্সারে আক্রান্ত ১ জন: গবেষণা

ছবি

তিতুমীর কলেজ : বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে তৃতীয় দিন সড়ক অবরোধ

ছবি

‘সব শহীদ পরিবারকে একেবারে শহীদ করে দিক, তাহলে কেউ দাবি নিয়ে আসবে না’

ছবি

তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার, বিএনপির ক্ষোভ, আইএসপিআরের তদন্ত কমিটি

ছবি

দেশে প্রতি লাখে ১০৬ জন ক্যান্সার আক্রান্ত

ছবি

অমর একুশে বইমেলার পর্দা উঠল

ছবি

সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের পরিকল্পনা, তিতুমীর বিশেষ বিবেচনায়: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ছবি

বই সেন্সরের কোনো পরিকল্পনা নেই, ভুল বোঝাবুঝি দূর করার আহ্বান ফারুকীর

ছবি

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেলেন সাত লেখক

ছবি

বিকেলে ইজতেমায় অনুষ্ঠিত হবে যৌতুকবিহীন বিয়ে

ছবি

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল

ছবি

সংস্কারটা কোথায় হচ্ছে, জনজীবনে তার কোনো প্রতিফলন নেই : আনু মুহাম্মদ

ছবি

আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ ১২ দাবি

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ: কোন দেশ ও খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

ছবি

বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান নগণ্য: প্রধান ‍উপদেষ্টার কার্যালয়

ছবি

আসন্ন রমজানের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ

ছবি

সেনাবাহিনী নিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদন ‘বলিউডি রোমান্টিক কমেডি’

রাজনৈতিক দলের ভেতর সংস্কার জরুরি, নেতার বয়সসীমা ঠিক করারও প্রস্তাব

ছবি

রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি মাস শুরু

আজ শুরু হচ্ছে একুশের বইমেলা, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

tab

জাতীয়

৭ দফা দাবিতে অনড় অভ্যুত্থানে আহতরা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মিরপুর সড়কে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের অবরোধ-সংবাদ

রোববার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

উন্নত চিকিৎসাসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর শিশুমেলা সংলগ্ন মিরপুর সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন জুলাই আন্দোলনে আহতরা। এতে বন্ধ হয়ে গেছে এই রুটে যান চলাচল। দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। ভোগান্তিতে পড়েছেন এ রুটে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ। গতকাল বেলা ১১টার পর থেকেই শিশুমেলা সড়কে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ে আন্দোলন শুরু করেন জুলাই আন্দোলনে আহত পঙ্গু হাসপাতাল ও চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতরা। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে বলেও জানান তারা।

আন্দোলনকারী মো. আইয়ুব হোসেন বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা সড়কে অবস্থান করবো। যদি উপদেষ্টারা কেউ এসে আমাদের আশ্বস্ত করেন তবুও আমরা রাস্তা ছাড়বো না। তাদের ওপর থেকে আমাদের আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। এখন আর আশ্বাসে চলবে না। রাতের মধ্যে আমাদের দাবি আদায় না হলে আমরা সচিবালয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবো।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর শ্যামলী শিশুমেলার ফুটওভার ব্রিজের নিচে অবরোধ করে দাবি আদায়ের কর্মসূচি পালন করছেন তারা। ফলে গাবতলী থেকে ধানমন্ডিগামী ও ধানমন্ডিথেকে গাবতলী গামী সড়কের দুই পাশে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ গাড়ির জট। টানা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির ফলে গাড়ি থেকে নেমে শত শত মানুষ পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

রাজধানীর গাবতলী থেকে গুলিস্তানে যাচ্ছেন আরিফ হাসান। তিনি বলেন, গাবতলী থেকে গাড়িতে উঠেছিলাম গুলিস্তান যাবো। কিন্তু টেকনিক্যাল পার হতেই যানজটে আটকে যায় বাস। টেকনিক্যাল থেকে হাঁটতে হাঁটতে শ্যামলী পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আরও কতদূর হাঁটতে হবে কে জানে!

পরিবার নিয়ে আজিমপুর থেকে শিশু হাসপাতালে এসেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাচ্চাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য শিশু হাসপাতালে এসেছি। ধানমন্ডি পর্যন্ত এসে গাড়ি বন্ধের কারণে যানজটে পড়ি। পরে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে মোহাম্মদপুরের ভেতর দিয়ে অনেক কষ্টে এই পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি। এখানে সড়ক অবরোধের কারণে মোহাম্মদপুরের ভেতর দিয়েও অনেক যানজট লেগে গেছে।

