জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের শেষ দিনগুলোতে আন্দোলন ‘সাময়িক ভাটা পড়েছিল’। সে সময় সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা ওই বিক্ষোভকে পুনরায় উসকে দিয়েছিল। বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান দল যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে এ কথা বলা হয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি জেনেভা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ওএইচসিএইচআর।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোটাব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত আসতে অনেক দেরি করেছিল এবং সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ বিক্ষোভকারীদের নেতাদের কাছে ‘কুটিল’ বলে মনে হয়েছিল। খবর বাসসের।

আন্তরিক মনে হয়নি

ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার জন্য, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বিগত সরকার হাইকোর্টের কোটা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দাখিল করে। পরের দিন সন্ধ্যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক জনসভায় শিক্ষার্থীদের সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যাশিত ইতিবাচক সিদ্ধান্তের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে বলেন, ১৬ জুলাই প্রাণহানির জন্য সমবেদনা জানান এবং দাবি করেন যে ‘বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সহযোগিতা করেছিল।’

কিন্তু ‘শেখ হাসিনার ওই ভাষণ বিক্ষোভকারী নেতাদের কাছে আন্তরিক বলে মনে হয়নি’ বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশজুড়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির আহ্বান জানিয়ে বলেছিল যে, ‘হাসপাতাল ও জরুরি পরিষেবা খোলা থাকবে, তবে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান চালু থাকবে না এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোনও যানবাহন রাস্তায় চলতে দেয়া হবে না।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব একই সঙ্গে তাদের অনুসারীদের হরতাল সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছিল, যার ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইন, শিক্ষা এবং তথ্যমন্ত্রীদের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য মনোনীত করেছিলেন, পাশাপাশি ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) চলমান প্রচেষ্টাও অব্যাহত ছিল।

*সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ*

এতে বলা হয়, ‘তবে, সেই পর্যায়ে, ছাত্ররা আর আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিল না; কারণ তারা তাদের ওপর এর আগে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার কারণে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দিহান ছিল।’

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ১৮ জুলাই থেকে, যখন বিক্ষোভকারীরা গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানচলাচল ব্যাহত করার চেষ্টা করছিল তখন সাধারণ জনগণও রাস্তায় নেমে আসে এবং নিরাপত্তা বাহিনী ‘এই পর্যায়ে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের দিকে ঝুঁকে পড়ে’।

এতে বলা হয়, ‘তারা শান্তিপূর্ণ হলেও বিঘœ সৃষ্টিকারী বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে কম প্রাণঘাতী অস্ত্রের পাশাপাশি রাইফেল, পিস্তল ও শটগান ব্যবহার করেছিল; এতে উত্তরায় (৩টি ঘটনা) ও অন্যান্য অনেক জায়গায় হত্যাকা- ঘটেছিল, পাশাপাশি তারা আহতদের চিকিৎসাসেবা (৮টি ঘটনা) সক্রিয়ভাবে বাধাগ্রস্ত করেছিল।’

এতে বলা হয়, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী জনতা যখন আরও ভিন্নরূপ ধারণ করে তখন জনতার কিছু অংশ পুলিশ, পরিবহন অবকাঠামো এবং বাংলাদেশ টিভি ভবনসহ সরকারি ভবনগুলোতে আক্রমণ করেছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘১৮ জুলাই সন্ধ্যায়, সরকার বিজিবিকে (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেয় এবং ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেটসেবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়।’

*যৌথ অভিযান*

ওএইচসিএইচআর প্রমাণ পেয়েছে যে, ১৯ জুলাই, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং অন্যান্যরা রামপুরা ও বাড্ডা ছাড়াও ঢাকা ও সারাদেশে জনতার ওপর গুলি চালায়, কিন্তু শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বা সহিংস অস্থিরতা দমন করতে পারেনি। সন্ধ্যায়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধ্যরাত থেকে কার্যকর দেশব্যাপী কারফিউ জারি, ও ২৭ হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন করেন। ২০ ও ২১ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনী বড় ধরনের অভিযান চালায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবরোধ মুক্ত করতে বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী মোড়ে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি খালি করার জন্য সামরিক রাইফেল ও শটগানের গুলি চালায়।

