alt

জাতীয়

উত্তরাঞ্চলে দিনে প্রচণ্ড গরম, রাতে ঘন ‘কুয়াশা’: ফসল নিয়ে চিন্তায় কৃষক

শাফিউল আল ইমরান, উত্তরাঞ্চল থেকে ফিরে : বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

রংপুরের পীরগঞ্জে রাতে এখনও কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে

দিনে প্রচণ্ড গরম ও রাতে ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার ফসলের উৎপাদন ব্যাহতের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতি তাপমাত্রার কারণে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বেশি তাপমাত্রার কারণে পরাগায়ন বিঘ্নিত হয়ে ধানে কমপক্ষে ১০ শতাংশ চিটা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি ওই অঞ্চলের অন্যান্য কৃষি ফসলের আবাদ ব্যাহত হওয়ায় উৎপাদন কম হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে যা নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

ধানগাছে ‘হিট শক’, আমের ফলন নিয়ে ‘সংশয়’

উন্মুক্ত জলাশয়, গাছপালা এবং ঘাসের পরিমাণ কম থাকায় জলবায়ুর এমন বৈচিত্র্য

কৃষকের এমন অবস্থায় ‘পাশে নেই’ উপসহকারী কৃষি অফিসাররা

রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বড় ভগবানপুর গ্রামের কৃষক আর্জন আলী। প্রচণ্ড গরমে বেগুন, পটোল, মরিচের ক্ষতি হওয়ার কথা জানান। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এত রোদের জন্য বেগুন গাছে পাকরা নাগচে (পাতা মুড়ে যাচ্ছে)। আর পটোল লাল হয়া গেছে। এটা রাতের কুয়াশা আর দিনের খরানের (অতিরিক্ত রোদ) কারণে।’

ফসলের খেত ঠিক রাখতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষক। তবে তাতে কাক্সিক্ষত ফল পাচ্ছেন না। আর্জন আলী বলেন, ‘ওষুধ (কীটনাশক) বেশি দেয়া নাগে (লাগে)। কিন্তু অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ওষুধ খাটে না (কাজ করে না)। ওষুধের পাওয়ার ৩৩ ডিগ্রি পর্যন্ত কিন্তু এখন তাপ ওঠে ৩৮ বা ৩৯ ডিগ্রি।’

কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ দেয়ার জন্য কেউ আসেনি বলে অভিযোগ তার।

প্রচণ্ড গরমে ওই গ্রামেরই লোকনাথ রায় তার ধান নিয়ে দুশ্চিতায়। ধান খেতে পোকার আক্রমণ বেড়েছে। ধানের পাতা কুচকে যাচ্ছে। পানি দিয়েও কাজ হচ্ছেন।

কৃষি বিজ্ঞানী ড. মেহেদী মাসুদ সংবাদকে বলেন, ‘এই গরমে ধানে ব্লাস্টের আক্রমণ বাড়তে পারে। কারেন্ট পোকা বা বাদামি গাছ ফড়িংয়ের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ার কারণে আক্রমণ বাড়বে। অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রে সেচের যে অসুবিধা, তাতে ওই ফসলগুলোতে জাত পোকা লাগবে।’

আমের ফলন নিয়েও ‘সংশয়’

উত্তরাঞ্চলে চলমান খরা ও মৃদু তাপপ্রবাহে গাছে গাছে ঝুলে থাকা আমের গুটি শুকিয়ে ঝরে পড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন বাগানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ গাছেই তেমন আমেরগুটিও কম আসে, আর যেগুলো আছে সেগুলোও নানা ধরনের রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে; যার ফলে চাষিরা বিপদে পড়েছেন।

নওগাঁর পোরশা উপজেলায় দয়ার গ্রামের নজরুল ইসলাম। অনাবৃষ্টির কারণে তার গাছে পর্যাপ্ত মুকুল আসলেও তেমন আম দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় জমির মালিককে কীভাবে টাকা দিবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি। একই অবস্থা সারাইগাছি গ্রামের আমচাষি মো. ফয়জুল্লাহ শেখের। তিনিও খরচ ওঠানো নিয়ে চিন্তায়। তার কথা,

