জাল ভোট দিতে আসা ব্যাক্তি
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার একাধিক ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীর সমর্থকদের প্রভাব বিস্তার, জাল ভোট, গোপন কক্ষে এজেন্টদের নজরদারি, ফোন ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে দোয়াত কলম প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করেছেন প্রার্থী শাহজালাল মিয়া। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবি, সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শাহজালাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। তার বিপরীতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি কাজী সুজন ইকবাল (আনারস প্রতীক) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (ঘোড়া প্রতীক)।
তাদের মধ্যে সাইফুল ইসলামকে নিজের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন আড়াইহাজারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু।
সকাল ৯টায় উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের সেন্ট্রাল করোনেশন স্কুল এন্ড কলেজের নারী ও পুরুষ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্র দুটিতে দোয়াত কালি প্রতীকের কোনো পোলিং এজেন্ট নেই। ভোটের প্রথম ঘন্টায় কেন্দ্রটির ১০টি বুথে গড়ে ৩ থেকে ৭টি ভোট কাস্ট হয়েছে। তবে ১০ মিনিটের ব্যবধানে এ চিত্র পরিবর্তন হতে দেখা যায়।
৯টা ১০ মিনিটে হঠাৎ কেন্দ্রটিতে প্রবেশ করে ৩০ থেকে ৪০ জন নারী ভোটার। ঘোড়া প্রতীকের ব্যাচধারী একজন নারী সর্থমককে প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায়। তিনি ভোটারদের নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন এবং কে কোন বুথে ভোট দিবেন তা দেখিয়ে দেন। এ সময় জানতে চাইলে তিনি জানান, তার নাম তামান্না আক্তার। তিনি ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি।
সকালে সাড়ে ১০টায় ৯৮ নং দড়ি সত্যভান্দী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে মানুষের জটলা থাকলেও ভিতরে ভোটার উপস্থিতি কম। তবে বুথগুলো ঘুরে দেখা যায়, লাইন না থাকলেও বুথগুলোতে গড়ে ৮০ থেকে ৯০ ভোট কাস্ট হয়েছে।
এ সময় পুরুষ কেন্দ্রের ১নম্বর বুথে একজনকে প্রকাশ্যে ঘোড়া প্রতীকে ভোট দিতে দেখা যায়। এর পরপরই পুনরায় ভোটার লাইনে এবং ভোট দেয়ার উদ্দেশ্যে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে গেলে তার হাতের আঙ্গুলের অমুছনীয় কালি দেখিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ওই ভোটার বলেন, আমি ভোট দেননি। এ সময় কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসার লোকটিকে বাইরে নিয়ে যান এবং কোনো আইনী ব্যবস্থা ছাড়াই ছেড়ে দেন।
প্রিজাইডিং অফিসারের সাথে আরেকটি বুথে প্রবেশ করলে আনারস প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট সাইফুল ইসলামকে গোপনে কক্ষে নজরদারি করতে দেখা যায়। পরে তাকে প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সংবাদকর্মীদের সংবাদ না করার অনুরোধ করেন তারা।
কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসার মুরাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি একদিকে গেলে অন্যদিকে কাজ এসব কাজ করছে। এর জন্য দুঃখীত। এরপর থেকে আমি বিষয়গুলো সংশোধন করবো।
ঘটনার পর কেন্দ্র থেকে বের হবার পথে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিদা মোশাররফের নেতৃত্বে গণমাধ্যমকর্মীদের ঘিরে ধরেন ঘোড়া প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা। এসময় তারা এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করতে থাকেন এবং গাড়ি আটকে রাখেন। শাহিদা মোশাররফ বলেন, এটি এমপি বাবুর এলাকার কেন্দ্র এবং এনিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে তার সম্মানহানী হবে। এক পর্যায়ে টাকা দিয়ে সাংবাদিকদের প্রলোভন দেখানোর চেষ্টা করেন তারা। পরে তাদের একাধিকবার অনুরোধ করে সেখান থেকে বের হতে সক্ষম হয় গণমাধ্যম কর্মীরা।
এদিকে সরকারি সফর আলী কলেজ কেন্দ্রে দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী মো. শাহজালাল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ গতকাল রাত থেকে নষ্ট করছে। আজকে ভোট কেন্দ্রে কোথাও কোথাও আমার এজেন্ট দেরকে বের করে দিচ্ছে, কোথাও রাস্তা থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। ফতেপুর ইউনিয়ন ভোট কেন্দ্রে প্রকাশ্যে ছিল মারছে। আনারস ও ঘোড়া মার্কা দুইজন মিলে এ কাজগুলো করছে। তারা যে ভাবে ভোটার দের হুমকি দিচ্ছি এতে করে সুষ্ঠ ভোটের পরিবেশ আর নেই।
যে কেন্দ্রগুলোতে ৪০ ভাগ ভোট কাস্ট হয়েছে সেখানেই জাল ভোট হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এসবকিছু সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু তার এলাকায় ঘটিয়েছে। ওনার লোকবল দিয়ে এ কাজ গুলো করছে। তবে নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত আমি থাকবো।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, আমি এলাকায় নেই। আমি ভোট দেয়ার জন্য পথে আছি। কেউ আমার নাম বললেই সেটা সত্য হবে এমন নয়। আমি যতটুকু জানি নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে এবং ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। তবে এমন কোন ঘটনা ঘটার কথা নয় এবং আমার কোন নির্দেশনা এখানে থাকার প্রশ্নই উঠে না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বলেন, কিছু কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অনেকগুলো কেন্দ্রে এজেন্ট ছিল না। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, এজেন্ট চলে এসেছে। তবে প্রত্যেক স্থানেই আমরা ফোর্স পাঠাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।