*কোটা হ্রাস*

ওএইচসিএইচআর উল্লেখ করে যে, ২১ জুলাই, সুপ্রিম কোর্টের একটি নতুন রায় মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য সংরক্ষিত সরকারি চাকরির কোটা ৫ শতাংশে কমিয়ে দেয় এবং ‘সরকার দ্রুততার সঙ্গে আদালতের মতামত মেনে নিয়ে প্রকাশ্যে এই পরিবর্তনকে সমর্থন জানায়।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তবে, সেই সময়ে, ছাত্র আন্দোলন ইতোমধ্যেই তাদের নিজস্ব দাবির মধ্যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আরও বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত, সেই সঙ্গে ছাত্রদের হত্যাকারী পুলিশ কর্মকর্তা এবং ছাত্রলীগ সমর্থকদের জন্য ফৌজদারি জবাবদিহিতার দাবি অন্তর্ভুক্ত করেছিল।’

*সরকার পতনের দাবি*

২৬ জুলাই, বিএনপি সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রতিষ্ঠার এবং সরকারের পতনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছিল।

ওএইচসিএইচআর জানায় যে, রাস্তার বিক্ষোভ ‘সাময়িকভাবে শান্ত থাকলেও’ নিরাপত্তা বাহিনী ছাত্র, বিরোধী সমর্থক এবং বিক্ষোভে জড়িত থাকার সন্দেহে অন্যদের বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার অভিযান চালায় এবং ছয়জন বিশিষ্ট ছাত্রনেতাকেও আটক করা হয়।

জাতিসংঘের কার্যালয় জানায় যে, এই ব্যক্তিদের প্রায়শই অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ ছাড়াই আটক করা হতো এবং অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতন ও নানা দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়েছিল।

*জোরপূর্বক ভিডিও, বিবৃতি*

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘২৮ জুলাই, গোয়েন্দা শাখার প্রধান একটি দল জোরপূর্বক বিবৃতির একটি ভিডিও রেকর্ডিং প্রকাশ করে। এতে আটক ছয় ছাত্রনেতা বিক্ষোভের নিন্দা করেছিলেন। এই ঘটনায় জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

ওএইচসিএইচআর আরও জানায় যে, ২৫ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙচুর করা মেট্রো স্টেশন এবং পরের দিন পুড়ে যাওয়া বাংলাদেশ টিভি ভবন পরিদর্শন করেছিলেন এবং একই দিনে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে পুলিশ ও বিজিবির গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন আহত রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

তিনি ২৮ জুলাই নিহত ছাত্রদের পরিবারকে তার বাসভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং ‘এই সময়ে, তিনি প্রকাশ্যে বিরোধী দলগুলোর ওপর সহিংসতা ও প্রাণহানির জন্য সমস্ত দোষ চাপিয়েছিলেন’।

*জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ*

৩০ জুলাই, তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার জামায়াতে ইসলামী এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘এসব ঘটনা ২০২৪ সালের আগস্টের শুরুতে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতা উসকে দিতে অবদান রেখেছিল। নতুন করে জোরদার গণবিক্ষোভ শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল।’

ওএইচসিএইচআর উল্লেখ করে যে, বিক্ষোভ পুনরায় শুরু হওয়ার পর গণআন্দোলন ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পদত্যাগ’ করার একটি নতুন, একক দাবির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সরকারের প্রতিক্রিয়ায় প্রাণঘাতী অস্ত্রসহ ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তি প্রয়োগ সম্পর্কে আগস্টের শুরুতে একজন ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং মন্ত্রিসভার একজন সদস্য ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছিলেন।’

