ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসিতে সীমানা পুনঃনির্ধারণের শুনানির প্রথম দিনে হাতাহাতিতে জড়িয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুইপক্ষ। রোববার,(২৪ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে ঢাকার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ ও ৩ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ-সংক্রান্ত শুনানির মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
ইসির খসড়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে ৩ ইউনিয়ন বাদ
পক্ষে রুমিন ফারহানা; বিপক্ষে এনসিপি ও জেলা বিএনপির সভাপতি
১৫ বছরে যেটা হয়নি, আজ সেটাই হলো: বিএনপির রুমিন
বিএনপি ‘ভোটকেন্দ্র দখলের মহড়া’ দিয়েছে আজ: এনসিপির হাসনাত
এনসিপি নেতা মোহাম্মদ আতাউল্লাহর অভিযোগ তাকে ধাক্কা দিয়ে মঞ্চ থেকে ফেলে মারধর করা হয়েছে। পাল্টা অভিযোগে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা দাবি করেছেন, তাকে প্রথমে ধাক্কা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি কীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করবে, সেই মহড়া রোববার দলটি ইসিতে দিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ ও ৩ সংসদীয় আসনের খসড়া প্রকাশের পর পক্ষে-বিপক্ষে আবেদন জমা পড়েছিল। ইসির শুনানিতে অংশ নিয়ে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক রুমিন ফারহানা ইসির প্রকাশিত খসড়ার পক্ষে তার যুক্তি তুলে ধরেন।
এরপর খসড়ার বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ। তিনি বলেন, বিজয়নগর উপজেলা থেকে তিনটি ইউনিয়ন (বুধস্তি, চান্দুয়া ও হরষপুর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে। তারা উপজেলাকে অখ- দেখতে চায়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, একপর্যায়ে দুইপক্ষ উত্তেজিত হয়ে পড়েন, জড়িয়ে পড়েন হাতাহাতিতে। আতাউল্লাহর সঙ্গে স্থানীয় বিএনপিরও কয়েকজন ছিলেন। হট্টগোলের একপর্যায়ে ইসি কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে ইসি সচিব আখতার আহমেদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের শুনানি শেষ করেন এবং তাদের শুনানি কক্ষ ত্যাগ করার অনুরোধ জানান।
সীমানা পুনঃনির্ধারণ-সংক্রান্ত শুনানি আরও তিন দিন চলবে। রোববার, ইসিতে শুনানিকালে সাংবাদিকদের থাকতে বলা হলেও ক্যামেরা রাখার অনুমতি দেয়া হয়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২
২০২৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ছিল সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা। এবার ইসির প্রস্তাবিত সীমানায় এ দুই উপজেলার সঙ্গে বিজয়নগর উপজেলার বুধস্তি, চান্দুয়া ও হরষপুর ইউনিয়নকে যুক্ত করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩
২০২৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলা। এবার ইসির প্রস্তাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর এবং বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুর, চম্পানগর, পত্তন, দক্ষিণ সিংগারবিল, বিষ্ণপুর, চর ইসলামপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন রাখা হয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে বুধস্তি, চান্দুয়া ও হরষপুর ইউনিয়ন।
ইসির প্রস্তাবের পক্ষে বিএনপির রুমিন ফারহানার অবস্থান। তবে এনসিপি এবং জেলা বিএনপির সভাপতি এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
রুমিনের বক্তব্য
