alt

জাতীয়

পঞ্চদশ সংশোধনীর ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’, ৭ মার্চের ভাষণ বাতিলের সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের দফা ২ বিলোপের প্রস্তাব করেছে। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নবম সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে এই অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়।

এর মাধ্যমে পঞ্চম তপসিলে ৭ মার্চের ভাষণ, ষষ্ঠ তপসিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং সপ্তম তপসিলে মুজিবনগর সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের অংশ করা হয়। শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে যুক্ত হওয়া এ তিনটি তপশিলকে সংবিধানে না রাখার প্রস্তাব করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।

সংস্কার কমিশন সংবিধানের ১৫৩টি অনুচ্ছেদের ৬৪টি সংশোধন ও পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। সংবিধানের প্রস্তাবনাও সংশোধনের সুপারিশ করা হয়। একাত্তরের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে প্রস্তাবনার অংশ করার কথা বলা হয়। নতুন চারটি অনুচ্ছেদ সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়।

তবে কীভাবে সংবিধানের সংস্কার হবে, তা বলা নেই সুপারিশ প্রতিবেদনে।

বিদ্যমান নিয়মে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়া সংবিধান সংশোধন করা যায় না। আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের বড় অংশকে মৌলিক কাঠামো আখ্যা দিয়ে সংশোধনের অযোগ্য করেছিল। তবে আদালত পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতার মামলায় এ অংশকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। ফলে দ্ইু-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কমিশনের করা সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে তা আগামী সংসদ নির্বাচিত হওয়ার আগে সম্ভব নয়।

জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্ব, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই সংস্কার চায়। আদালতের রায়ে গণভোট বিধান ফিরেছে।

কীভাবে সংস্কার হবে- এ প্রশ্নে সংবিধান সংস্কার কমিশন সদস্য ফিরোজ আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এ প্রক্রিয়া ঠিক করবে সরকার, অংশীজন তথা রাজনৈতিক দলগুলো। সংবিধান কীভাবে সংশোধন করা হবে, তা নির্ধারণ কমিশনের কাজ নয় বলে সুপারিশে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে যে কমিশন হতে যাচ্ছে, তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় ঠিক করবে গণভোট, রাজনৈতিক ঐকমত্য নাকি পরবর্তী সংসদে সংবিধান সংশোধন হবে।’

সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদ ‘ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী’ সংক্রান্ত। একাত্তরের ২৬ মার্চ দেশ স্বাধীন হওয়ার দিন থেকে বাহাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর হওয়া পর্যন্ত; অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, রাষ্ট্রপতির আদেশ, অস্থায়ী বিধান জারি হয়েছিল, তার সব বৈধতা দেয়া হয় এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে। চারটি তপশিলে এগুলোকে ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি হিসেবে কার্যকর রাখা হয়।

২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। ২০১১ সালে সংবিধানের ৫১টি অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনে। ১৫০(২) অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়। সংবিধান সংস্কার কমিশনে বিএনপির ৬৩ দফায় ১৫০(২) অনুচ্ছেদ বিলোপ করা হয়। এতে বলা হয়, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৫০ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনের ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রান্তিকালকে অস্বীকার করা হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণ, ‘তথাকথিত স্বাধীনতা ঘোষণার টেলিগ্রাম সংযোজনের’ মাধ্যমে সংবিধানকে দলীয় প্রচারপত্রে পরিণত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে যোগ করা পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তপশিল বাদ দিয়ে ১৫০(২) অনুচ্ছেদ বিলোপের প্রস্তাব করেছে জামায়াতে ইসলামীও।

বিএনপির দাবি, দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। তবে আওয়ামী লীগ তা নাকচ করে।

আওয়ামী লীগের দাবি, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আগে টেলিগ্রাম বা বেতার বার্তার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। চট্টগ্রামেও তা পাঠানো হয়।’ এর সপক্ষে একাত্তরে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ থেকে প্রকাশিত সংবাদকে দলিল বলে আওয়ামী লীগ।

তবে মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান এ কে খন্দকারসহ অনেকেই এ দাবি নাকচ করেছেন। তাদের ভাষ্য, এমন কোনো ঘোষণার কথা তারা একাত্তরে জানতেন না। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর টেলিগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার তথ্য সামনে আনা হয়। তবে হাইকোর্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

