সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সাভার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে হওয়ার ঘটনায় পল্টন থানায় এক মামলায় আসামি হিসেবে নাম রয়েছে হাসান সারওয়ার্দীর। ওই মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার দেখানো হয় বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে বিএনপির অফিসে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলা মিয়া আরেফিকে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা মিয়া আরেফিকে গত শনিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সঙ্গে করে নিয়ে যান হাসান সারওয়ার্দী। পরে মিয়া আরেফিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর বিষয়ে জানতে চান এক সাংবাদিক। তার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে ছাড়া হবে না। ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি, গ্রেপ্তার করা হবে। তাকে খোঁজ করা হচ্ছে। তাকে ঠিকই ধরা হবে এবং জিজ্ঞেস করা সে কেন এ রকম ফ্রড করল।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরপরই সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তারের খবর জানা গেল।
ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সাভারের মডেল টাউন থেকে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় আরেফি নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে হাসান সাহাওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন। পল্টন থানায় গত রোববার মহিউদ্দিন শিকদার নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে আরেফিসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার বাকি দুই আসামি হলেন- অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা মো. ইশরাক হোসেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, অন্যের রূপ ধারণ ও মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রোববার সকালে আরেফিকে আটক করে পুলিশ। এজাহারে বলা হয়েছে, শনিবার পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সারাদেশ থেকে দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। ওইদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা কাকরাইল মোড় থেকে আরামবাগ মোড় পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। তারা প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনসহ সরকারি স্থাপনা এবং সরকারি গাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে। এতে পুলিশের ৪১ সদস্য আহত ও এক সদস্য নিহত হন। একপর্যায়ে বিকেল ৩টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মহাসমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করেন। এজাহারে আরও বলা হয়, বিএনপির ওই কর্মকান্ডের পর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে ২০ জন নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে কিছু সংবাদমাধ্যমের সামনে মিয়ান আরেফি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেন। পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তার সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন বলে বক্তব্য দেন তিনি। সেখানে মিয়ান আরেফি বক্তব্যে দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দিনে ১০ থেকে ১৫ বার যোগাযোগ হয় এবং মার্কিন সরকারের সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। তিনি আরও দাবি করেন, তিনি মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, হাসান সারওয়ার্দী এবং ইশরাক হোসেন তাকে মিথ্যা বক্তব্য দিতে সহযোগিতা করেন এবং তার বক্তব্য সমর্থন করে বিএনপি নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিতে উসকানি দেন। আরেফি তাদের সহায়তায় সরকারের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি করে সারাদেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন। এজাহারে বলা হয়, ওই সংবাদ সম্মেলনে একপর্যায়ে মিয়ান আরেফির বক্তব্য শুনে এবং ভিডিও দেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল বাড়াতে আসামিরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধ করেছেন।
আরেফিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র জানায়, আরেফি ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির বিষয়ে বিশেষভাবে অবগত ছিলেন না। অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী তাকে বিএনপি অফিসে নিয়ে যান। সেখানে ইশরাকও উপস্থিত ছিলেন। পরে আরেফিকে তারা জো বাইডেনের উপদেষ্টা ও ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কথা বলার অনুরোধ জানান। তখন তিনি শিখিয়ে দেয়া কথা বলেন।
কে এই হাসান সারওয়াদী
সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দী ২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সেনাবাহিনীর উদ্ধার কার্যক্রমের নেতৃত্বে ছিলেন। তখন উদ্ধার কার্যক্রমের কারণে তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন। চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানায়। চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বীর বিক্রম, এসবিপি, এনডিসি, পিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজের সাবেক কমান্ড্যান্ট ছিলেন। তিনি পূর্বে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডক্ট্রাইন কমান্ড (এআরটিডিওসি) এর জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একটি পদাতিক ইউনিট, রাইফেলস ব্যাটালিয়ন ও পদাতিক ব্রিগেড কমান্ড করেন। দায়িত্ব পালন করেছেন পদাতিক ডিভিশনসহ সেনাসদরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে। তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, বাংলাদেশ রাইফেলসের পরিচালক অপারেশন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিচালক সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন্স ট্রেনিং এবং ননকমিশন অফিসার্স একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রথম প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি।
কিন্তু বিভিন্ন অভিযোগের কারণে ২০১৯ সালে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে সেনানিবাসে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়। তার বিভিন্ন আচরণ সেনাবাহিনীর জন্য ‘বিব্রতকর’ বলেও পরের বছর এক বিজ্ঞপ্তি দেয় আইএসপিআর। উল্লেখ্য, তিনি লে. জেনারেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর এনডিসির কমান্ড্যান্ট থাকাবস্থায় একাধিক নারীর সঙ্গে ‘অনৈতিক’ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি এনডিসিতে পরিচালিত বিভিন্ন কোর্সের সঙ্গে বিদেশে ভ্রমণকালেও বিভিন্ন অশোভন আচরণ কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত হলে কর্তৃপক্ষ বিব্রত হয় এবং তাকে বিভিন্নভাবে উপদেশ দেয়া হয়। তিনি এলপিআরে থাকাকালীন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ১৬ আগস্ট ২০১৮ তারিখে প্রথম স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেন এবং সেনা আইন বহির্ভূতভাবে মেসকিট (সামরিক পোশাক) পরে ২১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত দ্বিতীয় স্ত্রীকে বিয়ে করেন। কিন্তু তিনি বিয়ের আগে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এক নারীকে নিয়ে ৩ নভেম্বর ২০১৮ থেকে একই বাসায় অনৈতিকভাবে অবস্থান করেন।
মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩
সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সাভার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে হওয়ার ঘটনায় পল্টন থানায় এক মামলায় আসামি হিসেবে নাম রয়েছে হাসান সারওয়ার্দীর। ওই মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার দেখানো হয় বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে বিএনপির অফিসে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলা মিয়া আরেফিকে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা মিয়া আরেফিকে গত শনিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সঙ্গে করে নিয়ে যান হাসান সারওয়ার্দী। পরে মিয়া আরেফিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর বিষয়ে জানতে চান এক সাংবাদিক। তার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে ছাড়া হবে না। ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি, গ্রেপ্তার করা হবে। তাকে খোঁজ করা হচ্ছে। তাকে ঠিকই ধরা হবে এবং জিজ্ঞেস করা সে কেন এ রকম ফ্রড করল।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরপরই সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তারের খবর জানা গেল।
ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সাভারের মডেল টাউন থেকে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় আরেফি নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে হাসান সাহাওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন। পল্টন থানায় গত রোববার মহিউদ্দিন শিকদার নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে আরেফিসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার বাকি দুই আসামি হলেন- অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা মো. ইশরাক হোসেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, অন্যের রূপ ধারণ ও মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রোববার সকালে আরেফিকে আটক করে পুলিশ। এজাহারে বলা হয়েছে, শনিবার পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সারাদেশ থেকে দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। ওইদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা কাকরাইল মোড় থেকে আরামবাগ মোড় পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। তারা প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনসহ সরকারি স্থাপনা এবং সরকারি গাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে। এতে পুলিশের ৪১ সদস্য আহত ও এক সদস্য নিহত হন। একপর্যায়ে বিকেল ৩টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মহাসমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করেন। এজাহারে আরও বলা হয়, বিএনপির ওই কর্মকান্ডের পর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে ২০ জন নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে কিছু সংবাদমাধ্যমের সামনে মিয়ান আরেফি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেন। পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তার সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন বলে বক্তব্য দেন তিনি। সেখানে মিয়ান আরেফি বক্তব্যে দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দিনে ১০ থেকে ১৫ বার যোগাযোগ হয় এবং মার্কিন সরকারের সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। তিনি আরও দাবি করেন, তিনি মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, হাসান সারওয়ার্দী এবং ইশরাক হোসেন তাকে মিথ্যা বক্তব্য দিতে সহযোগিতা করেন এবং তার বক্তব্য সমর্থন করে বিএনপি নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিতে উসকানি দেন। আরেফি তাদের সহায়তায় সরকারের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি করে সারাদেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন। এজাহারে বলা হয়, ওই সংবাদ সম্মেলনে একপর্যায়ে মিয়ান আরেফির বক্তব্য শুনে এবং ভিডিও দেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল বাড়াতে আসামিরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধ করেছেন।
আরেফিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র জানায়, আরেফি ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির বিষয়ে বিশেষভাবে অবগত ছিলেন না। অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী তাকে বিএনপি অফিসে নিয়ে যান। সেখানে ইশরাকও উপস্থিত ছিলেন। পরে আরেফিকে তারা জো বাইডেনের উপদেষ্টা ও ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কথা বলার অনুরোধ জানান। তখন তিনি শিখিয়ে দেয়া কথা বলেন।
কে এই হাসান সারওয়াদী
সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দী ২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সেনাবাহিনীর উদ্ধার কার্যক্রমের নেতৃত্বে ছিলেন। তখন উদ্ধার কার্যক্রমের কারণে তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন। চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানায়। চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বীর বিক্রম, এসবিপি, এনডিসি, পিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজের সাবেক কমান্ড্যান্ট ছিলেন। তিনি পূর্বে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডক্ট্রাইন কমান্ড (এআরটিডিওসি) এর জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একটি পদাতিক ইউনিট, রাইফেলস ব্যাটালিয়ন ও পদাতিক ব্রিগেড কমান্ড করেন। দায়িত্ব পালন করেছেন পদাতিক ডিভিশনসহ সেনাসদরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে। তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, বাংলাদেশ রাইফেলসের পরিচালক অপারেশন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিচালক সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন্স ট্রেনিং এবং ননকমিশন অফিসার্স একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রথম প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি।
কিন্তু বিভিন্ন অভিযোগের কারণে ২০১৯ সালে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে সেনানিবাসে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়। তার বিভিন্ন আচরণ সেনাবাহিনীর জন্য ‘বিব্রতকর’ বলেও পরের বছর এক বিজ্ঞপ্তি দেয় আইএসপিআর। উল্লেখ্য, তিনি লে. জেনারেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর এনডিসির কমান্ড্যান্ট থাকাবস্থায় একাধিক নারীর সঙ্গে ‘অনৈতিক’ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি এনডিসিতে পরিচালিত বিভিন্ন কোর্সের সঙ্গে বিদেশে ভ্রমণকালেও বিভিন্ন অশোভন আচরণ কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত হলে কর্তৃপক্ষ বিব্রত হয় এবং তাকে বিভিন্নভাবে উপদেশ দেয়া হয়। তিনি এলপিআরে থাকাকালীন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ১৬ আগস্ট ২০১৮ তারিখে প্রথম স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেন এবং সেনা আইন বহির্ভূতভাবে মেসকিট (সামরিক পোশাক) পরে ২১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত দ্বিতীয় স্ত্রীকে বিয়ে করেন। কিন্তু তিনি বিয়ের আগে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এক নারীকে নিয়ে ৩ নভেম্বর ২০১৮ থেকে একই বাসায় অনৈতিকভাবে অবস্থান করেন।