সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে সংবিধানের মূলনীতি থেকে ‘বহুত্ববাদ’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। এর পরিবর্তে সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন’ যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। একইসঙ্গে সংসদে আসন বণ্টন সমানুপাতিক হারে করার দাবিও জানিয়েছে তারা।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় জামায়াতের প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এসব তথ্য জানান। তার নেতৃত্বে দলের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল জাতীয় সংসদের এলডি হলে সংলাপে অংশ নেয়। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজের নেতৃত্বে সংস্কারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, “আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। সুবিধাজনক সময়ে আবারও বৈঠক হবে। আমরা বিস্তৃত আলোচনা করছি, তাড়াহুড়ো করছি না। কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি, কিছু বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছি, যেগুলো বিবেচনায় রয়েছে। আবার কিছু বিষয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন।”
সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি। এতে সারাদেশে দলভিত্তিক ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন নির্ধারিত হবে। এতে নির্বাচনী দুর্নীতি, জবরদখল ও টাকার খেলা বন্ধ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। পৃথিবীর ৬০টিরও বেশি দেশে এই পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে।”
সংবিধানের মূলনীতি থেকে বহুত্ববাদ বাদ দিয়ে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনের প্রস্তাবের বিষয়টি তুলে ধরে তাহের বলেন, “এ বিষয়ে আমরা সংস্কার কমিশনের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি।”
সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর রাখার প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। প্রধানমন্ত্রী পদে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবকে দলটি সমর্থন জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তাহের বলেন, “এতে কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ একীভূত করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত চাওয়া হয়, এরপর সংলাপ চলছে।
বৈঠকে জামায়াত প্রস্তাব দেয়, সংবিধান পরিবর্তন, অর্থ বিল বা বাজেট অনুমোদন ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য বিষয়ে সংসদ সদস্যরা দলের বিপরীতেও ভূমিকা রাখতে পারবেন।
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) নিয়ে নীতিগত একমত হয়েছে জামায়াত। তবে কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করেছে তারা। তাহের বলেন, “রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকায় জরুরি পরিস্থিতিতে তাঁদের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রয়োজন, তাই কমিটির বাইরে রাখা উচিত।”
সংসদে উচ্চ ও নিম্ন কক্ষ প্রবর্তনের বিষয়ে দলটি একমত হয়েছে। বর্তমান সংসদ নিম্ন কক্ষ হিসেবে থাকবে এবং একটি উচ্চ কক্ষ গঠন করা হবে, যা কিছু দেশে ‘সেনেট’ নামে পরিচিত। জামায়াত মনে করে, এতে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ ছাড়াও বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সদস্যরা এতে যুক্ত রয়েছেন। জামায়াতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, কার্যনির্বাহী সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আজাদ, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, শিশির মনির ও মহিউদ্দিন সরকার।
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে সংবিধানের মূলনীতি থেকে ‘বহুত্ববাদ’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। এর পরিবর্তে সংবিধানে ‘আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন’ যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। একইসঙ্গে সংসদে আসন বণ্টন সমানুপাতিক হারে করার দাবিও জানিয়েছে তারা।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় জামায়াতের প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এসব তথ্য জানান। তার নেতৃত্বে দলের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল জাতীয় সংসদের এলডি হলে সংলাপে অংশ নেয়। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজের নেতৃত্বে সংস্কারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, “আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। সুবিধাজনক সময়ে আবারও বৈঠক হবে। আমরা বিস্তৃত আলোচনা করছি, তাড়াহুড়ো করছি না। কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি, কিছু বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছি, যেগুলো বিবেচনায় রয়েছে। আবার কিছু বিষয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন।”
সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি। এতে সারাদেশে দলভিত্তিক ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন নির্ধারিত হবে। এতে নির্বাচনী দুর্নীতি, জবরদখল ও টাকার খেলা বন্ধ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। পৃথিবীর ৬০টিরও বেশি দেশে এই পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে।”
সংবিধানের মূলনীতি থেকে বহুত্ববাদ বাদ দিয়ে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনের প্রস্তাবের বিষয়টি তুলে ধরে তাহের বলেন, “এ বিষয়ে আমরা সংস্কার কমিশনের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি।”
সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর রাখার প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। প্রধানমন্ত্রী পদে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবকে দলটি সমর্থন জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তাহের বলেন, “এতে কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ একীভূত করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত চাওয়া হয়, এরপর সংলাপ চলছে।
বৈঠকে জামায়াত প্রস্তাব দেয়, সংবিধান পরিবর্তন, অর্থ বিল বা বাজেট অনুমোদন ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য বিষয়ে সংসদ সদস্যরা দলের বিপরীতেও ভূমিকা রাখতে পারবেন।
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) নিয়ে নীতিগত একমত হয়েছে জামায়াত। তবে কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করেছে তারা। তাহের বলেন, “রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকায় জরুরি পরিস্থিতিতে তাঁদের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রয়োজন, তাই কমিটির বাইরে রাখা উচিত।”
সংসদে উচ্চ ও নিম্ন কক্ষ প্রবর্তনের বিষয়ে দলটি একমত হয়েছে। বর্তমান সংসদ নিম্ন কক্ষ হিসেবে থাকবে এবং একটি উচ্চ কক্ষ গঠন করা হবে, যা কিছু দেশে ‘সেনেট’ নামে পরিচিত। জামায়াত মনে করে, এতে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ ছাড়াও বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সদস্যরা এতে যুক্ত রয়েছেন। জামায়াতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, কার্যনির্বাহী সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আজাদ, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, শিশির মনির ও মহিউদ্দিন সরকার।