শনিবার ঢাকায় গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ও গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’র কারণে দিনভরই রাজধানীতে ছিল তীব্র যানজট। শনিবার গুলিস্তান এলাকার চিত্র -সংবাদ
প্যালেস্টানিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি ঘিরে বিশাল গণজামায়াত হয়। শনিবার ১২ এপ্রিল সকালে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। দুপুর ২টার পর রাজধানীর কিছু পয়ন্টে মানুষের ঢল নামে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে মিছিল করে মানুষ সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে যায়। মিছিল ও ব্যাপক জনসমাগমের কারণে দুপুর থেকেই ঢাকার সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জন¯্রােতের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকলেও এটিকে ভোগান্তি হিসেবে দেখেননি যাত্রীরা। অনেকে যানবাহন থেকে নেমে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন।
সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের প্রভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট মোড়, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড, বুয়েট এলাকা, চানখাঁরপুল, গুলিস্তান, বায়তুল মোকারমের চারপাশ, জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন এলাকা, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, ফার্মগেট, কাওরান বাজার মোড়, বাংলামোটর, সায়েন্স ল্যাব, কাঁটাবন মোড় এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অসংখ্য মানুষের ভিড়ের কারণেও যানবাহনের চলাচল করা সম্ভব ছিল না। ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকায় যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুটার ২টার পর ফার্মগেট থেকে শাহবাগমুখী মানুষের চাপ বাড়লে সোনারগাঁও মোড় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ পথে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ছেড়ে আসা গাড়িগুলোকে মোড় ঘুরে উল্টোপথে চলে যেতে দেখা গেছে। এতে যানবাহনের চাপ বাড়ে আশপাশের রাস্তায়।
মোহাম্মদপুর থেকে বাংলামোটরে আসা এক যাত্রী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘খামারবাড়ি ঢুকে গাড়ি থেকে নেমে বাকি পথ হেঁটেই আসছি। তবে কোনো অভিযোগ নেই। সাময়িক অসুবিধা হলেও এটাকে অসুবিধা মনে করছি। ফার্মগেট থেকে মিছিলের সঙ্গে হেঁটেই বাকি পথ চলে এসেছি। আজ আমাদের দেশের মানুষের জুলুমের বিরুদ্ধেই রাস্তায় নেমেছে। আমরাও শরিক হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।’
মগবাজার এলাকায় দেখা যায়, মানুষের চাপে রামপুরা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মৌচাক থেকে শান্তিনগর ফ্লাইওভার দিয়েও আসছে নারী, পুরুষ, শিশু বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ। এর ফলে ফ্লাইওভার দিয়েও যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে জমায়েত ঘিরে উদ্যানের আশপাশে জমে উঠেছে প্যালেস্টাইনের পতাকা, মাথার ব্যাজ ও টি-শার্ট বিক্রি। আর আগ্রহ নিয়েই সেসব কিনছেন আগত অনেকেই।
কাওরানবাজার মোড়ে বিআরটিসি বাসের এক সহকারী দেলোয়ার
হোসেন বলেন, ‘ফার্মগেট থেকে ধীরে ধীরে ফাঁকফোকর দিয়ে এসেছি। সোনারগাঁও ঢুকতেই আর সামনে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই গাড়ি ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।’
ঢাকায় পূর্ব দিক থেকে প্রবেশ পথ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে গুলিস্তান ফ্লাইওভারে দুপুরের পর যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় অতিরিক্ত গাড়ির ভিড়ে। গুলিস্তানে বিভিন্ন দিক থেকে অসংখ্য ছোট ছোট মিছিল আসতে থাকায় ফ্লাইওভার থেকে কোনো গাড়ি গুলিস্তান হয়ে জিরো পয়েন্টের দিকে যেতে পারছিল না। ফলে পুরো ফ্লাইওভারেই গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পরে যাত্রীরা সবাই গাড়ি থেকে হেঁটে গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকায় যেতে বাধ্য হন।
