১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ
নয়াপল্টনে ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ করতে ‘অনড় বিএনপি’ তবে ভেন্যু সোহরাওয়ার্দীর বিকল্প চিন্তা করছে। দলটির নেতারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে ‘না’ পারলেও মতিঝিলের কোন এক জায়গায় সমাবেশ করতে চায়। গতকাল রোববার ভেন্যু ইস্যুতে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করেছে দলটির নেতারা। এখন পর্যন্ত পুলিশ বিএনপিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে কোন নির্দিষ্ট মাঠে সমাবেশ করার কথা বললেও সমাবেশের জন্য অনুমোদন পাওয়া সোহরাওয়ার্দীতে যাবে না বিএনপি এমন ইঙ্গিত মিলেছে দলটির নেতাদের কাছ থেকে। তবে বিকল্প ভেন্যু হিসেবে বিএনপি আরামবাগ এলাকার কথা চিন্তা করছে। পুলিশ শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আশ্বাসের বিষয়ে নিশ্চিত হলে ছাড় দিতে পারে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নাকি নয়াপল্টন, বিএনপিকে কোথায় সমাবেশ করতে দেয়া হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, রাস্তায় সমাবেশ করার অনুমতি পাবে না বিএনপি। ডিএমপি কমিশনার বলেন, মাঠ ছাড়া রাস্তা-ঘাটে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাদে অন্য কোন স্থানের নাম এখনও প্রস্তাব করেনি বিএনপি।
বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, রোববার বিকেলে এ বিষয়ে আলোচনা করতে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে। সেখানে ভেন্যু নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা তা এখনও পরিষ্কার করা হয়নি কারো পক্ষ থেকে। তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ বিএনপিকে আরামবাগ মাঠে সমাবেশ করার কথা বলেছে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আরামবাগ মাঠে সমাবেশ করার মতো জায়গা নেই। কারণ ১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশে বিএনপি কয়েক লাখ লোক সমাগম করতে চায়, যা মূল চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ রোববার পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের সমাবেশের ভেন্যু নিয়ে আলোচনার বিষয়ে বলেছেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি নয়াপল্টনে সমাবেশ করব। এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। ভেন্যুর বিষয়ে তারা আলোচনা করবেন।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ এখন পর্যন্ত নয়াপল্টনেই করার সিদ্ধান্ত আছে। তবে প্রশাসন চাইলে পছন্দের জায়গার বিকল্প নাম দেবে বিএনপি। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর তুরাগ পার ছাড়া ঢাকা মহানগরীর ভেতরে সন্তোষজনক কোন স্থান হলে বিবেচনা করা হবে।
নয়াপল্টনের বিকল্প কোন জায়গা বিএনপির পছন্দ আছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের যদি বলেন আমরা পছন্দ করে দেব। কিন্তু এখন নাম বলব না।
বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কমলাপুর এলাকায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে সমাবেশের জন্য বিকল্প জায়গা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন পুলিশ যদি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে বাধা দেয় তাহলে ওই জায়গায় সমাবেশের জন্য ভাবা যেতে পারে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আলোচনাও হতে পারে।
মতিঝিলের যে কোন স্থানেই সমাবেশ করতে অনড় বিএনপি
১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশ করার বিষয়ে বিএনপি ভেন্যু নয়াপল্টনকে প্রথম পছন্দ হিসেবে এখনও বলছে। তবে শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টনে অনুমতি না পেলে মতিঝিলের মধ্যে নিরাপদ কোন স্থানে সমাবেশ করতে রাজি রয়েছে বিএনপি। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে না বিএনপি। বিএনপি সূত্র জানায়, সমাবেশের জন্য বিকল্প হিসেবে মতিঝিল ও এর আশপাশের এলাকা দলটির অগ্রাধিকার। তবে টঙ্গী, পূর্বাচল বা রাজধানী থেকে দূরের কোন স্থানের প্রস্তাব এলে সেটা মেনে নেবে না বিএনপি।
সমাবেশের জন্য নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে তৃতীয় কোন স্থানের বিষয়টি রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের আলোচনায় এসেছে। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে তার কার্যালয়ে এই বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে ছিলেন দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন (আলাল), কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি) ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ। পুলিশের পক্ষ থেকে আরও ছিলেন ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ ও মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খানসহ আরও দুজন কর্মকর্তা।
বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করার জন্য অনুরোধ করে এবং সেখানে নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়। বিএনপির প্রতিনিধি দল জানায়, তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে অনিরাপদ মনে করে। তারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চায়। বৈঠকের একপর্যায়ে নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে তৃতীয় কোন স্থানে সমাবেশ করার ব্যাপারে বিএনপি আলোচনা করতে রাজি হয়। এই পর্যায়ে আলোচনায় ঠিক হয় যে বিএনপির পক্ষ থেকে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এবং পুলিশের পক্ষ থেকে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান সম্ভাব্য তৃতীয় স্থানের বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রস্তাব করবেন।
সোমবার সন্ধায় পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন, ভেন্যু ঠিক না হলেও সমাবেশ মতিঝিলের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরামবাগ এলাকাসহ কয়েকটি জায়গা দেখা হয়েছে। বিএনপি কোনভাবেই সমাবেশের জন্য মতিঝিল এলাকার বাইরে যেতে চায় না। হয়তো যেকোন মুহূর্তে ভেন্যু ঠিক হয়ে যাবে। তবে আরামবাগ এলাকার মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে যে রাস্তা রয়েছে সেখানে জনসমাগম বেশি করার মতো জায়গা রয়েছে। কোন কারণে নয়াপল্টন সমাবেশ না হলেও বিকল্প হিসেবে ওই রাস্তায় সমাবেশ করার বিষয়ে আলোচনা হবে। এর বাইরে অন্য কোথাও সমাবেশ করা হবে না। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে আরামবাগ মাঠে সমাবেশ করার কথা বলা হলেও জায়গা ছোট হওয়ায় বিএনপি রাজি হয়নি।
বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আশ্বাসে পুলিশের ভিন্ন আশঙ্কা
এদিকে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার এ প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও সরকার বা পুলিশের ভয়টা ভিন্ন কিছুতে। পুলিশের কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন এসেছে, ১০ ডিসেম্বর বিএনপি সমাবেশ করার পরপরই রাস্তায় অবস্থান নিতে পারে। সেরকম কিছু ঘটলে পরিবেশ ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে।
গোয়েন্দা সংস্থার রাজনৈতিক কর্মকা- পর্যবেক্ষণকারী পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি সমাবেশের পর জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে রাস্তায় অবস্থান নিতে পারে বলে একটি আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য এসেছে সেখানে স্বল্পসংখ্যক লোক রাস্তায় অবরোধ তৈরি করতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সূত্র জানিয়েছে, মূলত সমাবেশের পর বিএনপি রাস্তায় অবস্থান নিতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকেই নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দিতে চায় না পুলিশ। ভিন্ন কোন স্থানে বিএনপি সমাবেশ করলে তা নিয়ন্ত্রণে নেয়া সম্ভব বলে পুলিশ মনে করছে। আর এসব কারণে সোহরাওয়ার্দী বা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এমন স্থানে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দিতে চায় পুলিশ।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশের বিকল্প জায়গার বিষয়ে মত জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলছে, পুলিশ সোহরাওয়ার্দী ও তুরাগ ছাড়া ঢাকা মহানগরীর মধ্যে অন্য নিরাপদ জায়গার কথা বললে তারা ভেবে দেখবে। পুলিশ জানতে চাইলে তেমন জায়গার নাম বলতেও রাজি বিএনপি। সোমবার বেলা একটার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী ও তুরাগ ছাড়া ঢাকা মহানগরীর মধ্যে যে জায়গায় আমরা নিরাপদ মনে করব, তেমন জায়গা যদি তারা (পুলিশ) আমাদের বলতে পারে, তাহলে আমরা চিন্তা করে দেখব। যদি না পারে আমাদের জিজ্ঞাসা করলে আমরা আমাদের স্থানটা বলে দেব, কোথায় করব।’
বিএনপির কোন পছন্দ আছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের পছন্দ থাকলেও সেটা যদি আমাদের বলতে দেন তখন আমরা বলব।’ পছন্দের জায়গার কোন তালিকা আছে কিনা, জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’
সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরে ভীতিকর অবস্থা তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, কর্মীদের নিয়ে লিফলেট বিতরণ করতে গেলে বিএনপির ঢাকা মহানগরের নেতা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের ওপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রোববার ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছেন। ইশরাক হোসেন প্রাণে বাঁচলেও তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। অসংখ্য নেতার ওপর হামলা করা হয়েছে। লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে হামলা হলে সেখানে যদি পাল্টা হামলা হয় তাহলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা আব্বাস।
সন্ত্রাস হবে সরকার আগেই প্রচার চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব। ?আমাদের কি লিফলেট বিতরণ নিষেধ! সমাবেশের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজে কি নিষেধাজ্ঞা আছে? সভাসমাবেশ করা তো আমার সাংবিধানিক অধিকার।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘একটা সভায় সরকার পতন হবে না। সরকার কেন ভয় পায়, বুঝি না।’
নয়াপল্টনের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, হামলা-মামলা বন্ধ করুন। সমাবেশে যারা অংশ নেবেন, যারা আসবেন বলে ধারণা করেছেন, সেখানে হামলা হচ্ছে অভিযোগ করে আব্বাস বলেন, ঢাকা জেলার সভাপতি আশফাকের বাসায় হামলা হয়েছে। তবে বিএনপির কর্মীরা ভীত নয় জানিয়ে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, সন্ত্রাস মোকাবিলা করেই সমাবেশ করবে বিএনপি। ৯টি সমাবেশে ছাড় দেয়া হয়েছে। বিএনপিকে আজ ছাড় দেয়া হবে না ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বাংলাদেশ কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। উনি কিছুদিন যাবৎ প্রলাপ বকছেন। এই প্রলাপ কী আমরা মেনে নেব!’
গুলশানে পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক মহাসচিবের
এদিকে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশকে ঘিরে সোমবার গুলশানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সোমবার বিকেলে বিএনপির গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ
সোমবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২২
নয়াপল্টনে ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ করতে ‘অনড় বিএনপি’ তবে ভেন্যু সোহরাওয়ার্দীর বিকল্প চিন্তা করছে। দলটির নেতারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে ‘না’ পারলেও মতিঝিলের কোন এক জায়গায় সমাবেশ করতে চায়। গতকাল রোববার ভেন্যু ইস্যুতে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করেছে দলটির নেতারা। এখন পর্যন্ত পুলিশ বিএনপিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে কোন নির্দিষ্ট মাঠে সমাবেশ করার কথা বললেও সমাবেশের জন্য অনুমোদন পাওয়া সোহরাওয়ার্দীতে যাবে না বিএনপি এমন ইঙ্গিত মিলেছে দলটির নেতাদের কাছ থেকে। তবে বিকল্প ভেন্যু হিসেবে বিএনপি আরামবাগ এলাকার কথা চিন্তা করছে। পুলিশ শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আশ্বাসের বিষয়ে নিশ্চিত হলে ছাড় দিতে পারে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নাকি নয়াপল্টন, বিএনপিকে কোথায় সমাবেশ করতে দেয়া হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, রাস্তায় সমাবেশ করার অনুমতি পাবে না বিএনপি। ডিএমপি কমিশনার বলেন, মাঠ ছাড়া রাস্তা-ঘাটে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাদে অন্য কোন স্থানের নাম এখনও প্রস্তাব করেনি বিএনপি।
বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, রোববার বিকেলে এ বিষয়ে আলোচনা করতে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে। সেখানে ভেন্যু নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা তা এখনও পরিষ্কার করা হয়নি কারো পক্ষ থেকে। তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ বিএনপিকে আরামবাগ মাঠে সমাবেশ করার কথা বলেছে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আরামবাগ মাঠে সমাবেশ করার মতো জায়গা নেই। কারণ ১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশে বিএনপি কয়েক লাখ লোক সমাগম করতে চায়, যা মূল চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ রোববার পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের সমাবেশের ভেন্যু নিয়ে আলোচনার বিষয়ে বলেছেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি নয়াপল্টনে সমাবেশ করব। এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। ভেন্যুর বিষয়ে তারা আলোচনা করবেন।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ এখন পর্যন্ত নয়াপল্টনেই করার সিদ্ধান্ত আছে। তবে প্রশাসন চাইলে পছন্দের জায়গার বিকল্প নাম দেবে বিএনপি। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর তুরাগ পার ছাড়া ঢাকা মহানগরীর ভেতরে সন্তোষজনক কোন স্থান হলে বিবেচনা করা হবে।
