গুতেরেসের সঙ্গে কেন বৈঠক, ‘আমি ঠিক বুঝিনি’: মির্জা ফখরুল মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়েই তৈরি করতে হবে: এনসিপি নেতা নাহিদ সংস্কার ও ফেয়ার নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি: জামায়াতের নায়েবে আমির জাতিসংঘে শেখ পরিবারের তিনজনের নিয়োগ পুনর্বিবেচনার কথা বলেছে এবি পার্টি
শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে সাত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস -পিআইডি
বিএনপি, জামায়াত, নাগরিক ঐক্য, সিপিবি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, এনসিপি এই সাতটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। শনিবার বেলা ১টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘ ঢাকা অফিসের উদ্যোগে এই গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে কেন এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে সেটা ‘বুঝতে পারেননি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন অংশ নেন।
নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার করে বাকিগুলো সংসদে: বিএনপি
বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘের উদ্যোগে একটা গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করেছিল। এখানে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা ছিলেন। সংস্কার কমিশনের প্রধানরাও ছিলেন। তবে এই গোলটেবিল বৈঠকটা কেন, আমি ঠিক বুঝিনি।’ বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে যে কমিশনগুলো করা হয়েছে সেই সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিবকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমরা আমাদের আগের বক্তব্যই তুলে ধরেছি। আমরা আমাদের বক্তব্যে বলেছি, সংস্কার তো অবশ্যই করতে হবে, আমরা সংস্কারের কথা আগেই বলেছি, সেই সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু সংস্কারটা যত দ্রুত করা যায়। মূলত নির্বাচনকেন্দ্রিক যে সংস্কারগুলো আছে সেগুলো করে ফেলা এবং দ্রুত নির্বাচন করে বাকিগুলো সংসদের মাধ্যমে করে ফেলা। সংস্কারগুলো চলমান প্রক্রিয়া সেই বিষয়গুলো আমরা বলে এসেছি।’
তাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের জবাব কীÑ জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনি এই ব্যাপারে কোনো কমেন্ট করেননি।’ বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সময়সীমার কথা বলেছেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওখানে টাইম ফ্রেম নিয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন নাই। কারণ এটা তো আমাদের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’
অপর প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তো সংস্কার কমিশনের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এবং তারা যা চাচ্ছে আমরা দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে একটা বৈঠক হয়েছে। ফলে সেই বিষয়গুলো নিয়ে তো প্রশ্ন উঠতে পারে না। জাতিসংঘের মহাসচিবকে আমরা টাইম ফ্রেম দিতে যাব কেন?’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতিসংঘের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, আপনারা বসে রিফর্ম কী নিবেন সেটা ঠিক করেন। বাংলাদেশে একটা স্ট্রং ডেমোক্র্যাটিক গভর্নমেন্ট ক্ষমতায় আসবে এটা তিনি আশা করেছেন।’
সংস্কারের পক্ষে এনসিপির মতামত
জাতীয় নগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আজকের আলোচনায় ৫ আগস্ট পরবর্তী যে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের যে গণতন্ত্র একটা রিফর্ম প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। রিফর্ম কমিশনের প্রধানরা তাদের নিজ নিজ কমিশনের সংস্কারের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছেন এবং রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দলীয় অবস্থান তুলে ধরেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এনপিসির সংস্কার বিষয়ে আমাদের যে অবস্থান আমরা মনে করি, গণঅভ্যুত্থান পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী যে সরকার গঠিত হয়েছে, সংস্কার ও বিচার অন্যতম কমিটমেন্ট জনগনের কাছে। ফলে মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়ে তৈরি করতে হবে এবং সব রাজনৈতিক দল মিলে যে একটা ঐক্যমত পোষণ করতে হবে, যেটা জুলাই সনদের কথা বলা হচ্ছে সেই জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে। আমরা জুলাই সনদের দ্রুত বাস্তবায়নের কথা বলেছি।’
