টানা তাপপ্রবাহের পর বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির স্পর্শে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে শ্রীমঙ্গলের চা বাগানে -সংবাদ
টানা তাপপ্রবাহের পর বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির স্পর্শে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে চা গাছ গুলোতে। চা বাগানের গাছে দেখা মিলছে নতুন কুঁড়ি ও সবুজ পাতার। চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রচণ্ড তাপে ঝলসে গিয়েছিল বাগানের অধিকাংশ চা গাছ। অনেক স্থানে শুরু হয়েছিল লাল রোগের প্রাদুর্ভাব। চা উৎপাদন শুরুর মৌসুমেই মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানে কমে যায় চা উৎপাদনের গতি। তবে গত কয়েক দিনের বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। এতে করে বাগান রক্ষায় কৃত্রিম পানি দেয়া প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরে (২০২৫ সালে) চায়ের উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি।
২০২৩ সালে ১০৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। আর ২০২৪ সালে হয় ৯৩ মিলিয়ন কেজি। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ১০% কম ছিল। দেশে নিবন্ধনকৃত চা বাগান রয়েছে ১৬৮টি । পাশাপাশি পঞ্চগড়ে রয়েছে ক্ষুদ্রায়িত অনেকগুলো চা বাগান। পঞ্চগড় ও দেশের ১৬৮টি চা বাগান মিলিয়ে ২০২৫ এর লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি। প্রকৃতি নির্ভর একটি কৃষিজ পণ্য চা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চায়ের উৎপাদনও ভালো হয়। এর জন্য প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টি ও সূর্য কিরণ।
প্রায় ৪ মাস আগ থেকেই চা বাগানের সেকশনগুলোতে চা গাছ ছাঁটাই করার কাজ শুরু করেছিল বাগান কর্তৃপক্ষ। ছাঁটাইয়ের কারণে চা বাগানে চলে এসেছিল রুক্ষ শুষ্কভাব। চা বাগানের জন্য সহনীয় তাপমাত্রার সীমা পেরিয়ে গেলে বিপত্তিতে পড়েন বাগান-সংশ্লিষ্টরা। বৃষ্টির অভাবে রুক্ষ বাগানে নতুন পাতার দেখা যাচ্ছিল না খুব একটা। এর মাঝে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সামান্য যা কুঁড়ি-পাতা ছিল তাও আক্রান্ত হতে শুরু করে।
অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি পড়লো জেলার চা বাগান গুলোতে। এতে বাগান কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকরা অনেকটাই খুশি হয়েছেন। দুই এক দিনের মধ্যে আবারও বৃষ্টি দেখা দিলে ভালো ফলনের সম্ভাবনার পাশাপাশি আপাতত বাগান রক্ষায় কৃত্রিম পানি দেয়া প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। চলতি মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় দুশ্চিন্তা বাড়ছিল জেলার ৯২টি চা বাগানের মালিক-শ্রমিকদের। অনেক বাগানের চা পাতা পুড়ে যায়।
মাধবপুর চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক তাপস কুন্ড জানান, চায়ের জন্য বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতির পাশাপাশি প্রকৃতির ওপরও নির্ভর করতে হয়। চায়ের জন্য মূলত প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টিপাত ও সূর্যের আলো। অনেক জায়গায় ইরিগেশন পৌঁছানো সম্ভব হয়না। তাছাড়া বর্ষায় যদি অতি বৃষ্টি হয় তাও চায়ের জন্য ক্ষতিকর। আবার প্রচ- তাপদাহ হলে তাও ক্ষতিকর। যে কারণে এর জন্য কিছুটা প্রকৃতির ওপর তো নির্ভর করতেই হয়।
ইস্পাহানি জেরিন চা বাগানের উপ-মহাব্যবস্থাপক সেলিম রেজা জানান, খরা প্রথম দিকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। তবে এখন কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
শ্রী গোবিন্দপুর চা বাগানের মালিক ও ন্যাশনাল টি কোম্পানির পরিচালক মো. মহসীন মিয়া মধু জানান, দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর বৃষ্টির দেখা পেলাম। তবে ভালো চা উৎপাদনে আরও বৃষ্টির প্রয়োজন। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে আবারও বৃষ্টি দেখা দিলে ভালো চা উৎপাদন হবে। এই বৃষ্টির ফলে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ভালো পাতা তৈরি হবে। বৃষ্টির ফলে অনেকটাই উপকার হয়েছে। আপাতত বাগান রক্ষায় শ্রমিক ও মালিকদের কৃত্রিম পানি দেয়া প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশ চা বোর্ড প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক এ কে এম রফিকুল হক জানান, বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য অবশ্যই উপকারী। বিশেষভাবে নতুন চা গাছ যেগুলো আছে তার জন্য বেশি উপকারী। তারপর প্রুনিংকৃত চা গাছগুলো দ্রুত কুঁড়ি ছাড়বে বৃষ্টি হওয়ায়।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিসিএস) সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান জিএম গোলাম মোহাম্মদ শিবলি জানান, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ও তাপমাত্রা বেশি থাকায় উৎপাদন কমে গিয়েছিল। এই বৃষ্টিপাতের ফলে চা গাছগুলো সজীবতা ফিরে পেয়েছে।
