গতকাল বৃহস্পতিবারের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ঢাকা কলেজের সামনে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এখনও একই অবস্থা -সংবাদ
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৭ বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। পাশাপাশি কিছু স্থানে ভূমিধস হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সেই সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১০ অঞ্চল খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ এবং সিলেটের ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৮০ কিমি বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে। এছাড়া অন্যত্র ৬০ কিমি বেগে ঝড় হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ঢাকায় মৌসুমের
সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত
খাগড়াছড়িতে টানা
বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা, নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং
পটুয়াখালী থেকে বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালীর ২ লাখ মানুষ, তিন দিন ধরে নেই বিদ্যুৎ
পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হয়েছে: ডিএনসিসি
শুক্রবার,(৩০ মে ২০২৫) সন্ধ্যায় দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কথা জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত স্থল গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে প্রথমে স্থল নিম্নচাপ এবং পরে আরও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসেবে শেরপুর ও তৎসংলগ্ন মেঘালয়ে অবস্থান করেছে।
এর প্রভাবে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারী (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতি ভারী (১৮৮ মি.মি.) বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলাসমূহের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে ভারী বর্ষণজনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
####ঢাকায় মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত
নিম্নচাপের প্রভাবে শুক্রবার ঢাকায় মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জানান, ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে ২৮৫ মিলিমিটার, যা দেশের নিরিখেও এই মৌসুমের সর্বোচ্চ।
চাঁদপুরে এক দিনে বৃষ্টি হয়েছে ২৪২ মিলিমিটার, কুমিল্লায় ১৭৯, ফরিদপুরে ১৭১, চট্টগ্রামে ১৬৪, নারায়ণগঞ্জে ১৬১, মাদারীপুর, ফেনী ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ১৬০, বরিশালে ১৪১, রাঙামাটিতে ১৪০,
কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ১৩১, মানিকগঞ্জের আরিচায় ১১৯, বান্দরবানে ১১৩, বগুড়ায় ১১২ এবং নেত্রকোণায় ১০৪ মিলিমিটার। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃষ্টিপাত সংজ্ঞা অনুযায়ী, ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে তাকে ‘অতি ভারি বৃষ্টি’ বলা হয়। সে হিসেবে শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি লঘুচাপ গত মঙ্গলবার ঘনীভূত হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। শুক্রবার সকালে সেটি স্থল নিম্নচাপ হিসেবে টাঙ্গাইল ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছিল।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জানান, নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিন অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থানে এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে।
####খাগড়াছড়িতে টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা, নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং:
নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে জেলায় একটানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো থেকে লোকজনকে সরাতে সচেতনতামূলক মাইকিং শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, ‘কলাবাগান, সবুজবাগ, শালবন ও কুমিল্লাটিলা এলাকাগুলোকে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা এসব এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই মাইকিং করছি এবং পাহাড়ের পাদদেশে যারা বসবাস করছেন তাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা সদর ছাড়াও দীঘিনালা, মাটিরাঙা ও রামগড়সহ বিভিন্ন উপজেলাতেও ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। এসব এলাকাতেও মাইকিং করে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। যারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকছেন এবং নিজের ইচ্ছায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন না, তাদের দুপুরের মধ্যে সরানো না হলে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ প্রাণহানি এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে পাহাড়ি সড়কে মাটি ধসের শঙ্কায় প্রস্তুত রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তারা প্রয়োজনীয় জনবল ও মাটি অপসারণের সরঞ্জাম প্রস্তুত রেখেছে বলে জানা গেছে।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টা পর্যন্ত জেলায় ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
####বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সারাদেশে টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত
নিম্নচাপের কারণে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বিদ্যুৎ সরবারহ ব্যবস্থায় সমস্যা হওয়ার কারণে সারাদেশে টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। একইসঙ্গে ৫ হাজার ৯০৪টি সাইট বন্ধ হয়ে গেছে। শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার আইসিটিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফাইজ তাইয়েব আহমেদ ফেইসবুকে দেয়া এত পোস্টে এই তথ্য জানিয়েছেন।
