alt

রাজনীতি

আতঙ্কিত, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২

বৃহস্পতিবার সারাদিন ছিল নয়াপল্টন ‘ক্রাইমসিন’ এলাকা। তাই নাইট এঙ্গেলের মোড় থেকে শুরু করে পুলিশ পুরো নয়াপল্টন এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখে -সংবাদ

১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে এমনিতেই আতঙ্কিত ছিল সাধারণ মানুষ। বুধবারের (৭ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনের ঘটনার পর আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সাধারণ মানুষ ‘অতি’ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়নি। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে রাজধানীজুড়ে বাড়তি চাপ থাকে। গাড়ির হর্ন আর তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ হন নগরবাসী। কিন্তু বৃহস্পতিবার ছিল এক ভিন্ন আবহ। যানবাহনের বাড়তি চাপ নেই, যানজট নেই। পুরো নগরজুড়ে চলছে যেন ‘ছুটির আমেজ’।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, সাহাবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিল ও পল্টন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে, যাত্রীবাহী বাস ও অনান্য যানবহন কম থাকার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষের।

‘সকালে রিকশা নিয়ে বারাইচি (বের হইছি) এখন সন্ধ্যা হয়া (হয়ে) যাওচে (যাচ্ছে) মাত্র ২৫০ ট্যাকা (টাকা) কামাই (আয়) করছি। এরমধ্যে গ্যারেজে রিকশার জমা (ভাড়া) দেয়া নাগবি (লাগবে) ১৪০ ট্যাকা (টাকা)। খাবারের জন্য দেয়া নাগবি (লাগবে) ১২০ ট্যাকা। সারাটা দিন কাটে (চলে) গেল আয় ইনকাম নাই। আল্লায় জানে কী হবি।’ সংবাদকে কথাগুলো বলছিলেন শওকত আলী।

কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার শওকত আলী (৪৮)। তিন দিন আগে ঢাকায় এসেছেন। প্রথম দিন বিশ্রাম নিয়েছেন, পরের দিন রিকশা পান নাই। বৃহস্পতিবার রিকশা হাতে পেয়েছেন। কিন্তু সারাদিন পরও তার খরচের টাকা হয়নি এজন্য চিন্তা করছেন। বৃহস্পতিবার বিজয়নগর মোড়ে দেখা হলে তিনি আক্ষেপ করে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সাতদিন থাকার নিয়তে ঢাকাত আনু (আসলাম)। বেটিট্যাক (মেয়েটা) কলেজোত (কলেজে) ভর্তি করাম (করাবো)। কিন্তু আয়-ইনকাম যদি না থাকে তাহলে তো বাড়িত যায়্যা (গিয়ে) সুদের ওপর ট্যাকা নিবার নাগবি (লাগবি)।’

পাশেই দাঁড়ানো গাইবান্ধার ছবেদ আলী বলেন, ‘হামরা (আমরা) তো রাজনীতির কিচ্ছু বুঝি না, ইনকাম (আয়) না করলে প্যাট (পেট) চালামো (চালাবো) কিভাবে।’

এসব এলাকায় গাড়ির চাপ অন্য দিনের তুলনায় অনেক কম। তবে সড়কে রিকশা, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির বেশি লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে গণপরিবহনে উঠতে পারলেও কেউ কেউ মোটরসাইকেল ও রিকশাযোগে গন্তব্যে রওনা হন। জনসাধারণের ধারণা; বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে যানবাহন অনেক কমেছে। বিএনপির কার্যালয়ের ঘটনার পর অনেকে আতঙ্কে বাড়তি সতর্কতা নিয়ে চলাচল করছেন। এ কারণে রাস্তায় মানুষ কম। ফলে অনেকটা ‘থমথমে নগরী’।

সাইফুল নামের এক উবার চালক বলেন, ‘সকাল থেকেই অন্যদিনের তুলনায় লোকজন কম। গন্ডোগোলের ভয়ে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছে। তাই অন্যদিনের তুলনায় রাস্তাঘাট ফাঁকা। যেখানে গুলিস্তানের যানজটেই আধাঘণ্টা লাগে, আজ ফ্লাইওভার থেকে একটানে জিপিও আসলাম। মনে হচ্ছে ছুটির দিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অর্ধেক টাকা আয় করতে পারিনি। এমন অবস্থায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আসিফ আদনান সংবাদকে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ তো শনিবার। আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় এত গাড়ি কম কেন বুঝলাম না। আমি মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল যাব কিন্ত গাড়ি পাচ্ছি না। এখন বাইকে যাবো ভাবছি। কিন্তু কেমন যেন ছুটির দিন মনে হচ্ছে।’