‘অনুকূল আবহাওয়া হলে হয়তো কিছু লাভ হতে পারে, না হলে এবারের মৌসুমে আমবাগান থেকে বড় ধরনের লোকসান হবে।’

ড. মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘এ সময় কুয়াশায় আমের অনেক গুটি পড়ে যাবে। আমের গোটায় ফাঙ্গাস লাগবে। যথাযথ ছত্রাকনাশক না দিলে লেট আম যেগুলো হয়, আশ্বিনা বা গৌরমতি, এগুলোর মুকুল নষ্ট হয়ে যাবে।’

ধানগাছের ‘হিট শক’

গাজীপুরের তেলবীজ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘মানুষের ক্ষেত্রে যেমন অধিক গরমে হিট স্ট্রোক হয় তেমনি ধানের ক্ষেত্রে এ পরিস্থিতিকে আমরা হিট শক বলছি।’ তাপপ্রবাহ ৩৫ ডিগ্রি বা এর বেশি হলে এবং সে সময় বৃষ্টি না হলে ধানগাছে হিট শক হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট তাপপ্রবাহের (হিটওয়েভ) আগাম সতর্কবার্তা জারি করেছে। সর্তকবার্তায় সারা দেশে বিশেষ করে ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর এবং খুলনা জেলার বেশিরভাগ এলাকায় মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহের কথা জানানো হয়েছে।

তাপপ্রবাহ থেকে ধান ফসল রক্ষার জন্য জমিতে সবসময় ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে বলা হয়েছে, যাতে জমিতে পানির ঘাটতি না হয়।

ড. মাসুদ বলেন, ‘পরিত্রাণের উপায় হিসেবে রেগুলার মনিটরিং করতে হবে। চাষি ভাইয়েরা যেন খেত দেখাশোনা করে এবং প্রিভেনটিং হিসেবে ফাঙ্গিসাইডনাশক স্প্রে করে। ধানের ক্ষেত্রে যেখানে একটু পানি বেঁধে থাকে বা বিলের নিচের দিকের অংশে যেখানে মানুষ সহজে যেতে পারে না সেসমস্ত জায়গায় যেন খেয়াল রাখে।’

তিনি আরও বলেন. ‘বাদামি গাছে ফড়িংয়ের উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য যেন আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে। বাদামি গাছে ফড়িং বেশি সংখ্যায় দেখলে তা বিনাশ করতে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।’

সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ব্লাস্ট রোগ ধান গাছের তিনটি অংশে আক্রমণ করে থাকে। গাছের আক্রান্ত অংশের ওপর ভিত্তি করে এ রোগ তিনটি নামে পরিচিত: ১. পাতা ব্লাস্ট, ২. গিট ব্লাস্ট এবং ৩. শীষ ব্লাস্ট।

পাইরিকুলারিয়াগ্রিসিয়া নামের ছত্রাকের আক্রমণ থেকে এই রোগ হয়ে থাকে। রোগটি আমন ও বোরো দুই মৌসুমেই হতে পারে। ধানের চারা থেকে পাকার আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় রোগটি হতে পারে। বীজ, বাতাস, কীটপতঙ্গ ও আবহাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। রাতে ঠাণ্ডা দিনে গরম ও সকালে পাতলা শিশির জমা হলে এ রোগ দ্রুত ছড়ায়।

হালকা মাটি বা বেলেমাটি যার পানি ধারণক্ষমতা কম সেখানে রোগ বেশি দেখা যায়। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম পটাশ সার দিলে এ রোগের আক্রমণ বেশি হয়। দীর্ঘদিন জমি শুকনো অবস্থায় থাকলেও এ রোগের সংক্রমণ হতে পারে।

