ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় বর্ষবরণের মোটিফ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে -সংবাদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আগুন লেগে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার’ একাধিক মোটিফ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবার ১২ এপ্রিল সকালের দিকে লাগা আগুনে শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ এবং ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ পুড়ে গেছে। এদিকে, বর্ষবরণ শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন লাগার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন এক যুবকের কথা বলেছেন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইসরাফিল রতন। তিনি বলেন, সে যুবক মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন লাগিয়ে একইভাবে চলে যান।
ইসরাফিল রতন বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজে একজনকে দেখেছি। আমাদের দুই তিনটা ক্যামেরাতে ধরা পড়েছে। যার পরনে কালো রঙের টিশার্ট এবং মুখে মাস্ক ছিল। ‘৪টা ৪৫ মিনিট থেকে ৪টা ৪৬ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে সে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন দিয়ে আবার দেয়াল টপকে বের হয়ে যায়।’
ফুটেজ দেখে পুরো ঘটনাটিকেই ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে মনে হয়েছে তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ছেলেটি অনেক স্মার্ট, অর্ডিনারি কোনো পিপল মনে হয়নি। মনে হয়েছে কারও অ্যাসাইন করা ছিল।’ শনিবার ভোরের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আগুন লেগে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার’ জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ এবং ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ পুড়ে যায়। আগের দিন শুক্রবার আয়োজন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, শোভাযাত্রায় এবার বড়, মাঝারি এবং ছোট মোটিফ থাকবে। এর মধ্যে বড় মোটিফ থাকবে ৬টি। সবার সামনে থাকবে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’। নারীর দাঁতাল এই মুখাবয়বে মাথায় রয়েছে খাড়া দুটো শিং।
কীভাবে আগুন লাগল তা তদন্ত করে জানানো হবে বলে বলেছেন
চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ভোরবেলা আগুন লেগেছে। সম্ভবত ফজরের নামাজের সময় হতে পারে। তবে কীভাবে আগুন লেগেছে এই বিষয়টা নিয়ে আমরা তদন্ত করে মন্তব্য করব। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সভায় বসব।’ তবে তদন্তের আগেই মোটিফ পুড়ে যাওয়ার ঘটনার পেছনে ‘ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দোসরদের’ হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ফেইসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, চারুকলায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব’ পুড়িয়েছে ‘হাসিনার দোসররা’।
দোসররা: ফারুকী
মোটিফে আগুন ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’: পুলিশ
দুটি মোটিফে আগুন রহস্যজনক নয়,
পরিকল্পিত: ঢাবি সাদা দল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
তদন্ত কমিটি
মোটিফে আগুনের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা
আর ঘটনাটি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মনে করছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে দেখে যেটা মনে হচ্ছে এটা এক্সিডেন্টাল না, কেউ ইনটেনশনালি এটা করছে। এটুকু আমরা নিশ্চিত।’
তিনি বলেন, ‘একটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেছে। ভোর ৫টা ৬-এ যখন আমি কন্ট্রোলে ফোন করি, আমাকে জানিয়েছে ৫টা ৫-এ ঘটনাটা ঘটছে। ‘এখানে চতুর্পার্শে¦ অনেক ক্যামেরা আছে। আমরা ডিজিটাল রেকর্ডগুলো নিব, ফরেনসিক করব। ডিটেকশন করে ফেলব ইনশাআল্লাহ।’ তিনি বলেন, ‘এ পর্যায়ে বলার স্কোপ আসে নাই যে, পার্টিকুলারলি কারা করছে। এটা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। এটা ইনভেস্টিগেশনে বের হবে।
‘তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়, এখানে দুইটা মোটিফ পোড়ানো হইছে। বিগত সরকার প্রধান ছিল, তার একটা পোট্রেইট করা হইছে। ওইটা পোড়াইতে গিয়া সম্ভবতো কবুতরের আংশিক অংশ পোড়ানো হইছে। তাইলে ওই জিনিসটা যারা লাইক করে না, তারা এই কাজটা করবে। এটা একটা অনুমাননির্ভর কথা।’ তদন্তে ভিডিও ফুটেজ ‘কমপ্লিটলি ইনভেস্টিগেশন’ শেষে বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে এখানে আগুনটা লাগাইছে, তারে ডিটেক্ট করতে পারলে তার মাস্টারমাইন্ড কারা বা এটার সঙ্গে কারা জড়িত এইটার ডিটেইল আমরা পরে বলতে পারব।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখানে পুলিশ ছিল, ঢাকা ইউনিভার্সিটির প্রক্টরিয়াল টিম ছিল। প্রক্টরিয়াল টিমের দুইজন সদস্য ছিল, ৫টার দিকে তারা সম্ভবত মসজিদে নামাজ পড়তে গেছে। পুলিশের টিমটা সম্পর্কে আমি এখনও ডিটেইলস জানি না। ‘আমার এখানে ১০ জনের ফোর্স থাকে। গেইটে থাকে কিছু এখানে থাকে তিনজন। আমি ওদের এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারি নাই। জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে জানতে পারব তারা কই ছিল, কী অবস্থায় ছিল বা কীভাবে আগুনটা লাগছে। তাদের কাছ থেকে কিছুটা তথ্য পাওয়া যাবে। আর ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারব।’