নাহিদ বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আমাদের যে অবস্থান গণপরিষদের মাধ্যমেই সংবিধান সংস্কার করতে হবে। অন্যথায় পার্লামেন্টের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার টেকসই হবে না, ইতিহাস থেকে এটাই আমরা দেখতে পাই। আমরা দলীয় অবস্থান থেকে আমাদের কথা বলেছি।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘ইউএন সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো যাতে নিজেরাই সমঝোতায় আসে, একটা ঐকমত্যে আসে। গণতন্ত্রের যে ট্রু সেন্স সেটাকে মাথায় রেখে যাতে আমরা এক সঙ্গে কাজ করি, একটা ইউনিটিতে আসতে পারি, সেটা তিনি তার জায়গা থেকে প্রত্যাশা করেছেন।’
নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, ‘আমরা মনে করি এবং আমরা এটাই বলেছি যে, নির্বাচন কিন্তু আমরা সংস্কারের একটা প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি, সংস্কারের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখি। কোনো রকম সংস্কার ছাড়া বা সংস্কারবিহীন নির্বাচন কোনো কাজে দেবে না।’
‘অন্য সব রাজনৈতিক দল তাদের সঙ্গে তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে’ উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘এখানে মতপার্থক্য হচ্ছে কোন সংস্কার কখন ও কত বড় হবে, নির্বাচনের আগে কতটুকু হবে, নির্বাচনের পরে কতটুকু হবে এটা নিয়ে। আমরা মনে করি জুলাই সনদের মধ্যে সেটা বাস্তবায়ন হলে মতপার্থক্যগুলো কেটে যাবে এবং আমরা একটা ঐক্যমতে আসতে পারব।’
সংস্কারের কথা বলেছে জামায়াত
জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলেছি। একটা ফেয়ার নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের অধিকাংশ বক্তব্য সমর্থন করে বলেছেন, বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের কাজে আমাদের সহযোগিতা করবেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তিনি আশাবাদী।’
জাতিসংঘে শেখ পরিবারের তিনজনের নিয়োগ পুনর্বিবেচনার কথা বলেছে এবি পার্টি
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘এবি পার্টির পক্ষ থেকে আমরা ২/৩টা জিনিস বলেছি। আমরা বলেছি, জাতিসংঘের তিনটা প্রতিষ্ঠানে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার তিনজন আত্মীয় কাজ করছেন, আমি জাতিসংঘের মহাসচিবকে বলেছি, জাতিসংঘ যেহেতু ইনসাফ চায়, ইনসাফটা যেন শুরু হয় জাতিসংঘের নিজের অফিস থেকে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় শেখ হাসিনার মেয়ে কাজ করছেন, ইউএনডিপিতে শেখ রেহানার ছেলে ববি কাজ করছেন এবং ববির স্ত্রী কাজ করছে মাইগ্রেশন অর্গানাইজেশনে। আমরা বলেছি এই নিয়োগগুলোকে পুনর্বিবেচনা করার জন্য।’ বাংলাদেশে মানবাধিকার কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয় খোলা যায় কিনা, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য জাতিসংঘ যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেটা যেন আরও বেগবান করা হয় এসব বিষয়েও জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বৈঠকে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার বিষয়ক কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
অন্তবর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, তথ্য উপদেষ্টা মাহবুব আলম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মুনির হায়দারও উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস, ইউএনএইচসিআর এর আবাসিক প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী, আইএলও এর কান্ট্রি ডিরেক্টার, টুমো পুটিআইনেন, ডব্লিউএফপি এর আবাসিক প্রতিনিধি ডমিনিকো স্কেলপেনি, ইউএনডিপি এর আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, ডব্লিউএইচও এর আবাসিক প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা, ইউএনওপিএস এর আবাসিক প্রতিনিধি সুধীর মুরলীধরন, আইওএম এর মিশন প্রধান ল্যানস বনেউ, ইউনেস্কোর প্রধান নির্বাহী পরিচালক ও ইউনিসেফের আবাসিক প্রতিনিধি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