এছাড়াও নরসিংদী, দাউদকান্দি, নারায়ণগঞ্জ থেকে অসংখ্য গাড়িতে মানুষ সমাবেশের দিকে আসতে থাকায় ফ্লাইওভারে গাড়ির সংকুলান হচ্ছিল না। ফলে সব গাড়িতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
একই সময়ে সাইনবোর্ড থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে অসংখ্য মিছিল হেঁটে সমাবেশে যোগ দিতে আসে। ফলে পুরো ফ্লাইওবার মিছিলে মিছিলে সয়লাব হয়ে যায়। তখন যানবাহন চলাতো দূরের কথা, হেঁটে যেতেও সবাইকে বেগ পেতে হয়। অনেকে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে সমাবেশের দিকে এগিয়ে যান। তবে এজন্য কাউকে বিরক্ত হতে দেখা যায়নি। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সমাবেশে যোগ দিতে যান।
পুরো রাজধানীতে যানবাহনের জট লেগে যাওয়ায় বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিক পুলিশকেও গাড়ির শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য চরম বেগ পেতে হয়। যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সোনারগাঁও সিগন্যালের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘দুপুর ১২টা থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে আসছে মানুষজন। ২টার পর সড়কে মানুষের ঢল নামে। এরপর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে আমরা সুযোগ পেলেই গাড়ি ছাড়ার চেষ্টা করছি। রাস্তায় লোকজনের ফাঁকে ফাঁকে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে।’
ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের ডিসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি ঘিরে ঢাকার ট্রাফিকব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোনো যানবাহন চলছে না।
তিনি বলেন, সকালের দিকে আমরা বিকল্প সড়ক দিয়ে চলাচলের পরামর্শ দেই। পরে বিকল্প সড়কও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা যেন থমকে যায়।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা এখন ভাবছি, কর্মসূচি শেষ হয়ে গেলে এসব মানুষ কীভাবে যাবে।
শনিবার ঢাকায় গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ও গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’র কারণে দিনভরই রাজধানীতে ছিল তীব্র যানজট। শনিবার গুলিস্তান এলাকার চিত্র -সংবাদ
শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
প্যালেস্টানিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি ঘিরে বিশাল গণজামায়াত হয়। শনিবার ১২ এপ্রিল সকালে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। দুপুর ২টার পর রাজধানীর কিছু পয়ন্টে মানুষের ঢল নামে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে মিছিল করে মানুষ সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে যায়। মিছিল ও ব্যাপক জনসমাগমের কারণে দুপুর থেকেই ঢাকার সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জন¯্রােতের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকলেও এটিকে ভোগান্তি হিসেবে দেখেননি যাত্রীরা। অনেকে যানবাহন থেকে নেমে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন।
সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের প্রভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট মোড়, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড, বুয়েট এলাকা, চানখাঁরপুল, গুলিস্তান, বায়তুল মোকারমের চারপাশ, জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন এলাকা, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, ফার্মগেট, কাওরান বাজার মোড়, বাংলামোটর, সায়েন্স ল্যাব, কাঁটাবন মোড় এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অসংখ্য মানুষের ভিড়ের কারণেও যানবাহনের চলাচল করা সম্ভব ছিল না। ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকায় যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুটার ২টার পর ফার্মগেট থেকে শাহবাগমুখী মানুষের চাপ বাড়লে সোনারগাঁও মোড় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ পথে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ছেড়ে আসা গাড়িগুলোকে মোড় ঘুরে উল্টোপথে চলে যেতে দেখা গেছে। এতে যানবাহনের চাপ বাড়ে আশপাশের রাস্তায়।