টানা তাপপ্রবাহের পর বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির স্পর্শে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে শ্রীমঙ্গলের চা বাগানে -সংবাদ
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
টানা তাপপ্রবাহের পর বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির স্পর্শে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে চা গাছ গুলোতে। চা বাগানের গাছে দেখা মিলছে নতুন কুঁড়ি ও সবুজ পাতার। চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রচণ্ড তাপে ঝলসে গিয়েছিল বাগানের অধিকাংশ চা গাছ। অনেক স্থানে শুরু হয়েছিল লাল রোগের প্রাদুর্ভাব। চা উৎপাদন শুরুর মৌসুমেই মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানে কমে যায় চা উৎপাদনের গতি। তবে গত কয়েক দিনের বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। এতে করে বাগান রক্ষায় কৃত্রিম পানি দেয়া প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরে (২০২৫ সালে) চায়ের উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি।
২০২৩ সালে ১০৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। আর ২০২৪ সালে হয় ৯৩ মিলিয়ন কেজি। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ১০% কম ছিল। দেশে নিবন্ধনকৃত চা বাগান রয়েছে ১৬৮টি । পাশাপাশি পঞ্চগড়ে রয়েছে ক্ষুদ্রায়িত অনেকগুলো চা বাগান। পঞ্চগড় ও দেশের ১৬৮টি চা বাগান মিলিয়ে ২০২৫ এর লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি। প্রকৃতি নির্ভর একটি কৃষিজ পণ্য চা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চায়ের উৎপাদনও ভালো হয়। এর জন্য প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টি ও সূর্য কিরণ।
প্রায় ৪ মাস আগ থেকেই চা বাগানের সেকশনগুলোতে চা গাছ ছাঁটাই করার কাজ শুরু করেছিল বাগান কর্তৃপক্ষ। ছাঁটাইয়ের কারণে চা বাগানে চলে এসেছিল রুক্ষ শুষ্কভাব। চা বাগানের জন্য সহনীয় তাপমাত্রার সীমা পেরিয়ে গেলে বিপত্তিতে পড়েন বাগান-সংশ্লিষ্টরা। বৃষ্টির অভাবে রুক্ষ বাগানে নতুন পাতার দেখা যাচ্ছিল না খুব একটা। এর মাঝে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সামান্য যা কুঁড়ি-পাতা ছিল তাও আক্রান্ত হতে শুরু করে।
অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি পড়লো জেলার চা বাগান গুলোতে। এতে বাগান কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকরা অনেকটাই খুশি হয়েছেন। দুই এক দিনের মধ্যে আবারও বৃষ্টি দেখা দিলে ভালো ফলনের সম্ভাবনার পাশাপাশি আপাতত বাগান রক্ষায় কৃত্রিম পানি দেয়া প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। চলতি মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় দুশ্চিন্তা বাড়ছিল জেলার ৯২টি চা বাগানের মালিক-শ্রমিকদের। অনেক বাগানের চা পাতা পুড়ে যায়।
মাধবপুর চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক তাপস কুন্ড জানান, চায়ের জন্য বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতির পাশাপাশি প্রকৃতির ওপরও নির্ভর করতে হয়। চায়ের জন্য মূলত প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টিপাত ও সূর্যের আলো। অনেক জায়গায় ইরিগেশন পৌঁছানো সম্ভব হয়না। তাছাড়া বর্ষায় যদি অতি বৃষ্টি হয় তাও চায়ের জন্য ক্ষতিকর। আবার প্রচ- তাপদাহ হলে তাও ক্ষতিকর। যে কারণে এর জন্য কিছুটা প্রকৃতির ওপর তো নির্ভর করতেই হয়।
ইস্পাহানি জেরিন চা বাগানের উপ-মহাব্যবস্থাপক সেলিম রেজা জানান, খরা প্রথম দিকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। তবে এখন কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
শ্রী গোবিন্দপুর চা বাগানের মালিক ও ন্যাশনাল টি কোম্পানির পরিচালক মো. মহসীন মিয়া মধু জানান, দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর বৃষ্টির দেখা পেলাম। তবে ভালো চা উৎপাদনে আরও বৃষ্টির প্রয়োজন। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে আবারও বৃষ্টি দেখা দিলে ভালো চা উৎপাদন হবে। এই বৃষ্টির ফলে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ভালো পাতা তৈরি হবে। বৃষ্টির ফলে অনেকটাই উপকার হয়েছে। আপাতত বাগান রক্ষায় শ্রমিক ও মালিকদের কৃত্রিম পানি দেয়া প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশ চা বোর্ড প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক এ কে এম রফিকুল হক জানান, বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য অবশ্যই উপকারী। বিশেষভাবে নতুন চা গাছ যেগুলো আছে তার জন্য বেশি উপকারী। তারপর প্রুনিংকৃত চা গাছগুলো দ্রুত কুঁড়ি ছাড়বে বৃষ্টি হওয়ায়।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিসিএস) সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান জিএম গোলাম মোহাম্মদ শিবলি জানান, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ও তাপমাত্রা বেশি থাকায় উৎপাদন কমে গিয়েছিল। এই বৃষ্টিপাতের ফলে চা গাছগুলো সজীবতা ফিরে পেয়েছে।