alt

রানা প্লাজা ধসের ১২ বছর: স্বজনদের আহাজারি থামেনি, সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবি

দায়ের করা হত্যা ও ইমারত বিধির মামলার বিচার শেষ হয়নি এক যুগেও

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ঢাকা ও প্রতিনিধি, সাভার : বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত সৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন স্বজনদের -সংবাদ

তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের পদচারণে মুখর হয়ে থাকতো স্থানটি। সেই জায়গা এখন পরিত্যক্ত। বৃহস্পতিবার,(২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে সেখানে আসতে থাকেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ নানা পেশাজীবী মানুষ। দিনটি তাদের কাছে ভীষণ যন্ত্রণা আর কষ্টের। ২০১৩ সালের এই দিনে ঢাকার সাভার বাসস্ট্যান্ডের অদূরে রানা প্লাজা ধসে নিহত হন ১ হাজার ১৩৮ জন। আহত হন অনেকে।

বৃহস্পতিবার ছিল রানা প্লাজা ধসের ১২ বছর। ওই দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণসহ নানা দাবিতে সকাল সাড়ে ৭টার পর থেকে ধসে পরা রানা প্লাজার পরিত্যক্ত জায়গার সামনের দিকের একটি অংশে জড়ো হতে শুরু করেন নিহত শ্রমিকদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ওই জায়গায় অস্থায়ী প্রতিবাদ-প্রতিরোধ শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন তারা।

সকাল সোয়া ৮টার দিকে ভবন ধসে পরা জায়গাটির এক পাশে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় জোসনা বেগমকে। কাছে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবাক (ছেলে) তোমরা আইনা দিবার পারবা? আমার বাবাক তোমরা বাইর কইরা দাও।’

জোসনা বেগম জানান, রানা প্লাজা ধসের দিন সকালে ভাত খেতে বসেছিলেন। এ সময় ছোট ছেলে সুরুজ মিয়া কারখানায় ফাটল দেখা দেয়ায় বেতন দিয়ে ছুটি দিলেই বাসায় চলে আসবেন বলে জানিয়েছিলেন। তবে সুরুজ আর ফেরেননি। পরে শুনেছেন মারা গেছেন। তার লাশের খোঁজ পাননি তিনি। রানা প্লাজার ষষ্ঠ তলার একটি কারখানায় সহকারী (হেলপার) হিসেবে কাজ করতেন ইয়ানুর বেগম। তার দাবি ন্যায্য ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের। ইয়ানুর বেগম বলেন, ‘গত ১১ বছরে যদি আমরা ক্ষতিপূরণ পাইতাম, তাহলে কেউ আন্দোলন করতো না। কেউ রাস্তায় নেমে বলতো না, আমাদের এক দফা এক দাবি ক্ষতিপূরণ চাই। বর্তমান সরকার (অন্তর্বর্তীকালীন) বলছিল, ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। কিন্তু এখনও সেটি দেয়া হয়নি।’

শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও নানা দাবি জানাচ্ছেন। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এখনও আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়নি। রানা প্লাজার আহত শ্রমিকেরা চিকিৎসার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন ১২১ অনুসারে নিহত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে।

বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দ ব্যাপারী বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের ১২ বছরে দোষীদের বিচার দেখতে পাইনি। আগের সরকার বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু বিচার হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, দোষীদের দ্রুত বিচার করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ করতে হবে।’

এক যুগেও শেষ হয়নি

মামলার বিচার

সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা ও ইমারত বিধির মামলার বিচার শেষ হয়নি এক যুগেও। হত্যা মামলায় ৫৯৪ জনকে সাক্ষীর মধ্যে ৯৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ

শেষ হয়েছে। তবে কবে এ মামলার বিচার শেষ হতে পারে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। উচ্চ আদালতের আদেশে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে ইমারত বিধি না মেনে ভবন তৈরির মামলার কার্যক্রম। স্থগিতাদেশের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও হাকিম আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ আর শুরু হয়নি।

ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ইকবাল হোসেন বলছেন, এতদিনেও বিচার কাজ শেষ না হওয়ার পেছনে ‘বিগত সরকারের অবহেলা রয়েছে’। রানা প্লাজা ধসের পরপর বেশ কয়েকটি মামলা হলেও এ দুটিই মূল মামলা। দুই মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানা কারাগারে থাকলে অধিকাংশ আসামি জামিনে বা পলাতক রয়েছেন।

মামলা দায়েরের দুই বছরের বেশি সময় পর ২০১৫ সালের ১ জুন তদন্ত শেষে দুটি অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর। এর একটিতে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগে ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা-মা এবং তৎকালীন সাভার পৌরসভার মেয়র ও কমিশনারসহ ৪১ জনকে আসামি করা হয়। আর ইমারত বিধি না মেনে রানা প্লাজা নির্মাণের অভিযোগে অন্য অভিযোগপত্রে সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়।

