সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের হাওরে স্যানিটেশন এবং বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা -সংবাদ
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের হবি আহমেদ। পেশায় কৃষক হবি আহমেদ তিন সন্তানের জনক। ‘অল্প’ আয়ে চলা হবি আহমেদ নিরাপদ পানি পান নিয়ে তার সংগ্রামের কথা জানালেন। তার কথার সারমর্ম হলো; হাওরের মাঝে বাড়ি হওয়ায় অনেক দূর থেকে পানি বহন করে নিয়ে আসতে হতো। অনেক সময় সেই পানি খেয়ে অসুখ বিশুখে আক্রান্ত হতাম। এখন একটি গভীর নলকূপ পাওয়ায় আমার আশপাশের কয়েকটা পরিবারসহ অনেকে উপকৃত হয়েছে। এতে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা হয়েছে।
এলাকাবাসীর স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হাইজিন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে
তিনি যে এলাকায় বাস করেন সেখানকার সঙ্গে সিলেট শহরের সরাসরি কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। বর্ষাকালে জেলা শহরে নৌকাই একমাত্র যোগাযোগের বাহন। আর শুকনো মৌসুমে কয়েক কিলোমিটার পায়ে হেটে গিয়ে সড়কে উঠতে হয়। গ্রামের কোনো মানুষের রোগ-বালাই হলে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতেও অনেক কষ্ট পেতে হয়। এমন এলাকায় নিরাপদ পানির সংস্থান হওয়ায় তিনি খুবই খুশি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আর পানির কষ্ট নেই।’
ওই ইউনিয়ানের নিয়াগুল গ্রামের খায়রুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘এখন গভীর নলকূপ পাওয়ায় আমাদের আশপাশের কয়েকটা পরিবারসহ অনেকে উপকৃত হয়েছে। এতে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা হয়েছে ও মহিলাদের সময় ও কষ্ট দূর হয়েছে।’
শুধু সিলেট নয় হাওরভিত্তিক ৭টি জেলা সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনার আওতাধীন ৫৪টি উপজেলার ৩৪০টি ইউনিয়নে ‘হাওর অঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থার উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার ফলে ওইসব এলাকায় আর পানির কষ্ট নেই।
জানাগেছে, হাওর বেষ্টিত সাত জেলার পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সমস্যা দীর্ঘদিনের। পার্শ্ববর্তী নদী বা পুকুরের পানির ওপর নির্ভরশীল। আকস্মিক বন্যা ও
বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে এখানকার মানুষ বিভিন্ন সময় আমাশয়, কলেরা এবং টাইফয়েড ও পানিবাহিত সাধারণ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকত। এ সমস্যা সমাধান করে হাওরবাসীর জীবনমানে আসছে পরিবর্তন।
ইতোমধ্যে প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় হাইড্রোজিওলজিক্যাল পরিস্থিতি, পানির উৎস, উৎসের গুণাগুণ এবং স্থানীয় জনগণের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের পানির উৎস স্থাপন করা হয়েছে। পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ‘অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত’ এলাকাগুলোকে পানির উৎস স্থাপনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
প্রকল্পটিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ৫০ শতাংশ ও ইউনিয়ন ওয়াটসন কমিটি ৫০ শতাংশ স্থান নির্বাচন করেছেন তা স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে চূড়ান্ত করেছেন। এ প্রকল্পে ইউনিয়নে বরাদ্ধকৃত পানির উৎস বণ্টনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীরা জনসংখ্যার ঘনত্বের ওপর ভিত্তি করে বণ্টন করেন। তাবে, এক্ষেত্রে তারা অন্য গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগানো হয়েছে। স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ বা উপকারভোগী জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে দেয়া জমিতে ‘সাইট সিলেকশন’ করে কাজ করা হয়েছে।
হাওরাঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) সোহরাব উদ্দিন আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘হাওরবাসীদের দীর্ঘ দিনের নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে হাওরবাসীর দীর্ঘদিনের নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখন হাওরাঞ্চলের মানুষ নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সুবিধা পাচ্ছে।’
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘সামাজিক প্রচারনার মাধ্যমে হাওর অঞ্চলে নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন বিষয়ে স্থানীয় জনগণের সচেতন করা হয়েছে। এলাকাবাসীর স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হাইজিন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় গভীর নলকূপ মডিফাইড সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত নলকূপ স্থাপন ও ব্যবহার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সহায়তা, পরামর্শ দেয়া হয়। প্রকল্পের মাধ্যমে হাওর অঞ্চলে ২২ হাজার ৬৪২টি মোডিফাইড, সাব মার্সিবল নলকূপ স্থাপন করা হয়। এছাড়া ৫ হাজার ৬৬১টি গভীর নলকূপ, ৪ হাজার ১২৬টি উন্নত ল্যাট্রিন ও ৪৫৮টি অফসেট টুইন পিট ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়েছে।’