এ ঘটনা তদন্তে ‘অবশ্যই কমিটি’ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘টাইমটা যেহেতু ভোরের দিকে হইছে, শেষ রাতের ভিডিও ফুটেজগুলো অ্যানালাইসিস করলে আমরা পেয়ে যাব।’ বেলা পৌনে ১২টার দিকে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী চারুকলায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে তিনি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়েই ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের উপস্থিতিতে সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হয় বলে জানিয়েছেন চারুকলার সহযোগী অধ্যাপক ইসরাফিল রতন। তিনি বলেন, ‘সে যুবকটি যখন ওয়াল টপকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে তখন কয়েকটি কুকুর বেরিয়ার দেয়, গাছপালার পাশে একটু দাঁড়ায়। কুকুরগুলো শান্ত হলে সে সামনে গিয়ে মোটিফে আগুন ধরিয়ে সামনে গিয়ে একটু অবজার্ভ করে।
‘যখন দেখে আগুন ঠিকমতো ধরেনি, তখন ফিরে এসে আবার আগুন দেয়। এরপর একটানে দেয়াল টপকে বেরিয়ে ছবির হাটের দিকে চলে যায়।’ চারুকলার এই শিক্ষক বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে সে ভেতরে প্রবেশের আগে অনেকক্ষণ ধরে পরিস্থিতি অবজার্ভ করেছে। ওই সময় প্রক্টোরিয়াল টিমের দুইজন নামাজ পড়তে গিয়েছিল। যে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন, তারা পেছনের দিকে সম্ভবত ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন। ওই ফাঁকা সময়টাতেই সে ঢুকে পড়ে আগুন দিয়ে চলে যায়।’
‘ওয়াল টপকায়ে আসবে আবার ফিরে যাবে, তার সঙ্গে কোনো সঙ্গী ছিল না। তারপরেও ওই সুযোগে সে রিস্কটা নিয়ে ফেলেছে।’ তাকে দেখে ক্যাম্পাসেরই কেউ মনে হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হতে পারে। তবে মনে হয়েছে সে এখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানে। ‘আমার মনে হয় রাষ্ট্র যদি চায়, তাকে শনাক্ত করে অবশ্যই গ্রেপ্তার করা সম্ভব।’ ইতোমধ্যে চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। শাহবাগ থানার ওসি মো. খালিদ মনসুরও সিসিটিভি ফুটেজে একজনকে দেখা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।’
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দল। অবিলম্বে অগ্নিকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুস সালাম ও অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, চারুকলা অনুষদের চারদেয়ালের ভেতরে তৈরি করা এসব প্রতিকৃতিতে আগুন দেয়া নিছক কোনো রহস্যজনক নয়, এটি একটি পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড। এ ঘটনায় ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের দোসর কিংবা ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের হাত থাকার সম্ভাবনা বেশি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাদা দলের নেতারা। তারা বলেন, পয়লা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা পালনের লক্ষ্যে তৈরিকৃত প্রতিকৃতিসহ অন্যান্য জিনিসের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর চারুকলার শোভাযাত্রা নিয়ে আগে থেকেই সতর্ক থাকা অত্যাবশ্যক ছিল।
ঢাবি সাদা দলের নেতারা অবিলম্বে চারুকলায় অগ্নিকা-ের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনিব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। সেই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানান। চারুকলা অনুষদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফটি কে বা কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বলেছে, অনেকগুলো মোটিফের মধ্যে দুটি মোটিফ পুড়ে যাওয়ার ঘটনাটি রহস্যজনক। পুলিশ এ নিয়ে তদন্ত করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বর্ষবরণ শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন দেয়ার ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। শনিবার বিকেলে শাহবাগ থানায় মামলাটি করা হয় বলে জানিয়েছেন থানার ওসি মো. খালিদ মনসুর। তিনি বলেন, ‘ঢাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাওয়া সন্দেহভাজন যুবককে শনাক্ত করতে আমরা কাজ করছি।’ এর আগে সিসিটিভি ভিডিও বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন এক যুবককে চারুকলা অনুষদের ভেতরে ঢুকে আগুন দিতে দেখতে পাওয়ার কথা বলেছিলেন শাহবাগ থানার ওসি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় বর্ষবরণের মোটিফ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে -সংবাদ
শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আগুন লেগে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার’ একাধিক মোটিফ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবার ১২ এপ্রিল সকালের দিকে লাগা আগুনে শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ এবং ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ পুড়ে গেছে। এদিকে, বর্ষবরণ শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন লাগার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন এক যুবকের কথা বলেছেন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইসরাফিল রতন। তিনি বলেন, সে যুবক মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন লাগিয়ে একইভাবে চলে যান।
ইসরাফিল রতন বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজে একজনকে দেখেছি। আমাদের দুই তিনটা ক্যামেরাতে ধরা পড়েছে। যার পরনে কালো রঙের টিশার্ট এবং মুখে মাস্ক ছিল। ‘৪টা ৪৫ মিনিট থেকে ৪টা ৪৬ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে সে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন দিয়ে আবার দেয়াল টপকে বের হয়ে যায়।’
ফুটেজ দেখে পুরো ঘটনাটিকেই ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে মনে হয়েছে তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ছেলেটি অনেক স্মার্ট, অর্ডিনারি কোনো পিপল মনে হয়নি। মনে হয়েছে কারও অ্যাসাইন করা ছিল।’ শনিবার ভোরের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আগুন লেগে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার’ জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ এবং ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ পুড়ে যায়। আগের দিন শুক্রবার আয়োজন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, শোভাযাত্রায় এবার বড়, মাঝারি এবং ছোট মোটিফ থাকবে। এর মধ্যে বড় মোটিফ থাকবে ৬টি। সবার সামনে থাকবে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’। নারীর দাঁতাল এই মুখাবয়বে মাথায় রয়েছে খাড়া দুটো শিং।
কীভাবে আগুন লাগল তা তদন্ত করে জানানো হবে বলে বলেছেন
চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ভোরবেলা আগুন লেগেছে। সম্ভবত ফজরের নামাজের সময় হতে পারে। তবে কীভাবে আগুন লেগেছে এই বিষয়টা নিয়ে আমরা তদন্ত করে মন্তব্য করব। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সভায় বসব।’ তবে তদন্তের আগেই মোটিফ পুড়ে যাওয়ার ঘটনার পেছনে ‘ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দোসরদের’ হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ফেইসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, চারুকলায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব’ পুড়িয়েছে ‘হাসিনার দোসররা’।
দোসররা: ফারুকী
মোটিফে আগুন ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’: পুলিশ
দুটি মোটিফে আগুন রহস্যজনক নয়,
পরিকল্পিত: ঢাবি সাদা দল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
তদন্ত কমিটি
মোটিফে আগুনের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা
আর ঘটনাটি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মনে করছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে দেখে যেটা মনে হচ্ছে এটা এক্সিডেন্টাল না, কেউ ইনটেনশনালি এটা করছে। এটুকু আমরা নিশ্চিত।’
তিনি বলেন, ‘একটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেছে। ভোর ৫টা ৬-এ যখন আমি কন্ট্রোলে ফোন করি, আমাকে জানিয়েছে ৫টা ৫-এ ঘটনাটা ঘটছে। ‘এখানে চতুর্পার্শে¦ অনেক ক্যামেরা আছে। আমরা ডিজিটাল রেকর্ডগুলো নিব, ফরেনসিক করব। ডিটেকশন করে ফেলব ইনশাআল্লাহ।’ তিনি বলেন, ‘এ পর্যায়ে বলার স্কোপ আসে নাই যে, পার্টিকুলারলি কারা করছে। এটা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। এটা ইনভেস্টিগেশনে বের হবে।
‘তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়, এখানে দুইটা মোটিফ পোড়ানো হইছে। বিগত সরকার প্রধান ছিল, তার একটা পোট্রেইট করা হইছে। ওইটা পোড়াইতে গিয়া সম্ভবতো কবুতরের আংশিক অংশ পোড়ানো হইছে। তাইলে ওই জিনিসটা যারা লাইক করে না, তারা এই কাজটা করবে। এটা একটা অনুমাননির্ভর কথা।’ তদন্তে ভিডিও ফুটেজ ‘কমপ্লিটলি ইনভেস্টিগেশন’ শেষে বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে এখানে আগুনটা লাগাইছে, তারে ডিটেক্ট করতে পারলে তার মাস্টারমাইন্ড কারা বা এটার সঙ্গে কারা জড়িত এইটার ডিটেইল আমরা পরে বলতে পারব।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখানে পুলিশ ছিল, ঢাকা ইউনিভার্সিটির প্রক্টরিয়াল টিম ছিল। প্রক্টরিয়াল টিমের দুইজন সদস্য ছিল, ৫টার দিকে তারা সম্ভবত মসজিদে নামাজ পড়তে গেছে। পুলিশের টিমটা সম্পর্কে আমি এখনও ডিটেইলস জানি না। ‘আমার এখানে ১০ জনের ফোর্স থাকে। গেইটে থাকে কিছু এখানে থাকে তিনজন। আমি ওদের এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারি নাই। জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে জানতে পারব তারা কই ছিল, কী অবস্থায় ছিল বা কীভাবে আগুনটা লাগছে। তাদের কাছ থেকে কিছুটা তথ্য পাওয়া যাবে। আর ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারব।’
