alt

রাজনীতি

কৌশল পরিবর্তন করে আবার ঘুরে দাড়াতে চায় বিএনপি

মহসীন ইসলাম টুটুল : শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বয়সের বিচারে বিএনপি যতটা পরিপক্বতা অর্জন করার কথা, ততটা অর্জন করতে পারেনি। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর দলটি ৪৫ বছর পেরিয়ে ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে। চার দশকে বিভিন্ন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও রাজনীতিতে দল হিসেবে শক্ত ভিত গড়তে পারেনি দলটি। এজন্য দলের হাইকমান্ডের সময়পোযোগী, দুরদর্শী ও বিচক্ষন কৌশল গ্রহনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী করামুক্ত হওয়ায় দলের তৃণমূল নেতারা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন।

তবে শীর্ষ নেতারা সবাই কারাগার থেকে বেড়িলে আসলে দলটি কৌশল পরিবর্তন করে আবার ঘুরে দাড়াতে পারবে বলেও আশা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সর্মর্থকরা।

বিএনপির একটি সূত্র জনিয়েছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ যেসব কারণে জনগন ক্ষুব্ধ সেইসব ইস্যুগুলি নিয়ে প্রথমে রাজনৈতীক মাঠ গরম করতে চায় বিএনপি। এরপর পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের সময়পোযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ তরা হবে। এই সময়ের মধ্যে তৃণমূল থেকে হাইকমান্ড পর্যন্ত সকল পর্যায়ের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হবে। বিএনপি নেতাদের দাবি, সরকারের দমন-পীড়নের কারণে তারা আন্দোলন জোরদার করতে পারছেন না। তারা বলছেন, অতীতে কোনো সরকারই বিরোধী দলকে জামাই আদরে রাখেনি। জেলজুলুমের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই বিরোধী দলকে আন্দোলন করতে হয়।

বিএনপি সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের ডাক দিয়ে মাঠের রাজনীতিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় জাতীয় নির্বাচন আটকে রাখতে পারেনি তারা। তারা ‘একতরফা নির্বাচন’ এই ইস্যুটি সামনে রেখে আন্তর্জাতীক হস্তক্ষেপ আশা করেছিল। কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি। বরং ক্ষমতাসীররা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কারাগারে আটক রেখে দলের তৃণমূল নেতাদের মধ্যে হতাশার বীজ রোপন করে দিয়েছে। আর এই ফাকে ক্ষমতাসিন দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেই জাতীয় নির্বাচন করে সরকারও গঠন করেছে।

এমন অবস্থায় দলটির শীর্ষ নেতারা যখন বিভিন্ন নাশকতার মামলায় নাজেহাল, ঠিক তখনই কারামুক্তি পেলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। শীর্ষ দুই নেতার কারামুক্তির পর নতুন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বিএনপি এখন কী পন্থা অবলম্বন করবে। কি কৌশলে দলটি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

বৃহস্পতিবার জামিনে কারামুক্ত হন মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। জেল থেকে বেরিয়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেন এই দুই নেতা।

ফখরুল বলেন, ‘জনগণ সবসময় গণতন্ত্রের জন্য নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন এবং প্রাণ দিয়েছেন। মত ও ভোটের অধিকারের জন্য তারা যে আন্দোলন শুরু করেছে, তাতে জয়ী হবেন।’

আর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভালো আছি, ভালো থাকতে হবে। দেশের মানুষের ক্ষমতা দখল করে বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী সবারই মনোবল অটুট আছে এবং শক্ত আছে।’

এদিকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে ভোট ঠেকাতে লাগাতার হরতাল-অবরোধ-অসহযোগের মতো কর্মসূচি দেয় বিএনপি। কিন্তু এতসব কর্মসূচির মধ্যেই ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন বর্জন করে ভোটগ্রহণ ঠেকানোর ঘোষণা দিলেও কার্যত নির্বাচনের দিন মাঠে ছিলেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এদিন বিএনপির নেতাকর্মীদের তেমন কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ে বিএনপির কার্যক্রম। মূলত নেতৃত্ব সংকট, বিচক্ষণতার অভাব, দোদুল্যমানতা, সিদ্ধান্তহীনতা ও ক্ষেত্রবিশেষে হঠকারিতাই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারের পতনের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হয় বিএনপি তারপর নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে দলটি। রাজধানীসহ সব মহানগরে কালো পতাকা মিছিল করে তারা। আর ডামি সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে দেশের সব মহানগর, থানা, জেলা, সদর, সব উপজেলা ও পৌরসভায় কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করে দলটি। এভাবে একের পর এক আন্দোলনের ডাক দিয়ে রাজপথে সরব হওয়ার চেষ্টা করে সর্বশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে লিফলেট বিতরণ করে বিএনপি।

ওইদিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন করে সরকার মনে করেছে সারা বাংলাদেশের জমিদার হয়ে গেছে। এ জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই থামবে না। কারণ, ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো যে আন্দোলন করছে, তা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই। এ লড়াই অব্যাহত থাকবে।

অন্যদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবদীন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আন্দোলন তো এখনও কিছু দেখেননি। নির্বাচনের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে আন্দোলন হয়েছে, ঠিক সেভাবেই এ দেশেও আন্দোলন হবে। আন্দোলন মাত্র শুরু। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটা ভিন্ন রূপ আছে। সেই রূপটা এখনও শুরু হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘শীর্ষ নেতারা মুক্ত হওয়ায় উজ্জীবিত কর্মীরা। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অনেক হয়েছে, এবার হবে জোরালো কর্মসূচি। মহাসচিবের নেতৃত্বে কঠোর আন্দোলনে যাবে বিএনপি। শিগগিরই ঘোষণা আসবে।’ ফারুক বলেন, বেশকিছু জেলায় সম্মেলন না হওয়ায় দুর্বলতা আছে। দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কারামুক্তির পর বিএনপি কীভাবে ঘুড়ে দাঁড়াতে চায়, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কারামুক্ত হওয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবেন। মির্জা ফখরুল আন্দোলন চলমান রাখার যে কথা বলেছেন তাতে বিএনপির চলমান কর্মসূচি নতুন প্রাণ পেয়েছে। দলীয় মহাসচিবও নতুন করে চাঙা হওয়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পরবর্তী আন্দোলনের ডাক দেবেন। এভাবে চলতে থাকলে সরকার পদত্যাগ এবং পুনরায় নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।

ছবি

গুম-খুনের তালিকা তৈরির তাগিদ, আন্দোলনে নিহতদের পুনর্বাসনের ওপর গুরুত্ব খালেদা জিয়ার

ছবি

নির্বাচনের তারিখ বা সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়নি: সিইসি

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি: বিএনপির আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি থাকবেন খালেদা-তারেক

ছবি

জুলাই সনদ আদায় করেই ছাড়ব: নাহিদ ইসলাম

ছবি

আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা শুরু

ছবি

রংপুরের পথে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরু

আনুপাতিক ভোটের পক্ষে একমত হওয়ার আহ্বান ‘৬০ নাগরিকের

ছবি

‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা ২০২৫’ প্রকাশ, বাদ ডিসি-এসপি, ইভিএম সংশ্লিষ্ট ধারা

ছবি

নির্বাচিত সরকার এলে সম্পর্ক আরও গভীর হবে—চীন সফর শেষে বললেন মির্জা ফখরুল

ছবি

‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রেই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পূরণ সম্ভব’: এনসিপি আহ্বায়ক

ছবি

একজন উপদেষ্টা মুরাদনগরে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন: মির্জা ফখরুল

ছবি

“নারীর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার” — জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রশ্ন

ছবি

মুরাদনগরে হিন্দু নারী নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানাল বিএনপি

ছবি

নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাবে এখনো একমত নয় সব রাজনৈতিক দল

ছবি

নির্বাচনের সময় বিলম্বে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে: মির্জা আব্বাস

ছবি

আনুপাতিক নির্বাচন দেশের উপযোগী নয়: সালাহউদ্দিন

ছবি

‘রাষ্ট্র সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, চিরস্থায়ী নয়’— বললেন বিএনপি নেতা

ছবি

সংসদের পিআর পদ্ধতি ও আল্লাহর ওপর আস্থার দাবি তুলে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

ছবি

আলোচনা, দোয়া, গণমিছিলসহ ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে জামায়াত