দুপুর ২টা পর্যন্ত সরকারের তরফে কেউ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ওই সময় শ্যামলী এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে ছিলেন বৈষমবিরোধী আন্দোলনে আহতরা। তাদের একজন মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন নামে বলেন, তারা চান উপদেষ্টারা এখানে আসুক, তাদের সমস্যা সমাধান করুক। ‘আমরা শনিবার বিকেল থেকে রাস্তায় আছি, কিন্তু কেউ আসছে না। আমরা চাই, আমাদের দাবিগুলো পূরণ করা হোক। কেউ না আসলে আমরা রাস্তা ছাড়ব না। আমাদের কর্মসূচি চলবে।’ সড়কে অবস্থান নেয়া নাঈম শেখ নামের একজন বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত আশ্বাস পাইছি, কিন্তু কোনো আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি। রাতে রাস্তায় নামছি, কিন্তু এখনও আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। দাবি পূরণের ব্যবস্থা নেয়নি।

ডিএমপির শেরেবাংলা নগর ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার উদয় কুমার সাহা বলেন, ‘আগারগাঁও থেকে শ্যামলী ও শিশুমেলাগামী ছোট গাড়িগুলো ৬০ ফিট দিয়ে ঘুরিয়ে দিচ্ছি, আর বড় গাড়িগুলো পাসপোর্ট অফিসের সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ‘আর যেহেতু এখন শিশুমেলায় মিরপুরের মেইন রোড বন্ধ করে দিয়েছে, এখন ইনকামিং গাড়িগুলো আসা সম্ভব হচ্ছে না।’

ক্ষোভ ঝেড়ে আন্দোলনকারী মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘রাস্তা অবরোধ করে দেয়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। ‘অন্তর্বর্তী সরকার রাস্তা বন্ধ করতে আমাদের বাধ্য করেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা কী করছে, কী খাচ্ছে, কোথায় থাকছে সেই খবর কেউ নিচ্ছে না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা বুঝে গেছে সব শালারা বাটপার।’

শরীফ বলেন, ‘আমরা বলতে চাই আন্দোলন গতবারের আন্দোলনের মতো নয়। হাসিনার বন্দুকের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলাম। ‘অন্ধ হয়ে গেছি, খোঁড়া হয়ে গেছি, ভয় করি নাই। যদি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে বেঈমানি করা হয়, হাসিনা গেছে যে পথে তারাও যাবে সেই পথে।’

উন্নত চিকিৎসার দাবি জানালেও এ বিষয়ে কেউ ‘গুরুত্ব দিচ্ছেন না’ অভিযোগ করে শনিবার রাত ১০টার পর সড়কে নেমে আসেন পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন থাকা আহতরা। রোববার ২ফেব্রুয়ারি সকালে তাদেরকে পঙ্গু হাসপাতালের দুই পাশে রাস্তার ওপর বেঞ্চ, চেয়ার ও বাঁশ ফেলে আটকে রাখতে দেখা গেছে। আহতদের কেউ কেউ সড়কে বিছানা পেতে শুয়ে পড়েন। তাতে শিশু মেলা থেকে আগারগাঁও ট্রাফিক সিগন্যাল পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা শিশুমেলা মোড়ে অবস্থান নিলে মিরপুরে রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আন্দোলনকারীদের নেতা কোরবান শেখ হিল্লোল বলেন, ‘আজকে বিদেশি ডাক্তার এসেছিল। তারা আমাদের পরীক্ষা করে একটা মতামত দিয়েছে। আমাদের মধ্যে যাদের বিদেশ পাঠানো হয়েছে, তাদের আর আমাদের শারীরিক অবস্থা একই বলে ডাক্তারদের মতামতে ওঠে এসেছে। ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে আমাদের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু তারা কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। এ কারণে আবার পথে নেমেছি।’

হিল্লাল বলেন, ‘আমাদের কথা কেউ শুনছে না। আমাদের ভালো চিকিৎসার প্রয়োজন।’ উন্নত চিকিৎসার দাবিতে এর আগে নভেম্বরে সড়ক অবরোধ করেন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা। সরকার ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে তাদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি চিকিৎসার বিষয়টিও দেখভাল করা হচ্ছে। তবে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের অভিযোগ, তারা ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। সহায়তাও পেয়েছেন ‘সামান্য’।

এর আগে শনিবার রাতে পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেন জুলাই আন্দোলনে আহতরা। এসময় তারা সাত দফা দাবি জানান। সেগুলো হলো ১. চব্বিশের যোদ্ধাদের মধ্যে আহত এবং শহীদদের হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ বিচার করতে হবে। ২. বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের সরকারের বিভিন্ন পদ থেকে অপসারণ ও গ্রেপ্তার করতে হবে। ৩. আহতদের ক্যাটাগরি সঠিকভাবে প্রণয়ন। ৪. আহতদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে বাস্তবায়ন। ৫. আহতদের চিকিৎসার সর্বোচ্চ সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ৬. আহত এবং শহীদদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননাসহ প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং

৭. আহতদের আর্থিক অনুদানের অঙ্ক বৃদ্ধিসহ ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার বিষয় সুসংহত করতে হবে।

back to top