মোহাম্মদপুর থেকে বাংলামোটরে আসা এক যাত্রী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘খামারবাড়ি ঢুকে গাড়ি থেকে নেমে বাকি পথ হেঁটেই আসছি। তবে কোনো অভিযোগ নেই। সাময়িক অসুবিধা হলেও এটাকে অসুবিধা মনে করছি। ফার্মগেট থেকে মিছিলের সঙ্গে হেঁটেই বাকি পথ চলে এসেছি। আজ আমাদের দেশের মানুষের জুলুমের বিরুদ্ধেই রাস্তায় নেমেছে। আমরাও শরিক হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।’
মগবাজার এলাকায় দেখা যায়, মানুষের চাপে রামপুরা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মৌচাক থেকে শান্তিনগর ফ্লাইওভার দিয়েও আসছে নারী, পুরুষ, শিশু বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ। এর ফলে ফ্লাইওভার দিয়েও যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে জমায়েত ঘিরে উদ্যানের আশপাশে জমে উঠেছে প্যালেস্টাইনের পতাকা, মাথার ব্যাজ ও টি-শার্ট বিক্রি। আর আগ্রহ নিয়েই সেসব কিনছেন আগত অনেকেই।
কাওরানবাজার মোড়ে বিআরটিসি বাসের এক সহকারী দেলোয়ার
হোসেন বলেন, ‘ফার্মগেট থেকে ধীরে ধীরে ফাঁকফোকর দিয়ে এসেছি। সোনারগাঁও ঢুকতেই আর সামনে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই গাড়ি ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।’
ঢাকায় পূর্ব দিক থেকে প্রবেশ পথ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে গুলিস্তান ফ্লাইওভারে দুপুরের পর যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় অতিরিক্ত গাড়ির ভিড়ে। গুলিস্তানে বিভিন্ন দিক থেকে অসংখ্য ছোট ছোট মিছিল আসতে থাকায় ফ্লাইওভার থেকে কোনো গাড়ি গুলিস্তান হয়ে জিরো পয়েন্টের দিকে যেতে পারছিল না। ফলে পুরো ফ্লাইওভারেই গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পরে যাত্রীরা সবাই গাড়ি থেকে হেঁটে গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকায় যেতে বাধ্য হন।
এছাড়াও নরসিংদী, দাউদকান্দি, নারায়ণগঞ্জ থেকে অসংখ্য গাড়িতে মানুষ সমাবেশের দিকে আসতে থাকায় ফ্লাইওভারে গাড়ির সংকুলান হচ্ছিল না। ফলে সব গাড়িতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
একই সময়ে সাইনবোর্ড থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে অসংখ্য মিছিল হেঁটে সমাবেশে যোগ দিতে আসে। ফলে পুরো ফ্লাইওবার মিছিলে মিছিলে সয়লাব হয়ে যায়। তখন যানবাহন চলাতো দূরের কথা, হেঁটে যেতেও সবাইকে বেগ পেতে হয়। অনেকে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে সমাবেশের দিকে এগিয়ে যান। তবে এজন্য কাউকে বিরক্ত হতে দেখা যায়নি। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সমাবেশে যোগ দিতে যান।
পুরো রাজধানীতে যানবাহনের জট লেগে যাওয়ায় বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিক পুলিশকেও গাড়ির শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য চরম বেগ পেতে হয়। যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সোনারগাঁও সিগন্যালের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘দুপুর ১২টা থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে আসছে মানুষজন। ২টার পর সড়কে মানুষের ঢল নামে। এরপর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে আমরা সুযোগ পেলেই গাড়ি ছাড়ার চেষ্টা করছি। রাস্তায় লোকজনের ফাঁকে ফাঁকে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে।’
ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের ডিসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি ঘিরে ঢাকার ট্রাফিকব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোনো যানবাহন চলছে না।
তিনি বলেন, সকালের দিকে আমরা বিকল্প সড়ক দিয়ে চলাচলের পরামর্শ দেই। পরে বিকল্প সড়কও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা যেন থমকে যায়।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা এখন ভাবছি, কর্মসূচি শেষ হয়ে গেলে এসব মানুষ কীভাবে যাবে।