alt

‘উদ্বিগ্ন , চিন্তিত’ মির্জা ফখরুল, ‘ কোথায় যাচ্ছে দেশ ’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন রেখেছেন, ‘এটা কোন বাংলাদেশ?’ ৫ আগস্টের বিপ্লবের তিন মাস না যেতেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি এও জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশকে ‘কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে’ সেটা মানুষ বুঝতে পারছে কি না।

তিনি বলেন, “বুঝি না, বুঝলে আজকের এই সমস্ত দায়িত্বহীন কথাবার্তা আমাদের মুখ দিয়ে বেরুত না।”

তিনি বলেন, “আমি গত কয়েকটা দিনে চিন্তিত, উদ্বিগ্ন; ভয়াবহ অবস্থা চার দিকে। আপনি চিন্তা করতে পারেন কি উন্মাদনা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে? ধর্মকে কেন্দ্র করে মারামারি শুরু হয়েছে! আমরা এই বাংলাদেশ দেখতে চাই না। আপনি চিন্তা করতে পারেন, মুক্ত স্বধীন মিডিয়ার জন্য এতদিন লড়াই করলাম, তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে! আমরা এই বাংলাদেশ দেশকে চাই না, আমি অন্তত দেখতে চাই না। ’

গতকাল বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডা. মিলনের মৃত্যুবার্ষিকীতে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব এ আলোচনা সভার আয়োজন করে । ১৯৯০ সালের এই দিনে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে গুলিতে নিহত হন ডা. মিলন। তার এই মৃত্যু আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চারিত হয় এবং ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। সেই থেকে প্রতি বছর দেশের বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনীতিক দল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি শহীদ ডা. মিলন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ সংবাদপত্র অফিসে হামলার নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য সমস্ত পত্রিকাগুলোতে যে আক্রমণ শুরু হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানাই।”

তিনি বলেন, আমি সারা জীবন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছি। এটা আমার বিশ্বাস, আস্থা।’ তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র মানেটা কী, যে আপনি আপনার কথা বলবেন। আপনার সঙ্গে আমি একমত হতে না-ও পারি। কিন্তু আপনার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আমি আমার জীবন দিয়ে রক্ষা করব-এটাই গণতন্ত্র।’

তিনি বলেন, ‘আপনি এক ফ্যাসিস্টকে উৎখাত করেছেন। কারণ, সে আপনার গলা টিপে ধরেছিল, সে আমাদের মেরে ফেলছিল, কথা বলতে দিত না, ভোট দিতে দিত না, হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে। আবার এখন আরেকটা...একে বলতে দেওয়া যাবে না, একে নিশ্চিহ্ন করো, হাউ ডু ইউ জাস্টিফায়েড। আপনারা বলেন, এভাবে একটা সমাজ এগোতে পারে?’

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এমন বাংলাদেশ কাম্য ছিল কি না, সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “প্রাণ যে দিল এত মানুষ তার ফলশ্রুতি কি এই বাংলাদেশ? আমরা কি এটাই চেয়েছি? এখনও তিন মাস হয়নি, এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে। তিন মাসও যায়নি, এখনই একজন আরেকজনের বুকে রক্ত ঝরাচ্ছে।

“তিন মাসও যায়নি এখন পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা কোন বাংলাদেশ? আমরা কি ৫ (অগাস্ট) তারিখের আগে এই বাংলাদেশকে চিনতাম? আজকে কেন এই ভয়াবহ বিভাজন? আজকে কেন এই ভয়াবহ হিংসা, আজকে কেন এই ভয়াবহ অস্থিরতা? কোথায় সমস্যা কোথায়?”

মির্জা ফখরুল নেতা বলেন, “কিছু সংখ্যক মানুষ আছে সোশাল মিডিয়ায়, আমি যখন দেখি আতঙ্কিত হই, ‘কি উন্মাদনা, পুড়িয়ে দাও, জ্বালিয়ে দাও’, এই ধরনের কথাবার্তা। চিন্তা করতে পারেন কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে?

