চলন্ত বাসে ডাকাতি, নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও ‘ধর্ষণের’ অভিযোগ ওঠার তিন দিন পর অবশেষে শুক্রবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। অজ্ঞাত ৮ থেকে ৯ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন বাসযাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী।
শুক্রবার মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মির্জাপুর থানার ওসি, তদন্ত মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। দুই থানা পুলিশের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টায় তিন দিন কোনো মামলা হয়নি। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে।
জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রাজশাহীগামী বাসটিতে এসব অভিযোগের ঘটনা কোন জেলার সীমানায় ঘটেছে, এই প্রশ্নে ঠেলাঠেলি চলে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর পুলিশের মধ্যে। সেটি মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বের বড় কারণ বলে বলা হচ্ছে। সর্বশেষ এই ঘটনা মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রশ্নে মানুষের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
যেদিন ঘটনা ঘটেছে, তার পরদিন সকালে যাত্রীরা অভিযোগ করলেও মামলা নেয়নি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ। সীমানা জটিলতার কথা বলে তারা ঠেলে দিয়েছিল বাসটির চলার রুটে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার দিকে। আবার মির্জাপুর থানা থেকে বলা হয়েছিল যে, এই ঘটনা মির্জাপুর থানার সীমান্তে ঘটেনি।
বাসযাত্রীরা জানান, সোমবার রাতে ঢাকা থেকে ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহনের একটি বাস ঢাকার গাবতলী থেকে ছেড়ে আসে। পথিমধ্যে চন্দ্রা এলাকায় বাসটিতে আরও কয়েকজন যাত্রী ওঠেন। পরে বাসটি টাঙ্গাইলে পৌঁছালে নতুন ওঠা যাত্রীসহ আরও কয়েকজন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পরে তারা যাত্রীদের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে মির্জাপুর এলাকায় বাস থেকে নেমে যান। এ সময় দুই নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সোমবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে নাটোরের বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস্ পরিবহনের বাসে টিকিট কেটে বাসে উঠি, যার নম্বর ময়মনসিংহ-ব-১১-০০৬১। বাসটি রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ছাড়ার সময় বাসটিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিল।
রাত ১টার দিকে বাসটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা বাইপাসে এসে চা পানের বিরতির দেয়। এ সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে আরও ৩ থেকে ৪ জন নতুন যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা করে।
রাত দেড়টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন হাইটেক সিটি পার্কসংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রম করার ৫ থেকে ৬ মিনিট পর হঠাৎ বাসে ৮/৯ জন ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলে। এর মধ্যে তিনজন বাসটির ড্রাইভারের গলায় ধারালো চাকু ধরে চালকের আসনের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এক পর্যায়ে তারা ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে গাড়িতে থাকা সব যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার, রুপা ছিনিয়ে নিতে থাকে। এ সময় ২ থেকে ৩ জন ডাকাত গাড়িতে থাকা অজ্ঞাতনামা নারী যাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করে। পরে ডাকাতরা বাসটি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে সেখানে নামিয়ে দেয়।
মির্জাপুর থানার ওসি, তদন্ত মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলা করেছেন বাসযাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী। মামলায় অজ্ঞাত ৮ থেকে ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।’
শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে নাটোর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। শুক্রবার পুলিশ সুপার আমজাদ হোসেন জানান, বাস ডাকাতির ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে ধর্ষণের কথা উল্লেখ নেই:
মামলার এজাহারে ধর্ষণের কথা উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে মির্জাপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সিদ্দিকী বলেন, ‘তারা এ নিয়ে অনেকগুলো যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। মহিলার সঙ্গেও নাটোর পুলিশ কথা বলেছে।’
‘আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এখানে ধর্ষণের যে ব্যাপারটা, ওটা সরাসরি আসেনি। শ্লীলতাহানির বিষয়টাই আসছে। তাকে অত্যাচার করা হয়েছে। মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ধর্ষণ যেটা, সেটা আমরা পাইনি,’ যোগ করেন তিনি।
পুলিশের এই কর্মকর্তার মতে, ‘ওরকম একটা ঘটনার পর পর একেকজন একেকভাবে উপস্থাপন করতে পারে।’ এ বিষয়ে জানতে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ওসিকে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘দুই বা তিনজন ডাকাত গাড়িতে থাকা দুই বা তিনজন অজ্ঞাতনামা মহিলা যাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করিয়া শ্লীলতাহানি করে।’
সেখানে বলা হয়েছে, ওই রাতে ডাকাতরা যাত্রী, চালক, সুপারভাইজার থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, রুপা ও মোবাইলফোনসহ সর্বমোট পাঁচ লক্ষ ২৬ হাজার ৬০০ টাকা লুণ্ঠন করে।
তবে এজাহারে ধর্ষণের কথা উল্লেখ না থাকলেও শুক্রবার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী তথা যাত্রী বলেন, তারা নিজেদের চোখে না দেখলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