শুনানি থেকে বেরিয়ে বেলা ২টার দিকে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এখানে একটি মারামারি হয়েছে। আমি যেহেতু একজন আইনজীবী, আমি মনে করেছি- আমার কেইস আমি নিজেই প্রেজেন্ট করব। সো আমার কেইস আমি প্রেজেন্ট করেছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী (জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল) গুণ্ডাপাণ্ডা নিয়ে ইসি ভবনে প্রবেশ করেছেন অভিযোগ করে রুমিন ফারহানা বলেন, যখন তিনি কথা বলার জন্য দাঁড়িয়েছেন, তখন তার গায়ে ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে।’
বিএনপির এই নেত্রী বলেন, ‘১৫ বছরে যেটা হয়নি, আজ সেটাই হলো- অলমোস্ট আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যে বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য ১৫ বছর লড়াই করেছি, তারাই আমার গায়ে হাত তুলল। নির্বাচনের আগে সীমানা নিয়ে নিজের দলে এমন পরিস্থিতি হলে নিবার্চনে কী হবে, অনুমেয়। আমাকে মারা হয়েছে, জবাবে আমার লোক তো বসে থাকবে না।’
সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেত্রী বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সব সময় বলেছেন, ২০০৮ সালের আগের সীমানায় বিএনপি নির্বাচন করতে চায়। বর্তমান সীমানা ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের সুবিধায় নির্ধারণ করেছে। আমরা চাই, ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়া হোক।’
এদিকে শুনানিস্থল থেকে বেরিয়ে এনসিপির আতাউল্লাহ দাবি করেন, ‘হামলা’য় তিনিসহ তিনজন আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘মুশকিল হচ্ছে উনি (আতাউল্লাহ) যেহেতু খুব পরিচিত কোনো মুখ নন; উনি এনসিপি থেকে এসেছেন, না জামায়াত থেকে গেছেন আমি জানি না। তবে উনি প্রথম- একজন আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন, পাঞ্জাবি পরা একজন ধাক্কা দিয়েছে। তারপরে আমার লোক তো বসে থাকবে না। আমি তো একজন মহিলা এবং পরে যখন আমার লোকজনকে মারধর করেছে, আমার লোকজন জবাব দিয়েছে, সিম্পল।’
* জেলা বিএনপির বক্তব্য*
মারামারির বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে আসলে এনসিপির সঙ্গে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার একটা তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। এটা আসলে দুঃখজনক ও অনাকাক্সিক্ষত। এই লেভেলে এসে এই ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক।...কমিশন শুনানি নিয়েছে। কিছু হট্টগোল হয়েছে, যেখানে আমাদের প্রতিপক্ষ অনেক ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে, যেগুলো কোনো যৌক্তিক নয়। আমরা মনে করি, এই তিনটি ইউনিয়ন সদর বিজয়নগরের সঙ্গেই থাকা উচিত।’
খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন, বিজয়নগরের ১০টি ইউনিয়ন থেকে ৩টি ইউনিয়ন আশুগঞ্জ ও সরাইলের সঙ্গে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের খসড়া করা হয়েছে। কিন্তু বিজয়নগরের এই তিন এলাকার লোকজন সরাইল ও আশুগঞ্জের সঙ্গে যেতে চাচ্ছেন না। তারা এই তিনটি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সঙ্গে রাখার আবেদন জানিয়েছেন।
দুপুরে শুনানি কক্ষে হাতাহাতির সময় নির্বাচন ভবনের বাইরেও হট্টগোল হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারী একটি দলকে গেইটের সামনে থেকে সরিয়ে দেন। সেখানে জলকামানও প্রস্তুত রাখা হয়।
*ভোটকেন্দ্র দখলের মহড়া*
দুপুরে শুনানিতে হাতাহাতির ঘটনায় বিকেলে ইসিতে সংবাদ সম্মেলন করেন এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। সেখানে তিনি বলেন, ‘অতীত কাঠামোতে বর্তমান ইসিতে যারা যারা রয়েছেন, তারা ‘পিক অ্যান্ড চুজের’ ভিত্তিতে নিয়োজিত হয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে। আমরা তাদের ভূমিকাকে সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ বলেছি। আজকে ঘটনায় পুরো বাংলাদেশ যেটি সাক্ষী হয়েছে। এটি মূলত আগামী নির্বাচন কেমন হতে পারে এবং সেখানে এই কমিশনের ভূমিকা কী হবে; বিএনপি কী ভূমিকা রাখবে; পুলিশ কী করবে, সেটি আজ প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন অফিসে যদি এ অবস্থা হয়, সারাদেশে এই বিএনপির যারা রয়েছে, যারা এসব গুণ্ডাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, তারা কীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করবে, আজ সেটির টেস্ট ম্যাচ হয়ে গেছে।’