“আমরা কি বুঝি আমাদের ভয়টা কোথায়, আমরা কি বুঝি আমাদের আতঙ্কটা কোথায়? আমরা কি বুঝি আততায়ী কোথায় ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের পেছনে?”

ফখরুল বলেন, “এবার সুযোগ এসেছিল সবাই এক সাথে একজোট হয়ে পরিবর্তন নিয়ে আসি। তিনটা মাস হয়নি। এর মাধ্যমেই আমাদের ‘আসল চেহারা’ বের হয়ে এসেছে।

“এই রকম ‘চেহারা’ নিয়ে কোনো দিল সফল হওয়া যায় না। যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি, বিশ্বকে এক করার চেষ্টা করি, হয় না। আমার নিজের ঘরেই যদি বিভাজন বিভেদ থেকে যায়, আমরা কোনোদিন ঠিক করতে পারব না।”

কিছু সংখ্যক মানুষ নিজেদের ‘অত্যন্ত জনপ্রিয়’, ‘সবচেয়ে দেশপ্রেমিক’ মনে করে গোটা জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়ে, উসকে নিয়ে একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন, “আমি কারও নাম বলব না, বলতে চাই না তবে আপনারা (চিকিৎসক) সমাজের শিক্ষিত মানুষ, গভীরভাবে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করবেন যে, যারা বিভাজনের দিকে ঠেলছে, অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলছে, তারা আমাদের আসলে শত্রু না মিত্রৃ এই জিনিসগুলো বুঝতে হবে।”

দেশ রক্ষার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমরা একেবারে জীবন সায়াহ্নে। আপনাদের বলতে চাই, যদি আপনারা দেশকে রক্ষা করতে চান, আপনারা স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে চান, আপনাদের অধিকারকে রক্ষা করতে চান তাহলে আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন।

তিনি সবার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন “বিভাজনের কাছে আপনারা কখনো মাথা নোয়াবেন না, অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াবেন না, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না।”

তিনি বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার’ জন্য। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দিয়ে তৈরি হওয়া অন্তর্র্বতী সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন, “আরেকটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, যারা অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্বে রয়েছেন, তারা এমন কোনো কথা বলবেন না দয়া করে তা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।”

ড্যাবের সভাপতি হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ফরহাদ হালিম ডোনার, একেএম আজিজুল হক, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ড্যাবের মহাসচিব আব্দুস সালামও বক্তব্য রাখেন।

ছবি

হাটহাজারীতে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ

ছবি

সশস্ত্র বাহিনী জাতির আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে: তারেক রহমান

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে: বিএনপি

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনরুজ্জীবন: নতুন রায়ে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামোতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত

ছবি

বাগাতিপাড়ায় পুতুলের পক্ষে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা

ছবি

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ ৭ জনের লিখিত আবেদন

ছবি

ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর না থাকলে বাতিল হবে পোস্টাল ব্যালটের ভোট

ছবি

জুলাই গণহত্যার বিচার যেন প্রতীকী না হয়: সিপিবি

ছবি

নির্বাচনকে সামনে রেখে সিপিবির মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু বৃহস্পতিবার

ছবি

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে ‘মব ভায়োলেন্স’ থেকে সরে আসতে হবে: মির্জা ফখরুল

ছবি

আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে আট দলের প্রস্তুতি, সমান সুযোগ নিশ্চিতের দাবি

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য তারেক রহমানের কাছে লিখিত আবেদন

ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন: ইসিকে ‘শক্ত অবস্থান’ নেওয়ার আহ্বান বিএনপির

ছবি

ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চাইলেন সিইসি নাসির উদ্দিন

ছবি

মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে অনশন

ছবি

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

ছবি

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ন্যায্য রূপান্তর: রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ১২ দফার নাগরিক ইশতেহার

ছবি

নির্বাচনী উৎসবমুখর পরিবেশ গড়তে ২৫ কোটি টাকার প্রচার কার্যক্রমে নীতিগত অনুমোদন

ছবি

প্রবাসী বাংলাদেশিদের পোস্টাল ভোট: ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ চালু, অঞ্চলভিত্তিক নিবন্ধন শুরু বুধবার

ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন দুই রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দিল ইসি

ছবি

বিএনপি ও জামায়াত

ছবি

একমাসে কার্যকরের দাবি এনসিপির

ছবি

শেষমেষ সবাইকে নির্বাচনে আসতে হবে: সালাহউদ্দিন

ছবি

মহম্মদপুরে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আলোচনা অনুষ্ঠিত

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধিক মামলায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে এনসিপির এক মাসের আল্টিমেটাম

ছবি

সোমবার ইসির সংলাপে যাচ্ছে না জামায়াত

ছবি

নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ না হওয়া পর্যন্ত জামায়াত ও সঙ্গীদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা

ছবি

সবসময় আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন মওলানা ভাসানী: তারেক রহমান

ছবি

আ’লীগ-জাপা-বাম, সবাইকে বাইরে রেখে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না: ইসির সংলাপে কাদের সিদ্দিকী

ছবি

একটা মহল নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে, রুখে দাঁড়াতে হবে: মির্জা ফখরুল

ছবি

নির্বাচনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রাজশাহী ও রাজবাড়ীতে বিক্ষোভ

ছবি

নিবন্ধন পেল এনসিপি ও বাসদ (মার্কসবাদী)

ছবি

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা

দলীয় মনোনয়নের জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো : টিপু

ছবি

বিএনপিতে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে একটি মহল: মির্জা ফখরুল

ছবি

বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন চেয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধে মানুষের দুর্ভোগ

tab

‘উদ্বিগ্ন , চিন্তিত’ মির্জা ফখরুল, ‘ কোথায় যাচ্ছে দেশ ’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন রেখেছেন, ‘এটা কোন বাংলাদেশ?’ ৫ আগস্টের বিপ্লবের তিন মাস না যেতেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি এও জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশকে ‘কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে’ সেটা মানুষ বুঝতে পারছে কি না।

তিনি বলেন, “বুঝি না, বুঝলে আজকের এই সমস্ত দায়িত্বহীন কথাবার্তা আমাদের মুখ দিয়ে বেরুত না।”

তিনি বলেন, “আমি গত কয়েকটা দিনে চিন্তিত, উদ্বিগ্ন; ভয়াবহ অবস্থা চার দিকে। আপনি চিন্তা করতে পারেন কি উন্মাদনা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে? ধর্মকে কেন্দ্র করে মারামারি শুরু হয়েছে! আমরা এই বাংলাদেশ দেখতে চাই না। আপনি চিন্তা করতে পারেন, মুক্ত স্বধীন মিডিয়ার জন্য এতদিন লড়াই করলাম, তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে! আমরা এই বাংলাদেশ দেশকে চাই না, আমি অন্তত দেখতে চাই না। ’

গতকাল বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডা. মিলনের মৃত্যুবার্ষিকীতে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব এ আলোচনা সভার আয়োজন করে । ১৯৯০ সালের এই দিনে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে গুলিতে নিহত হন ডা. মিলন। তার এই মৃত্যু আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চারিত হয় এবং ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। সেই থেকে প্রতি বছর দেশের বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনীতিক দল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি শহীদ ডা. মিলন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ সংবাদপত্র অফিসে হামলার নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য সমস্ত পত্রিকাগুলোতে যে আক্রমণ শুরু হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানাই।”

তিনি বলেন, আমি সারা জীবন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছি। এটা আমার বিশ্বাস, আস্থা।’ তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র মানেটা কী, যে আপনি আপনার কথা বলবেন। আপনার সঙ্গে আমি একমত হতে না-ও পারি। কিন্তু আপনার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আমি আমার জীবন দিয়ে রক্ষা করব-এটাই গণতন্ত্র।’

তিনি বলেন, ‘আপনি এক ফ্যাসিস্টকে উৎখাত করেছেন। কারণ, সে আপনার গলা টিপে ধরেছিল, সে আমাদের মেরে ফেলছিল, কথা বলতে দিত না, ভোট দিতে দিত না, হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে। আবার এখন আরেকটা...একে বলতে দেওয়া যাবে না, একে নিশ্চিহ্ন করো, হাউ ডু ইউ জাস্টিফায়েড। আপনারা বলেন, এভাবে একটা সমাজ এগোতে পারে?’