*সেনাবাহিনীর সমর্থন হ্রাস*

এতে উল্লেখ করা হয় যে, রাস্তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছিল। কিন্তু ‘বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের জন্য অফিসার ও সৈন্যদের মধ্যে সমর্থন হ্রাস পাচ্ছিল’। ৩ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একটি বড় সেনা সভা আহ্বান করেন, যেখানে জুনিয়র অফিসাররা তাকে জানান যে, তারা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে চান না।

প্রতিবেদনে বলা হয় যে, বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন কর্মসূচিতে ৫ আগস্ট ঢাকায় একটি গণমিছিলের পরিকল্পনা করেছিল। ৪ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন, যেখানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যরা অংশগ্রহণ করেন। তারা ঢাকায় গণমিছিল ঠেকাতে পুনরায় কারফিউ আরোপ এবং তা কার্যকর করার বিষয়ে আলোচনা করেন।

৪ আগস্ট সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সেনাপ্রধান ও অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে আশ্বস্ত করেন যে, ঢাকায় সমাবেশ করতে দেয়া যেতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি পরিকল্পনায় তারা সম্মত হয়েছিল যে, ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভকারীদের প্রবেশে বাধা দেয়ার জন্য প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হবে।

এতে বলা হয়, ৫ আগস্ট, লাখ লাখ বিক্ষোভকারী ঢাকার কেন্দ্রস্থলের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা অনেক স্থানে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়, যদিও সেনাবাহিনী ও বিজিবি বেশির ভাগ সময় পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভকারীদের মিছিল করতে দেয়। তবে, সৈন্যরা অন্তত একবার যেমন যমুনা ফিউচার পার্কে গুলি চালিয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সকালে, সেনাপ্রধান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন যে, সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের তার বাসভবনে পৌঁছাতে বাধা দিতে পারবে না। দুপুর ২টার দিকে শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে দেশ ছেড়ে (ভারত) চলে যান।’

*জাতিসংঘকে আমন্ত্রণ*

এর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই জুলাই ও আগস্টের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ককে চিঠি লেখেন।

এরপর টুর্ক একটি তথ্যানুসন্ধান দল গঠন করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রুরি ম্যানগোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল গত বছরের ২২ থেকে ২৯ আগস্ট ঢাকা সফর করে। এরপর তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের মূল দল তথা তথ্যানুসন্ধান দল এক মাসের বেশি সময় বাংলাদেশে অবস্থান করে গত জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-সহ ১৪ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করে।

তদন্ত শেষে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ‘বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের বিক্ষোভের সাথে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন’ শীর্ষক তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওএইচসিএইচআর। ১১৪ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে ‘নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য’ বিগত (আওয়ামী লীগ) সরকার ও শাসক দল আওয়ামী লীগকে সরাসরি দায়ী করা হয়।

*জেনেভায় প্রতিবেদন প্রকাশ*

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাবেক (আওয়ামী লীগ) সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে যুক্ত করে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার মারণাস্ত্র দিয়ে গুলি, গ্রেপ্তার, নির্যাতন, চিকিৎসা পেতে বাধা দেয়ার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। আন্দোলনকারীদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (আসাদুজ্জামান খান কামাল)।’

*যেভাবে তৈরি এ প্রতিবেদন*

জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দল প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, সিলেট ও গাজীপুরÑ এই আট শহরে অনুসন্ধান চালায়। মূলত যে শহরগুলোতে বেশি মাত্রায় বিক্ষোভ হয়েছিল, সেসব স্থানে গিয়ে সরেজমিনে কাজ করে জাতিসংঘের দলটি।

প্রতিবেদন তৈরিতে অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী ব্যক্তিদের নিয়ে ২৩০টির বেশি সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এছাড়া সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আরও ৩৬টি সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এই ৩৬ জনের মধ্যে সরকারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারাও আছেন, যারা ওই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে অবগত ছিলেন।