কেন এ অবস্থা

উত্তরাঞ্চলে কৃষি ও মাছের লালন-পালনে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার অনেক পরিমাণে বেড়েছে। মাটির উপরিভাগের পানির উৎস যেমন খাল, নালা, নদ ও নদী প্রায় শুষ্ক। সবাই ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। এবার লক্ষণীয় বিষয় হলো সেচ পাম্পে আগের মতো পানি উঠছে না।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মাহিউল কাদির সংবাদকে বলেন, ‘সাধারণত মার্চের শেষ দিকে বৃষ্টি হয় যা কৃষি কাজের অনুকূল পরিবেশ বজায় থাকে। এবার কোনো বৃষ্টি হয়নি। আর একটি বিষয় হচ্ছে দিনে প্রচণ্ড গরম, রাতে শীত এবং সকালে কুয়াশার চাদরে প্রকৃতি ঢাকা থাকে। এ দৃশ্য সাধারণত মরু অঞ্চলে দেখা যায়। অতিরিক্ত ইট ভাটা, বনায়ন উজাড়, যত্রতত্র মানুষের বসতি স্থাপন এবং মানুষের মধ্যে পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতার অভাবে প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের রংপুর এলাকায় জলবায়ুর দুর্যোগের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়।’

#জলবায়ুর এমন বৈচিত্র্য দায়ী#

দেশে গত কয়েক বছর ধরে বসন্ত এমনকি গ্রীষ্মকালেও সকালে এবং সন্ধ্যায় কুয়াশার মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজ করে। এমনটি হওয়ার কথা নয়। গত কয়েক বছর দেখা যায়, বাংলাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রায় বেশ তফাৎ। সাধারণ রাতের তাপমাত্রা দিনের চেয়ে একটু কম থাকে তবে ইদানীং এই ব্যবধান বেশি। কখনও কখনও তা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রিও হয়ে যাচ্ছে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও সেন্টার ফর পিপল অ্যান্ড এনভায়রন (সিপিই) পরিচালক মুহম্মদ আবদুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘প্রথমত কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ বুঝতে হলে আমাদের এই দিন রাতের তাপের তফাৎটা জানা জরুরি। দিনে সূর্যরশ্মি থেকে ভূপৃষ্ঠ সরাসরি তাপ গ্রহণ করে উত্তপ্ত হয় যা রাতে ধীরে ধীরে প্রশমিত হয়। কিন্তু রাতে সাগরের গরম বায়ু ভূমিতে প্রবেশ করার কারণে ভূপৃষ্ঠ ধীরে ধীরে শীতল হয়। কিন্তু বর্তমানে তা দ্রুত সময়ে হচ্ছে, বিশেষ করে সূর্য পশ্চিমে হেলে গেলেই ভূপৃষ্ঠ শীতল হতে শুরু করে। পৃথিবী পৃষ্ঠে তাপ ধরে রাখার জন্য পানি, গাছপালা, ঘাসের ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে উন্মুক্ত জলাশয়, গাছপালা এবং ঘাসের পরিমাণ খুব কম। তাই মাটি সূর্য থাকার সময়ে যে তাপ শোষণ করে তা সূর্য হেলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত হারিয়ে ফেলে বলে রাত আসতে আসতে তাপমাত্রা দ্রুত পতন হয়। যে কারণে দিন ও রাতের তাপমাত্রার তফাৎ প্রকট হচ্ছে। রাতে তাপমাত্রা কম থাকার কারণে শীত অনুভূত হচ্ছে। এই শীতের কারণে বাতাস ঘনীভূত হয়। এই ঘনীভূত বাতাস কুয়াশার মতো সৃষ্টি করে যাকে ইংরেজিতে বলে ফগ। এটা আসলে কুয়াশা নয়, কারণ সকালে শিশির তৈরি হয় না। এই ফগের সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের ধোঁয়া ও দূষিত বিশেষ করে সালফর অক্সাইড, নাইট্রাইস অক্সাইড, ধুলা মিলিত হয়ে স্মগ তৈরি করে যা মূলত স্মোক ও ফগের সম্মিলিত ফলাফল। দেশে গত কয়েক বছর এই স্মোকের ঘনত্ব বাড়ছে যা কৃষি ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।’

শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী গনির স্থলে আমির

সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদের ৫ ফ্ল্যাট-প্লট ও জমি জব্দ

শেরেবাংলা নগরে ছুরিকাঘাতে তরুণ খুন

‘আগামী বছরের ১ জুলাই চালু হবে পায়রা বন্দরের ফার্স্ট টার্মিনাল’

‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি ঘোষণা আন্দোলনকারীদের

ছবি

বিলুপ্তির পথে হাকালুকি হাওরের রাণী মাছ

বৃহস্পতিবার শুরু এইচএসসি, পরীক্ষার্থী ১২ লাখ ৫১ হাজার

‘নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা না কমালে প্রধানমন্ত্রীর ১০ বছর মেয়াদে একমত বিএনপি’

এনবিআর আন্দোলনে অসাধু ‘ব্যবসায়ীদের’ ইন্ধন রয়েছে: উপদেষ্টা

ছবি

পরিবেশ সুরক্ষায় প্লাস্টিক বর্জনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

২১ দফা দাবিতে কারমাইকেলের শিক্ষার্থীদের শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত

ছবি

ইরান-ইসরায়েল নিয়ে নেটো সম্মেলনে বাহাদুরির দিন ট্রাম্পের

পিলখানায় হত্যাকাণ্ডে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ‘চরম ব্যর্থতার’ পরিচয় দিয়েছে: কমিশন

এবার গ্রেপ্তার সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল

‘ফোনে ঘুষ দাবি’: ফেইসবুকে হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট, প্রতিবাদ দুদকের

সিইসির সঙ্গে বৈঠক, সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার ভোট চায় জামায়াত

সাংবিধানিক কাউন্সিলের বদলে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাব

ডেঙ্গুর সঙ্গে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে চিকুনগুনিয়া

‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে কিনা, জানতে চেয়েছিল আইএমএফ’

ছবি

জুনেই ডেঙ্গুতে ১৩ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি রোগী বাড়ছেই

ছবি

“নিরাময় কেন্দ্রে সমাধান নয়, গডফাদার ধরতে হবে”—জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী

ছবি

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সামরিক ও গোয়েন্দার ‘নিষ্ক্রিয়তা’ এবং ‘অবহেলাই’ দায়ী: তদন্ত কমিশন

ছবি

সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেপ্তার

ছবি

আলোচনার মধ্য দিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব: আলী রীয়াজ

ডেঙ্গু: অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার নেই

আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো মামলায় অভিযোগ দাখিল ২ জুলাই

করোনা: আরও ২১ জন আক্রান্ত

ছবি

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে রকমারি আবাদে স্বাবলম্বী অমল

ছবি

মৃত আরিফুলের মরদেহ ফিরলো ১৬ দিন পর

ছবি

বেনাপোল বন্দর: স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না ভারতীয় ট্রাকচালকের অনেকেই

টিউলিপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা উদ্দেশ্য-প্রণোদিত নয়: দুদক চেয়ারম্যান

আইএমএফের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ

ছবি

এনবিআর কর্মকর্তাদের কলম বিরতি চলবে বুধবার-বৃহস্পতিবার

নূরুল হুদাকে ‘হেনস্তায়’ গ্রেপ্তার ১, ‘মব’ প্রশ্রয় দেয়া হবে না, ডিএমপি কমিশনার

দেশীয়ভাবে নির্ধারণ করা হবে মুদ্রার মান : গভর্নর

শ্রেণীকক্ষে ফিরছেন না ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা

tab

জাতীয়

উত্তরাঞ্চলে দিনে প্রচণ্ড গরম, রাতে ঘন ‘কুয়াশা’: ফসল নিয়ে চিন্তায় কৃষক

শাফিউল আল ইমরান, উত্তরাঞ্চল থেকে ফিরে

রংপুরের পীরগঞ্জে রাতে এখনও কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে

বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

দিনে প্রচণ্ড গরম ও রাতে ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার ফসলের উৎপাদন ব্যাহতের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতি তাপমাত্রার কারণে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বেশি তাপমাত্রার কারণে পরাগায়ন বিঘ্নিত হয়ে ধানে কমপক্ষে ১০ শতাংশ চিটা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি ওই অঞ্চলের অন্যান্য কৃষি ফসলের আবাদ ব্যাহত হওয়ায় উৎপাদন কম হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে যা নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

ধানগাছে ‘হিট শক’, আমের ফলন নিয়ে ‘সংশয়’

উন্মুক্ত জলাশয়, গাছপালা এবং ঘাসের পরিমাণ কম থাকায় জলবায়ুর এমন বৈচিত্র্য

কৃষকের এমন অবস্থায় ‘পাশে নেই’ উপসহকারী কৃষি অফিসাররা

রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বড় ভগবানপুর গ্রামের কৃষক আর্জন আলী। প্রচণ্ড গরমে বেগুন, পটোল, মরিচের ক্ষতি হওয়ার কথা জানান। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এত রোদের জন্য বেগুন গাছে পাকরা নাগচে (পাতা মুড়ে যাচ্ছে)। আর পটোল লাল হয়া গেছে। এটা রাতের কুয়াশা আর দিনের খরানের (অতিরিক্ত রোদ) কারণে।’

ফসলের খেত ঠিক রাখতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষক। তবে তাতে কাক্সিক্ষত ফল পাচ্ছেন না। আর্জন আলী বলেন, ‘ওষুধ (কীটনাশক) বেশি দেয়া নাগে (লাগে)। কিন্তু অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ওষুধ খাটে না (কাজ করে না)। ওষুধের পাওয়ার ৩৩ ডিগ্রি পর্যন্ত কিন্তু এখন তাপ ওঠে ৩৮ বা ৩৯ ডিগ্রি।’

কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ দেয়ার জন্য কেউ আসেনি বলে অভিযোগ তার।

প্রচণ্ড গরমে ওই গ্রামেরই লোকনাথ রায় তার ধান নিয়ে দুশ্চিতায়। ধান খেতে পোকার আক্রমণ বেড়েছে। ধানের পাতা কুচকে যাচ্ছে। পানি দিয়েও কাজ হচ্ছেন।

কৃষি বিজ্ঞানী ড. মেহেদী মাসুদ সংবাদকে বলেন, ‘এই গরমে ধানে ব্লাস্টের আক্রমণ বাড়তে পারে। কারেন্ট পোকা বা বাদামি গাছ ফড়িংয়ের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ার কারণে আক্রমণ বাড়বে। অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রে সেচের যে অসুবিধা, তাতে ওই ফসলগুলোতে জাত পোকা লাগবে।’

আমের ফলন নিয়েও ‘সংশয়’

উত্তরাঞ্চলে চলমান খরা ও মৃদু তাপপ্রবাহে গাছে গাছে ঝুলে থাকা আমের গুটি শুকিয়ে ঝরে পড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন বাগানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ গাছেই তেমন আমেরগুটিও কম আসে, আর যেগুলো আছে সেগুলোও নানা ধরনের রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে; যার ফলে চাষিরা বিপদে পড়েছেন।

নওগাঁর পোরশা উপজেলায় দয়ার গ্রামের নজরুল ইসলাম। অনাবৃষ্টির কারণে তার গাছে পর্যাপ্ত মুকুল আসলেও তেমন আম দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় জমির মালিককে কীভাবে টাকা দিবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি। একই অবস্থা সারাইগাছি গ্রামের আমচাষি মো. ফয়জুল্লাহ শেখের। তিনিও খরচ ওঠানো নিয়ে চিন্তায়। তার কথা,