এ ঘটনা তদন্তে ‘অবশ্যই কমিটি’ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘টাইমটা যেহেতু ভোরের দিকে হইছে, শেষ রাতের ভিডিও ফুটেজগুলো অ্যানালাইসিস করলে আমরা পেয়ে যাব।’ বেলা পৌনে ১২টার দিকে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী চারুকলায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে তিনি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়েই ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের উপস্থিতিতে সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হয় বলে জানিয়েছেন চারুকলার সহযোগী অধ্যাপক ইসরাফিল রতন। তিনি বলেন, ‘সে যুবকটি যখন ওয়াল টপকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে তখন কয়েকটি কুকুর বেরিয়ার দেয়, গাছপালার পাশে একটু দাঁড়ায়। কুকুরগুলো শান্ত হলে সে সামনে গিয়ে মোটিফে আগুন ধরিয়ে সামনে গিয়ে একটু অবজার্ভ করে।
‘যখন দেখে আগুন ঠিকমতো ধরেনি, তখন ফিরে এসে আবার আগুন দেয়। এরপর একটানে দেয়াল টপকে বেরিয়ে ছবির হাটের দিকে চলে যায়।’ চারুকলার এই শিক্ষক বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে সে ভেতরে প্রবেশের আগে অনেকক্ষণ ধরে পরিস্থিতি অবজার্ভ করেছে। ওই সময় প্রক্টোরিয়াল টিমের দুইজন নামাজ পড়তে গিয়েছিল। যে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন, তারা পেছনের দিকে সম্ভবত ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন। ওই ফাঁকা সময়টাতেই সে ঢুকে পড়ে আগুন দিয়ে চলে যায়।’
‘ওয়াল টপকায়ে আসবে আবার ফিরে যাবে, তার সঙ্গে কোনো সঙ্গী ছিল না। তারপরেও ওই সুযোগে সে রিস্কটা নিয়ে ফেলেছে।’ তাকে দেখে ক্যাম্পাসেরই কেউ মনে হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হতে পারে। তবে মনে হয়েছে সে এখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানে। ‘আমার মনে হয় রাষ্ট্র যদি চায়, তাকে শনাক্ত করে অবশ্যই গ্রেপ্তার করা সম্ভব।’ ইতোমধ্যে চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। শাহবাগ থানার ওসি মো. খালিদ মনসুরও সিসিটিভি ফুটেজে একজনকে দেখা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।’
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দল। অবিলম্বে অগ্নিকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুস সালাম ও অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, চারুকলা অনুষদের চারদেয়ালের ভেতরে তৈরি করা এসব প্রতিকৃতিতে আগুন দেয়া নিছক কোনো রহস্যজনক নয়, এটি একটি পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড। এ ঘটনায় ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের দোসর কিংবা ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের হাত থাকার সম্ভাবনা বেশি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাদা দলের নেতারা। তারা বলেন, পয়লা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা পালনের লক্ষ্যে তৈরিকৃত প্রতিকৃতিসহ অন্যান্য জিনিসের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর চারুকলার শোভাযাত্রা নিয়ে আগে থেকেই সতর্ক থাকা অত্যাবশ্যক ছিল।
ঢাবি সাদা দলের নেতারা অবিলম্বে চারুকলায় অগ্নিকা-ের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনিব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। সেই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানান। চারুকলা অনুষদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফটি কে বা কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বলেছে, অনেকগুলো মোটিফের মধ্যে দুটি মোটিফ পুড়ে যাওয়ার ঘটনাটি রহস্যজনক। পুলিশ এ নিয়ে তদন্ত করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বর্ষবরণ শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন দেয়ার ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। শনিবার বিকেলে শাহবাগ থানায় মামলাটি করা হয় বলে জানিয়েছেন থানার ওসি মো. খালিদ মনসুর। তিনি বলেন, ‘ঢাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাওয়া সন্দেহভাজন যুবককে শনাক্ত করতে আমরা কাজ করছি।’ এর আগে সিসিটিভি ভিডিও বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন এক যুবককে চারুকলা অনুষদের ভেতরে ঢুকে আগুন দিতে দেখতে পাওয়ার কথা বলেছিলেন শাহবাগ থানার ওসি।