বিচারপতি এম এ মতিন - বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী - অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক- অ্যাডভোকেট শরিফ- ভূইয়া ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দলিল’ হিসেবে প্রণয়ন করা শুরু করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় সংলাপের ভিত্তিতে কমিশন যে সনদ (খসড়া) চূড়ান্ত করে তাতে রাষ্ট্রের মৌলিক কয়েকটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতের মীমাংসা হয়নি। বিশেষ করে সনদের বাস্তবায়ন প্রশ্নে বিএনপি ও তার মিত্রদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, বৈষম্যবিরোধীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ তাদের সমমনা দলগুলো।
এই সনদ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে কার্যকর করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। খসড়ায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেয়া না দেয়ার প্রশ্নেই বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ও এনসিপির মূল বিরোধ। বিএনপি এবং এর মিত্র কিছু দল ও জোট অবস্থান নিয়েছে আইনি ভিত্তি দেয়ার বিরুদ্ধে।
এই প্রেক্ষাপটে ঐকমত্য কমিশন জানায়, তারা ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে। কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১০ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ‘আইন ও সংবিধানবিশেষজ্ঞদের’ সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। ওই বৈঠকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক।
বিচারপতি এম এ মতিন
মো. আবদুল মতিন (এম এ মতিন) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তার জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৬ ডিসেম্বরে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানার সুলতানপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে আইনে স্নাতক ডিগ্রি নেন এবং ১৯৬৬ সালে সিলেট বারে যোগদানের পর ১৯৭৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে তালিকাভুক্ত হন। এম এ মতিন ১৯৯৬ সালের জুনে হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে শপথ নেন।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের মিছিল-সমাবেশ না করার নির্দেশ এসেছিল বিচারপতি এম এ মতিন ও বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে, ২০০৫ সালে।
২০০৭ সালে এম এ মতিন আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে উন্নীত হন।
২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এ বি এম খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলে ওই সময় বয়োজ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতি এম এ মতিন ও শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান নিজ নিজ মেয়াদ থাকাবস্থায় আর বিচার কাজে অংশ নেননি। বিচারপতি এম এ মতিন ২৫ ডিসেম্বর ২০১০ অবসরে যান। এরপর ২০১১ থেকে ২০১৩ প্রশাসনিক আপিল আদালতের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী
মইনুল ইসলাম চৌধুরী বাংলাদেশ হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তিনি ১৯৫৩ সালের ৯ জানুয়ারি সিলেটের কোতোয়ালি থানার বিলপার লামাবাজার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী আপিল বিভাগের বিচারপতির পদমর্যাদায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ‘গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের’ সভাপতি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের চুক্তি পর্যালোচনায় গঠিত জাতীয় রিভিউ কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থা পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশনের (পিসিএ) সদস্য হিসেবে ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল নিয়োগ পান।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৬৮ সালে এসএসসি এবং ১৯৭০ এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স) ও এমএ (ইংরেজি) এবং এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮২ সালের ১৭ মার্চ সহকারী জজ হিসেবে যোগদান করেন তিনি।
এরপর আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (প্রশাসন-১) হিসেবে ১৯৮৪-১৯৮৮ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালের ১ মার্চ জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
এরপর মইনুল ইসলাম চৌধুরী ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০০৬ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি অবসরে যান।
বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে নিতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধানে যে ষোড়শ সংশোধনী আনা হয় তা অবৈধ ঘোষণার আলোচিত রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক
মুহাম্মদ একরামুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাংবিধানিক আইনের অধ্যাপক এবং আইন বিভাগের ডিন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত সাংবিধানিক সংস্কার কমিশনের সদস্য। তিনি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন অনুষদ সদস্য এবং উপদেষ্টা।
একরামুল হক ১৯৯৬ এবং ১৯৯৭ সালে যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০১২ সালে মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
একরামুল হক ২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মহিলা ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি ছিলেন এবং পরে বিভাগের খ-কালীন প্রভাষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে, তিনি ২০১২ সালে সহকারী অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান।
একরামুল হক ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের উপদেষ্টা হন। তিনি অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন স্কুলের সাংবিধানিক অধ্যয়ন প্রোগ্রামে একজন সিনিয়র গবেষণা ফেলো হন।
