ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপদ্রব বেড়েই চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশার কামড়ে ৩ শিশুসহ ২৯ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মহাখালী হেলথ্ ইমাজেন্সি অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এ নিয়ে চলতি বছরের গত চার মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৫শ’ ৭২ জন। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন ও এপ্রিল মাসে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ২০ জনের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১০ জন রয়েছে।
হাসপাতালের তথ্যমতে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৩ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ৩ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫ জন ও মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ৭ জন ভর্তি আছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত অন্যরা ঢাকার বাইরে জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতালে ভর্তি আছে।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ কবিরুল বাসার বলেন, ডেঙ্গু বাংলাদেশের জন্য একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জনসচেতনতার অভাবের ফলে এডিস মশাবাহিত রোগের প্রকোপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। দ্রুত আগাম ব্যবস্থা না নিলে চলতি বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে ২০০০ সালে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ২০১৯ ও ২০২৩ সালে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নেয় এবং মৃত্যুহারও উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে যায়।
বর্তমানে ডেঙ্গু ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই। বরং সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থাও চাপে পড়েছে।
ডেঙ্গুর জন্য দায়ী মূলত এডিস এজিপ্টি এবং এডিস এলবোক্টিস প্রজাতির মশা। এগুলো সাধারণ দিনের বেলায়, বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যার সময় মানুষকে কামড়ায়। গবেষণা প্রমাণিত, ডেঙ্গু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাতের বেলাও কামড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, উষ্ণ আবহাওয়ায় ডিম থেকে পূর্ণবয়স্ক মশা হয়ে উঠতে কম সময় লাগে। ফলে মশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার ও জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে। যেমন ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের পাত্র, ফ্রিজের ট্রে, এসির পানির জমানো স্থান ইত্যাদি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ছোট শহরের অধিক জনসংখ্যার কারণে প্রচুর পরিমাণে ছোট বড় পাত্র তৈরি হয় যার মধ্যে পানি জমা হয়ে মশার
বংশবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করছে।
প্লাস্টিকের বহুল ব্যবহারের ফলে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের প্ল্যাস্টিকের পাত্র। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্লাস্টিকের বোতল, কাপ, ব্যাগ ইত্যাদি। এই সব পাত্রে বৃষ্টি হলেই কম-বেশি পানি জমা হয় এবং এডিস মশা প্রজননের জন্য আদর্শ জায়গা তৈরি করে।
বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহরে প্রায় সব জায়গায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের অভাবে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। যা মশার বংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি করে। শহরের উঁচু ভবন ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আলো-বাতাস চলমান কম হওয়ায় মশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য অত্যন্ত সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, উষ্ণ আবহাওয়ায় ডিম থেকে পূর্ণবয়স্ক মশা হয়ে উঠতে বস সময় লাগে, ফলে মশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
ডেঙ্গু ভাইরাস খুব দ্রুত মিউটেটেড বা পরিবর্তিত হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তিত হলে সংক্রমণ আরও মারাত্মক হতে পারে। ডেঙ্গুর মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরোজিক ফিভারের ঝুঁকি বেশি বাড়ায়। কেউ যদি একবার একটি ধরন বা সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার পর যদি অন্য ধরন দ্বারা সংক্রমিত হয়, তা হলে এন্টি-বডি-ডিপেন্ডেন্ট এনহান্সমেণ্ট নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংক্রমণ আরও গুরুতর হতে পারে। এই প্রক্রিয়াতে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
পরিবর্তিত পরিবেশে ভাইরাস খুব দ্রুত অভিযোচিত হয়। ভাইরাস জিনগত পরিবর্তনের ফলে এটি আরও সংক্রমণ হতে পারে। এতে ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা পদ্ধতিও কম কার্যকর হয়ে যেতে পারে। তাই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আনা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে এই গবেষক মনে করেন।
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপদ্রব বেড়েই চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশার কামড়ে ৩ শিশুসহ ২৯ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মহাখালী হেলথ্ ইমাজেন্সি অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এ নিয়ে চলতি বছরের গত চার মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৫শ’ ৭২ জন। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন ও এপ্রিল মাসে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ২০ জনের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১০ জন রয়েছে।
হাসপাতালের তথ্যমতে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৩ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ৩ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫ জন ও মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ৭ জন ভর্তি আছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত অন্যরা ঢাকার বাইরে জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতালে ভর্তি আছে।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ কবিরুল বাসার বলেন, ডেঙ্গু বাংলাদেশের জন্য একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জনসচেতনতার অভাবের ফলে এডিস মশাবাহিত রোগের প্রকোপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। দ্রুত আগাম ব্যবস্থা না নিলে চলতি বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে ২০০০ সালে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ২০১৯ ও ২০২৩ সালে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নেয় এবং মৃত্যুহারও উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে যায়।
বর্তমানে ডেঙ্গু ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই। বরং সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থাও চাপে পড়েছে।
ডেঙ্গুর জন্য দায়ী মূলত এডিস এজিপ্টি এবং এডিস এলবোক্টিস প্রজাতির মশা। এগুলো সাধারণ দিনের বেলায়, বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যার সময় মানুষকে কামড়ায়। গবেষণা প্রমাণিত, ডেঙ্গু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাতের বেলাও কামড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, উষ্ণ আবহাওয়ায় ডিম থেকে পূর্ণবয়স্ক মশা হয়ে উঠতে কম সময় লাগে। ফলে মশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার ও জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে। যেমন ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের পাত্র, ফ্রিজের ট্রে, এসির পানির জমানো স্থান ইত্যাদি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ছোট শহরের অধিক জনসংখ্যার কারণে প্রচুর পরিমাণে ছোট বড় পাত্র তৈরি হয় যার মধ্যে পানি জমা হয়ে মশার
বংশবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করছে।
প্লাস্টিকের বহুল ব্যবহারের ফলে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের প্ল্যাস্টিকের পাত্র। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্লাস্টিকের বোতল, কাপ, ব্যাগ ইত্যাদি। এই সব পাত্রে বৃষ্টি হলেই কম-বেশি পানি জমা হয় এবং এডিস মশা প্রজননের জন্য আদর্শ জায়গা তৈরি করে।
বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহরে প্রায় সব জায়গায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের অভাবে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। যা মশার বংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি করে। শহরের উঁচু ভবন ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আলো-বাতাস চলমান কম হওয়ায় মশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য অত্যন্ত সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, উষ্ণ আবহাওয়ায় ডিম থেকে পূর্ণবয়স্ক মশা হয়ে উঠতে বস সময় লাগে, ফলে মশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
ডেঙ্গু ভাইরাস খুব দ্রুত মিউটেটেড বা পরিবর্তিত হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তিত হলে সংক্রমণ আরও মারাত্মক হতে পারে। ডেঙ্গুর মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরোজিক ফিভারের ঝুঁকি বেশি বাড়ায়। কেউ যদি একবার একটি ধরন বা সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার পর যদি অন্য ধরন দ্বারা সংক্রমিত হয়, তা হলে এন্টি-বডি-ডিপেন্ডেন্ট এনহান্সমেণ্ট নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংক্রমণ আরও গুরুতর হতে পারে। এই প্রক্রিয়াতে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
পরিবর্তিত পরিবেশে ভাইরাস খুব দ্রুত অভিযোচিত হয়। ভাইরাস জিনগত পরিবর্তনের ফলে এটি আরও সংক্রমণ হতে পারে। এতে ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা পদ্ধতিও কম কার্যকর হয়ে যেতে পারে। তাই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আনা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে এই গবেষক মনে করেন।