স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাসসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সেবাগ্রহণকারী পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পক্ষের কাছে তথ্য ফাঁস করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে এই প্রমাণ মেলার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শনানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
গতকাল সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এনআইডি যাচাই সেবাগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তিন দিনের মতবিনিময় সভার প্রথম দিন শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযুক্ত পাঁচ প্রতিষ্ঠান হলো- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ইউসিবি ব্যাংকের উপায়, চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটি, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে শোকজ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অসতর্কতায় না ইচ্ছেকৃত এটা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কেউ স্বপ্রণোদিতভাবে এটা করে থাকে তাহলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
এনআইডি অনুবিভাগ থেকে ১৮২টি প্রতিষ্ঠান এই সেবা নেয় বলে জানান ইসি সচিব।
তিনি বলেন, ‘ডেটা ইউজের (তথ্য ব্যবহার) ক্ষেত্রে একটা সীমা রাখা উচিত। ওপেন রেখে চোরকে দোষ দেয়া যাবে না। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে আবার অন্য প্রতিষ্ঠানে সেবা নিচ্ছে, যা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে। কোন প্রতিষ্ঠানের কতটুকু তথ্য প্রয়োজন, যতটুকু নিচ্ছে তা বেশি নিচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনা করা হবে অংশীজনদের সঙ্গে।’
১৮২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই তিন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইসি মতবিনিময় করবে; মঙ্গলবার ব্যাংক ও বুধবার ইন্স্যুরেন্সসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে আমাদের অগোচরেই যাদের তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ দিয়েছি তারা অন্য অনাকাক্সিক্ষত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তথ্য দিচ্ছে। যেটা কাম্য নয়। এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা ও ব্যবস্থাপনাটাকে উন্নত করার জন্য আমাদের যে সব গ্রাহক আছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।’
যে তথ্য যার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ওই প্রতিষ্ঠান ততটুকু তথ্য নেবেন এবং তার গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করবেন বলে জানান ইসি সচিব।
তিনি বলেন, ‘কোন প্রতিষ্ঠানের কতটুকু তথ্য প্রয়োজন, যতটুকু নিচ্ছে
তা বেশি নিচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনা করা হবে। কী করে এই তথ্য লিক বা পাচার হয়েছে এগুলো টেকনিক্যাল বিষয়। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘একেকজনের চাহিদা একেকরকম। বাংলাদেশ পুলিশের যে ধরনের তথ্য দরকার, হয়তো পাসপোর্টের সে ধরনের নয়, আবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের অন্যরকম তথ্য প্রয়োজন। কাজেই ভেরিফিকেশনের একটি স্বাভাবিক প্লাটফর্ম হচ্ছে যে, আমাদের জানাবেন এই তথ্যগুলো সঠিক আছে কী না, আমরা বলব হ্যাঁ বা না। এর বাইরেও যদি তথ্য প্রয়োজন হয় সেগুলো নিয়ে আরও আলোচনা হবে। আজকে আলোচনাটা শুরু হলো।’
বাংলাদেশে সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের খবর প্রকাশ করেছিল আমেরিকান ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চ ২০২৩ সালের ৬ জুলাই। টেকক্রাঞ্চের ওই খবরে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পূর্ণ নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত হয়ে আছে ইন্টারনেটে।
ওই ঘটনার তিন দিন পর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশনের এনআইডি সার্ভার ‘সুরক্ষিত আছে’। বিভাগটি দাবি করেছিল, তাদের সার্ভার থেকে কোনোরকম তথ্য কোথাও যায়নি। তারপরেও এই বিষয়ে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি পেলে, চুক্তিপত্র বরখেলাপ হলে তা বাতিল করা হবে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এনআইডির তথ্য ‘বিক্রির’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা হয়।
সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা এ মামলায় জয় ও পলকসহ মোট ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান কাফরুল থানার ওসি কাজী গোলাম মোস্তফা।
এনামুল হক নামের এক ব্যক্তির দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেডকে এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার অনুমতি দেন আসামিরা। সেসব তথ্য দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। তথ্য বিক্রির প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তৃতীয়পক্ষের কাছে তথ্য পাচার হওয়ায় জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে।’