তিনি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডিন নিযুক্ত হন। ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংসতার তদন্তের জন্য তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তদন্ত সংস্থার প্রধান নিযুক্ত করা হয়। গত বছর অক্টোবরে তাকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সাংবিধানিক সংস্কার কমিশনের সদস্য করা হয়।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ ইকরামুল হককে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবে ৫ বছরের জন্য মনোনীত করা হয়।
ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক
ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন সাবেক প্রতিরক্ষা আইনজীবী ছিলেন। এ ট্রাইব্যুনালে তিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিবিদ গোলাম আযম ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেন। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
ইমরান সিদ্দিক জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের ছোট ছেলে।
তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে আরেকটি স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর, তিনি নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি ২০০৪ সালে ‘দ্য ল কাউন্সিল’ নামক আইন ফার্মে যোগ দেন এবং বর্তমানে সেখানকার একজন অংশীদার। তিনি ‘সেন্টার ফর ল, গভর্নেন্স অ্যান্ড পলিসি’-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য।
২০০৪ সালে, ইমরান সিদ্দিককে গ্রে’স ইন বার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে ডাকা হয়। তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল-এ যোগ দেন। ২০১২ ও ২০১৩ সালে, তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গোলাম আযমের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। সিদ্দিকের সহকারী আইনজীবী ছিলেন এহসান সিদ্দিক ও শিশির মুনির। ২০১৪ সালে তিনি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন।
২০১৫ সালে, সিদ্দিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৭ ধারা চ্যালেঞ্জ করে আইনি আবেদন দাখিল করেন। সিদ্দিক মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য একটি আইনি লড়াইয়ে অংশ নেন।
তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের পক্ষে আইনি পরামর্শ প্রদান করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।
অ্যাডভোকেট শরিফ ভূইয়া
ড. শরীফ ভূঁইয়া সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের একজন অংশীদার এবং চেম্বারের উপ-প্রধান। তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন
২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ড. ভূঁইয়া আন্তর্জাতিক আইন সমিতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন কমিটির সহ-প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও গণভোট পদ্ধতি বাতিল করে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৮ আগস্ট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করেন বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন। রিট আবেদনকারী বদিউল আলম মজুমদারের আইনজীবী ছিলেন ড. শরীফ ভূঁইয়া।
পরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দল ও ব্যক্তি এ মামলায় পক্ষভুক্ত হয়।
ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন
তানিম হোসেন শাওন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের সদস্য। তিনি ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের একজন অংশীদার।
তানিম হোসেন শাওন ২০০২ এবং ২০০৩ সালে যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় আইন ডিগ্রি অর্জন করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার আগে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে মামলা চলমান ছিল। মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে আইনজীবী দলের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন তানিম।
অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ২০১২ সালে যখন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের আদালতে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন তখন আদালতে আসিফ নজরুলের পক্ষে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন তানিম হোসেন শাওন।
গত ১১ আগস্ট ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওনকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল কনসালটেন্ট (অবৈতনিক) হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তিনি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম, বিশেষ করে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন।
সনদের ওপর মতামত
গত ১৬ আগস্ট ‘জুলাই সনদের’ চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়ার কপি ৩০টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ২৪টি দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে। ৬টি দলের মতামত পায়নি কমিশন।
বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলেও ‘জুলাই জাতীয় সনদের’ বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশ প্রাধান্য পাবে- এমন প্রস্তাবও রেখেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, দেরি না করে সেগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলা হয়েছে সনদের খসড়ায়।
এ সনদ নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না, এই অঙ্গীকারসহ মোট আটটি অঙ্গীকারনামা রাখা হয়েছে সনদের চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়ায়।
‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দলিল’ হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা সমাপ্ত করে চলিত মাসের শেষ দিকে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হয়নি সেগুলো সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত)’ হিসেবে উল্লেখ থাকবে।
সবশেষে সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশন সংশ্লিষ্টরা এ সনদে সই করবেন, বলে কথা রয়েছে।