নয়াপল্টনের বিকল্প কোন জায়গা বিএনপির পছন্দ আছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের যদি বলেন আমরা পছন্দ করে দেব। কিন্তু এখন নাম বলব না।
বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কমলাপুর এলাকায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে সমাবেশের জন্য বিকল্প জায়গা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন পুলিশ যদি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে বাধা দেয় তাহলে ওই জায়গায় সমাবেশের জন্য ভাবা যেতে পারে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আলোচনাও হতে পারে।
মতিঝিলের যে কোন স্থানেই সমাবেশ করতে অনড় বিএনপি
১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশ করার বিষয়ে বিএনপি ভেন্যু নয়াপল্টনকে প্রথম পছন্দ হিসেবে এখনও বলছে। তবে শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টনে অনুমতি না পেলে মতিঝিলের মধ্যে নিরাপদ কোন স্থানে সমাবেশ করতে রাজি রয়েছে বিএনপি। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে না বিএনপি। বিএনপি সূত্র জানায়, সমাবেশের জন্য বিকল্প হিসেবে মতিঝিল ও এর আশপাশের এলাকা দলটির অগ্রাধিকার। তবে টঙ্গী, পূর্বাচল বা রাজধানী থেকে দূরের কোন স্থানের প্রস্তাব এলে সেটা মেনে নেবে না বিএনপি।
সমাবেশের জন্য নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে তৃতীয় কোন স্থানের বিষয়টি রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের আলোচনায় এসেছে। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে তার কার্যালয়ে এই বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে ছিলেন দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন (আলাল), কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি) ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ। পুলিশের পক্ষ থেকে আরও ছিলেন ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ ও মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খানসহ আরও দুজন কর্মকর্তা।
বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করার জন্য অনুরোধ করে এবং সেখানে নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়। বিএনপির প্রতিনিধি দল জানায়, তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে অনিরাপদ মনে করে। তারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চায়। বৈঠকের একপর্যায়ে নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে তৃতীয় কোন স্থানে সমাবেশ করার ব্যাপারে বিএনপি আলোচনা করতে রাজি হয়। এই পর্যায়ে আলোচনায় ঠিক হয় যে বিএনপির পক্ষ থেকে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এবং পুলিশের পক্ষ থেকে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান সম্ভাব্য তৃতীয় স্থানের বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রস্তাব করবেন।
সোমবার সন্ধায় পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন, ভেন্যু ঠিক না হলেও সমাবেশ মতিঝিলের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরামবাগ এলাকাসহ কয়েকটি জায়গা দেখা হয়েছে। বিএনপি কোনভাবেই সমাবেশের জন্য মতিঝিল এলাকার বাইরে যেতে চায় না। হয়তো যেকোন মুহূর্তে ভেন্যু ঠিক হয়ে যাবে। তবে আরামবাগ এলাকার মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে যে রাস্তা রয়েছে সেখানে জনসমাগম বেশি করার মতো জায়গা রয়েছে। কোন কারণে নয়াপল্টন সমাবেশ না হলেও বিকল্প হিসেবে ওই রাস্তায় সমাবেশ করার বিষয়ে আলোচনা হবে। এর বাইরে অন্য কোথাও সমাবেশ করা হবে না। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে আরামবাগ মাঠে সমাবেশ করার কথা বলা হলেও জায়গা ছোট হওয়ায় বিএনপি রাজি হয়নি।
বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আশ্বাসে পুলিশের ভিন্ন আশঙ্কা