ফাইজ তাইয়েব জানান, নিম্নচাপজনিত ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে সারাদেশে টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত। নেটওয়ার্ক রিস্টোর করতে নিরলস কাজ করছেন পল্লী বিদ্যুৎসহ টেলিযোগাযোগ সেবাকর্মীরা।
####পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হয়েছে: ডিএনসিসি
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় আকস্মিক অতিবৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট জলবদ্ধতা দ্রুত ও কার্যকরভাবে নিরসন করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জরুরি সাড়াদানকারী দলের (কুইক রেসপন্স টিম) কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘এবার বর্ষা মৌসুমের আগেই ঢাকার আব্দুল্লাপুর খাল, বাউনিয়া খাল, কল্যাণপুর খাল, রূপনগর খাল, মহাখালী খালসহ প্রায় ২৯টি খালের ১০০ কিলোমিটারের বেশি এলাকা দখলমুক্ত করে পানির প্রবাহ সৃষ্টি করা হয়েছে। যার কারণে আকষ্মিক বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলবদ্ধতা দ্রুত ও কার্যকরভাবে নিরসন সম্ভব হয়েছে।’
####পটুয়াখালী থেকে বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালীর ২ লাখ মানুষ, তিন দিন ধরে নেই বিদ্যুৎ
বৈরী আবহাওয়ায় পটুয়াখালীর উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী টানা দু’দিন ধরে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় অন্তত দুই লাখ মানুষ এখন ‘দ্বীপে বন্দী’ অবস্থায় পড়েছেন। জীবন-জীবিকার পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াত না করতে পারায় তৈরি হয়েছে চরম ভোগান্তি। এদিকে তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা মূলত সমুদ্র ও নদীবেষ্টিত একটি দ্বীপাঞ্চল। উপজেলার সঙ্গে মূল ভূখণ্ড গলাচিপা কিংবা কলাপাড়া হয়ে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছিল জলপথ। কিন্তু গত বুধবারের পর থেকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বৈরী আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার ও নৌযান চলাচল চালু হয়নি। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন এখানকার বাসিন্দারা।
রাঙ্গাবালীর বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. কাশেম মিয়া বলেন, ‘শুক্রবার আমার ছোট ভাই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু কোনো স্পিডবোট বা ট্রলারই পাওয়া যায়নি। আমরা শুধু অসহায় হয়ে অপেক্ষা করছি।’
স্থানীয়রা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। কারণ, বাইরের কোনো ট্রলার বা লঞ্চ আসতে না পারায় নতুন পণ্য ঢুকছে না দ্বীপে। তবে পুরোপুরি সংকট এখনও তৈরি হয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবারের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ঢাকা কলেজের সামনে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এখনও একই অবস্থা -সংবাদ
শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৭ বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। পাশাপাশি কিছু স্থানে ভূমিধস হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সেই সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১০ অঞ্চল খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ এবং সিলেটের ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৮০ কিমি বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে। এছাড়া অন্যত্র ৬০ কিমি বেগে ঝড় হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ঢাকায় মৌসুমের
সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত
খাগড়াছড়িতে টানা
বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা, নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং
পটুয়াখালী থেকে বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালীর ২ লাখ মানুষ, তিন দিন ধরে নেই বিদ্যুৎ
পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হয়েছে: ডিএনসিসি
শুক্রবার,(৩০ মে ২০২৫) সন্ধ্যায় দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কথা জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত স্থল গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে প্রথমে স্থল নিম্নচাপ এবং পরে আরও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসেবে শেরপুর ও তৎসংলগ্ন মেঘালয়ে অবস্থান করেছে।
এর প্রভাবে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারী (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতি ভারী (১৮৮ মি.মি.) বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলাসমূহের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে ভারী বর্ষণজনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
####ঢাকায় মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত
নিম্নচাপের প্রভাবে শুক্রবার ঢাকায় মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জানান, ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে ২৮৫ মিলিমিটার, যা দেশের নিরিখেও এই মৌসুমের সর্বোচ্চ।
চাঁদপুরে এক দিনে বৃষ্টি হয়েছে ২৪২ মিলিমিটার, কুমিল্লায় ১৭৯, ফরিদপুরে ১৭১, চট্টগ্রামে ১৬৪, নারায়ণগঞ্জে ১৬১, মাদারীপুর, ফেনী ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ১৬০, বরিশালে ১৪১, রাঙামাটিতে ১৪০,
কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ১৩১, মানিকগঞ্জের আরিচায় ১১৯, বান্দরবানে ১১৩, বগুড়ায় ১১২ এবং নেত্রকোণায় ১০৪ মিলিমিটার। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃষ্টিপাত সংজ্ঞা অনুযায়ী, ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে তাকে ‘অতি ভারি বৃষ্টি’ বলা হয়। সে হিসেবে শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি লঘুচাপ গত মঙ্গলবার ঘনীভূত হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। শুক্রবার সকালে সেটি স্থল নিম্নচাপ হিসেবে টাঙ্গাইল ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছিল।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জানান, নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিন অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থানে এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে।
####খাগড়াছড়িতে টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা, নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং:
নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে জেলায় একটানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো থেকে লোকজনকে সরাতে সচেতনতামূলক মাইকিং শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, ‘কলাবাগান, সবুজবাগ, শালবন ও কুমিল্লাটিলা এলাকাগুলোকে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা এসব এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই মাইকিং করছি এবং পাহাড়ের পাদদেশে যারা বসবাস করছেন তাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা সদর ছাড়াও দীঘিনালা, মাটিরাঙা ও রামগড়সহ বিভিন্ন উপজেলাতেও ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। এসব এলাকাতেও মাইকিং করে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। যারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকছেন এবং নিজের ইচ্ছায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন না, তাদের দুপুরের মধ্যে সরানো না হলে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ প্রাণহানি এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে পাহাড়ি সড়কে মাটি ধসের শঙ্কায় প্রস্তুত রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তারা প্রয়োজনীয় জনবল ও মাটি অপসারণের সরঞ্জাম প্রস্তুত রেখেছে বলে জানা গেছে।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টা পর্যন্ত জেলায় ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
####বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সারাদেশে টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত
নিম্নচাপের কারণে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বিদ্যুৎ সরবারহ ব্যবস্থায় সমস্যা হওয়ার কারণে সারাদেশে টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। একইসঙ্গে ৫ হাজার ৯০৪টি সাইট বন্ধ হয়ে গেছে। শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার আইসিটিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফাইজ তাইয়েব আহমেদ ফেইসবুকে দেয়া এত পোস্টে এই তথ্য জানিয়েছেন।
ফাইজ তাইয়েব জানান, নিম্নচাপজনিত ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে সারাদেশে টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত। নেটওয়ার্ক রিস্টোর করতে নিরলস কাজ করছেন পল্লী বিদ্যুৎসহ টেলিযোগাযোগ সেবাকর্মীরা।
####পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হয়েছে: ডিএনসিসি
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় আকস্মিক অতিবৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট জলবদ্ধতা দ্রুত ও কার্যকরভাবে নিরসন করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জরুরি সাড়াদানকারী দলের (কুইক রেসপন্স টিম) কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘এবার বর্ষা মৌসুমের আগেই ঢাকার আব্দুল্লাপুর খাল, বাউনিয়া খাল, কল্যাণপুর খাল, রূপনগর খাল, মহাখালী খালসহ প্রায় ২৯টি খালের ১০০ কিলোমিটারের বেশি এলাকা দখলমুক্ত করে পানির প্রবাহ সৃষ্টি করা হয়েছে। যার কারণে আকষ্মিক বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলবদ্ধতা দ্রুত ও কার্যকরভাবে নিরসন সম্ভব হয়েছে।’
####পটুয়াখালী থেকে বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালীর ২ লাখ মানুষ, তিন দিন ধরে নেই বিদ্যুৎ
বৈরী আবহাওয়ায় পটুয়াখালীর উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী টানা দু’দিন ধরে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় অন্তত দুই লাখ মানুষ এখন ‘দ্বীপে বন্দী’ অবস্থায় পড়েছেন। জীবন-জীবিকার পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াত না করতে পারায় তৈরি হয়েছে চরম ভোগান্তি। এদিকে তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা মূলত সমুদ্র ও নদীবেষ্টিত একটি দ্বীপাঞ্চল। উপজেলার সঙ্গে মূল ভূখণ্ড গলাচিপা কিংবা কলাপাড়া হয়ে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছিল জলপথ। কিন্তু গত বুধবারের পর থেকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বৈরী আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার ও নৌযান চলাচল চালু হয়নি। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন এখানকার বাসিন্দারা।
রাঙ্গাবালীর বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. কাশেম মিয়া বলেন, ‘শুক্রবার আমার ছোট ভাই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু কোনো স্পিডবোট বা ট্রলারই পাওয়া যায়নি। আমরা শুধু অসহায় হয়ে অপেক্ষা করছি।’
স্থানীয়রা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। কারণ, বাইরের কোনো ট্রলার বা লঞ্চ আসতে না পারায় নতুন পণ্য ঢুকছে না দ্বীপে। তবে পুরোপুরি সংকট এখনও তৈরি হয়নি।