বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের মজুরি তিন বছর পরপর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন না পেলে ক্ষতিপূরণ প্রদান, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শর্ত শিথিল, আউটসোর্সিং বন্ধ, নারী শ্রমিকদের ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে কমিশন।
রোববার দুপুর ১২টায় রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদের নেতৃত্বাধীন ১৮ সদস্যের শ্রম সংস্কার কমিশন। “শ্রম জগতের রূপান্তর-রূপরেখা: শ্রমিক অধিকার, সু-সমন্বিত শিল্প সম্পর্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন” শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে শ্রমিকবান্ধব সংস্কারের জন্য নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, কমিশনকে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা, যেন সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যায়।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, বর্তমানে পাঁচ বছর পরপর মজুরি কাঠামো নির্ধারিত হলেও এটি তিন বছর অন্তর নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের হার মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এখন সাধারণত ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলেও, চলতি বছর তৈরি পোশাক খাতে তা ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
মজুরি সময়মতো পরিশোধ না হলে শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান সংযোজনের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। নিয়োগদাতাকে প্রতি মাসে বেতন সংক্রান্ত তথ্য অনলাইনে জমা দিতে হবে এবং নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বেতন না দিলে শ্রমিককে দশমিক ৫ শতাংশ হারে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’ নির্ধারণের প্রস্তাব এসেছে প্রতিবেদনে। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সব খাতের শ্রমিকদের জন্য এই মজুরি মানদণ্ড কার্যকর হবে। শ্রমিক ও তাঁর পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের মতো উপার্জন নিশ্চিত করতে এই কাঠামো নির্ধারণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১১২ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৮০ দিন (ছয় মাস) করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে পিতৃত্বকালীন ছুটি প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে।
শিল্পখাতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে শ্রমিক অনুপাতের শর্তের পরিবর্তে ন্যূনতম সংখ্যার ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়ার সুপারিশ এসেছে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে শ্রম অধিদপ্তরকে ৫৫ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করার কথা বলা হয়েছে।
কমিশন বলেছে, সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত সব শ্রমিককে পরিচয়পত্র ও নিয়োগপত্র প্রদান বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় পেনশন স্কিমের আওতায় শ্রমিকবান্ধব পেনশন সুবিধা চালু এবং রেশন কার্ডভিত্তিক খাদ্য সহায়তা ব্যবস্থার সুপারিশও করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানিমুখী শিল্পে শ্রমিকের বেতন নিরাপদ রাখতে সরকার, মালিক ও নিয়োগদাতাদের যৌথ অংশগ্রহণে একটি ‘আপৎকালীন তহবিল’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ তহবিলে শ্রমিকের দুই মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ জমা রাখতে হবে।
কমিশন বলেছে, সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী কাজে আউটসোর্সিং নিয়োগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে আউটসোর্সিংয়ে নিযুক্ত স্থায়ী কর্মীদের পদেরূপান্তরের পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশও করা হয়।
শ্রমিকদের মর্যাদার পরিবেশ গঠনে ‘তুই-তুমি’ সম্বোধনের বদলে সম্মানজনক ভাষার ব্যবহার, শ্রম আদালতের সব কার্যক্রমে বাংলা ভাষার ব্যবহার এবং “মহিলা” শব্দের পরিবর্তে “নারী” শব্দ ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছে কমিশন।
শ্রম প্রশাসনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি স্থায়ী শ্রম কমিশন গঠন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে দুটি নতুন অধিদপ্তর সৃষ্টিরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, “সবার আগে শ্রমিকদের তথ্যভান্ডার গঠন করা প্রয়োজন। ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধনে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে তার আগেও প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো প্রজ্ঞাপন দিয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি। এজন্য একটি জাতীয় শ্রম সম্মেলনের আয়োজন করা যেতে পারে।”
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের মজুরি তিন বছর পরপর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন না পেলে ক্ষতিপূরণ প্রদান, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শর্ত শিথিল, আউটসোর্সিং বন্ধ, নারী শ্রমিকদের ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে কমিশন।
রোববার দুপুর ১২টায় রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদের নেতৃত্বাধীন ১৮ সদস্যের শ্রম সংস্কার কমিশন। “শ্রম জগতের রূপান্তর-রূপরেখা: শ্রমিক অধিকার, সু-সমন্বিত শিল্প সম্পর্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন” শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে শ্রমিকবান্ধব সংস্কারের জন্য নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, কমিশনকে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা, যেন সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যায়।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, বর্তমানে পাঁচ বছর পরপর মজুরি কাঠামো নির্ধারিত হলেও এটি তিন বছর অন্তর নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের হার মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এখন সাধারণত ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলেও, চলতি বছর তৈরি পোশাক খাতে তা ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
মজুরি সময়মতো পরিশোধ না হলে শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান সংযোজনের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। নিয়োগদাতাকে প্রতি মাসে বেতন সংক্রান্ত তথ্য অনলাইনে জমা দিতে হবে এবং নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বেতন না দিলে শ্রমিককে দশমিক ৫ শতাংশ হারে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’ নির্ধারণের প্রস্তাব এসেছে প্রতিবেদনে। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সব খাতের শ্রমিকদের জন্য এই মজুরি মানদণ্ড কার্যকর হবে। শ্রমিক ও তাঁর পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের মতো উপার্জন নিশ্চিত করতে এই কাঠামো নির্ধারণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১১২ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৮০ দিন (ছয় মাস) করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে পিতৃত্বকালীন ছুটি প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে।
শিল্পখাতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে শ্রমিক অনুপাতের শর্তের পরিবর্তে ন্যূনতম সংখ্যার ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়ার সুপারিশ এসেছে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে শ্রম অধিদপ্তরকে ৫৫ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করার কথা বলা হয়েছে।
কমিশন বলেছে, সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত সব শ্রমিককে পরিচয়পত্র ও নিয়োগপত্র প্রদান বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় পেনশন স্কিমের আওতায় শ্রমিকবান্ধব পেনশন সুবিধা চালু এবং রেশন কার্ডভিত্তিক খাদ্য সহায়তা ব্যবস্থার সুপারিশও করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানিমুখী শিল্পে শ্রমিকের বেতন নিরাপদ রাখতে সরকার, মালিক ও নিয়োগদাতাদের যৌথ অংশগ্রহণে একটি ‘আপৎকালীন তহবিল’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ তহবিলে শ্রমিকের দুই মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ জমা রাখতে হবে।
কমিশন বলেছে, সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী কাজে আউটসোর্সিং নিয়োগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে আউটসোর্সিংয়ে নিযুক্ত স্থায়ী কর্মীদের পদেরূপান্তরের পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশও করা হয়।
শ্রমিকদের মর্যাদার পরিবেশ গঠনে ‘তুই-তুমি’ সম্বোধনের বদলে সম্মানজনক ভাষার ব্যবহার, শ্রম আদালতের সব কার্যক্রমে বাংলা ভাষার ব্যবহার এবং “মহিলা” শব্দের পরিবর্তে “নারী” শব্দ ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছে কমিশন।
শ্রম প্রশাসনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি স্থায়ী শ্রম কমিশন গঠন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে দুটি নতুন অধিদপ্তর সৃষ্টিরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, “সবার আগে শ্রমিকদের তথ্যভান্ডার গঠন করা প্রয়োজন। ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধনে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে তার আগেও প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো প্রজ্ঞাপন দিয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি। এজন্য একটি জাতীয় শ্রম সম্মেলনের আয়োজন করা যেতে পারে।”