*আতাউল্লাহর অভিযোগ*
সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনায় এনসিপি নেতা আতাউল্লাহ বলেন, ‘শুনানিস্থলে এসে দেখি, বিএনপির রুমিন ফারহানাসহ লোকজন তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছে। একটা পর্যায়ে আমি যখন শুনানিতে দাঁড়াই, রুমিন ফারহানা তেড়ে গিয়ে আমাকে প্রথমে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। আমাকে কথা বলতে দেননি। রুমিনের যেসব গুণ্ডা-পাণ্ডা ছিল, তারা আমাকে পায়ের নিচে ফেলে পিষ্ট করে এবং নির্মমভাবে মারধর করে।’
এনসিপির এ নেতা বলেন, ‘আমার সঙ্গে উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম এবং যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক সুমন মোস্তফাও মারধরের শিকার হয়েছেন। আমি এ হামলার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বিচার চাই। যদি বিচার করতে ব্যর্থ হয়, আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ দাবি করছি।’
*রুমিন ‘সুবিধাভোগী’ *
বিএনপির রুমিন ফারহানকে বিগত সরকারের ‘সুবিধাভোগী’ অভিহিত করে এনসিপির হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর নাকি উনি অনেক ভালো ছিলেন। উনি অবশ্যই ভালো থাকবেন। কারণ উনি যত ধরনের সুবিধা রয়েছে, সব ধরনের সুবিধা উনি নিয়েছেন।’ এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা গু-ার রাজনীতি ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছি। রুমিন ফারহানারা যদি সেটি আবার বাংলাদেশে ফেরাতে চায়, তাহলে হাসিনার প্রতি তাদের যে আন্তরিকতা, হাসিনা যেখানে আছে, তাদেরকেও সেখানে চলে যেতে হবে।’
*ইসি ‘দলকানা’*
হাসনাত বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন কতিপয় পার্টির, এটা পার্টি অফিস হয়ে গেছে। আমরা বারবার বলে এসেছি, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে আমরা যেতে চাই। বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আবার গু-াতন্ত্রের দিকে যেতে চায় না। দেশের মানুষ আবার ১/১১ মঞ্চস্থের জন্য অপেক্ষা করছে না।’
তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচন কমিশনকে বস্তুনিষ্ঠ পেশাদারত্বের ভূমিকায় আমরা দেখতে চাই। নির্বাচন কমিশন যেভাবে দলকানা, একটি দলের প্রতি, একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে যেভাবে নির্লজ্জের মতো কাজ করছে, সেটি আমাদের যে নির্বাচনমুখী আমরা হচ্ছি, সেটির অন্তরায় বলে আমরা মনে করছি।’
নির্বাচন কমিশনারদের উদ্দেশ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই কমিশন পরিচালনা করতে পারবেন না আপনারা। অন্যরা কেউ পরিচালিত করে আপনাদের। আপনারা মানুষের সামনে সেটি প্রকাশ করুন। নয়তো নিকট অতীতে আমরা নুরুল হুদা কমিশনকে দেখেছি; তার পরিণতি আমরা দেখেছি। বাংলাদেশের মানুষ আবার কোনো মঞ্চস্থ নির্বাচনের দিকে যেতে চায় না।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়ে যাব এবং কমিশনের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করবো। বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা না পেলে ইসি পুনর্গঠনের দাবি তোলা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি নেতা সাইফুল্লাহ খালেদ, আরিফুর রহমান তুহিন, রফিকুল ইসলাম কনকসহ যুব শক্তির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ২৪ আগস্ট ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসিতে সীমানা পুনঃনির্ধারণের শুনানির প্রথম দিনে হাতাহাতিতে জড়িয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুইপক্ষ। রোববার,(২৪ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে ঢাকার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ ও ৩ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ-সংক্রান্ত শুনানির মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