বিচারপতি এম এ মতিন - বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী - অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক- অ্যাডভোকেট শরিফ- ভূইয়া ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন
শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দলিল’ হিসেবে প্রণয়ন করা শুরু করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় সংলাপের ভিত্তিতে কমিশন যে সনদ (খসড়া) চূড়ান্ত করে তাতে রাষ্ট্রের মৌলিক কয়েকটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতের মীমাংসা হয়নি। বিশেষ করে সনদের বাস্তবায়ন প্রশ্নে বিএনপি ও তার মিত্রদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, বৈষম্যবিরোধীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ তাদের সমমনা দলগুলো।
এই সনদ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে কার্যকর করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। খসড়ায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেয়া না দেয়ার প্রশ্নেই বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ও এনসিপির মূল বিরোধ। বিএনপি এবং এর মিত্র কিছু দল ও জোট অবস্থান নিয়েছে আইনি ভিত্তি দেয়ার বিরুদ্ধে।
এই প্রেক্ষাপটে ঐকমত্য কমিশন জানায়, তারা ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে। কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১০ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ‘আইন ও সংবিধানবিশেষজ্ঞদের’ সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। ওই বৈঠকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক।
বিচারপতি এম এ মতিন
মো. আবদুল মতিন (এম এ মতিন) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তার জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৬ ডিসেম্বরে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানার সুলতানপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে আইনে স্নাতক ডিগ্রি নেন এবং ১৯৬৬ সালে সিলেট বারে যোগদানের পর ১৯৭৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে তালিকাভুক্ত হন। এম এ মতিন ১৯৯৬ সালের জুনে হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে শপথ নেন।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের মিছিল-সমাবেশ না করার নির্দেশ এসেছিল বিচারপতি এম এ মতিন ও বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে, ২০০৫ সালে।
২০০৭ সালে এম এ মতিন আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে উন্নীত হন।
২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এ বি এম খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলে ওই সময় বয়োজ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতি এম এ মতিন ও শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান নিজ নিজ মেয়াদ থাকাবস্থায় আর বিচার কাজে অংশ নেননি। বিচারপতি এম এ মতিন ২৫ ডিসেম্বর ২০১০ অবসরে যান। এরপর ২০১১ থেকে ২০১৩ প্রশাসনিক আপিল আদালতের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী
মইনুল ইসলাম চৌধুরী বাংলাদেশ হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তিনি ১৯৫৩ সালের ৯ জানুয়ারি সিলেটের কোতোয়ালি থানার বিলপার লামাবাজার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী আপিল বিভাগের বিচারপতির পদমর্যাদায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ‘গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের’ সভাপতি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের চুক্তি পর্যালোচনায় গঠিত জাতীয় রিভিউ কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থা পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশনের (পিসিএ) সদস্য হিসেবে ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল নিয়োগ পান।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৬৮ সালে এসএসসি এবং ১৯৭০ এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স) ও এমএ (ইংরেজি) এবং এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮২ সালের ১৭ মার্চ সহকারী জজ হিসেবে যোগদান করেন তিনি।
এরপর আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (প্রশাসন-১) হিসেবে ১৯৮৪-১৯৮৮ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালের ১ মার্চ জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
এরপর মইনুল ইসলাম চৌধুরী ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০০৬ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি অবসরে যান।
বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে নিতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধানে যে ষোড়শ সংশোধনী আনা হয় তা অবৈধ ঘোষণার আলোচিত রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক
মুহাম্মদ একরামুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাংবিধানিক আইনের অধ্যাপক এবং আইন বিভাগের ডিন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত সাংবিধানিক সংস্কার কমিশনের সদস্য। তিনি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন অনুষদ সদস্য এবং উপদেষ্টা।
একরামুল হক ১৯৯৬ এবং ১৯৯৭ সালে যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০১২ সালে মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
একরামুল হক ২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মহিলা ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি ছিলেন এবং পরে বিভাগের খ-কালীন প্রভাষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে, তিনি ২০১২ সালে সহকারী অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান।
একরামুল হক ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের উপদেষ্টা হন। তিনি অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন স্কুলের সাংবিধানিক অধ্যয়ন প্রোগ্রামে একজন সিনিয়র গবেষণা ফেলো হন।
