ইসরায়েলের হামলায় ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি ধ্বংসস্তূপ
সম্প্রতি ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ সামরিক হামলায় দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্বীকার করেছে তেহরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসামাইল বাঘাঈ হামলাগুলোকে ‘প্রযুক্তিগত আক্রমণ’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এর জবাবে পার্লামেন্ট আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের একটি বিল পাস করেছে। এতে সংস্থাটির পরিদর্শন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ইরানের পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যার ক্ষতিপূরণ চেয়ে প্রায় ৩৯ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। আর সংঘাতের মধ্যে নিহত ইরানি সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তেহরান। ইসরায়েলের দাবি, এ হামলায় অন্তত ১৪ জন ইরানি বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন, যা দেশটির পরমাণু কর্মসূচিকে কয়েক বছর পিছিয়ে দিতে পারে।
এদিকে কাতারে অবস্থিত আল-উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার জেরে দেশটির প্রেসিডেন্ট কাতারের আমিরের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে ৭০০ জনের বেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার এবং অন্তত ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
নেটো সম্মেলনের এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরানে চালানো মার্কিন হামলায় পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘ধ্বংস’ হয়েছে এবং ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ইতি টানা সম্ভব হয়েছে। যদিও তার দাবি এখনও যাচাই করা হয়নি, ট্রাম্প ইসরায়েলি পারমাণবিক শক্তি কমিশনের একটি চিঠি পড়ে শোনান, যাতে বলা হয়েছে ফোর্দো পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘তারা লড়েছে এবং যুদ্ধ শেষ হয়েছে,’ উল্লেখ করে আলোচনার আর প্রয়োজন নেই বলেও মত দেন।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভর করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি তা অস্বীকার করেন এবং বলেন, মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়েছে। তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে, তবে জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের একমাত্র শর্ত ইরান যেন কখনও পারমাণবিক অস্ত্র না পায়।’ এ সময় পাশে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে কারও সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত।
নেটো সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ইরানে হামলায় অংশ নেয়া মার্কিন সামরিক পাইলটদের দক্ষতা ছিল ‘নজিরবিহীন’। এ সংঘাত ও ইউক্রেন সংকট ঘিরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্প পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এবং সম্মেলনটিকে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি ও নেটো সংহতির জন্য ‘একটি বড় সাফল্য’ হিসেবে অভিহিত করেন।
তবে মার্কিন প্রশাসনের ভেতর থেকেই ভিন্নমত উঠে এসেছে। পেন্টাগনের একটি গোপন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি, বরং
মাত্র কয়েক মাসের জন্য বিলম্বিত হয়েছে। স্যাটেলাইট বিশ্লেষণেও দেখা গেছে, ইরান আগে থেকেই ইউরেনিয়াম সরিয়ে রেখেছিল। যদিও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এখন ইতিহাস’, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনি এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাননি।
আর ইরানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পরিচালিত হামলাসমূহকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে এই দুই দেশের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত।
এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের ফেরত যাওয়া জরুরি। এদিকে মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ব্র্যাড শেরম্যান সতর্ক করে বলেছেন, ইরানের মজুদকৃত ইউরেনিয়াম এখনও কয়েকটি পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট।
সব মিলিয়ে, পারমাণবিক উত্তেজনা, আঞ্চলিক সংঘাত এবং বৈশ্বিক কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এখনও অনিশ্চিত।
ইসরায়েলের হামলায় ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি ধ্বংসস্তূপ
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
সম্প্রতি ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ সামরিক হামলায় দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্বীকার করেছে তেহরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসামাইল বাঘাঈ হামলাগুলোকে ‘প্রযুক্তিগত আক্রমণ’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এর জবাবে পার্লামেন্ট আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের একটি বিল পাস করেছে। এতে সংস্থাটির পরিদর্শন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ইরানের পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যার ক্ষতিপূরণ চেয়ে প্রায় ৩৯ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। আর সংঘাতের মধ্যে নিহত ইরানি সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তেহরান। ইসরায়েলের দাবি, এ হামলায় অন্তত ১৪ জন ইরানি বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন, যা দেশটির পরমাণু কর্মসূচিকে কয়েক বছর পিছিয়ে দিতে পারে।
এদিকে কাতারে অবস্থিত আল-উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার জেরে দেশটির প্রেসিডেন্ট কাতারের আমিরের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে ৭০০ জনের বেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার এবং অন্তত ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
নেটো সম্মেলনের এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরানে চালানো মার্কিন হামলায় পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘ধ্বংস’ হয়েছে এবং ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ইতি টানা সম্ভব হয়েছে। যদিও তার দাবি এখনও যাচাই করা হয়নি, ট্রাম্প ইসরায়েলি পারমাণবিক শক্তি কমিশনের একটি চিঠি পড়ে শোনান, যাতে বলা হয়েছে ফোর্দো পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘তারা লড়েছে এবং যুদ্ধ শেষ হয়েছে,’ উল্লেখ করে আলোচনার আর প্রয়োজন নেই বলেও মত দেন।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভর করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি তা অস্বীকার করেন এবং বলেন, মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়েছে। তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে, তবে জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের একমাত্র শর্ত ইরান যেন কখনও পারমাণবিক অস্ত্র না পায়।’ এ সময় পাশে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে কারও সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত।
নেটো সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ইরানে হামলায় অংশ নেয়া মার্কিন সামরিক পাইলটদের দক্ষতা ছিল ‘নজিরবিহীন’। এ সংঘাত ও ইউক্রেন সংকট ঘিরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্প পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এবং সম্মেলনটিকে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি ও নেটো সংহতির জন্য ‘একটি বড় সাফল্য’ হিসেবে অভিহিত করেন।
তবে মার্কিন প্রশাসনের ভেতর থেকেই ভিন্নমত উঠে এসেছে। পেন্টাগনের একটি গোপন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি, বরং
মাত্র কয়েক মাসের জন্য বিলম্বিত হয়েছে। স্যাটেলাইট বিশ্লেষণেও দেখা গেছে, ইরান আগে থেকেই ইউরেনিয়াম সরিয়ে রেখেছিল। যদিও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এখন ইতিহাস’, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনি এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাননি।
আর ইরানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পরিচালিত হামলাসমূহকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে এই দুই দেশের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত।
এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের ফেরত যাওয়া জরুরি। এদিকে মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ব্র্যাড শেরম্যান সতর্ক করে বলেছেন, ইরানের মজুদকৃত ইউরেনিয়াম এখনও কয়েকটি পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট।
সব মিলিয়ে, পারমাণবিক উত্তেজনা, আঞ্চলিক সংঘাত এবং বৈশ্বিক কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এখনও অনিশ্চিত।