চলন্ত বাসে ডাকাতি, নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও ‘ধর্ষণের’ অভিযোগ ওঠার তিন দিন পর অবশেষে শুক্রবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। অজ্ঞাত ৮ থেকে ৯ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন বাসযাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী।
শুক্রবার মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মির্জাপুর থানার ওসি, তদন্ত মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। দুই থানা পুলিশের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টায় তিন দিন কোনো মামলা হয়নি। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে।
জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রাজশাহীগামী বাসটিতে এসব অভিযোগের ঘটনা কোন জেলার সীমানায় ঘটেছে, এই প্রশ্নে ঠেলাঠেলি চলে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর পুলিশের মধ্যে। সেটি মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বের বড় কারণ বলে বলা হচ্ছে। সর্বশেষ এই ঘটনা মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রশ্নে মানুষের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
যেদিন ঘটনা ঘটেছে, তার পরদিন সকালে যাত্রীরা অভিযোগ করলেও মামলা নেয়নি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ। সীমানা জটিলতার কথা বলে তারা ঠেলে দিয়েছিল বাসটির চলার রুটে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার দিকে। আবার মির্জাপুর থানা থেকে বলা হয়েছিল যে, এই ঘটনা মির্জাপুর থানার সীমান্তে ঘটেনি।
বাসযাত্রীরা জানান, সোমবার রাতে ঢাকা থেকে ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহনের একটি বাস ঢাকার গাবতলী থেকে ছেড়ে আসে। পথিমধ্যে চন্দ্রা এলাকায় বাসটিতে আরও কয়েকজন যাত্রী ওঠেন। পরে বাসটি টাঙ্গাইলে পৌঁছালে নতুন ওঠা যাত্রীসহ আরও কয়েকজন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পরে তারা যাত্রীদের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে মির্জাপুর এলাকায় বাস থেকে নেমে যান। এ সময় দুই নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সোমবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে নাটোরের বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস্ পরিবহনের বাসে টিকিট কেটে বাসে উঠি, যার নম্বর ময়মনসিংহ-ব-১১-০০৬১। বাসটি রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ছাড়ার সময় বাসটিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিল।
রাত ১টার দিকে বাসটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা বাইপাসে এসে চা পানের বিরতির দেয়। এ সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে আরও ৩ থেকে ৪ জন নতুন যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা করে।
রাত দেড়টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন হাইটেক সিটি পার্কসংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রম করার ৫ থেকে ৬ মিনিট পর হঠাৎ বাসে ৮/৯ জন ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলে। এর মধ্যে তিনজন বাসটির ড্রাইভারের গলায় ধারালো চাকু ধরে চালকের আসনের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এক পর্যায়ে তারা ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে গাড়িতে থাকা সব যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার, রুপা ছিনিয়ে নিতে থাকে। এ সময় ২ থেকে ৩ জন ডাকাত গাড়িতে থাকা অজ্ঞাতনামা নারী যাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করে। পরে ডাকাতরা বাসটি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে সেখানে নামিয়ে দেয়।
মির্জাপুর থানার ওসি, তদন্ত মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলা করেছেন বাসযাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী। মামলায় অজ্ঞাত ৮ থেকে ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।’
শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে নাটোর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। শুক্রবার পুলিশ সুপার আমজাদ হোসেন জানান, বাস ডাকাতির ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে ধর্ষণের কথা উল্লেখ নেই:
মামলার এজাহারে ধর্ষণের কথা উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে মির্জাপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সিদ্দিকী বলেন, ‘তারা এ নিয়ে অনেকগুলো যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। মহিলার সঙ্গেও নাটোর পুলিশ কথা বলেছে।’
‘আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এখানে ধর্ষণের যে ব্যাপারটা, ওটা সরাসরি আসেনি। শ্লীলতাহানির বিষয়টাই আসছে। তাকে অত্যাচার করা হয়েছে। মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ধর্ষণ যেটা, সেটা আমরা পাইনি,’ যোগ করেন তিনি।
পুলিশের এই কর্মকর্তার মতে, ‘ওরকম একটা ঘটনার পর পর একেকজন একেকভাবে উপস্থাপন করতে পারে।’ এ বিষয়ে জানতে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ওসিকে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘দুই বা তিনজন ডাকাত গাড়িতে থাকা দুই বা তিনজন অজ্ঞাতনামা মহিলা যাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করিয়া শ্লীলতাহানি করে।’
সেখানে বলা হয়েছে, ওই রাতে ডাকাতরা যাত্রী, চালক, সুপারভাইজার থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, রুপা ও মোবাইলফোনসহ সর্বমোট পাঁচ লক্ষ ২৬ হাজার ৬০০ টাকা লুণ্ঠন করে।
তবে এজাহারে ধর্ষণের কথা উল্লেখ না থাকলেও শুক্রবার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী তথা যাত্রী বলেন, তারা নিজেদের চোখে না দেখলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা বিশ্বাস করেন।