‘অনুকূল আবহাওয়া হলে হয়তো কিছু লাভ হতে পারে, না হলে এবারের মৌসুমে আমবাগান থেকে বড় ধরনের লোকসান হবে।’

ড. মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘এ সময় কুয়াশায় আমের অনেক গুটি পড়ে যাবে। আমের গোটায় ফাঙ্গাস লাগবে। যথাযথ ছত্রাকনাশক না দিলে লেট আম যেগুলো হয়, আশ্বিনা বা গৌরমতি, এগুলোর মুকুল নষ্ট হয়ে যাবে।’

ধানগাছের ‘হিট শক’

গাজীপুরের তেলবীজ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘মানুষের ক্ষেত্রে যেমন অধিক গরমে হিট স্ট্রোক হয় তেমনি ধানের ক্ষেত্রে এ পরিস্থিতিকে আমরা হিট শক বলছি।’ তাপপ্রবাহ ৩৫ ডিগ্রি বা এর বেশি হলে এবং সে সময় বৃষ্টি না হলে ধানগাছে হিট শক হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট তাপপ্রবাহের (হিটওয়েভ) আগাম সতর্কবার্তা জারি করেছে। সর্তকবার্তায় সারা দেশে বিশেষ করে ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর এবং খুলনা জেলার বেশিরভাগ এলাকায় মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহের কথা জানানো হয়েছে।

তাপপ্রবাহ থেকে ধান ফসল রক্ষার জন্য জমিতে সবসময় ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে বলা হয়েছে, যাতে জমিতে পানির ঘাটতি না হয়।

ড. মাসুদ বলেন, ‘পরিত্রাণের উপায় হিসেবে রেগুলার মনিটরিং করতে হবে। চাষি ভাইয়েরা যেন খেত দেখাশোনা করে এবং প্রিভেনটিং হিসেবে ফাঙ্গিসাইডনাশক স্প্রে করে। ধানের ক্ষেত্রে যেখানে একটু পানি বেঁধে থাকে বা বিলের নিচের দিকের অংশে যেখানে মানুষ সহজে যেতে পারে না সেসমস্ত জায়গায় যেন খেয়াল রাখে।’

তিনি আরও বলেন. ‘বাদামি গাছে ফড়িংয়ের উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য যেন আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে। বাদামি গাছে ফড়িং বেশি সংখ্যায় দেখলে তা বিনাশ করতে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।’

সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ব্লাস্ট রোগ ধান গাছের তিনটি অংশে আক্রমণ করে থাকে। গাছের আক্রান্ত অংশের ওপর ভিত্তি করে এ রোগ তিনটি নামে পরিচিত: ১. পাতা ব্লাস্ট, ২. গিট ব্লাস্ট এবং ৩. শীষ ব্লাস্ট।

পাইরিকুলারিয়াগ্রিসিয়া নামের ছত্রাকের আক্রমণ থেকে এই রোগ হয়ে থাকে। রোগটি আমন ও বোরো দুই মৌসুমেই হতে পারে। ধানের চারা থেকে পাকার আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় রোগটি হতে পারে। বীজ, বাতাস, কীটপতঙ্গ ও আবহাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। রাতে ঠাণ্ডা দিনে গরম ও সকালে পাতলা শিশির জমা হলে এ রোগ দ্রুত ছড়ায়।

হালকা মাটি বা বেলেমাটি যার পানি ধারণক্ষমতা কম সেখানে রোগ বেশি দেখা যায়। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম পটাশ সার দিলে এ রোগের আক্রমণ বেশি হয়। দীর্ঘদিন জমি শুকনো অবস্থায় থাকলেও এ রোগের সংক্রমণ হতে পারে।