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের হাওরে স্যানিটেশন এবং বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা -সংবাদ
শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের হবি আহমেদ। পেশায় কৃষক হবি আহমেদ তিন সন্তানের জনক। ‘অল্প’ আয়ে চলা হবি আহমেদ নিরাপদ পানি পান নিয়ে তার সংগ্রামের কথা জানালেন। তার কথার সারমর্ম হলো; হাওরের মাঝে বাড়ি হওয়ায় অনেক দূর থেকে পানি বহন করে নিয়ে আসতে হতো। অনেক সময় সেই পানি খেয়ে অসুখ বিশুখে আক্রান্ত হতাম। এখন একটি গভীর নলকূপ পাওয়ায় আমার আশপাশের কয়েকটা পরিবারসহ অনেকে উপকৃত হয়েছে। এতে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা হয়েছে।
এলাকাবাসীর স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হাইজিন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে
তিনি যে এলাকায় বাস করেন সেখানকার সঙ্গে সিলেট শহরের সরাসরি কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। বর্ষাকালে জেলা শহরে নৌকাই একমাত্র যোগাযোগের বাহন। আর শুকনো মৌসুমে কয়েক কিলোমিটার পায়ে হেটে গিয়ে সড়কে উঠতে হয়। গ্রামের কোনো মানুষের রোগ-বালাই হলে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতেও অনেক কষ্ট পেতে হয়। এমন এলাকায় নিরাপদ পানির সংস্থান হওয়ায় তিনি খুবই খুশি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আর পানির কষ্ট নেই।’
ওই ইউনিয়ানের নিয়াগুল গ্রামের খায়রুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘এখন গভীর নলকূপ পাওয়ায় আমাদের আশপাশের কয়েকটা পরিবারসহ অনেকে উপকৃত হয়েছে। এতে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা হয়েছে ও মহিলাদের সময় ও কষ্ট দূর হয়েছে।’
শুধু সিলেট নয় হাওরভিত্তিক ৭টি জেলা সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনার আওতাধীন ৫৪টি উপজেলার ৩৪০টি ইউনিয়নে ‘হাওর অঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থার উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার ফলে ওইসব এলাকায় আর পানির কষ্ট নেই।
জানাগেছে, হাওর বেষ্টিত সাত জেলার পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সমস্যা দীর্ঘদিনের। পার্শ্ববর্তী নদী বা পুকুরের পানির ওপর নির্ভরশীল। আকস্মিক বন্যা ও
বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে এখানকার মানুষ বিভিন্ন সময় আমাশয়, কলেরা এবং টাইফয়েড ও পানিবাহিত সাধারণ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকত। এ সমস্যা সমাধান করে হাওরবাসীর জীবনমানে আসছে পরিবর্তন।
ইতোমধ্যে প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় হাইড্রোজিওলজিক্যাল পরিস্থিতি, পানির উৎস, উৎসের গুণাগুণ এবং স্থানীয় জনগণের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের পানির উৎস স্থাপন করা হয়েছে। পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ‘অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত’ এলাকাগুলোকে পানির উৎস স্থাপনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
প্রকল্পটিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ৫০ শতাংশ ও ইউনিয়ন ওয়াটসন কমিটি ৫০ শতাংশ স্থান নির্বাচন করেছেন তা স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে চূড়ান্ত করেছেন। এ প্রকল্পে ইউনিয়নে বরাদ্ধকৃত পানির উৎস বণ্টনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীরা জনসংখ্যার ঘনত্বের ওপর ভিত্তি করে বণ্টন করেন। তাবে, এক্ষেত্রে তারা অন্য গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগানো হয়েছে। স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ বা উপকারভোগী জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে দেয়া জমিতে ‘সাইট সিলেকশন’ করে কাজ করা হয়েছে।
হাওরাঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) সোহরাব উদ্দিন আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘হাওরবাসীদের দীর্ঘ দিনের নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে হাওরবাসীর দীর্ঘদিনের নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখন হাওরাঞ্চলের মানুষ নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সুবিধা পাচ্ছে।’
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘সামাজিক প্রচারনার মাধ্যমে হাওর অঞ্চলে নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন বিষয়ে স্থানীয় জনগণের সচেতন করা হয়েছে। এলাকাবাসীর স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হাইজিন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় গভীর নলকূপ মডিফাইড সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত নলকূপ স্থাপন ও ব্যবহার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সহায়তা, পরামর্শ দেয়া হয়। প্রকল্পের মাধ্যমে হাওর অঞ্চলে ২২ হাজার ৬৪২টি মোডিফাইড, সাব মার্সিবল নলকূপ স্থাপন করা হয়। এছাড়া ৫ হাজার ৬৬১টি গভীর নলকূপ, ৪ হাজার ১২৬টি উন্নত ল্যাট্রিন ও ৪৫৮টি অফসেট টুইন পিট ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়েছে।’