আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ঢেলে সাজানো হচ্ছে দেশের শুল্ক-কাঠামো। স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে কিছু পণ্যের শুল্কহার কমানো হচ্ছে। কিছু পণ্যের শুল্কহার বাড়ানো হচ্ছে। আবার আইএমএফের পরামর্শে কিছু শিল্পের কর অবকাশ সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শুল্কের বিভিন্ন স্তরে পুনর্বিন্যাসের সুপারিশ
চিনি, নিউজপ্রিন্ট, সফটওয়্যার ইত্যাদি আমদানি শুল্ক কমছে
প্রসাধনী, চকোলেট, খেলনা ও সামগ্রীর শুল্কহার বাড়তে পারে
ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা বাড়তে পারে
আগামী ২ জুন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট ঘোষণা করবেন। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বেতার ও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে এই বাজেট ঘোষণা করবেন। সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টার কাছে শুল্কসংক্রান্ত পরিবর্তনগুলো অনুমোদনের জন্য সার-সংক্ষেপ আকারে পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
শুল্কের বিভিন্ন স্তরে পুনর্বিন্যাস
আমদানি পর্যায়ে বড় পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে আমদানি শুল্কে ছয়টি স্তর আছে। স্তরগুলো হলো শূন্য, ১ শতাংশ, ৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১৫ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের ৩ শতাংশ হারে আরেকটি নতুন আমদানি শুল্কহার অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। তবে প্রধান খাদ্যপণ্য, সার, বীজ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ শিল্পের কাঁচামালের বিদ্যমান শুল্ক হার অপরিবর্তিত থাকছে।
বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে ১২ স্তরের সম্পূরক শুল্ক বসে। এগুলো হলো ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ, ৪৫ শতাংশ, ৬০ শতাংশ, ১০০ শতাংশ, ১৫০ শতাংশ, ২০০ শতাংশ, ২৫০ শতাংশ, ৩০০ শতাংশ, ৩৫০ শতাংশ ও ৫০০ শতাংশ। নতুন বাজেটে ৪০ শতাংশের আরেকটি সম্পূরক শুল্ক স্তর যুক্ত হবে। এ ছাড়া দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসে এমন পণ্যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক অব্যাহত রাখা হবে।
বাস, মাইক্রোবাস, চিনি, নিউজপ্রিন্ট, সফটওয়্যার ইত্যাদি আমদানি শুল্ক কমছে
জানা গেছে, ঢাকাসহ বড় শহরে যানজট কমাতে ১৬ থেকে ৪০ আসনবিশিষ্ট বাস আমদানিতে শুল্ক কমতে পারে। বর্তমানে এ ধরনের যানবাহন আমদানিতে ১০ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক বসে। নতুন বাজেটে এই হার কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা। অন্যদিকে মাইক্রোবাসের (১০-১৫ আসনবিশিষ্ট) সম্পূরক শুল্ক কমানো হতে পারে। বিদ্যমান ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। বর্তমানে
প্রতি টন পরিশোধিত চিনি আমদানিতে সাড়ে চার হাজার টাকা আমদানি শুল্ক দিতে হয়। আগামী বাজেটে তা কমিয়ে চার হাজার টাকা করা হতে পারে। এনবিআর মনে করছে, চিনির আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে অতীতে বাজার স্থিতিশীল ছিল। এতে রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও ফ্রিল্যান্সাররা সফটওয়্যার তৈরি করতে বিদেশি অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস, সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন। দেশে উৎপাদিত সফটওয়্যার রপ্তানিও হয়। তাই রপ্তানিকে উৎসাহ দিতে বিদেশ থেকে আমদানি করা অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস, সিকিউরিটি সফটওয়্যারে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হতে পারে বাজেটে।
সংবাদপত্রের শিল্পে ব্যবহৃত নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক কমানোর প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টার কাছে পাঠিয়েছে এনবিআর। সেই প্রস্তাবে তারা বলেছে, দেশীয় গণমাধ্যমকে আরও সহায়তা দিতে রেয়াতি সুবিধা কিছুটা বাড়ানো প্রয়োজন। সেজন্য কাস্টমস শুল্ক ৫ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।
ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কাঁচামাল উইলো কাঠ আমদানিতে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তারা বলেছে, ক্রিকেট ব্যাট এখন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। ব্যাট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানির চেষ্টা করছে।
এছাড়া জাপানি সিফুড স্ক্যালোপ আমদানিতে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। এতে স্ক্যালোপের দাম কমতে পারে। এ ছাড়া দাম কমতে পারে বিদেশি মাখন, ড্রিংক ইত্যাদির। অন্যদিকে দাম কমতে পারে দেশি সিরিশ কাগজের।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আগামী বাজেটে সব মিলিয়ে ১৭২টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হতে পারে।
প্রসাধনী সামগ্রী, চকোলেট, খেলনা সামগ্রীর শুল্কহার বাড়তে পারে
বাজেটের পর বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্য সামগ্রীর দাম বাড়তে পারে। কারণ, লিপস্টিক, লিপলাইনার, আইলাইনার, ফেসওয়াশ, মেকআপের সরঞ্জাম আমদানির ন্যূনতম মূল্য বিভিন্ন হারে বাড়াতে যাচ্ছে এনবিআর। বর্তমানে প্রতি কেজি লিপস্টিক আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য ২০ ডলার। সেটি বাড়িয়ে ৪০ ডলার করা হতে পারে।
চকোলেটের দামও বাড়তে পারে। চকোলেট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের চকোলেটের শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য ৪ ডলার থাকলেও সেটি বাড়িয়ে ১০ ডলার করার প্রস্তাব করতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা।
আগামী বাজেটে বিদেশ থেকে আমদানি করা খেলনার দামও বাড়তে পারে। কারণ, বিদেশি খেলনা আমদানির ক্ষেত্রে ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশীয় খেলনাশিল্পকে সুরক্ষা দিতে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশে বেশ কিছু খেলনা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় খেলনা তৈরির জন্য বিদেশ থেকে নানা ধরনের যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়। বর্তমানে প্রস্তুত খেলনা ও খেলনার যন্ত্রাংশ আমদানি হয় একই দরে বা ট্যারিফ মূল্যে। প্রতি কেজি খেলনা ও খেলনার যন্ত্রাংশের ট্যারিফ মূল্য সাড়ে তিন ডলার। আগামী অর্থবছরে প্রস্তুত খেলনা আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি কেজির ন্যূনতম ট্যারিফ মূল্য বাড়িয়ে চার ডলার করা হতে পারে। এতে আমদানি করা বিদেশি খেলনার দাম বাড়তে পারে স্থানীয় বাজারে।
কিছু পণ্যের শুল্ক অব্যাহতি হতে পারে
রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকারখানায় মালামাল গুদামজাতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল র?্যাকিং সিস্টেম ও উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে মেটাল ডিটেক্টর মেশিন আমদানিতে বর্তমানে যথাক্রমে ৫৮ ও ৩৭ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। এই উচ্চ শুল্ক এই শিল্প বিকাশে সহায়ক নয় বলে পণ্য দুটি আমদানিতে শুল্ককর অব্যাহতির সুপারিশ থাকতে পারে বাজেটে। এছাড়াও আরও কিছু পণ্যে কর অব্যাহতির সুপারিশ করা হতে পারে বাজেটে।
ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়তে পারে
সাধারণ ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হতে পারে। একইভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হতে পারে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো জুলাইযোদ্ধাদের আয়কর সীমায় ছাড় দিতে যাচ্ছে সরকার। ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থবছরের আয়ের জন্য এই সীমা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ২০২৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আয়ের ওপর নতুন সীমা অনুযায়ী কর নির্ধারণ করা হবে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে মধ্যবিত্তের পাশাপাশি উচ্চবিত্তের ওপর কর বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এজন্য করের স্লাবে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিদ্যমান কর কাঠামোয় একজন উচ্চবিত্তের বার্ষিক আয় ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা অতিক্রম করলে ৩০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। আগামী বাজেটে এটি কমিয়ে ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। এতে উচ্চবিত্তদের বাড়তি কর দিতে হবে।
শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ঢেলে সাজানো হচ্ছে দেশের শুল্ক-কাঠামো। স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে কিছু পণ্যের শুল্কহার কমানো হচ্ছে। কিছু পণ্যের শুল্কহার বাড়ানো হচ্ছে। আবার আইএমএফের পরামর্শে কিছু শিল্পের কর অবকাশ সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শুল্কের বিভিন্ন স্তরে পুনর্বিন্যাসের সুপারিশ
চিনি, নিউজপ্রিন্ট, সফটওয়্যার ইত্যাদি আমদানি শুল্ক কমছে
প্রসাধনী, চকোলেট, খেলনা ও সামগ্রীর শুল্কহার বাড়তে পারে
ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা বাড়তে পারে
আগামী ২ জুন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট ঘোষণা করবেন। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বেতার ও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে এই বাজেট ঘোষণা করবেন। সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টার কাছে শুল্কসংক্রান্ত পরিবর্তনগুলো অনুমোদনের জন্য সার-সংক্ষেপ আকারে পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
শুল্কের বিভিন্ন স্তরে পুনর্বিন্যাস
আমদানি পর্যায়ে বড় পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে আমদানি শুল্কে ছয়টি স্তর আছে। স্তরগুলো হলো শূন্য, ১ শতাংশ, ৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১৫ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের ৩ শতাংশ হারে আরেকটি নতুন আমদানি শুল্কহার অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। তবে প্রধান খাদ্যপণ্য, সার, বীজ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ শিল্পের কাঁচামালের বিদ্যমান শুল্ক হার অপরিবর্তিত থাকছে।
বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে ১২ স্তরের সম্পূরক শুল্ক বসে। এগুলো হলো ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ, ৪৫ শতাংশ, ৬০ শতাংশ, ১০০ শতাংশ, ১৫০ শতাংশ, ২০০ শতাংশ, ২৫০ শতাংশ, ৩০০ শতাংশ, ৩৫০ শতাংশ ও ৫০০ শতাংশ। নতুন বাজেটে ৪০ শতাংশের আরেকটি সম্পূরক শুল্ক স্তর যুক্ত হবে। এ ছাড়া দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসে এমন পণ্যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক অব্যাহত রাখা হবে।
বাস, মাইক্রোবাস, চিনি, নিউজপ্রিন্ট, সফটওয়্যার ইত্যাদি আমদানি শুল্ক কমছে
জানা গেছে, ঢাকাসহ বড় শহরে যানজট কমাতে ১৬ থেকে ৪০ আসনবিশিষ্ট বাস আমদানিতে শুল্ক কমতে পারে। বর্তমানে এ ধরনের যানবাহন আমদানিতে ১০ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক বসে। নতুন বাজেটে এই হার কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা। অন্যদিকে মাইক্রোবাসের (১০-১৫ আসনবিশিষ্ট) সম্পূরক শুল্ক কমানো হতে পারে। বিদ্যমান ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। বর্তমানে
প্রতি টন পরিশোধিত চিনি আমদানিতে সাড়ে চার হাজার টাকা আমদানি শুল্ক দিতে হয়। আগামী বাজেটে তা কমিয়ে চার হাজার টাকা করা হতে পারে। এনবিআর মনে করছে, চিনির আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে অতীতে বাজার স্থিতিশীল ছিল। এতে রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও ফ্রিল্যান্সাররা সফটওয়্যার তৈরি করতে বিদেশি অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস, সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন। দেশে উৎপাদিত সফটওয়্যার রপ্তানিও হয়। তাই রপ্তানিকে উৎসাহ দিতে বিদেশ থেকে আমদানি করা অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস, সিকিউরিটি সফটওয়্যারে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হতে পারে বাজেটে।
সংবাদপত্রের শিল্পে ব্যবহৃত নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক কমানোর প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টার কাছে পাঠিয়েছে এনবিআর। সেই প্রস্তাবে তারা বলেছে, দেশীয় গণমাধ্যমকে আরও সহায়তা দিতে রেয়াতি সুবিধা কিছুটা বাড়ানো প্রয়োজন। সেজন্য কাস্টমস শুল্ক ৫ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।
ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কাঁচামাল উইলো কাঠ আমদানিতে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তারা বলেছে, ক্রিকেট ব্যাট এখন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। ব্যাট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানির চেষ্টা করছে।
এছাড়া জাপানি সিফুড স্ক্যালোপ আমদানিতে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। এতে স্ক্যালোপের দাম কমতে পারে। এ ছাড়া দাম কমতে পারে বিদেশি মাখন, ড্রিংক ইত্যাদির। অন্যদিকে দাম কমতে পারে দেশি সিরিশ কাগজের।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আগামী বাজেটে সব মিলিয়ে ১৭২টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হতে পারে।
প্রসাধনী সামগ্রী, চকোলেট, খেলনা সামগ্রীর শুল্কহার বাড়তে পারে
বাজেটের পর বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্য সামগ্রীর দাম বাড়তে পারে। কারণ, লিপস্টিক, লিপলাইনার, আইলাইনার, ফেসওয়াশ, মেকআপের সরঞ্জাম আমদানির ন্যূনতম মূল্য বিভিন্ন হারে বাড়াতে যাচ্ছে এনবিআর। বর্তমানে প্রতি কেজি লিপস্টিক আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য ২০ ডলার। সেটি বাড়িয়ে ৪০ ডলার করা হতে পারে।
চকোলেটের দামও বাড়তে পারে। চকোলেট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের চকোলেটের শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য ৪ ডলার থাকলেও সেটি বাড়িয়ে ১০ ডলার করার প্রস্তাব করতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা।
আগামী বাজেটে বিদেশ থেকে আমদানি করা খেলনার দামও বাড়তে পারে। কারণ, বিদেশি খেলনা আমদানির ক্ষেত্রে ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশীয় খেলনাশিল্পকে সুরক্ষা দিতে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশে বেশ কিছু খেলনা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় খেলনা তৈরির জন্য বিদেশ থেকে নানা ধরনের যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়। বর্তমানে প্রস্তুত খেলনা ও খেলনার যন্ত্রাংশ আমদানি হয় একই দরে বা ট্যারিফ মূল্যে। প্রতি কেজি খেলনা ও খেলনার যন্ত্রাংশের ট্যারিফ মূল্য সাড়ে তিন ডলার। আগামী অর্থবছরে প্রস্তুত খেলনা আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি কেজির ন্যূনতম ট্যারিফ মূল্য বাড়িয়ে চার ডলার করা হতে পারে। এতে আমদানি করা বিদেশি খেলনার দাম বাড়তে পারে স্থানীয় বাজারে।
কিছু পণ্যের শুল্ক অব্যাহতি হতে পারে
রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকারখানায় মালামাল গুদামজাতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল র?্যাকিং সিস্টেম ও উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে মেটাল ডিটেক্টর মেশিন আমদানিতে বর্তমানে যথাক্রমে ৫৮ ও ৩৭ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। এই উচ্চ শুল্ক এই শিল্প বিকাশে সহায়ক নয় বলে পণ্য দুটি আমদানিতে শুল্ককর অব্যাহতির সুপারিশ থাকতে পারে বাজেটে। এছাড়াও আরও কিছু পণ্যে কর অব্যাহতির সুপারিশ করা হতে পারে বাজেটে।
ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়তে পারে
সাধারণ ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হতে পারে। একইভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হতে পারে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো জুলাইযোদ্ধাদের আয়কর সীমায় ছাড় দিতে যাচ্ছে সরকার। ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থবছরের আয়ের জন্য এই সীমা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ২০২৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আয়ের ওপর নতুন সীমা অনুযায়ী কর নির্ধারণ করা হবে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে মধ্যবিত্তের পাশাপাশি উচ্চবিত্তের ওপর কর বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এজন্য করের স্লাবে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিদ্যমান কর কাঠামোয় একজন উচ্চবিত্তের বার্ষিক আয় ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা অতিক্রম করলে ৩০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। আগামী বাজেটে এটি কমিয়ে ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। এতে উচ্চবিত্তদের বাড়তি কর দিতে হবে।