চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের মারামারি-সংঘর্ষের জেরে শুক্রবার,(৩০ মে ২০২৫)ও রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এই অচলাবস্থা চলছে। চিকিৎসাসেবা কখন চালু হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার দেখা যায়, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ও নার্স নেই। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নতুন রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। আগে যেসব রোগী এখান থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের অনেকে ফলোআপের জন্য এসে তা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
গত বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক সাধারণ রোগী ইতোমধ্যে অন্যত্র চলে গেছেন। আর কিছু সাধারণ রোগী এখনও হাসপাতালে আছেন। তারা বলছেন, চিকিৎসার মাঝপথে তারা এখন কোথায় যাবেন? তাই হাসপাতালে রয়ে গেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের কেউ হাসপাতাল ছেড়ে যাননি বলে জানা গেছে।
‘চিকিৎসা-খাবার কিছুই পাচ্ছি না’
৬ মাস ধরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত কোরবান হোসাইন। তার ডান চোখ ইতোমধ্যে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। গত বুধবার হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় বা হাত ভেঙে গেছে বলে জানান কোরবান।
কোরবান হোসাইন বলেন, ‘এখানে সব চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। ডান চোখের প্রভাব বাঁ চোখেও পড়ছে। বাঁ চোখ জ্বালাপোড়া করে, পানি বের হয়। আমি এখন বাঁ চোখও হারানোর শঙ্কায় আছি। তিন দিন ধরে চিকিৎসা ও খাবার কিছুই পাচ্ছি না।’
হাসপাতালে কবে আবার চিকিৎসা সেবা চালু হবে, তা জানা নেই বলে উল্লেখ করেন কোরবান হোসাইন। তিনি বলেন, ‘এখান থেকে চিকিৎসা আর হবে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আমার ধারণা, আমরা হাসপাতালে থাকায় এখানকার কর্মচারী ও ডাক্তাররা তাদের খেয়াল-খুশি মতো রোগী নিয়ে সিন্ডিকেট চালাতে পারছেন না। তাই তারা আমাদের বের করে দিতে চান।’
ভোগান্তিতে অন্য রোগীরা
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গাউসুল আজম। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলিতে এক চোখ হারিয়েছেন তিনি। মারামারি-সংঘর্ষের জেরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হওয়ার বিষয়টি জানতেন না গাউসুল।
গতকাল বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া থেকে গাউসুল ঢাকায় আসেন। এসে দেখতে পান, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ। চিকিৎসাসেবা চালুর অপেক্ষায় আছেন তিনি। কিন্তু কবে চালু হবে, তা তার জানা নেই।
গাউসুল বলেন, ‘এক চোখ নেই। আরেক চোখেও কিছু সমস্যা অনুভব করছি। কয়েক দিন পরপর এখানে ডাক্তার দেখাতে আসি। কিন্তু এভাবে সেবা বন্ধ থাকলে তো সমস্যা। এই হাসপাতালের বিকল্পও নেই। আর বেসরকারি হাসপাতালে তো অনেক খরচ। দ্রুত চিকিৎসাসেবা চালু হোক, এটাই চাই।’ চোখের কয়েকটি পরীক্ষা করানোর জন্য শুক্রবার ডেমরা থেকে এই হাসপাতালে আসেন মামুন সরকার। এসে দেখতে পান, সব সেবা বন্ধ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘চোখের কয়েকটি পরীক্ষা করাতে এসেছি। এই পরীক্ষাগুলো সাধারণ হাসপাতালে পাওয়া যায় না। কিন্তু এখানে সব সেবা বন্ধ রয়েছে। কবে চালু হবে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।’
নারায়ণগঞ্জের মো. কাউসার আহাম্মেদ সম্প্রতি এই হাসপাতাল থেকে তার চোখের অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। গত মঙ্গলবার সকালে তিনি আবার চোখের অবস্থা দেখাতে আসেন। তখন তাকে ভর্তি দেন চিকিৎসক। ভর্তির পর তার চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু গত বুধবারের সংঘর্ষের জেরে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে গেলে বিপাকে পড়েন তিনি। কাউসার বলেন, ‘তিন দিন যাবৎ চিকিৎসা পাচ্ছি না। চোখ নিয়ে শঙ্কায় আছি। চিকিৎসা না পেলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। এই অবস্থায় অন্য কোথাও যেতেও পারছি না।’