দুই অভিযোগপত্রে মোট আসামি ছিলেন ৪২ জন। এর মধ্যে সোহেল রানাসহ ১৭ জন দুটি মামলারই আসামি। আসামিদের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ১০ তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে পড়ে। ওই ভবনে থাকা কয়েকটি পোশাক কারখানার ৫ হাজারের মতো শ্রমিক তার নিচে চাপা পড়েন। কয়েকদিনের উদ্ধার তৎপরতায় ১ হাজার ১৩৬ জনের লাশ তুলে আনা হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক আহত ও পঙ্গু হন। ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এই শিল্প দুর্ঘটনার পাঁচ দিন পর ২৯ এপ্রিল ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে সোহেল রানাকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড

ছবি

এখন থেকে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু টেস্ট

চীনে নারী পাচার: দূতাবাস ও ইমিগ্রেশনের ‘যোগসাজশ’ দেখছে র‌্যাব

ছবি

এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক স্কাউট’র নতুন কমিটির সদস্য নির্বাচিত হলেন স্নিধ

ছবি

সিইপিজেডে কারখানায় ভয়াবহ আগুন, শ্রমিকদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে

শেখ হাসিনার ১৪০০ বার ফাঁসি হওয়া দরকার: চিফ প্রসিকিউটর

ছবি

এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ এ মাসেই, স্বাক্ষরের সুযোগ পরেও থাকবে: আলী রীয়াজ

ছবি

দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম পাসের হার ‘যথাযথই’ মনে করছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান

ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী আনাসসহ ৬ জনকে হত্যার মামলায় সাক্ষ্য দিলেন আসিফ মাহমুদ সজীব

ছবি

এইচএসসিতে ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ ফেল

ছবি

এইচএসসি ফল: জিপিএ-৫ কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন

ছবি

এইচএসসি ফল: পাসের হারে এগিয়ে ঢাকা, পিছিয়ে কুমিল্লা

ছবি

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৭৫৮ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৪

ছবি

জুলাই সনদ: দ্বিমত থাকলেও সইয়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন

ছবি

অস্ত্র মামলায় সুব্রত বাইনসহ চারজনের বিচার শুরুর আদেশ

ছবি

হাসিনার ‘হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ প্রমাণিত হয়েছে’, এআই নয় যুক্তিতর্কে দাবি তাজুলের

ছবি

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ বৃহস্পতিবার

ছবি

শোনার মানসিকতা রাজনৈতিক দলেরও থাকতে হবে: আইন উপদেষ্টা

ছবি

নারায়ণগঞ্জে ছিল কুখ্যাত গডফাদার, বললেন আইন উপদেষ্টা

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

‘আনন্দঘন’ পরিবেশে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের আশা আলী রীয়াজের

ছবি

জুলাই সনদ: সন্ধ্যায় দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

ট্রাইব্যুনালে তাজুল ইসলাম: হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা

ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ

ছবি

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

ছবি

হজ নিবন্ধনের সময়সীমা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ৮ জানুয়ারি

ছবি

ইতালি সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়ার আহ্বান দুদক চেয়ারম্যানের

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৮৪১ জন হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ৫ জনের

ছবি

অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সেনা হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত ‘বৈষম্যমূলক ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী’: টিআইবি

ছবি

পদ্মায় মা ইলিশ শিকারের মহোৎসব

ছবি

বুধবার থেকে অনলাইনে জামিননামা, এক ক্লিকে পৌঁছে যাবে জেলখানায়

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা: ৫ মাসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল

tab

রানা প্লাজা ধসের ১২ বছর: স্বজনদের আহাজারি থামেনি, সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবি

দায়ের করা হত্যা ও ইমারত বিধির মামলার বিচার শেষ হয়নি এক যুগেও

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ঢাকা ও প্রতিনিধি, সাভার

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত সৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন স্বজনদের -সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের পদচারণে মুখর হয়ে থাকতো স্থানটি। সেই জায়গা এখন পরিত্যক্ত। বৃহস্পতিবার,(২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে সেখানে আসতে থাকেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ নানা পেশাজীবী মানুষ। দিনটি তাদের কাছে ভীষণ যন্ত্রণা আর কষ্টের। ২০১৩ সালের এই দিনে ঢাকার সাভার বাসস্ট্যান্ডের অদূরে রানা প্লাজা ধসে নিহত হন ১ হাজার ১৩৮ জন। আহত হন অনেকে।