পলটনে আকাশ নামের আরেক পথচারী বলেন, ‘এই এলাকায় অন্যদিন রাস্তার যে অবস্থা থাকে তাতে অনেক সময় রাস্তায় হাঁটা মুশকিল হয়ে যায়। কিন্তু আজ অনেকটাই ফাঁকা। যানজট নেই। গাড়ির জটলা নেই, অনেকটা ছুটির দিনের মতো লাগছে।’

আজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে মিরপুরের বাসিন্দা জাহানারা হায়দারের মেয়ে-জামাই নাতি, নাতনি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে তিনি ‘অত্যন্ত চিন্তিত’। সমাবেশের আগের দিন কি হবে, গাড়ি চলবে কী না, ব্যক্তিগত গাড়ি বের করলে কোন সমস্যা হবে কি না এসব নিয়ে পরিচিত সবার কাছে জানতে চাইছেন। মিরপুরে সাড়ে এগারোতে বেশ কয়েকজন ছোট বড়ো ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দোকন পাট খুলবেন অবস্থা বুঝে। ঝামেলা হলেও সমাবেশস্থলে হবে মিরপুরে কিছু হবে না বলে মনে করছেন তারা। অনেকেই বললেন, আসলে ১০ তারিখ কী হবে, এ নিয়ে তারা আতঙ্কে। দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকছে। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে।

রামপুরার বাসিন্দা মো. দুলাল মিয়া নামে একজন জানান, ‘দশ তারিখ আমার মেয়ের বিয়ে ছিল। আমরা দুই পরিবার বসে আবার বিয়ের তারিখ পরিবর্তন করেছি। দশ তারিখ কী হবে জানি না, তবে আমরা এখন আতঙ্কে আছি।’ ‘বিয়ের গাড়িতে যদি কেউ হামলা করে তাহলে তো আমরা শেষ। তাই শুভ কাজে গিয়ে সবাই জীবন দিতে হতে পারে।’ বলেও জানান তিনি।

সমাবেশ নিয়ে মোহাম্মদ পুর এলাকায় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় বড়ো রকমের কোন কিছুই হবে না। তাদের ধারণা, দ্রব্যমূল্যের এই সময়ে মানুষের আন্দোলন নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। মোহাম্মদপুরের মুদি দোকানি আজিজার রহমান বলেন, ‘ওই সমাবেশ নিয়ে মাঝে মাঝে দুই দলের নেতাকর্মীদের কথাবার্তা টিভিতে দেখছি। সমস্যা যা ওইদিকে (পল্টন), এইদিকে তো কোন সমস্যা হবে না। দোকানও বন্ধ রাখাও লাগবেনা মনে হয়। তবে, কয়েকদিন ধরে বেচা-কেনার মানুষ কম। মানুষ কী ঢাকায় কম আসছে নাকি’

ঢাকার আদাবরে থেকে রিক্সা চালক আমিনুল বলেন, ‘রাজনীতি নিয়ে হামার কোন টেনশন নাই। আরও বাহে, হামার (আমার) চিন্তা বেটিটাক (মেয়ে) বিয়া কীভাবে দিম (দিব) সেটা। বিএনপির মিটিং নিয়ে চিন্তা করে মোর (আমার) লাভ আছে।’

২ বছর ধরে মোটরসাইকেল রাইড করেন কবীর উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সমাবেশ ১০ তারিখ হলেও দুই একদিন আগেই পথে পথে ঝামেলায় পড়তে হবে। তবে, ওইদিন কী হবে জানি না। ঝামেলা হলে বাড়ি থেকে বের হবো না। খামাখা ঝামেলায় পড়ে লাভ কী।’

পুরানা পল্টন এলাকার রিকশাচালক মো. ফিরোজ আলি মনে করেন, বিএনপির সমাবেশে বিশৃঙ্খলা হবে বলে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘গ্যাঞ্জাম তো লাগবেই। সারা বছরই তো এই দল ওই দল নিয়ে মারামারি কাটাকাটি লেগে থাকে। এটাই এখন রাজনীতিতে স্বাভাবিক হয়ে গেছে।’

যতই সমস্যা হোক না কেন, তিনি রিকশা নিয়ে বের হবেন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি কাজ না করি তাহলে খেতে পাবো না। দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে আমার পরিবার। আমি যদি আয় না করি তাহলে তাদেরকে খাওয়াবো কিভাবে?