চিকিৎসাসেবা চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা
শুক্রবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বুধবারের পর আর কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এখানে ঘটেনি। নির্দেশনা অনুযায়ী তারা হাসপাতালে অবস্থান করবেন। হাসপাতালে দায়িত্বরত সহকারী আনসার কমান্ডার অমৃত বালা বলেন, এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। কবে হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারীরা আসবেন, তা তারা জানেন না।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত রোগীদের অন্তত ৯০ শতাংশ সুস্থ আছেন, যাদের বাড়ি পাঠানো যেতে পারে। এর বাইরে যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হবে, তাদের অন্য হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া উচিত। কারণ, চিকিৎসকেরা এই মুহূর্তে রোগীদের কোনো ওষুধ দিলে রোগীরা মনে করবেন, তারা শত্রুতাবশত কিছু খাইয়ে দিচ্ছেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত রোগীরা উন্নত চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন। এ প্রসঙ্গে খায়ের আহমেদ চৌধুরী জানান, ‘তারা আমাদের চিকিৎসায় সন্তুষ্ট নন। সবাই বিদেশে যেতে চান। এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে প্রায় ১৫ জনকে পাঠানো হয়েছে। আমি মনে করি, বাকিদের অন্য কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। না হলে এই সঙ্কটের সমাধান হবে না।’ শুক্রবার হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম বলেন, ‘হাসপাতাল বন্ধ। কোনো চিকিৎসক ও কর্মচারী প্রবেশ করতে পারছেন না। কবে নাগাদ পুনরায় সেবা চালু হবে, সেটা জানা নেই। হাসপাতালে কোনো রোগীর অবস্থানের তথ্যও আমার কাছে নেই।’
শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের মারামারি-সংঘর্ষের জেরে শুক্রবার,(৩০ মে ২০২৫)ও রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এই অচলাবস্থা চলছে। চিকিৎসাসেবা কখন চালু হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার দেখা যায়, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ও নার্স নেই। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নতুন রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। আগে যেসব রোগী এখান থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের অনেকে ফলোআপের জন্য এসে তা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
গত বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক সাধারণ রোগী ইতোমধ্যে অন্যত্র চলে গেছেন। আর কিছু সাধারণ রোগী এখনও হাসপাতালে আছেন। তারা বলছেন, চিকিৎসার মাঝপথে তারা এখন কোথায় যাবেন? তাই হাসপাতালে রয়ে গেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের কেউ হাসপাতাল ছেড়ে যাননি বলে জানা গেছে।
‘চিকিৎসা-খাবার কিছুই পাচ্ছি না’
৬ মাস ধরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত কোরবান হোসাইন। তার ডান চোখ ইতোমধ্যে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। গত বুধবার হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় বা হাত ভেঙে গেছে বলে জানান কোরবান।
কোরবান হোসাইন বলেন, ‘এখানে সব চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। ডান চোখের প্রভাব বাঁ চোখেও পড়ছে। বাঁ চোখ জ্বালাপোড়া করে, পানি বের হয়। আমি এখন বাঁ চোখও হারানোর শঙ্কায় আছি। তিন দিন ধরে চিকিৎসা ও খাবার কিছুই পাচ্ছি না।’
হাসপাতালে কবে আবার চিকিৎসা সেবা চালু হবে, তা জানা নেই বলে উল্লেখ করেন কোরবান হোসাইন। তিনি বলেন, ‘এখান থেকে চিকিৎসা আর হবে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আমার ধারণা, আমরা হাসপাতালে থাকায় এখানকার কর্মচারী ও ডাক্তাররা তাদের খেয়াল-খুশি মতো রোগী নিয়ে সিন্ডিকেট চালাতে পারছেন না। তাই তারা আমাদের বের করে দিতে চান।’