গুতেরেসের সঙ্গে কেন বৈঠক, ‘আমি ঠিক বুঝিনি’: মির্জা ফখরুল মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়েই তৈরি করতে হবে: এনসিপি নেতা নাহিদ সংস্কার ও ফেয়ার নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি: জামায়াতের নায়েবে আমির জাতিসংঘে শেখ পরিবারের তিনজনের নিয়োগ পুনর্বিবেচনার কথা বলেছে এবি পার্টি
শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে সাত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস -পিআইডি
শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
বিএনপি, জামায়াত, নাগরিক ঐক্য, সিপিবি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, এনসিপি এই সাতটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। শনিবার বেলা ১টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘ ঢাকা অফিসের উদ্যোগে এই গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে কেন এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে সেটা ‘বুঝতে পারেননি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন অংশ নেন।
নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার করে বাকিগুলো সংসদে: বিএনপি
বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘের উদ্যোগে একটা গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করেছিল। এখানে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা ছিলেন। সংস্কার কমিশনের প্রধানরাও ছিলেন। তবে এই গোলটেবিল বৈঠকটা কেন, আমি ঠিক বুঝিনি।’ বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে যে কমিশনগুলো করা হয়েছে সেই সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিবকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমরা আমাদের আগের বক্তব্যই তুলে ধরেছি। আমরা আমাদের বক্তব্যে বলেছি, সংস্কার তো অবশ্যই করতে হবে, আমরা সংস্কারের কথা আগেই বলেছি, সেই সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু সংস্কারটা যত দ্রুত করা যায়। মূলত নির্বাচনকেন্দ্রিক যে সংস্কারগুলো আছে সেগুলো করে ফেলা এবং দ্রুত নির্বাচন করে বাকিগুলো সংসদের মাধ্যমে করে ফেলা। সংস্কারগুলো চলমান প্রক্রিয়া সেই বিষয়গুলো আমরা বলে এসেছি।’
তাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের জবাব কীÑ জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনি এই ব্যাপারে কোনো কমেন্ট করেননি।’ বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সময়সীমার কথা বলেছেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওখানে টাইম ফ্রেম নিয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন নাই। কারণ এটা তো আমাদের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’
অপর প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তো সংস্কার কমিশনের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এবং তারা যা চাচ্ছে আমরা দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে একটা বৈঠক হয়েছে। ফলে সেই বিষয়গুলো নিয়ে তো প্রশ্ন উঠতে পারে না। জাতিসংঘের মহাসচিবকে আমরা টাইম ফ্রেম দিতে যাব কেন?’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতিসংঘের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, আপনারা বসে রিফর্ম কী নিবেন সেটা ঠিক করেন। বাংলাদেশে একটা স্ট্রং ডেমোক্র্যাটিক গভর্নমেন্ট ক্ষমতায় আসবে এটা তিনি আশা করেছেন।’
সংস্কারের পক্ষে এনসিপির মতামত
জাতীয় নগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আজকের আলোচনায় ৫ আগস্ট পরবর্তী যে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের যে গণতন্ত্র একটা রিফর্ম প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। রিফর্ম কমিশনের প্রধানরা তাদের নিজ নিজ কমিশনের সংস্কারের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছেন এবং রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দলীয় অবস্থান তুলে ধরেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এনপিসির সংস্কার বিষয়ে আমাদের যে অবস্থান আমরা মনে করি, গণঅভ্যুত্থান পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী যে সরকার গঠিত হয়েছে, সংস্কার ও বিচার অন্যতম কমিটমেন্ট জনগনের কাছে। ফলে মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়ে তৈরি করতে হবে এবং সব রাজনৈতিক দল মিলে যে একটা ঐক্যমত পোষণ করতে হবে, যেটা জুলাই সনদের কথা বলা হচ্ছে সেই জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে। আমরা জুলাই সনদের দ্রুত বাস্তবায়নের কথা বলেছি।’