বাহাত্তরের সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা রাখা হয় সংসদের হাতে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব সরকারের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে চালু করা একদলীয় শাসনে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যস্ত করা হয়। ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সামরিক আইনে বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেন। ২০১৪ সালে বহুল আলোচিত ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা আবার সংসদের হাতে নেন। তবে উচ্চ আদালত ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে। শেখ হাসিনার পতনের পর রিভিউয়েও আপিল বিভাগ একই আদেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ বিচারপতিদের অপসারণ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছেই রয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে যে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব করেছে, একে বিচারপতিদের অপসারণে যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলও কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত ও অনুসন্ধানের অভিযোগ জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠাতে পারবে।

ছবি

শিশু সুরক্ষা নীতি লঙ্ঘন: ইউনিসেফের উদ্বেগ

ছবি

রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার উপর নির্ভর করবে নির্বাচন কবে হবে: প্রেস সচিব

ছবি

মব বিশৃঙ্খলা বন্ধের আহ্বান :উপদেষ্টার মাহফুজ আলমের

৫ প্রতিষ্ঠানে এনআইডির তথ্য ফাঁস, শোকজ করেছে ইসি

ছবি

ঢাকায় বায়ুদূষণ ‘অস্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক’, স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারির পরামর্শ

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

ছবি

‘ডেভিল হান্টে’ দ্বিতীয় দিনে গ্রেপ্তার ৩৪৩ জন

সংস্কার সুপারিশ: প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ‘অনাস্থা দিতে পারবেন’ দলীয় এমপিরা

এখনও প্রায় ১৮ কোটি পাঠ্যবই ছাপা বাকি

বইমেলায় তসলিমা নাসরিনের বই: ‘তৌহিদী জনতার’ বিক্ষোভ, চড়াও প্রকাশনার স্টলে

ছবি

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার ‘আশ্বাস’ প্রধান উপদেষ্টার , জানালেন ফখরুল

হত্যা চেষ্টা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে জিআইজি মোল্ল্যা নজরুল

ছবি

সূচনা ফাউন্ডেশনের আয়কর সুবিধা বাতিল: এনবিআরের সিদ্ধান্ত

ডিসেম্বরের মধ্যেই তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু: পরিবেশ উপদেষ্টা

ছবি

মেহেদীর সঙ্গে ‘অভ্র’র জন্য একুশে পদক পাচ্ছেন আরও ৩ জন

রায়ের পর মুক্তি পেতে সময় লাগলো ৮ বছর

ছবি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্যের জেরে দুদকের পরিচালক প্রত্যাহার

ছবি

জানুয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৭৭ মৃত্যু, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অর্ধেক নিহত

ছবি

বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ

ছবি

সময়সীমা শেষের পথে, এখনো চুক্তিহীন অর্ধেক হজ এজেন্সি

ছবি

আহত ও শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু

ছবি

এনআইডি তথ্য ফাঁস: পাঁচ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

ছবি

জাতীয় নাগরিক কমিটির ৭৫ সদস্যের প্রবাসী কমিটি ঘোষণা

ছবি

মাস্কটে তৌহিদ-জয়শঙ্কর বৈঠকে সম্পর্কে অস্বস্তি না বাড়ানোর বার্তা নয়াদিল্লিকে দেবে ঢাকা

ছবি

শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে অন্তর্বর্তী সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ: সাখাওয়াত হোসেন

ছবি

‘ডেভিল হান্টের’ মধ্যে ধরা ১৩০৮ জন

‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ কারণ ব্যাখ্যা করলেন স্বরাষ্ট্র সচিব

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে দুদকের অভিযান, মেলেনি সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফসহ ২৫ জনের লকার

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নির্বাচনের অন্তরায় হলে বাধা দেবে বিএনপি

ছবি

ম্যাটস শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ সারাদেশে গ্রেপ্তার ১৩শ’র বেশি

ছবি

আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে চালু হলো ‘কমান্ড সেন্টার’

ছবি

তিস্তা নদী নিয়ে গনশুনানী শেষে রিজওয়ানা হাসান : ডিসেম্বর মাসের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হবে

ছবি

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি: বাচ্চু ও পরিবারের বিরুদ্ধে চার মামলা

ছবি

সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর ৫৬টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার ব্যাংক খাতের সংস্কার

tab

জাতীয়

পঞ্চদশ সংশোধনীর ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’, ৭ মার্চের ভাষণ বাতিলের সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের দফা ২ বিলোপের প্রস্তাব করেছে। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নবম সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে এই অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়।

এর মাধ্যমে পঞ্চম তপসিলে ৭ মার্চের ভাষণ, ষষ্ঠ তপসিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং সপ্তম তপসিলে মুজিবনগর সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের অংশ করা হয়। শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে যুক্ত হওয়া এ তিনটি তপশিলকে সংবিধানে না রাখার প্রস্তাব করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।

