ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
দুই দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এক যুগেরও বেশি সময় পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এলেন। ঢাকায় এসেই তিনি বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রোববার সকালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে এবং বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
রোববার সকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক
বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ
দেখা করবেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে
শনিবার,(২৩ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে ঢাকায় পৌঁছালে বিমানবন্দরে ইসহাক দারকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার উপস্থিত ছিলেন। এ বছরের ২৭ এপ্রিল ইসহাক দারের ঢাকায় আসার কথা ছিল। তবে ভারতের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে পাক-ভারত উত্তেজনা দেখা দিলে দারের সফর স্থগিত করে ইসলামাবাদ।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ইসহাক দারের এই দ্বিপক্ষীয় সফরে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্তরে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে গুরুত্ব দেবে ইসলামাবাদ। অন্যদিকে, ঢাকার চাওয়া সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের কথা রয়েছে। রোববার সকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর এসব চুক্তি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মূল বৈঠকটি হবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। ওইদিন দুই মন্ত্রী শুরুতে একান্তে এবং পরে প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে জানা গেছে, তৌহিদ-দার বৈঠকে ব্যবসা, বিনিয়োগ, সংযুক্তি, কৃষিসহ নানা পর্যায়ে দুই দেশের লোকজনের চলাচল সুগম করাসহ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় আলোচনায় থাকবে।
পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বোঝাপড়া ও অভিন্ন স্বার্থে জোর দেবে বাংলাদেশ। সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের সম্পর্ক যেখানে এসেছে, তা এগিয়ে নিতে হলে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সুরাহা জরুরি।
দুই দেশের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে এই সম্পর্ক অমীমাংসিত তিন ঐতিহাসিক ইস্যুকে বাদ দিয়ে হবে না। অমীমাংসিত বিষয়গুলো হলো- একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন ও অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা দেয়া।
বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপ চুক্তি হতে পারে। তাছাড়া দুই দেশের বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, সংস্কৃতি বিনিময়, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মধ্যে সহযোগিতা, দুই রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইপিআরআই) মধ্যে সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা ও চুক্তি সইয়ের কথা রয়েছে।
রোববার বিকেলে ইসহাক দার বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের বাসায় দেখা করতে যাবেন।
জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক
পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে অমীমাংসিত ইস্যুগুলো রয়েছে, তা দুই দেশের সরকারের বিষয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গও এসেছে।
শনিবার বিকেলে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনে ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। বৈঠকে জামায়াতের নেতৃত্ব দেন দলের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
বৈঠক শেষে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং কীভাবে সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করা যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী দিনে ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় এবং আঞ্চলিক জোট সার্ককে কীভাবে আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী করা যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রায় ১৫ বছরের বৈরী সম্পর্ক কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে জামায়াতের এই নেতা বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কিছুটা একপেশে ছিল। তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ সরকার বা আমরা সবাই মনে করি যে, এই অঞ্চলে সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেই আমাদের সুসম্পর্ক থাকা দরকার। সেটার ব্যাপারে দুইপক্ষই জোর দিয়েছি।’
’৭১-এর অমীমাংসিত ইস্যুগুলো বৈঠকে আপনারা তুলেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘এসব বিষয় হচ্ছে দুই দেশের সরকারের আলোচনার বিষয়। আমরা আশা করি, সরকার সেগুলো আলোচনা করবে।’ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন কখন, কীভাবে হবে সেটা প্রাসঙ্গিকভাবে আসছে। এটা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি।
এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অতীতের বৈরী সম্পর্ক থেকে বের হয়ে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একাত্তরের ইস্যু পাকিস্তানের ‘ডিল’ করা উচিত বলে বলেছে দলটি।
শনিবার বিকেলে পাকিস্তান হাইকমিশনে ঢাকা সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে এনসিপির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। সেখানেই এসব কথা বলা হয় বলে জানান এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
বৈঠক শেষে এনসিপি সদস্যসচিব আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তান নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের যে ধারণা, সেটা তাদের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এনসিপি মনে করে বিগত সময়ে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যকার যে শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক ছিল, সেখান থেকে উন্নতির সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জনগণের যে পারসেপশন, সেটাকে আমাদের সবচেয়ে সেনসিটিভ আকারে বিবেচনায় রাখতে হবে। আমরা মনে করি বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, যে কোনো ধরনের সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ’৭১ ইস্যুকে অবশ্যই ডিল করা উচিত। আমরা সে প্রসঙ্গ তাদের কাছে উত্থাপন করেছি।
’৭১-এর অমীমাংসিত তিন ইস্যু সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়। এ নিয়ে ইসহাক দার কিছু বলেছেন কিনা, জানতে চাইলে আখতার হোসেন বলেন, বিষয়টি পাকিস্তান জানাবে। একই বিষয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, ’৭১ বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা উচিত। তারা বলেছে, তারা এটাতে প্রস্তুত।’