এদিকে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার এ প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও সরকার বা পুলিশের ভয়টা ভিন্ন কিছুতে। পুলিশের কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন এসেছে, ১০ ডিসেম্বর বিএনপি সমাবেশ করার পরপরই রাস্তায় অবস্থান নিতে পারে। সেরকম কিছু ঘটলে পরিবেশ ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে।
গোয়েন্দা সংস্থার রাজনৈতিক কর্মকা- পর্যবেক্ষণকারী পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি সমাবেশের পর জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে রাস্তায় অবস্থান নিতে পারে বলে একটি আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য এসেছে সেখানে স্বল্পসংখ্যক লোক রাস্তায় অবরোধ তৈরি করতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সূত্র জানিয়েছে, মূলত সমাবেশের পর বিএনপি রাস্তায় অবস্থান নিতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকেই নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দিতে চায় না পুলিশ। ভিন্ন কোন স্থানে বিএনপি সমাবেশ করলে তা নিয়ন্ত্রণে নেয়া সম্ভব বলে পুলিশ মনে করছে। আর এসব কারণে সোহরাওয়ার্দী বা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এমন স্থানে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দিতে চায় পুলিশ।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশের বিকল্প জায়গার বিষয়ে মত জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলছে, পুলিশ সোহরাওয়ার্দী ও তুরাগ ছাড়া ঢাকা মহানগরীর মধ্যে অন্য নিরাপদ জায়গার কথা বললে তারা ভেবে দেখবে। পুলিশ জানতে চাইলে তেমন জায়গার নাম বলতেও রাজি বিএনপি। সোমবার বেলা একটার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী ও তুরাগ ছাড়া ঢাকা মহানগরীর মধ্যে যে জায়গায় আমরা নিরাপদ মনে করব, তেমন জায়গা যদি তারা (পুলিশ) আমাদের বলতে পারে, তাহলে আমরা চিন্তা করে দেখব। যদি না পারে আমাদের জিজ্ঞাসা করলে আমরা আমাদের স্থানটা বলে দেব, কোথায় করব।’
বিএনপির কোন পছন্দ আছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের পছন্দ থাকলেও সেটা যদি আমাদের বলতে দেন তখন আমরা বলব।’ পছন্দের জায়গার কোন তালিকা আছে কিনা, জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’
সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরে ভীতিকর অবস্থা তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, কর্মীদের নিয়ে লিফলেট বিতরণ করতে গেলে বিএনপির ঢাকা মহানগরের নেতা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের ওপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রোববার ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছেন। ইশরাক হোসেন প্রাণে বাঁচলেও তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। অসংখ্য নেতার ওপর হামলা করা হয়েছে। লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে হামলা হলে সেখানে যদি পাল্টা হামলা হয় তাহলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা আব্বাস।
সন্ত্রাস হবে সরকার আগেই প্রচার চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব। ?আমাদের কি লিফলেট বিতরণ নিষেধ! সমাবেশের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজে কি নিষেধাজ্ঞা আছে? সভাসমাবেশ করা তো আমার সাংবিধানিক অধিকার।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘একটা সভায় সরকার পতন হবে না। সরকার কেন ভয় পায়, বুঝি না।’
নয়াপল্টনের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, হামলা-মামলা বন্ধ করুন। সমাবেশে যারা অংশ নেবেন, যারা আসবেন বলে ধারণা করেছেন, সেখানে হামলা হচ্ছে অভিযোগ করে আব্বাস বলেন, ঢাকা জেলার সভাপতি আশফাকের বাসায় হামলা হয়েছে। তবে বিএনপির কর্মীরা ভীত নয় জানিয়ে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, সন্ত্রাস মোকাবিলা করেই সমাবেশ করবে বিএনপি। ৯টি সমাবেশে ছাড় দেয়া হয়েছে। বিএনপিকে আজ ছাড় দেয়া হবে না ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বাংলাদেশ কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। উনি কিছুদিন যাবৎ প্রলাপ বকছেন। এই প্রলাপ কী আমরা মেনে নেব!’
গুলশানে পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক মহাসচিবের
এদিকে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশকে ঘিরে সোমবার গুলশানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সোমবার বিকেলে বিএনপির গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।