ছবি

সংস্কার ও পিআর পদ্ধতির দাবিতে সোহরাওয়ার্দীতে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন উমামা ফাতেমা

ছবি

ছাত্র-জনতার গণপ্রতিরোধকে ‘মব’ বলা ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্র: হেফাজত

ছবি

হাসনাতের ভিডিও পোস্ট ঘিরে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত, দুদকের পাল্টা সতর্কতা

ছবি

বটবাহিনীর সহযোগিতায় মুনাফেকি রাজনীতি করছে জামায়াত-শিবির: ছাত্রদল সভাপতি

ছবি

হাসনাতের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তদন্তে দুদক

ছবি

স্বৈরাচার ঠেকাতে দরকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন: বিএনপি নেতা

ছবি

অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও কর্মী সভায় মারধর: এনসিপির মাদারীপুর জেলা ও সদর কমিটি স্থগিত

ছবি

‘চা-নাস্তার জন্য এক লাখ টাকা’ দাবি: মাহমুদা মিতুর অভিযোগে দুদকের প্রতিবাদ

ছবি

কে এম নূরুল হুদা হেনস্তা মামলায় জামিন পেলেন মোজাম্মেল, হানিফ ও কাইয়ুম

ছবি

“রাষ্ট্রপতি-প্রধান বিচারপতি বাদ, নিয়োগ কমিটিতে থাকছেন স্পিকার ও রাজনৈতিক নেতারা”

ছবি

ইশরাকের সমর্থকদের বিরুদ্ধে মারধর, হুমকি ও সাংবাদিক হয়রানির অভিযোগ

ছবি

দুদকের আবেদনে আদালতের আদেশ, হাছান মাহমুদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

দলের নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদনের ‘হিড়িক’

১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়: একমত জামায়াত-এনসিপি, বিএনপিসহ ৩ দলের ভিন্নমত

নিবন্ধন ও প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশনে এনসিপির আবেদন

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ: ঐকমত্যে অধিকাংশ দল, ভিন্নমত বিএনপি-এনডিএম-বিএলডিপির

tab

রাজনীতি

কৌশল পরিবর্তন করে আবার ঘুরে দাড়াতে চায় বিএনপি

মহসীন ইসলাম টুটুল

শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বয়সের বিচারে বিএনপি যতটা পরিপক্বতা অর্জন করার কথা, ততটা অর্জন করতে পারেনি। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর দলটি ৪৫ বছর পেরিয়ে ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে। চার দশকে বিভিন্ন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও রাজনীতিতে দল হিসেবে শক্ত ভিত গড়তে পারেনি দলটি। এজন্য দলের হাইকমান্ডের সময়পোযোগী, দুরদর্শী ও বিচক্ষন কৌশল গ্রহনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী করামুক্ত হওয়ায় দলের তৃণমূল নেতারা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন।

তবে শীর্ষ নেতারা সবাই কারাগার থেকে বেড়িলে আসলে দলটি কৌশল পরিবর্তন করে আবার ঘুরে দাড়াতে পারবে বলেও আশা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সর্মর্থকরা।

বিএনপির একটি সূত্র জনিয়েছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ যেসব কারণে জনগন ক্ষুব্ধ সেইসব ইস্যুগুলি নিয়ে প্রথমে রাজনৈতীক মাঠ গরম করতে চায় বিএনপি। এরপর পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের সময়পোযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ তরা হবে। এই সময়ের মধ্যে তৃণমূল থেকে হাইকমান্ড পর্যন্ত সকল পর্যায়ের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হবে। বিএনপি নেতাদের দাবি, সরকারের দমন-পীড়নের কারণে তারা আন্দোলন জোরদার করতে পারছেন না। তারা বলছেন, অতীতে কোনো সরকারই বিরোধী দলকে জামাই আদরে রাখেনি। জেলজুলুমের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই বিরোধী দলকে আন্দোলন করতে হয়।

বিএনপি সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের ডাক দিয়ে মাঠের রাজনীতিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় জাতীয় নির্বাচন আটকে রাখতে পারেনি তারা। তারা ‘একতরফা নির্বাচন’ এই ইস্যুটি সামনে রেখে আন্তর্জাতীক হস্তক্ষেপ আশা করেছিল। কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি। বরং ক্ষমতাসীররা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কারাগারে আটক রেখে দলের তৃণমূল নেতাদের মধ্যে হতাশার বীজ রোপন করে দিয়েছে। আর এই ফাকে ক্ষমতাসিন দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেই জাতীয় নির্বাচন করে সরকারও গঠন করেছে।