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫
দুই দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এক যুগেরও বেশি সময় পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এলেন। ঢাকায় এসেই তিনি বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রোববার সকালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে এবং বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
রোববার সকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক
বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ
দেখা করবেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে
শনিবার,(২৩ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে ঢাকায় পৌঁছালে বিমানবন্দরে ইসহাক দারকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার উপস্থিত ছিলেন। এ বছরের ২৭ এপ্রিল ইসহাক দারের ঢাকায় আসার কথা ছিল। তবে ভারতের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে পাক-ভারত উত্তেজনা দেখা দিলে দারের সফর স্থগিত করে ইসলামাবাদ।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ইসহাক দারের এই দ্বিপক্ষীয় সফরে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্তরে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে গুরুত্ব দেবে ইসলামাবাদ। অন্যদিকে, ঢাকার চাওয়া সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের কথা রয়েছে। রোববার সকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর এসব চুক্তি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মূল বৈঠকটি হবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। ওইদিন দুই মন্ত্রী শুরুতে একান্তে এবং পরে প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে জানা গেছে, তৌহিদ-দার বৈঠকে ব্যবসা, বিনিয়োগ, সংযুক্তি, কৃষিসহ নানা পর্যায়ে দুই দেশের লোকজনের চলাচল সুগম করাসহ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় আলোচনায় থাকবে।
পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বোঝাপড়া ও অভিন্ন স্বার্থে জোর দেবে বাংলাদেশ। সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের সম্পর্ক যেখানে এসেছে, তা এগিয়ে নিতে হলে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সুরাহা জরুরি।
দুই দেশের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে এই সম্পর্ক অমীমাংসিত তিন ঐতিহাসিক ইস্যুকে বাদ দিয়ে হবে না। অমীমাংসিত বিষয়গুলো হলো- একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন ও অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা দেয়া।
বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপ চুক্তি হতে পারে। তাছাড়া দুই দেশের বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, সংস্কৃতি বিনিময়, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মধ্যে সহযোগিতা, দুই রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইপিআরআই) মধ্যে সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা ও চুক্তি সইয়ের কথা রয়েছে।
রোববার বিকেলে ইসহাক দার বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের বাসায় দেখা করতে যাবেন।
জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক
পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে অমীমাংসিত ইস্যুগুলো রয়েছে, তা দুই দেশের সরকারের বিষয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গও এসেছে।
শনিবার বিকেলে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনে ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। বৈঠকে জামায়াতের নেতৃত্ব দেন দলের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
বৈঠক শেষে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং কীভাবে সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করা যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী দিনে ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় এবং আঞ্চলিক জোট সার্ককে কীভাবে আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী করা যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রায় ১৫ বছরের বৈরী সম্পর্ক কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে জামায়াতের এই নেতা বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কিছুটা একপেশে ছিল। তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ সরকার বা আমরা সবাই মনে করি যে, এই অঞ্চলে সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেই আমাদের সুসম্পর্ক থাকা দরকার। সেটার ব্যাপারে দুইপক্ষই জোর দিয়েছি।’
’৭১-এর অমীমাংসিত ইস্যুগুলো বৈঠকে আপনারা তুলেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘এসব বিষয় হচ্ছে দুই দেশের সরকারের আলোচনার বিষয়। আমরা আশা করি, সরকার সেগুলো আলোচনা করবে।’ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন কখন, কীভাবে হবে সেটা প্রাসঙ্গিকভাবে আসছে। এটা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি।
এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অতীতের বৈরী সম্পর্ক থেকে বের হয়ে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একাত্তরের ইস্যু পাকিস্তানের ‘ডিল’ করা উচিত বলে বলেছে দলটি।
শনিবার বিকেলে পাকিস্তান হাইকমিশনে ঢাকা সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে এনসিপির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। সেখানেই এসব কথা বলা হয় বলে জানান এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
বৈঠক শেষে এনসিপি সদস্যসচিব আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তান নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের যে ধারণা, সেটা তাদের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এনসিপি মনে করে বিগত সময়ে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যকার যে শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক ছিল, সেখান থেকে উন্নতির সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জনগণের যে পারসেপশন, সেটাকে আমাদের সবচেয়ে সেনসিটিভ আকারে বিবেচনায় রাখতে হবে। আমরা মনে করি বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, যে কোনো ধরনের সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ’৭১ ইস্যুকে অবশ্যই ডিল করা উচিত। আমরা সে প্রসঙ্গ তাদের কাছে উত্থাপন করেছি।
’৭১-এর অমীমাংসিত তিন ইস্যু সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়। এ নিয়ে ইসহাক দার কিছু বলেছেন কিনা, জানতে চাইলে আখতার হোসেন বলেন, বিষয়টি পাকিস্তান জানাবে। একই বিষয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, ’৭১ বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা উচিত। তারা বলেছে, তারা এটাতে প্রস্তুত।’