নাহিদ বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আমাদের যে অবস্থান গণপরিষদের মাধ্যমেই সংবিধান সংস্কার করতে হবে। অন্যথায় পার্লামেন্টের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার টেকসই হবে না, ইতিহাস থেকে এটাই আমরা দেখতে পাই। আমরা দলীয় অবস্থান থেকে আমাদের কথা বলেছি।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘ইউএন সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো যাতে নিজেরাই সমঝোতায় আসে, একটা ঐকমত্যে আসে। গণতন্ত্রের যে ট্রু সেন্স সেটাকে মাথায় রেখে যাতে আমরা এক সঙ্গে কাজ করি, একটা ইউনিটিতে আসতে পারি, সেটা তিনি তার জায়গা থেকে প্রত্যাশা করেছেন।’
নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, ‘আমরা মনে করি এবং আমরা এটাই বলেছি যে, নির্বাচন কিন্তু আমরা সংস্কারের একটা প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি, সংস্কারের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখি। কোনো রকম সংস্কার ছাড়া বা সংস্কারবিহীন নির্বাচন কোনো কাজে দেবে না।’
‘অন্য সব রাজনৈতিক দল তাদের সঙ্গে তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে’ উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘এখানে মতপার্থক্য হচ্ছে কোন সংস্কার কখন ও কত বড় হবে, নির্বাচনের আগে কতটুকু হবে, নির্বাচনের পরে কতটুকু হবে এটা নিয়ে। আমরা মনে করি জুলাই সনদের মধ্যে সেটা বাস্তবায়ন হলে মতপার্থক্যগুলো কেটে যাবে এবং আমরা একটা ঐক্যমতে আসতে পারব।’
সংস্কারের কথা বলেছে জামায়াত
জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলেছি। একটা ফেয়ার নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের অধিকাংশ বক্তব্য সমর্থন করে বলেছেন, বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের কাজে আমাদের সহযোগিতা করবেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তিনি আশাবাদী।’
জাতিসংঘে শেখ পরিবারের তিনজনের নিয়োগ পুনর্বিবেচনার কথা বলেছে এবি পার্টি
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘এবি পার্টির পক্ষ থেকে আমরা ২/৩টা জিনিস বলেছি। আমরা বলেছি, জাতিসংঘের তিনটা প্রতিষ্ঠানে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার তিনজন আত্মীয় কাজ করছেন, আমি জাতিসংঘের মহাসচিবকে বলেছি, জাতিসংঘ যেহেতু ইনসাফ চায়, ইনসাফটা যেন শুরু হয় জাতিসংঘের নিজের অফিস থেকে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় শেখ হাসিনার মেয়ে কাজ করছেন, ইউএনডিপিতে শেখ রেহানার ছেলে ববি কাজ করছেন এবং ববির স্ত্রী কাজ করছে মাইগ্রেশন অর্গানাইজেশনে। আমরা বলেছি এই নিয়োগগুলোকে পুনর্বিবেচনা করার জন্য।’ বাংলাদেশে মানবাধিকার কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয় খোলা যায় কিনা, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য জাতিসংঘ যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেটা যেন আরও বেগবান করা হয় এসব বিষয়েও জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বৈঠকে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার বিষয়ক কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
অন্তবর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, তথ্য উপদেষ্টা মাহবুব আলম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মুনির হায়দারও উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস, ইউএনএইচসিআর এর আবাসিক প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী, আইএলও এর কান্ট্রি ডিরেক্টার, টুমো পুটিআইনেন, ডব্লিউএফপি এর আবাসিক প্রতিনিধি ডমিনিকো স্কেলপেনি, ইউএনডিপি এর আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, ডব্লিউএইচও এর আবাসিক প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা, ইউএনওপিএস এর আবাসিক প্রতিনিধি সুধীর মুরলীধরন, আইওএম এর মিশন প্রধান ল্যানস বনেউ, ইউনেস্কোর প্রধান নির্বাহী পরিচালক ও ইউনিসেফের আবাসিক প্রতিনিধি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।