ইসির খসড়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে ৩ ইউনিয়ন বাদ
পক্ষে রুমিন ফারহানা; বিপক্ষে এনসিপি ও জেলা বিএনপির সভাপতি
১৫ বছরে যেটা হয়নি, আজ সেটাই হলো: বিএনপির রুমিন
বিএনপি ‘ভোটকেন্দ্র দখলের মহড়া’ দিয়েছে আজ: এনসিপির হাসনাত
এনসিপি নেতা মোহাম্মদ আতাউল্লাহর অভিযোগ তাকে ধাক্কা দিয়ে মঞ্চ থেকে ফেলে মারধর করা হয়েছে। পাল্টা অভিযোগে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা দাবি করেছেন, তাকে প্রথমে ধাক্কা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি কীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করবে, সেই মহড়া রোববার দলটি ইসিতে দিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ ও ৩ সংসদীয় আসনের খসড়া প্রকাশের পর পক্ষে-বিপক্ষে আবেদন জমা পড়েছিল। ইসির শুনানিতে অংশ নিয়ে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক রুমিন ফারহানা ইসির প্রকাশিত খসড়ার পক্ষে তার যুক্তি তুলে ধরেন।
এরপর খসড়ার বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ। তিনি বলেন, বিজয়নগর উপজেলা থেকে তিনটি ইউনিয়ন (বুধস্তি, চান্দুয়া ও হরষপুর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে। তারা উপজেলাকে অখ- দেখতে চায়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, একপর্যায়ে দুইপক্ষ উত্তেজিত হয়ে পড়েন, জড়িয়ে পড়েন হাতাহাতিতে। আতাউল্লাহর সঙ্গে স্থানীয় বিএনপিরও কয়েকজন ছিলেন। হট্টগোলের একপর্যায়ে ইসি কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে ইসি সচিব আখতার আহমেদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের শুনানি শেষ করেন এবং তাদের শুনানি কক্ষ ত্যাগ করার অনুরোধ জানান।
সীমানা পুনঃনির্ধারণ-সংক্রান্ত শুনানি আরও তিন দিন চলবে। রোববার, ইসিতে শুনানিকালে সাংবাদিকদের থাকতে বলা হলেও ক্যামেরা রাখার অনুমতি দেয়া হয়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২
২০২৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ছিল সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা। এবার ইসির প্রস্তাবিত সীমানায় এ দুই উপজেলার সঙ্গে বিজয়নগর উপজেলার বুধস্তি, চান্দুয়া ও হরষপুর ইউনিয়নকে যুক্ত করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩
২০২৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলা। এবার ইসির প্রস্তাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর এবং বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুর, চম্পানগর, পত্তন, দক্ষিণ সিংগারবিল, বিষ্ণপুর, চর ইসলামপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন রাখা হয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে বুধস্তি, চান্দুয়া ও হরষপুর ইউনিয়ন।
ইসির প্রস্তাবের পক্ষে বিএনপির রুমিন ফারহানার অবস্থান। তবে এনসিপি এবং জেলা বিএনপির সভাপতি এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
রুমিনের বক্তব্য
