রাজস্ব ঘাটতি মোকাবেলায় কর নীতি নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে আর্থিক খাত ও ব্যাংকগুলোর স্থিতিশীলতা ফেরানোই হবে প্রধান লক্ষ্য। তিনি মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর বর্তাবে।
রোববার বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স (বিএসআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিটেন্সের ভূমিকা’ শীর্ষক সভায় তিনি ব্যাংক খাতের অবস্থা তুলে ধরেন এবং খেলাপি ঋণ সমস্যার ওপর জোর দেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "আমার ফোকাস হল ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর, বিশেষ করে ব্যাংকগুলো ঠিক করা। বাজে ব্যাংক আছে, বোর্ডের ঝামেলা আছে, সেগুলো সংস্কার করা জরুরি।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালীন অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি জানান, তার সময়ে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১৬ শতাংশ, এমনকি কিছু ব্যাংকের ৮০ শতাংশ ঋণই ছিল খেলাপি।
তিনি বলেন, "আমার সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৮-২৯ হাজার কোটি টাকা। আর এখন সেই অঙ্ক দাঁড়িয়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকায়। তাহলে জনগণের আমানতের টাকা ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা কোথায়?
গণআন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় ফেরাতে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এখনো রাজস্ব খাতে বিশাল ঘাটতি রয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা।
আইএমএফ-এর সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১২ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকার বেশ কিছু পণ্যের উপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে।
ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "ভ্যাট না বাড়িয়ে বিকল্প কিছু ছিল না। তাৎক্ষণিক কর বাড়ানোর সুযোগ ছিল না।"
তিনি আরও বলেন, "১২ হাজার কোটি টাকা খুব বেশি নয়। পুলিশের ৩০০ গাড়ি পুড়ে গেছে, সেই ক্ষতিপূরণের অর্থ কোথা থেকে আসবে?"
অর্থ উপদেষ্টা জানান, নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে সবসময় জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, "অনেক অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব ট্যাক্স কমিয়ে দিন, সব ভ্যাট কমিয়ে দিন। কিন্তু ইনকাম ট্যাক্স বাড়িয়ে রাজস্ব কীভাবে বাড়ানো সম্ভব?"
তিনি আরও বলেন, "একদিকে বলা হচ্ছে, কর-জিডিপি অনুপাত কম, এটা বাড়ানো উচিত। আবার ভ্যাট কমানোর কথাও বলা হচ্ছে। অর্থনীতি এখন মোটামুটি ব্যালান্সে এসেছে, তবে পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়েছে এমনটা বলা যাবে না।"
বর্তমান সরকার অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনসহ বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
অর্থনীতির ভারসাম্য ফেরাতে কর কাঠামো পুনর্গঠন, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনাই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। তবে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।
রাজস্ব ঘাটতি মোকাবেলায় কর নীতি নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত
রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে আর্থিক খাত ও ব্যাংকগুলোর স্থিতিশীলতা ফেরানোই হবে প্রধান লক্ষ্য। তিনি মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর বর্তাবে।
রোববার বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স (বিএসআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিটেন্সের ভূমিকা’ শীর্ষক সভায় তিনি ব্যাংক খাতের অবস্থা তুলে ধরেন এবং খেলাপি ঋণ সমস্যার ওপর জোর দেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "আমার ফোকাস হল ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর, বিশেষ করে ব্যাংকগুলো ঠিক করা। বাজে ব্যাংক আছে, বোর্ডের ঝামেলা আছে, সেগুলো সংস্কার করা জরুরি।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালীন অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি জানান, তার সময়ে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১৬ শতাংশ, এমনকি কিছু ব্যাংকের ৮০ শতাংশ ঋণই ছিল খেলাপি।
তিনি বলেন, "আমার সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৮-২৯ হাজার কোটি টাকা। আর এখন সেই অঙ্ক দাঁড়িয়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকায়। তাহলে জনগণের আমানতের টাকা ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা কোথায়?
গণআন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় ফেরাতে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এখনো রাজস্ব খাতে বিশাল ঘাটতি রয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা।
আইএমএফ-এর সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১২ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকার বেশ কিছু পণ্যের উপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে।
ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "ভ্যাট না বাড়িয়ে বিকল্প কিছু ছিল না। তাৎক্ষণিক কর বাড়ানোর সুযোগ ছিল না।"
তিনি আরও বলেন, "১২ হাজার কোটি টাকা খুব বেশি নয়। পুলিশের ৩০০ গাড়ি পুড়ে গেছে, সেই ক্ষতিপূরণের অর্থ কোথা থেকে আসবে?"
অর্থ উপদেষ্টা জানান, নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে সবসময় জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, "অনেক অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব ট্যাক্স কমিয়ে দিন, সব ভ্যাট কমিয়ে দিন। কিন্তু ইনকাম ট্যাক্স বাড়িয়ে রাজস্ব কীভাবে বাড়ানো সম্ভব?"
তিনি আরও বলেন, "একদিকে বলা হচ্ছে, কর-জিডিপি অনুপাত কম, এটা বাড়ানো উচিত। আবার ভ্যাট কমানোর কথাও বলা হচ্ছে। অর্থনীতি এখন মোটামুটি ব্যালান্সে এসেছে, তবে পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়েছে এমনটা বলা যাবে না।"
বর্তমান সরকার অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনসহ বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
অর্থনীতির ভারসাম্য ফেরাতে কর কাঠামো পুনর্গঠন, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনাই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। তবে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।