‘একদল আরেক দলের সঙ্গে মারামারি করবে, আর আমাদের হবে সমস্যা।’

পুরানা পল্টনে চা বিক্রি করেন নাসির হোসেন। বিএনপির সমাবেশের দিন দোকান খুলবেন কিনা-জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘শুনছি, সেদিন নাকি সবকিছু বন্ধ থাকবে। যদি সবকিছু বন্ধ থাকে তাহলে তো দোকান খুলতে পারবো না। ’

ছবি

গুম-খুনের তালিকা তৈরির তাগিদ, আন্দোলনে নিহতদের পুনর্বাসনের ওপর গুরুত্ব খালেদা জিয়ার

ছবি

নির্বাচনের তারিখ বা সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়নি: সিইসি

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি: বিএনপির আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি থাকবেন খালেদা-তারেক

ছবি

জুলাই সনদ আদায় করেই ছাড়ব: নাহিদ ইসলাম

ছবি

আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা শুরু

ছবি

রংপুরের পথে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরু

আনুপাতিক ভোটের পক্ষে একমত হওয়ার আহ্বান ‘৬০ নাগরিকের

ছবি

‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা ২০২৫’ প্রকাশ, বাদ ডিসি-এসপি, ইভিএম সংশ্লিষ্ট ধারা

ছবি

নির্বাচিত সরকার এলে সম্পর্ক আরও গভীর হবে—চীন সফর শেষে বললেন মির্জা ফখরুল

ছবি

‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রেই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পূরণ সম্ভব’: এনসিপি আহ্বায়ক

ছবি

একজন উপদেষ্টা মুরাদনগরে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন: মির্জা ফখরুল

ছবি

“নারীর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার” — জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রশ্ন

ছবি

মুরাদনগরে হিন্দু নারী নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানাল বিএনপি

ছবি

নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাবে এখনো একমত নয় সব রাজনৈতিক দল

ছবি

নির্বাচনের সময় বিলম্বে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে: মির্জা আব্বাস

ছবি

আনুপাতিক নির্বাচন দেশের উপযোগী নয়: সালাহউদ্দিন

ছবি

‘রাষ্ট্র সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, চিরস্থায়ী নয়’— বললেন বিএনপি নেতা

ছবি

সংসদের পিআর পদ্ধতি ও আল্লাহর ওপর আস্থার দাবি তুলে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

ছবি

আলোচনা, দোয়া, গণমিছিলসহ ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে জামায়াত

ছবি

সংস্কার ও পিআর পদ্ধতির দাবিতে সোহরাওয়ার্দীতে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন উমামা ফাতেমা

ছবি

ছাত্র-জনতার গণপ্রতিরোধকে ‘মব’ বলা ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্র: হেফাজত

ছবি

হাসনাতের ভিডিও পোস্ট ঘিরে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত, দুদকের পাল্টা সতর্কতা

ছবি

বটবাহিনীর সহযোগিতায় মুনাফেকি রাজনীতি করছে জামায়াত-শিবির: ছাত্রদল সভাপতি

ছবি

হাসনাতের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তদন্তে দুদক

ছবি

স্বৈরাচার ঠেকাতে দরকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন: বিএনপি নেতা

ছবি

অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও কর্মী সভায় মারধর: এনসিপির মাদারীপুর জেলা ও সদর কমিটি স্থগিত

ছবি

‘চা-নাস্তার জন্য এক লাখ টাকা’ দাবি: মাহমুদা মিতুর অভিযোগে দুদকের প্রতিবাদ

ছবি

কে এম নূরুল হুদা হেনস্তা মামলায় জামিন পেলেন মোজাম্মেল, হানিফ ও কাইয়ুম

ছবি

“রাষ্ট্রপতি-প্রধান বিচারপতি বাদ, নিয়োগ কমিটিতে থাকছেন স্পিকার ও রাজনৈতিক নেতারা”

ছবি

ইশরাকের সমর্থকদের বিরুদ্ধে মারধর, হুমকি ও সাংবাদিক হয়রানির অভিযোগ

ছবি

দুদকের আবেদনে আদালতের আদেশ, হাছান মাহমুদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

দলের নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদনের ‘হিড়িক’