কেন এ অবস্থা

উত্তরাঞ্চলে কৃষি ও মাছের লালন-পালনে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার অনেক পরিমাণে বেড়েছে। মাটির উপরিভাগের পানির উৎস যেমন খাল, নালা, নদ ও নদী প্রায় শুষ্ক। সবাই ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। এবার লক্ষণীয় বিষয় হলো সেচ পাম্পে আগের মতো পানি উঠছে না।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মাহিউল কাদির সংবাদকে বলেন, ‘সাধারণত মার্চের শেষ দিকে বৃষ্টি হয় যা কৃষি কাজের অনুকূল পরিবেশ বজায় থাকে। এবার কোনো বৃষ্টি হয়নি। আর একটি বিষয় হচ্ছে দিনে প্রচণ্ড গরম, রাতে শীত এবং সকালে কুয়াশার চাদরে প্রকৃতি ঢাকা থাকে। এ দৃশ্য সাধারণত মরু অঞ্চলে দেখা যায়। অতিরিক্ত ইট ভাটা, বনায়ন উজাড়, যত্রতত্র মানুষের বসতি স্থাপন এবং মানুষের মধ্যে পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতার অভাবে প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের রংপুর এলাকায় জলবায়ুর দুর্যোগের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়।’

#জলবায়ুর এমন বৈচিত্র্য দায়ী#

দেশে গত কয়েক বছর ধরে বসন্ত এমনকি গ্রীষ্মকালেও সকালে এবং সন্ধ্যায় কুয়াশার মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজ করে। এমনটি হওয়ার কথা নয়। গত কয়েক বছর দেখা যায়, বাংলাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রায় বেশ তফাৎ। সাধারণ রাতের তাপমাত্রা দিনের চেয়ে একটু কম থাকে তবে ইদানীং এই ব্যবধান বেশি। কখনও কখনও তা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রিও হয়ে যাচ্ছে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও সেন্টার ফর পিপল অ্যান্ড এনভায়রন (সিপিই) পরিচালক মুহম্মদ আবদুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘প্রথমত কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ বুঝতে হলে আমাদের এই দিন রাতের তাপের তফাৎটা জানা জরুরি। দিনে সূর্যরশ্মি থেকে ভূপৃষ্ঠ সরাসরি তাপ গ্রহণ করে উত্তপ্ত হয় যা রাতে ধীরে ধীরে প্রশমিত হয়। কিন্তু রাতে সাগরের গরম বায়ু ভূমিতে প্রবেশ করার কারণে ভূপৃষ্ঠ ধীরে ধীরে শীতল হয়। কিন্তু বর্তমানে তা দ্রুত সময়ে হচ্ছে, বিশেষ করে সূর্য পশ্চিমে হেলে গেলেই ভূপৃষ্ঠ শীতল হতে শুরু করে। পৃথিবী পৃষ্ঠে তাপ ধরে রাখার জন্য পানি, গাছপালা, ঘাসের ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে উন্মুক্ত জলাশয়, গাছপালা এবং ঘাসের পরিমাণ খুব কম। তাই মাটি সূর্য থাকার সময়ে যে তাপ শোষণ করে তা সূর্য হেলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত হারিয়ে ফেলে বলে রাত আসতে আসতে তাপমাত্রা দ্রুত পতন হয়। যে কারণে দিন ও রাতের তাপমাত্রার তফাৎ প্রকট হচ্ছে। রাতে তাপমাত্রা কম থাকার কারণে শীত অনুভূত হচ্ছে। এই শীতের কারণে বাতাস ঘনীভূত হয়। এই ঘনীভূত বাতাস কুয়াশার মতো সৃষ্টি করে যাকে ইংরেজিতে বলে ফগ। এটা আসলে কুয়াশা নয়, কারণ সকালে শিশির তৈরি হয় না। এই ফগের সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের ধোঁয়া ও দূষিত বিশেষ করে সালফর অক্সাইড, নাইট্রাইস অক্সাইড, ধুলা মিলিত হয়ে স্মগ তৈরি করে যা মূলত স্মোক ও ফগের সম্মিলিত ফলাফল। দেশে গত কয়েক বছর এই স্মোকের ঘনত্ব বাড়ছে যা কৃষি ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।’

back to top