জাল ভোট দিতে আসা ব্যাক্তি
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার একাধিক ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীর সমর্থকদের প্রভাব বিস্তার, জাল ভোট, গোপন কক্ষে এজেন্টদের নজরদারি, ফোন ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে দোয়াত কলম প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করেছেন প্রার্থী শাহজালাল মিয়া। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবি, সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শাহজালাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। তার বিপরীতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি কাজী সুজন ইকবাল (আনারস প্রতীক) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (ঘোড়া প্রতীক)।
তাদের মধ্যে সাইফুল ইসলামকে নিজের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন আড়াইহাজারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু।
সকাল ৯টায় উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের সেন্ট্রাল করোনেশন স্কুল এন্ড কলেজের নারী ও পুরুষ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্র দুটিতে দোয়াত কালি প্রতীকের কোনো পোলিং এজেন্ট নেই। ভোটের প্রথম ঘন্টায় কেন্দ্রটির ১০টি বুথে গড়ে ৩ থেকে ৭টি ভোট কাস্ট হয়েছে। তবে ১০ মিনিটের ব্যবধানে এ চিত্র পরিবর্তন হতে দেখা যায়।
৯টা ১০ মিনিটে হঠাৎ কেন্দ্রটিতে প্রবেশ করে ৩০ থেকে ৪০ জন নারী ভোটার। ঘোড়া প্রতীকের ব্যাচধারী একজন নারী সর্থমককে প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায়। তিনি ভোটারদের নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন এবং কে কোন বুথে ভোট দিবেন তা দেখিয়ে দেন। এ সময় জানতে চাইলে তিনি জানান, তার নাম তামান্না আক্তার। তিনি ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি।
সকালে সাড়ে ১০টায় ৯৮ নং দড়ি সত্যভান্দী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে মানুষের জটলা থাকলেও ভিতরে ভোটার উপস্থিতি কম। তবে বুথগুলো ঘুরে দেখা যায়, লাইন না থাকলেও বুথগুলোতে গড়ে ৮০ থেকে ৯০ ভোট কাস্ট হয়েছে।
এ সময় পুরুষ কেন্দ্রের ১নম্বর বুথে একজনকে প্রকাশ্যে ঘোড়া প্রতীকে ভোট দিতে দেখা যায়। এর পরপরই পুনরায় ভোটার লাইনে এবং ভোট দেয়ার উদ্দেশ্যে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে গেলে তার হাতের আঙ্গুলের অমুছনীয় কালি দেখিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ওই ভোটার বলেন, আমি ভোট দেননি। এ সময় কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসার লোকটিকে বাইরে নিয়ে যান এবং কোনো আইনী ব্যবস্থা ছাড়াই ছেড়ে দেন।
প্রিজাইডিং অফিসারের সাথে আরেকটি বুথে প্রবেশ করলে আনারস প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট সাইফুল ইসলামকে গোপনে কক্ষে নজরদারি করতে দেখা যায়। পরে তাকে প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সংবাদকর্মীদের সংবাদ না করার অনুরোধ করেন তারা।
কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসার মুরাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি একদিকে গেলে অন্যদিকে কাজ এসব কাজ করছে। এর জন্য দুঃখীত। এরপর থেকে আমি বিষয়গুলো সংশোধন করবো।
ঘটনার পর কেন্দ্র থেকে বের হবার পথে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিদা মোশাররফের নেতৃত্বে গণমাধ্যমকর্মীদের ঘিরে ধরেন ঘোড়া প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা। এসময় তারা এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করতে থাকেন এবং গাড়ি আটকে রাখেন। শাহিদা মোশাররফ বলেন, এটি এমপি বাবুর এলাকার কেন্দ্র এবং এনিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে তার সম্মানহানী হবে। এক পর্যায়ে টাকা দিয়ে সাংবাদিকদের প্রলোভন দেখানোর চেষ্টা করেন তারা। পরে তাদের একাধিকবার অনুরোধ করে সেখান থেকে বের হতে সক্ষম হয় গণমাধ্যম কর্মীরা।
এদিকে সরকারি সফর আলী কলেজ কেন্দ্রে দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী মো. শাহজালাল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ গতকাল রাত থেকে নষ্ট করছে। আজকে ভোট কেন্দ্রে কোথাও কোথাও আমার এজেন্ট দেরকে বের করে দিচ্ছে, কোথাও রাস্তা থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। ফতেপুর ইউনিয়ন ভোট কেন্দ্রে প্রকাশ্যে ছিল মারছে। আনারস ও ঘোড়া মার্কা দুইজন মিলে এ কাজগুলো করছে। তারা যে ভাবে ভোটার দের হুমকি দিচ্ছি এতে করে সুষ্ঠ ভোটের পরিবেশ আর নেই।
যে কেন্দ্রগুলোতে ৪০ ভাগ ভোট কাস্ট হয়েছে সেখানেই জাল ভোট হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এসবকিছু সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু তার এলাকায় ঘটিয়েছে। ওনার লোকবল দিয়ে এ কাজ গুলো করছে। তবে নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত আমি থাকবো।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, আমি এলাকায় নেই। আমি ভোট দেয়ার জন্য পথে আছি। কেউ আমার নাম বললেই সেটা সত্য হবে এমন নয়। আমি যতটুকু জানি নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে এবং ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। তবে এমন কোন ঘটনা ঘটার কথা নয় এবং আমার কোন নির্দেশনা এখানে থাকার প্রশ্নই উঠে না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বলেন, কিছু কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অনেকগুলো কেন্দ্রে এজেন্ট ছিল না। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, এজেন্ট চলে এসেছে। তবে প্রত্যেক স্থানেই আমরা ফোর্স পাঠাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।