পিলখানায় প্রায় ১৬ বছর আগে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তৎকালীন সামরিক কমান্ড ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিল এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ‘চরম ব্যর্থতার’ পরিচয় দিয়েছিল বলে মনে করে ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’।
কমিশনের সভাপতি এএলএম ফজলুর রহমান বুধবার,(২৫ জুন ২০২৫) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির নতুন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সময়মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অপরাধ সংগঠনের সময় তারা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে প্রতীয়মান হয় যে তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার দুই মাসের মাথায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহ ঘটে। এ ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।
সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলের পাশাপাশি পোশাকেও পরিবর্তন আসে। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রচলিত আদালতে হয়। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর শেষ হয়। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। খালাস পেয়েছেন ২৭৮ জন।
পরে হাইকোর্ট ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয় ১৮৫ জনকে। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয় ২২৮ জনকে। খালাস পান ২৮৩ জন।
গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। এই সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি ওঠে। বিষয়টি আদালতেও গড়ায়।
পরে গতবছর ডিসেম্বরে ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার, যার নেতৃত্বে আছেন বিজিবির সাবেক মহা-পরিচালক এএলএম ফজলুর রহমান।
তদন্ত কমিশনের সভাপতি বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধানের নামে কালক্ষেপণ, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয় থাকার কারণেই সেদিন অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে।’
পুরো ঘটনাটিকে ‘ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা’ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এর আগে যে দু’টি তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে, তারা পুরো ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার জন্য জঙ্গিবাদকে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।’
বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে ‘বিদেশি সংশ্লিষ্টতা’ নিয়ে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে ‘বেশ কিছু তথ্য’ পাওয়া গেছে জানিয়ে কমিশনের সভাপতি বলেন,
‘এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কমিশন মনে করে যে সময়মত সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধ করা যেত।’
তদন্ত কমিশন এ পর্যন্ত ১৫৮ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে জানিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, তাদের মধ্যে আটজন রাজনীতিবিদ। তাদের মধ্যে তিনজনের সাক্ষাৎকার জেলে নেয়া হয়েছে। তিনজন উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অনলাইনে সাক্ষ্য দিয়েছেন বিদেশে আত্মগোপনে থাকা দুই আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজম এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য নেয়া বাকি আছে জানিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, ‘এটি একটি সময়সাপেক্ষ কাজ। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির অনুরোধ করা হয়েছে।’
তদন্ত কমিশন পিলখানা থেকে বেঁচে ফিরে আসা ১৫ জন সেনা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। আর ৫০ জন বেঁচে যাওয়া অফিসারদের লিখিত জবানবন্দীর জন্য সেনা সদরের মাধ্যমে চিঠি দেয়া হয়েছে। দু’টি সম্মেলনে তাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে বলে জানান কমিশন প্রধান।
.
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
পিলখানায় প্রায় ১৬ বছর আগে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তৎকালীন সামরিক কমান্ড ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিল এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ‘চরম ব্যর্থতার’ পরিচয় দিয়েছিল বলে মনে করে ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’।
কমিশনের সভাপতি এএলএম ফজলুর রহমান বুধবার,(২৫ জুন ২০২৫) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির নতুন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সময়মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অপরাধ সংগঠনের সময় তারা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে প্রতীয়মান হয় যে তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার দুই মাসের মাথায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহ ঘটে। এ ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।
সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলের পাশাপাশি পোশাকেও পরিবর্তন আসে। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রচলিত আদালতে হয়। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর শেষ হয়। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। খালাস পেয়েছেন ২৭৮ জন।
পরে হাইকোর্ট ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয় ১৮৫ জনকে। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয় ২২৮ জনকে। খালাস পান ২৮৩ জন।
গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। এই সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি ওঠে। বিষয়টি আদালতেও গড়ায়।
পরে গতবছর ডিসেম্বরে ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার, যার নেতৃত্বে আছেন বিজিবির সাবেক মহা-পরিচালক এএলএম ফজলুর রহমান।
তদন্ত কমিশনের সভাপতি বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধানের নামে কালক্ষেপণ, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয় থাকার কারণেই সেদিন অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে।’
পুরো ঘটনাটিকে ‘ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা’ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এর আগে যে দু’টি তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে, তারা পুরো ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার জন্য জঙ্গিবাদকে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।’
বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে ‘বিদেশি সংশ্লিষ্টতা’ নিয়ে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে ‘বেশ কিছু তথ্য’ পাওয়া গেছে জানিয়ে কমিশনের সভাপতি বলেন,
‘এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কমিশন মনে করে যে সময়মত সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধ করা যেত।’
তদন্ত কমিশন এ পর্যন্ত ১৫৮ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে জানিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, তাদের মধ্যে আটজন রাজনীতিবিদ। তাদের মধ্যে তিনজনের সাক্ষাৎকার জেলে নেয়া হয়েছে। তিনজন উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অনলাইনে সাক্ষ্য দিয়েছেন বিদেশে আত্মগোপনে থাকা দুই আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজম এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য নেয়া বাকি আছে জানিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, ‘এটি একটি সময়সাপেক্ষ কাজ। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির অনুরোধ করা হয়েছে।’
তদন্ত কমিশন পিলখানা থেকে বেঁচে ফিরে আসা ১৫ জন সেনা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। আর ৫০ জন বেঁচে যাওয়া অফিসারদের লিখিত জবানবন্দীর জন্য সেনা সদরের মাধ্যমে চিঠি দেয়া হয়েছে। দু’টি সম্মেলনে তাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে বলে জানান কমিশন প্রধান।
.