শুনানি থেকে বেরিয়ে বেলা ২টার দিকে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এখানে একটি মারামারি হয়েছে। আমি যেহেতু একজন আইনজীবী, আমি মনে করেছি- আমার কেইস আমি নিজেই প্রেজেন্ট করব। সো আমার কেইস আমি প্রেজেন্ট করেছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী (জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল) গুণ্ডাপাণ্ডা নিয়ে ইসি ভবনে প্রবেশ করেছেন অভিযোগ করে রুমিন ফারহানা বলেন, যখন তিনি কথা বলার জন্য দাঁড়িয়েছেন, তখন তার গায়ে ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে।’
বিএনপির এই নেত্রী বলেন, ‘১৫ বছরে যেটা হয়নি, আজ সেটাই হলো- অলমোস্ট আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যে বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য ১৫ বছর লড়াই করেছি, তারাই আমার গায়ে হাত তুলল। নির্বাচনের আগে সীমানা নিয়ে নিজের দলে এমন পরিস্থিতি হলে নিবার্চনে কী হবে, অনুমেয়। আমাকে মারা হয়েছে, জবাবে আমার লোক তো বসে থাকবে না।’
সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেত্রী বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সব সময় বলেছেন, ২০০৮ সালের আগের সীমানায় বিএনপি নির্বাচন করতে চায়। বর্তমান সীমানা ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের সুবিধায় নির্ধারণ করেছে। আমরা চাই, ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়া হোক।’
এদিকে শুনানিস্থল থেকে বেরিয়ে এনসিপির আতাউল্লাহ দাবি করেন, ‘হামলা’য় তিনিসহ তিনজন আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘মুশকিল হচ্ছে উনি (আতাউল্লাহ) যেহেতু খুব পরিচিত কোনো মুখ নন; উনি এনসিপি থেকে এসেছেন, না জামায়াত থেকে গেছেন আমি জানি না। তবে উনি প্রথম- একজন আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন, পাঞ্জাবি পরা একজন ধাক্কা দিয়েছে। তারপরে আমার লোক তো বসে থাকবে না। আমি তো একজন মহিলা এবং পরে যখন আমার লোকজনকে মারধর করেছে, আমার লোকজন জবাব দিয়েছে, সিম্পল।’
* জেলা বিএনপির বক্তব্য*
মারামারির বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে আসলে এনসিপির সঙ্গে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার একটা তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। এটা আসলে দুঃখজনক ও অনাকাক্সিক্ষত। এই লেভেলে এসে এই ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক।...কমিশন শুনানি নিয়েছে। কিছু হট্টগোল হয়েছে, যেখানে আমাদের প্রতিপক্ষ অনেক ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে, যেগুলো কোনো যৌক্তিক নয়। আমরা মনে করি, এই তিনটি ইউনিয়ন সদর বিজয়নগরের সঙ্গেই থাকা উচিত।’
খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন, বিজয়নগরের ১০টি ইউনিয়ন থেকে ৩টি ইউনিয়ন আশুগঞ্জ ও সরাইলের সঙ্গে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের খসড়া করা হয়েছে। কিন্তু বিজয়নগরের এই তিন এলাকার লোকজন সরাইল ও আশুগঞ্জের সঙ্গে যেতে চাচ্ছেন না। তারা এই তিনটি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সঙ্গে রাখার আবেদন জানিয়েছেন।
দুপুরে শুনানি কক্ষে হাতাহাতির সময় নির্বাচন ভবনের বাইরেও হট্টগোল হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারী একটি দলকে গেইটের সামনে থেকে সরিয়ে দেন। সেখানে জলকামানও প্রস্তুত রাখা হয়।
*ভোটকেন্দ্র দখলের মহড়া*
দুপুরে শুনানিতে হাতাহাতির ঘটনায় বিকেলে ইসিতে সংবাদ সম্মেলন করেন এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। সেখানে তিনি বলেন, ‘অতীত কাঠামোতে বর্তমান ইসিতে যারা যারা রয়েছেন, তারা ‘পিক অ্যান্ড চুজের’ ভিত্তিতে নিয়োজিত হয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে। আমরা তাদের ভূমিকাকে সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ বলেছি। আজকে ঘটনায় পুরো বাংলাদেশ যেটি সাক্ষী হয়েছে। এটি মূলত আগামী নির্বাচন কেমন হতে পারে এবং সেখানে এই কমিশনের ভূমিকা কী হবে; বিএনপি কী ভূমিকা রাখবে; পুলিশ কী করবে, সেটি আজ প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন অফিসে যদি এ অবস্থা হয়, সারাদেশে এই বিএনপির যারা রয়েছে, যারা এসব গুণ্ডাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, তারা কীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করবে, আজ সেটির টেস্ট ম্যাচ হয়ে গেছে।’
