বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই। শনিবার,(১০ মে ২০২৫) সকালে বনানীর একটি হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি ভাওয়াইয়া সম্রাট কিংবদন্তি শিল্পী আব্বাসউদ্দিন আহমদের ছোট ছেলে।
তার মেয়ে শারমিনী আব্বাসী জানান, বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আজ ভোর সাড়ে পাঁচটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার মৃত্যুর খবর জানিয়ে বড় মেয়ে সংগীত শিল্পী সামিরা আব্বাসী বাবার সঙ্গে একটি ছবি প্রকাশ করেছেন ফেইসবুকে। লিখেছেন,
‘আমার সোনার চান পাখী .. আর দেখা হবে না ?’
পরিবার জানিয়েছে, শনিবার জোহরের নামাজের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে তার জানাজা হবে।
ঢাকার আজিমপুরে তার বাবা পল্লিগীতির অগ্রপথিক আব্বাসউদ্দীন আহমদ ও মা লুৎফুন্নেসা আব্বাসের কবরে দাফন করা হয় তাদের সন্তান মুস্তাফা জামান আব্বাসীকে। পরিবারের পক্ষ থেকে খবরটি জানিয়েছেন মুস্তাফা জামান আব্বাসীর নাতি আলভী আশরাফ।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ভাওয়াইয়া সম্রাট কিংবদন্তি শিল্পী আব্বাসউদ্দিন আহমদের ছোট ছেলে। তার চাচা আব্দুল করিম ছিলেন পল্লীগীতি ও ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালি গানের শিল্পী।
তার বোন ফেরদৌসী রহমানও একজন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী। বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। মোস্তফা কামালের মেয়ে নাশিদ কামাল এক জন নজরুল সংগীত শিল্পী।
ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে ১৯৩৬ সালের ডিসেম্বর মুস্তাফা জামান আব্বাসীর জন্ম। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে কলকাতায়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ মুহম্মদ হোসেন খসরু এবং ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁর কাছে নিয়েছেন সংগীতের তালিম।
ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদী, চটকা, মারফতী, বাউল, হাসনগীতিসহ গ্রামবাংলার নানা ঢঙের লোকগীতি শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে মুস্তাফা জামান আব্বাসীর কণ্ঠে।
জীবনভর গানের সঙ্গে কাটানো মুস্তাফা জামান আব্বাসী গবেষক হিসেবেও দেশীয় সংগীতের বৈচিত্র্যের সন্ধান করে গেছেন। ইসলামি ও লোকধারার গান সংগ্রহ এবং তা জনপ্রিয় করতে কাজ করেছেন।
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ‘কাজী নজরুল ইসলাম এবং আব্বাসউদ্দীন আহমদ গবেষণা ও শিক্ষা কেন্দ্রের’ গবেষক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগীত সম্মিলনে উপস্থাপন করে গেছেন এ দেশের সংগীত বৈভব।
বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিতে ‘আমার ঠিকানা’ ও ‘ভরা নদীর বাঁকে’ শিরোনামে দুটি সংগীতবিষয়ক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। এক সময় পত্রিকায় নিয়মিত কলামও লিখতেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক এবং জাতীয় সংগীত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলা অ্যাকাডেমির এই সম্মানিত ফেলো বাংলাদেশ অ্যাশিয়াটিক সোসাইটির আজীবন সদস্য এবং বাংলাদেশ ফোকলোর পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কাজের জন্য ২০১৩ সালে নজরুল মেলায় তাকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়।