ভোগান্তিতে অন্য রোগীরা
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গাউসুল আজম। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলিতে এক চোখ হারিয়েছেন তিনি। মারামারি-সংঘর্ষের জেরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হওয়ার বিষয়টি জানতেন না গাউসুল।
গতকাল বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া থেকে গাউসুল ঢাকায় আসেন। এসে দেখতে পান, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ। চিকিৎসাসেবা চালুর অপেক্ষায় আছেন তিনি। কিন্তু কবে চালু হবে, তা তার জানা নেই।
গাউসুল বলেন, ‘এক চোখ নেই। আরেক চোখেও কিছু সমস্যা অনুভব করছি। কয়েক দিন পরপর এখানে ডাক্তার দেখাতে আসি। কিন্তু এভাবে সেবা বন্ধ থাকলে তো সমস্যা। এই হাসপাতালের বিকল্পও নেই। আর বেসরকারি হাসপাতালে তো অনেক খরচ। দ্রুত চিকিৎসাসেবা চালু হোক, এটাই চাই।’ চোখের কয়েকটি পরীক্ষা করানোর জন্য শুক্রবার ডেমরা থেকে এই হাসপাতালে আসেন মামুন সরকার। এসে দেখতে পান, সব সেবা বন্ধ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘চোখের কয়েকটি পরীক্ষা করাতে এসেছি। এই পরীক্ষাগুলো সাধারণ হাসপাতালে পাওয়া যায় না। কিন্তু এখানে সব সেবা বন্ধ রয়েছে। কবে চালু হবে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।’
নারায়ণগঞ্জের মো. কাউসার আহাম্মেদ সম্প্রতি এই হাসপাতাল থেকে তার চোখের অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। গত মঙ্গলবার সকালে তিনি আবার চোখের অবস্থা দেখাতে আসেন। তখন তাকে ভর্তি দেন চিকিৎসক। ভর্তির পর তার চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু গত বুধবারের সংঘর্ষের জেরে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে গেলে বিপাকে পড়েন তিনি। কাউসার বলেন, ‘তিন দিন যাবৎ চিকিৎসা পাচ্ছি না। চোখ নিয়ে শঙ্কায় আছি। চিকিৎসা না পেলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। এই অবস্থায় অন্য কোথাও যেতেও পারছি না।’
চিকিৎসাসেবা চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা
শুক্রবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বুধবারের পর আর কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এখানে ঘটেনি। নির্দেশনা অনুযায়ী তারা হাসপাতালে অবস্থান করবেন। হাসপাতালে দায়িত্বরত সহকারী আনসার কমান্ডার অমৃত বালা বলেন, এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। কবে হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারীরা আসবেন, তা তারা জানেন না।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত রোগীদের অন্তত ৯০ শতাংশ সুস্থ আছেন, যাদের বাড়ি পাঠানো যেতে পারে। এর বাইরে যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হবে, তাদের অন্য হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া উচিত। কারণ, চিকিৎসকেরা এই মুহূর্তে রোগীদের কোনো ওষুধ দিলে রোগীরা মনে করবেন, তারা শত্রুতাবশত কিছু খাইয়ে দিচ্ছেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত রোগীরা উন্নত চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন। এ প্রসঙ্গে খায়ের আহমেদ চৌধুরী জানান, ‘তারা আমাদের চিকিৎসায় সন্তুষ্ট নন। সবাই বিদেশে যেতে চান। এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে প্রায় ১৫ জনকে পাঠানো হয়েছে। আমি মনে করি, বাকিদের অন্য কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। না হলে এই সঙ্কটের সমাধান হবে না।’ শুক্রবার হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম বলেন, ‘হাসপাতাল বন্ধ। কোনো চিকিৎসক ও কর্মচারী প্রবেশ করতে পারছেন না। কবে নাগাদ পুনরায় সেবা চালু হবে, সেটা জানা নেই। হাসপাতালে কোনো রোগীর অবস্থানের তথ্যও আমার কাছে নেই।’