*আতাউল্লাহর অভিযোগ*
সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনায় এনসিপি নেতা আতাউল্লাহ বলেন, ‘শুনানিস্থলে এসে দেখি, বিএনপির রুমিন ফারহানাসহ লোকজন তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছে। একটা পর্যায়ে আমি যখন শুনানিতে দাঁড়াই, রুমিন ফারহানা তেড়ে গিয়ে আমাকে প্রথমে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। আমাকে কথা বলতে দেননি। রুমিনের যেসব গুণ্ডা-পাণ্ডা ছিল, তারা আমাকে পায়ের নিচে ফেলে পিষ্ট করে এবং নির্মমভাবে মারধর করে।’
এনসিপির এ নেতা বলেন, ‘আমার সঙ্গে উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম এবং যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক সুমন মোস্তফাও মারধরের শিকার হয়েছেন। আমি এ হামলার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বিচার চাই। যদি বিচার করতে ব্যর্থ হয়, আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ দাবি করছি।’
*রুমিন ‘সুবিধাভোগী’ *
বিএনপির রুমিন ফারহানকে বিগত সরকারের ‘সুবিধাভোগী’ অভিহিত করে এনসিপির হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর নাকি উনি অনেক ভালো ছিলেন। উনি অবশ্যই ভালো থাকবেন। কারণ উনি যত ধরনের সুবিধা রয়েছে, সব ধরনের সুবিধা উনি নিয়েছেন।’ এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা গু-ার রাজনীতি ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছি। রুমিন ফারহানারা যদি সেটি আবার বাংলাদেশে ফেরাতে চায়, তাহলে হাসিনার প্রতি তাদের যে আন্তরিকতা, হাসিনা যেখানে আছে, তাদেরকেও সেখানে চলে যেতে হবে।’
*ইসি ‘দলকানা’*
হাসনাত বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন কতিপয় পার্টির, এটা পার্টি অফিস হয়ে গেছে। আমরা বারবার বলে এসেছি, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে আমরা যেতে চাই। বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আবার গু-াতন্ত্রের দিকে যেতে চায় না। দেশের মানুষ আবার ১/১১ মঞ্চস্থের জন্য অপেক্ষা করছে না।’
তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচন কমিশনকে বস্তুনিষ্ঠ পেশাদারত্বের ভূমিকায় আমরা দেখতে চাই। নির্বাচন কমিশন যেভাবে দলকানা, একটি দলের প্রতি, একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে যেভাবে নির্লজ্জের মতো কাজ করছে, সেটি আমাদের যে নির্বাচনমুখী আমরা হচ্ছি, সেটির অন্তরায় বলে আমরা মনে করছি।’
নির্বাচন কমিশনারদের উদ্দেশ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই কমিশন পরিচালনা করতে পারবেন না আপনারা। অন্যরা কেউ পরিচালিত করে আপনাদের। আপনারা মানুষের সামনে সেটি প্রকাশ করুন। নয়তো নিকট অতীতে আমরা নুরুল হুদা কমিশনকে দেখেছি; তার পরিণতি আমরা দেখেছি। বাংলাদেশের মানুষ আবার কোনো মঞ্চস্থ নির্বাচনের দিকে যেতে চায় না।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়ে যাব এবং কমিশনের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করবো। বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা না পেলে ইসি পুনর্গঠনের দাবি তোলা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি নেতা সাইফুল্লাহ খালেদ, আরিফুর রহমান তুহিন, রফিকুল ইসলাম কনকসহ যুব শক্তির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।