কবি, লেখক ও গবেষক মুস্তফা জামান আব্বাসীর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫০। ভাওয়াইয়া গানের ওপর তার দুটি বই ‘ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি’ এবং ‘ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি-২’ এ ১২০০ গানের কথা বলা আছে।
বাবা আব্বাসউদ্দিন এবং কাজী নজরুল ইসলামের ছবি ও পেইন্টিং নিয়ে মুস্তাফা জামান আব্বাসী প্রকাশ করেন ‘নজরুল-আব্বাসউদ্দিন স্মৃতিময় অ্যালবাম’, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বই হিসেবে বিবেচিত।
‘আব্বাসউদ্দিন: মানুষ ও শিল্পী’, ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’, ‘বাকি জীবনের কথা’, ‘অব মিউজিক্যালস অ্যান্ড মুন্ড্যান্স’, ‘জলসা থেকে জলসায়’, ‘লালন যাত্রীর পশরা’, ‘মুহাম্মদের নাম’, ‘সুফি কবিতা’, ‘রবীন্দ্রনাথ প্রেমের গান’, ‘গালিবের হৃদয় ছুঁয়ে’, ‘লঘু সংগীতের গোড়ার কথা’, ‘পুড়িব একাকী’র মতো বই রয়েছে তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে।
একুশে পদক, নজরুল অ্যাকাডেমি পুরস্কার ছাড়াও বহু পুরস্কার আর সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। সেগুলোর মধ্যে আছে লালন পুরস্কার, আব্বাসউদ্দিন গোল্ড মেডেল, এ্যাপেক্স ফাউন্ডেশন পুরস্কার, জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক পুরস্কার, সিলেট মিউজিক পুরস্কার, মানিক মিয়া পুরস্কার, নাট্যসভা উপস্থাপক পুরস্কার, বাংলা সন চৌদ্দশতবার্ষিকী পুরস্কার।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর স্ত্রী আসমা আব্বাসী ছিলেন এক জন শিক্ষক ও লেখক। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাতিজী তিনি। ২০২৪ সালের ৫ জুলাই তার মৃত্যু হয়। তাদের দুই মেয়ের মধ্যে সামিরা আব্বাসী প্রকৌশলী। আর শারমিনী আব্বাসী এক জন আইনজীবী। সংগীত শিল্পী ও লেখক হিসেবেও পরিচিতি আছে দুই বোনের।
শনিবার, ১০ মে ২০২৫
বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই। শনিবার,(১০ মে ২০২৫) সকালে বনানীর একটি হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি ভাওয়াইয়া সম্রাট কিংবদন্তি শিল্পী আব্বাসউদ্দিন আহমদের ছোট ছেলে।
তার মেয়ে শারমিনী আব্বাসী জানান, বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আজ ভোর সাড়ে পাঁচটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার মৃত্যুর খবর জানিয়ে বড় মেয়ে সংগীত শিল্পী সামিরা আব্বাসী বাবার সঙ্গে একটি ছবি প্রকাশ করেছেন ফেইসবুকে। লিখেছেন,
‘আমার সোনার চান পাখী .. আর দেখা হবে না ?’
পরিবার জানিয়েছে, শনিবার জোহরের নামাজের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে তার জানাজা হবে।
ঢাকার আজিমপুরে তার বাবা পল্লিগীতির অগ্রপথিক আব্বাসউদ্দীন আহমদ ও মা লুৎফুন্নেসা আব্বাসের কবরে দাফন করা হয় তাদের সন্তান মুস্তাফা জামান আব্বাসীকে। পরিবারের পক্ষ থেকে খবরটি জানিয়েছেন মুস্তাফা জামান আব্বাসীর নাতি আলভী আশরাফ।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ভাওয়াইয়া সম্রাট কিংবদন্তি শিল্পী আব্বাসউদ্দিন আহমদের ছোট ছেলে। তার চাচা আব্দুল করিম ছিলেন পল্লীগীতি ও ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালি গানের শিল্পী।
তার বোন ফেরদৌসী রহমানও একজন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী। বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। মোস্তফা কামালের মেয়ে নাশিদ কামাল এক জন নজরুল সংগীত শিল্পী।
ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে ১৯৩৬ সালের ডিসেম্বর মুস্তাফা জামান আব্বাসীর জন্ম। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে কলকাতায়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ মুহম্মদ হোসেন খসরু এবং ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁর কাছে নিয়েছেন সংগীতের তালিম।
ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদী, চটকা, মারফতী, বাউল, হাসনগীতিসহ গ্রামবাংলার নানা ঢঙের লোকগীতি শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে মুস্তাফা জামান আব্বাসীর কণ্ঠে।
জীবনভর গানের সঙ্গে কাটানো মুস্তাফা জামান আব্বাসী গবেষক হিসেবেও দেশীয় সংগীতের বৈচিত্র্যের সন্ধান করে গেছেন। ইসলামি ও লোকধারার গান সংগ্রহ এবং তা জনপ্রিয় করতে কাজ করেছেন।
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ‘কাজী নজরুল ইসলাম এবং আব্বাসউদ্দীন আহমদ গবেষণা ও শিক্ষা কেন্দ্রের’ গবেষক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগীত সম্মিলনে উপস্থাপন করে গেছেন এ দেশের সংগীত বৈভব।
বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিতে ‘আমার ঠিকানা’ ও ‘ভরা নদীর বাঁকে’ শিরোনামে দুটি সংগীতবিষয়ক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। এক সময় পত্রিকায় নিয়মিত কলামও লিখতেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক এবং জাতীয় সংগীত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলা অ্যাকাডেমির এই সম্মানিত ফেলো বাংলাদেশ অ্যাশিয়াটিক সোসাইটির আজীবন সদস্য এবং বাংলাদেশ ফোকলোর পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কাজের জন্য ২০১৩ সালে নজরুল মেলায় তাকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়।
কবি, লেখক ও গবেষক মুস্তফা জামান আব্বাসীর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫০। ভাওয়াইয়া গানের ওপর তার দুটি বই ‘ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি’ এবং ‘ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি-২’ এ ১২০০ গানের কথা বলা আছে।
বাবা আব্বাসউদ্দিন এবং কাজী নজরুল ইসলামের ছবি ও পেইন্টিং নিয়ে মুস্তাফা জামান আব্বাসী প্রকাশ করেন ‘নজরুল-আব্বাসউদ্দিন স্মৃতিময় অ্যালবাম’, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বই হিসেবে বিবেচিত।
‘আব্বাসউদ্দিন: মানুষ ও শিল্পী’, ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’, ‘বাকি জীবনের কথা’, ‘অব মিউজিক্যালস অ্যান্ড মুন্ড্যান্স’, ‘জলসা থেকে জলসায়’, ‘লালন যাত্রীর পশরা’, ‘মুহাম্মদের নাম’, ‘সুফি কবিতা’, ‘রবীন্দ্রনাথ প্রেমের গান’, ‘গালিবের হৃদয় ছুঁয়ে’, ‘লঘু সংগীতের গোড়ার কথা’, ‘পুড়িব একাকী’র মতো বই রয়েছে তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে।
একুশে পদক, নজরুল অ্যাকাডেমি পুরস্কার ছাড়াও বহু পুরস্কার আর সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। সেগুলোর মধ্যে আছে লালন পুরস্কার, আব্বাসউদ্দিন গোল্ড মেডেল, এ্যাপেক্স ফাউন্ডেশন পুরস্কার, জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক পুরস্কার, সিলেট মিউজিক পুরস্কার, মানিক মিয়া পুরস্কার, নাট্যসভা উপস্থাপক পুরস্কার, বাংলা সন চৌদ্দশতবার্ষিকী পুরস্কার।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর স্ত্রী আসমা আব্বাসী ছিলেন এক জন শিক্ষক ও লেখক। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাতিজী তিনি। ২০২৪ সালের ৫ জুলাই তার মৃত্যু হয়। তাদের দুই মেয়ের মধ্যে সামিরা আব্বাসী প্রকৌশলী। আর শারমিনী আব্বাসী এক জন আইনজীবী। সংগীত শিল্পী ও লেখক হিসেবেও পরিচিতি আছে দুই বোনের।