সংস্কার কমিশন সংবিধানের ১৫৩টি অনুচ্ছেদের ৬৪টি সংশোধন ও পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। সংবিধানের প্রস্তাবনাও সংশোধনের সুপারিশ করা হয়। একাত্তরের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে প্রস্তাবনার অংশ করার কথা বলা হয়। নতুন চারটি অনুচ্ছেদ সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়।

তবে কীভাবে সংবিধানের সংস্কার হবে, তা বলা নেই সুপারিশ প্রতিবেদনে।

বিদ্যমান নিয়মে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়া সংবিধান সংশোধন করা যায় না। আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের বড় অংশকে মৌলিক কাঠামো আখ্যা দিয়ে সংশোধনের অযোগ্য করেছিল। তবে আদালত পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতার মামলায় এ অংশকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। ফলে দ্ইু-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কমিশনের করা সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে তা আগামী সংসদ নির্বাচিত হওয়ার আগে সম্ভব নয়।

জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্ব, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই সংস্কার চায়। আদালতের রায়ে গণভোট বিধান ফিরেছে।

কীভাবে সংস্কার হবে- এ প্রশ্নে সংবিধান সংস্কার কমিশন সদস্য ফিরোজ আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এ প্রক্রিয়া ঠিক করবে সরকার, অংশীজন তথা রাজনৈতিক দলগুলো। সংবিধান কীভাবে সংশোধন করা হবে, তা নির্ধারণ কমিশনের কাজ নয় বলে সুপারিশে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে যে কমিশন হতে যাচ্ছে, তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় ঠিক করবে গণভোট, রাজনৈতিক ঐকমত্য নাকি পরবর্তী সংসদে সংবিধান সংশোধন হবে।’

সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদ ‘ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী’ সংক্রান্ত। একাত্তরের ২৬ মার্চ দেশ স্বাধীন হওয়ার দিন থেকে বাহাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর হওয়া পর্যন্ত; অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, রাষ্ট্রপতির আদেশ, অস্থায়ী বিধান জারি হয়েছিল, তার সব বৈধতা দেয়া হয় এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে। চারটি তপশিলে এগুলোকে ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি হিসেবে কার্যকর রাখা হয়।

২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। ২০১১ সালে সংবিধানের ৫১টি অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনে। ১৫০(২) অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়। সংবিধান সংস্কার কমিশনে বিএনপির ৬৩ দফায় ১৫০(২) অনুচ্ছেদ বিলোপ করা হয়। এতে বলা হয়, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৫০ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনের ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রান্তিকালকে অস্বীকার করা হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণ, ‘তথাকথিত স্বাধীনতা ঘোষণার টেলিগ্রাম সংযোজনের’ মাধ্যমে সংবিধানকে দলীয় প্রচারপত্রে পরিণত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে যোগ করা পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তপশিল বাদ দিয়ে ১৫০(২) অনুচ্ছেদ বিলোপের প্রস্তাব করেছে জামায়াতে ইসলামীও।

বিএনপির দাবি, দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। তবে আওয়ামী লীগ তা নাকচ করে।

আওয়ামী লীগের দাবি, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আগে টেলিগ্রাম বা বেতার বার্তার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। চট্টগ্রামেও তা পাঠানো হয়।’ এর সপক্ষে একাত্তরে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ থেকে প্রকাশিত সংবাদকে দলিল বলে আওয়ামী লীগ।

তবে মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান এ কে খন্দকারসহ অনেকেই এ দাবি নাকচ করেছেন। তাদের ভাষ্য, এমন কোনো ঘোষণার কথা তারা একাত্তরে জানতেন না। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর টেলিগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার তথ্য সামনে আনা হয়। তবে হাইকোর্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

বাহাত্তরের সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা রাখা হয় সংসদের হাতে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব সরকারের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে চালু করা একদলীয় শাসনে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যস্ত করা হয়। ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সামরিক আইনে বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেন। ২০১৪ সালে বহুল আলোচিত ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা আবার সংসদের হাতে নেন। তবে উচ্চ আদালত ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে। শেখ হাসিনার পতনের পর রিভিউয়েও আপিল বিভাগ একই আদেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ বিচারপতিদের অপসারণ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছেই রয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে যে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব করেছে, একে বিচারপতিদের অপসারণে যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলও কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত ও অনুসন্ধানের অভিযোগ জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠাতে পারবে।

back to top