এমন অবস্থায় দলটির শীর্ষ নেতারা যখন বিভিন্ন নাশকতার মামলায় নাজেহাল, ঠিক তখনই কারামুক্তি পেলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। শীর্ষ দুই নেতার কারামুক্তির পর নতুন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বিএনপি এখন কী পন্থা অবলম্বন করবে। কি কৌশলে দলটি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

বৃহস্পতিবার জামিনে কারামুক্ত হন মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। জেল থেকে বেরিয়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেন এই দুই নেতা।

ফখরুল বলেন, ‘জনগণ সবসময় গণতন্ত্রের জন্য নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন এবং প্রাণ দিয়েছেন। মত ও ভোটের অধিকারের জন্য তারা যে আন্দোলন শুরু করেছে, তাতে জয়ী হবেন।’

আর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভালো আছি, ভালো থাকতে হবে। দেশের মানুষের ক্ষমতা দখল করে বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী সবারই মনোবল অটুট আছে এবং শক্ত আছে।’

এদিকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে ভোট ঠেকাতে লাগাতার হরতাল-অবরোধ-অসহযোগের মতো কর্মসূচি দেয় বিএনপি। কিন্তু এতসব কর্মসূচির মধ্যেই ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন বর্জন করে ভোটগ্রহণ ঠেকানোর ঘোষণা দিলেও কার্যত নির্বাচনের দিন মাঠে ছিলেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এদিন বিএনপির নেতাকর্মীদের তেমন কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ে বিএনপির কার্যক্রম। মূলত নেতৃত্ব সংকট, বিচক্ষণতার অভাব, দোদুল্যমানতা, সিদ্ধান্তহীনতা ও ক্ষেত্রবিশেষে হঠকারিতাই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারের পতনের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হয় বিএনপি তারপর নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে দলটি। রাজধানীসহ সব মহানগরে কালো পতাকা মিছিল করে তারা। আর ডামি সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে দেশের সব মহানগর, থানা, জেলা, সদর, সব উপজেলা ও পৌরসভায় কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করে দলটি। এভাবে একের পর এক আন্দোলনের ডাক দিয়ে রাজপথে সরব হওয়ার চেষ্টা করে সর্বশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে লিফলেট বিতরণ করে বিএনপি।

ওইদিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন করে সরকার মনে করেছে সারা বাংলাদেশের জমিদার হয়ে গেছে। এ জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই থামবে না। কারণ, ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো যে আন্দোলন করছে, তা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই। এ লড়াই অব্যাহত থাকবে।

অন্যদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবদীন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আন্দোলন তো এখনও কিছু দেখেননি। নির্বাচনের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে আন্দোলন হয়েছে, ঠিক সেভাবেই এ দেশেও আন্দোলন হবে। আন্দোলন মাত্র শুরু। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটা ভিন্ন রূপ আছে। সেই রূপটা এখনও শুরু হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘শীর্ষ নেতারা মুক্ত হওয়ায় উজ্জীবিত কর্মীরা। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অনেক হয়েছে, এবার হবে জোরালো কর্মসূচি। মহাসচিবের নেতৃত্বে কঠোর আন্দোলনে যাবে বিএনপি। শিগগিরই ঘোষণা আসবে।’ ফারুক বলেন, বেশকিছু জেলায় সম্মেলন না হওয়ায় দুর্বলতা আছে। দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কারামুক্তির পর বিএনপি কীভাবে ঘুড়ে দাঁড়াতে চায়, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কারামুক্ত হওয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবেন। মির্জা ফখরুল আন্দোলন চলমান রাখার যে কথা বলেছেন তাতে বিএনপির চলমান কর্মসূচি নতুন প্রাণ পেয়েছে। দলীয় মহাসচিবও নতুন করে চাঙা হওয়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পরবর্তী আন্দোলনের ডাক দেবেন। এভাবে চলতে থাকলে সরকার পদত্যাগ এবং পুনরায় নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।

back to top