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এমন বাংলাদেশ কাম্য ছিল কি না, সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “প্রাণ যে দিল এত মানুষ তার ফলশ্রুতি কি এই বাংলাদেশ? আমরা কি এটাই চেয়েছি? এখনও তিন মাস হয়নি, এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে। তিন মাসও যায়নি, এখনই একজন আরেকজনের বুকে রক্ত ঝরাচ্ছে।

“তিন মাসও যায়নি এখন পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা কোন বাংলাদেশ? আমরা কি ৫ (অগাস্ট) তারিখের আগে এই বাংলাদেশকে চিনতাম? আজকে কেন এই ভয়াবহ বিভাজন? আজকে কেন এই ভয়াবহ হিংসা, আজকে কেন এই ভয়াবহ অস্থিরতা? কোথায় সমস্যা কোথায়?”

মির্জা ফখরুল নেতা বলেন, “কিছু সংখ্যক মানুষ আছে সোশাল মিডিয়ায়, আমি যখন দেখি আতঙ্কিত হই, ‘কি উন্মাদনা, পুড়িয়ে দাও, জ্বালিয়ে দাও’, এই ধরনের কথাবার্তা। চিন্তা করতে পারেন কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে?

“আমরা কি বুঝি আমাদের ভয়টা কোথায়, আমরা কি বুঝি আমাদের আতঙ্কটা কোথায়? আমরা কি বুঝি আততায়ী কোথায় ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের পেছনে?”

ফখরুল বলেন, “এবার সুযোগ এসেছিল সবাই এক সাথে একজোট হয়ে পরিবর্তন নিয়ে আসি। তিনটা মাস হয়নি। এর মাধ্যমেই আমাদের ‘আসল চেহারা’ বের হয়ে এসেছে।

“এই রকম ‘চেহারা’ নিয়ে কোনো দিল সফল হওয়া যায় না। যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি, বিশ্বকে এক করার চেষ্টা করি, হয় না। আমার নিজের ঘরেই যদি বিভাজন বিভেদ থেকে যায়, আমরা কোনোদিন ঠিক করতে পারব না।”

কিছু সংখ্যক মানুষ নিজেদের ‘অত্যন্ত জনপ্রিয়’, ‘সবচেয়ে দেশপ্রেমিক’ মনে করে গোটা জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়ে, উসকে নিয়ে একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন, “আমি কারও নাম বলব না, বলতে চাই না তবে আপনারা (চিকিৎসক) সমাজের শিক্ষিত মানুষ, গভীরভাবে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করবেন যে, যারা বিভাজনের দিকে ঠেলছে, অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলছে, তারা আমাদের আসলে শত্রু না মিত্রৃ এই জিনিসগুলো বুঝতে হবে।”

দেশ রক্ষার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমরা একেবারে জীবন সায়াহ্নে। আপনাদের বলতে চাই, যদি আপনারা দেশকে রক্ষা করতে চান, আপনারা স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে চান, আপনাদের অধিকারকে রক্ষা করতে চান তাহলে আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন।

তিনি সবার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন “বিভাজনের কাছে আপনারা কখনো মাথা নোয়াবেন না, অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াবেন না, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না।”

তিনি বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার’ জন্য। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দিয়ে তৈরি হওয়া অন্তর্র্বতী সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন, “আরেকটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, যারা অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্বে রয়েছেন, তারা এমন কোনো কথা বলবেন না দয়া করে তা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।”

ড্যাবের সভাপতি হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ফরহাদ হালিম ডোনার, একেএম আজিজুল হক, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ড্যাবের মহাসচিব আব্দুস সালামও বক্তব্য রাখেন।

back to top