তিনি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডিন নিযুক্ত হন। ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংসতার তদন্তের জন্য তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তদন্ত সংস্থার প্রধান নিযুক্ত করা হয়। গত বছর অক্টোবরে তাকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সাংবিধানিক সংস্কার কমিশনের সদস্য করা হয়।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ ইকরামুল হককে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবে ৫ বছরের জন্য মনোনীত করা হয়।
ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক
ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন সাবেক প্রতিরক্ষা আইনজীবী ছিলেন। এ ট্রাইব্যুনালে তিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিবিদ গোলাম আযম ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেন। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
ইমরান সিদ্দিক জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের ছোট ছেলে।
তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে আরেকটি স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর, তিনি নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি ২০০৪ সালে ‘দ্য ল কাউন্সিল’ নামক আইন ফার্মে যোগ দেন এবং বর্তমানে সেখানকার একজন অংশীদার। তিনি ‘সেন্টার ফর ল, গভর্নেন্স অ্যান্ড পলিসি’-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য।
২০০৪ সালে, ইমরান সিদ্দিককে গ্রে’স ইন বার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে ডাকা হয়। তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল-এ যোগ দেন। ২০১২ ও ২০১৩ সালে, তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গোলাম আযমের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। সিদ্দিকের সহকারী আইনজীবী ছিলেন এহসান সিদ্দিক ও শিশির মুনির। ২০১৪ সালে তিনি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন।
২০১৫ সালে, সিদ্দিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৭ ধারা চ্যালেঞ্জ করে আইনি আবেদন দাখিল করেন। সিদ্দিক মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য একটি আইনি লড়াইয়ে অংশ নেন।
তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের পক্ষে আইনি পরামর্শ প্রদান করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।
অ্যাডভোকেট শরিফ ভূইয়া
ড. শরীফ ভূঁইয়া সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের একজন অংশীদার এবং চেম্বারের উপ-প্রধান। তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন
২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ড. ভূঁইয়া আন্তর্জাতিক আইন সমিতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন কমিটির সহ-প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও গণভোট পদ্ধতি বাতিল করে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৮ আগস্ট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করেন বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন। রিট আবেদনকারী বদিউল আলম মজুমদারের আইনজীবী ছিলেন ড. শরীফ ভূঁইয়া।
পরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দল ও ব্যক্তি এ মামলায় পক্ষভুক্ত হয়।
ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন
তানিম হোসেন শাওন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের সদস্য। তিনি ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের একজন অংশীদার।
তানিম হোসেন শাওন ২০০২ এবং ২০০৩ সালে যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় আইন ডিগ্রি অর্জন করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার আগে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে মামলা চলমান ছিল। মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে আইনজীবী দলের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন তানিম।
অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ২০১২ সালে যখন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের আদালতে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন তখন আদালতে আসিফ নজরুলের পক্ষে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন তানিম হোসেন শাওন।
গত ১১ আগস্ট ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওনকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল কনসালটেন্ট (অবৈতনিক) হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তিনি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম, বিশেষ করে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন।
সনদের ওপর মতামত
গত ১৬ আগস্ট ‘জুলাই সনদের’ চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়ার কপি ৩০টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ২৪টি দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে। ৬টি দলের মতামত পায়নি কমিশন।
বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলেও ‘জুলাই জাতীয় সনদের’ বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশ প্রাধান্য পাবে- এমন প্রস্তাবও রেখেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, দেরি না করে সেগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলা হয়েছে সনদের খসড়ায়।
এ সনদ নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না, এই অঙ্গীকারসহ মোট আটটি অঙ্গীকারনামা রাখা হয়েছে সনদের চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়ায়।
‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দলিল’ হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা সমাপ্ত করে চলিত মাসের শেষ দিকে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হয়নি সেগুলো সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত)’ হিসেবে উল্লেখ থাকবে।
সবশেষে সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশন সংশ্লিষ্টরা এ সনদে সই করবেন, বলে কথা রয়েছে।