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাসসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সেবাগ্রহণকারী পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পক্ষের কাছে তথ্য ফাঁস করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে এই প্রমাণ মেলার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শনানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
গতকাল সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এনআইডি যাচাই সেবাগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তিন দিনের মতবিনিময় সভার প্রথম দিন শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযুক্ত পাঁচ প্রতিষ্ঠান হলো- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ইউসিবি ব্যাংকের উপায়, চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটি, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে শোকজ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অসতর্কতায় না ইচ্ছেকৃত এটা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কেউ স্বপ্রণোদিতভাবে এটা করে থাকে তাহলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
এনআইডি অনুবিভাগ থেকে ১৮২টি প্রতিষ্ঠান এই সেবা নেয় বলে জানান ইসি সচিব।
তিনি বলেন, ‘ডেটা ইউজের (তথ্য ব্যবহার) ক্ষেত্রে একটা সীমা রাখা উচিত। ওপেন রেখে চোরকে দোষ দেয়া যাবে না। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে আবার অন্য প্রতিষ্ঠানে সেবা নিচ্ছে, যা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে। কোন প্রতিষ্ঠানের কতটুকু তথ্য প্রয়োজন, যতটুকু নিচ্ছে তা বেশি নিচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনা করা হবে অংশীজনদের সঙ্গে।’
১৮২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই তিন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইসি মতবিনিময় করবে; মঙ্গলবার ব্যাংক ও বুধবার ইন্স্যুরেন্সসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে আমাদের অগোচরেই যাদের তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ দিয়েছি তারা অন্য অনাকাক্সিক্ষত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তথ্য দিচ্ছে। যেটা কাম্য নয়। এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা ও ব্যবস্থাপনাটাকে উন্নত করার জন্য আমাদের যে সব গ্রাহক আছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।’
যে তথ্য যার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ওই প্রতিষ্ঠান ততটুকু তথ্য নেবেন এবং তার গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করবেন বলে জানান ইসি সচিব।
তিনি বলেন, ‘কোন প্রতিষ্ঠানের কতটুকু তথ্য প্রয়োজন, যতটুকু নিচ্ছে
তা বেশি নিচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনা করা হবে। কী করে এই তথ্য লিক বা পাচার হয়েছে এগুলো টেকনিক্যাল বিষয়। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘একেকজনের চাহিদা একেকরকম। বাংলাদেশ পুলিশের যে ধরনের তথ্য দরকার, হয়তো পাসপোর্টের সে ধরনের নয়, আবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের অন্যরকম তথ্য প্রয়োজন। কাজেই ভেরিফিকেশনের একটি স্বাভাবিক প্লাটফর্ম হচ্ছে যে, আমাদের জানাবেন এই তথ্যগুলো সঠিক আছে কী না, আমরা বলব হ্যাঁ বা না। এর বাইরেও যদি তথ্য প্রয়োজন হয় সেগুলো নিয়ে আরও আলোচনা হবে। আজকে আলোচনাটা শুরু হলো।’
বাংলাদেশে সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের খবর প্রকাশ করেছিল আমেরিকান ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চ ২০২৩ সালের ৬ জুলাই। টেকক্রাঞ্চের ওই খবরে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পূর্ণ নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত হয়ে আছে ইন্টারনেটে।
ওই ঘটনার তিন দিন পর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশনের এনআইডি সার্ভার ‘সুরক্ষিত আছে’। বিভাগটি দাবি করেছিল, তাদের সার্ভার থেকে কোনোরকম তথ্য কোথাও যায়নি। তারপরেও এই বিষয়ে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি পেলে, চুক্তিপত্র বরখেলাপ হলে তা বাতিল করা হবে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এনআইডির তথ্য ‘বিক্রির’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা হয়।
সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা এ মামলায় জয় ও পলকসহ মোট ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান কাফরুল থানার ওসি কাজী গোলাম মোস্তফা।
এনামুল হক নামের এক ব্যক্তির দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেডকে এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার অনুমতি দেন আসামিরা। সেসব তথ্য দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। তথ্য বিক্রির প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তৃতীয়পক্ষের কাছে তথ্য পাচার হওয়ায় জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে।’