বৃহস্পতিবার ছিল রানা প্লাজা ধসের ১২ বছর। ওই দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণসহ নানা দাবিতে সকাল সাড়ে ৭টার পর থেকে ধসে পরা রানা প্লাজার পরিত্যক্ত জায়গার সামনের দিকের একটি অংশে জড়ো হতে শুরু করেন নিহত শ্রমিকদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ওই জায়গায় অস্থায়ী প্রতিবাদ-প্রতিরোধ শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন তারা।

সকাল সোয়া ৮টার দিকে ভবন ধসে পরা জায়গাটির এক পাশে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় জোসনা বেগমকে। কাছে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবাক (ছেলে) তোমরা আইনা দিবার পারবা? আমার বাবাক তোমরা বাইর কইরা দাও।’

জোসনা বেগম জানান, রানা প্লাজা ধসের দিন সকালে ভাত খেতে বসেছিলেন। এ সময় ছোট ছেলে সুরুজ মিয়া কারখানায় ফাটল দেখা দেয়ায় বেতন দিয়ে ছুটি দিলেই বাসায় চলে আসবেন বলে জানিয়েছিলেন। তবে সুরুজ আর ফেরেননি। পরে শুনেছেন মারা গেছেন। তার লাশের খোঁজ পাননি তিনি। রানা প্লাজার ষষ্ঠ তলার একটি কারখানায় সহকারী (হেলপার) হিসেবে কাজ করতেন ইয়ানুর বেগম। তার দাবি ন্যায্য ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের। ইয়ানুর বেগম বলেন, ‘গত ১১ বছরে যদি আমরা ক্ষতিপূরণ পাইতাম, তাহলে কেউ আন্দোলন করতো না। কেউ রাস্তায় নেমে বলতো না, আমাদের এক দফা এক দাবি ক্ষতিপূরণ চাই। বর্তমান সরকার (অন্তর্বর্তীকালীন) বলছিল, ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। কিন্তু এখনও সেটি দেয়া হয়নি।’

শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও নানা দাবি জানাচ্ছেন। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এখনও আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়নি। রানা প্লাজার আহত শ্রমিকেরা চিকিৎসার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন ১২১ অনুসারে নিহত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে।

বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দ ব্যাপারী বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের ১২ বছরে দোষীদের বিচার দেখতে পাইনি। আগের সরকার বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু বিচার হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, দোষীদের দ্রুত বিচার করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ করতে হবে।’

এক যুগেও শেষ হয়নি

মামলার বিচার

সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা ও ইমারত বিধির মামলার বিচার শেষ হয়নি এক যুগেও। হত্যা মামলায় ৫৯৪ জনকে সাক্ষীর মধ্যে ৯৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ

শেষ হয়েছে। তবে কবে এ মামলার বিচার শেষ হতে পারে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। উচ্চ আদালতের আদেশে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে ইমারত বিধি না মেনে ভবন তৈরির মামলার কার্যক্রম। স্থগিতাদেশের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও হাকিম আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ আর শুরু হয়নি।

ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ইকবাল হোসেন বলছেন, এতদিনেও বিচার কাজ শেষ না হওয়ার পেছনে ‘বিগত সরকারের অবহেলা রয়েছে’। রানা প্লাজা ধসের পরপর বেশ কয়েকটি মামলা হলেও এ দুটিই মূল মামলা। দুই মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানা কারাগারে থাকলে অধিকাংশ আসামি জামিনে বা পলাতক রয়েছেন।

মামলা দায়েরের দুই বছরের বেশি সময় পর ২০১৫ সালের ১ জুন তদন্ত শেষে দুটি অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর। এর একটিতে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগে ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা-মা এবং তৎকালীন সাভার পৌরসভার মেয়র ও কমিশনারসহ ৪১ জনকে আসামি করা হয়। আর ইমারত বিধি না মেনে রানা প্লাজা নির্মাণের অভিযোগে অন্য অভিযোগপত্রে সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়।

দুই অভিযোগপত্রে মোট আসামি ছিলেন ৪২ জন। এর মধ্যে সোহেল রানাসহ ১৭ জন দুটি মামলারই আসামি। আসামিদের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ১০ তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে পড়ে। ওই ভবনে থাকা কয়েকটি পোশাক কারখানার ৫ হাজারের মতো শ্রমিক তার নিচে চাপা পড়েন। কয়েকদিনের উদ্ধার তৎপরতায় ১ হাজার ১৩৬ জনের লাশ তুলে আনা হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক আহত ও পঙ্গু হন। ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এই শিল্প দুর্ঘটনার পাঁচ দিন পর ২৯ এপ্রিল ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে সোহেল রানাকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

back to top