১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়: একমত জামায়াত-এনসিপি, বিএনপিসহ ৩ দলের ভিন্নমত

নিবন্ধন ও প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশনে এনসিপির আবেদন

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ: ঐকমত্যে অধিকাংশ দল, ভিন্নমত বিএনপি-এনডিএম-বিএলডিপির

tab

রাজনীতি

আতঙ্কিত, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার সারাদিন ছিল নয়াপল্টন ‘ক্রাইমসিন’ এলাকা। তাই নাইট এঙ্গেলের মোড় থেকে শুরু করে পুলিশ পুরো নয়াপল্টন এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখে -সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২

১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে এমনিতেই আতঙ্কিত ছিল সাধারণ মানুষ। বুধবারের (৭ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনের ঘটনার পর আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সাধারণ মানুষ ‘অতি’ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়নি। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে রাজধানীজুড়ে বাড়তি চাপ থাকে। গাড়ির হর্ন আর তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ হন নগরবাসী। কিন্তু বৃহস্পতিবার ছিল এক ভিন্ন আবহ। যানবাহনের বাড়তি চাপ নেই, যানজট নেই। পুরো নগরজুড়ে চলছে যেন ‘ছুটির আমেজ’।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, সাহাবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিল ও পল্টন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে, যাত্রীবাহী বাস ও অনান্য যানবহন কম থাকার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষের।

‘সকালে রিকশা নিয়ে বারাইচি (বের হইছি) এখন সন্ধ্যা হয়া (হয়ে) যাওচে (যাচ্ছে) মাত্র ২৫০ ট্যাকা (টাকা) কামাই (আয়) করছি। এরমধ্যে গ্যারেজে রিকশার জমা (ভাড়া) দেয়া নাগবি (লাগবে) ১৪০ ট্যাকা (টাকা)। খাবারের জন্য দেয়া নাগবি (লাগবে) ১২০ ট্যাকা। সারাটা দিন কাটে (চলে) গেল আয় ইনকাম নাই। আল্লায় জানে কী হবি।’ সংবাদকে কথাগুলো বলছিলেন শওকত আলী।

কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার শওকত আলী (৪৮)। তিন দিন আগে ঢাকায় এসেছেন। প্রথম দিন বিশ্রাম নিয়েছেন, পরের দিন রিকশা পান নাই। বৃহস্পতিবার রিকশা হাতে পেয়েছেন। কিন্তু সারাদিন পরও তার খরচের টাকা হয়নি এজন্য চিন্তা করছেন। বৃহস্পতিবার বিজয়নগর মোড়ে দেখা হলে তিনি আক্ষেপ করে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সাতদিন থাকার নিয়তে ঢাকাত আনু (আসলাম)। বেটিট্যাক (মেয়েটা) কলেজোত (কলেজে) ভর্তি করাম (করাবো)। কিন্তু আয়-ইনকাম যদি না থাকে তাহলে তো বাড়িত যায়্যা (গিয়ে) সুদের ওপর ট্যাকা নিবার নাগবি (লাগবি)।’

পাশেই দাঁড়ানো গাইবান্ধার ছবেদ আলী বলেন, ‘হামরা (আমরা) তো রাজনীতির কিচ্ছু বুঝি না, ইনকাম (আয়) না করলে প্যাট (পেট) চালামো (চালাবো) কিভাবে।’

এসব এলাকায় গাড়ির চাপ অন্য দিনের তুলনায় অনেক কম। তবে সড়কে রিকশা, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির বেশি লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে গণপরিবহনে উঠতে পারলেও কেউ কেউ মোটরসাইকেল ও রিকশাযোগে গন্তব্যে রওনা হন। জনসাধারণের ধারণা; বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে যানবাহন অনেক কমেছে। বিএনপির কার্যালয়ের ঘটনার পর অনেকে আতঙ্কে বাড়তি সতর্কতা নিয়ে চলাচল করছেন। এ কারণে রাস্তায় মানুষ কম। ফলে অনেকটা ‘থমথমে নগরী’।

সাইফুল নামের এক উবার চালক বলেন, ‘সকাল থেকেই অন্যদিনের তুলনায় লোকজন কম। গন্ডোগোলের ভয়ে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছে। তাই অন্যদিনের তুলনায় রাস্তাঘাট ফাঁকা। যেখানে গুলিস্তানের যানজটেই আধাঘণ্টা লাগে, আজ ফ্লাইওভার থেকে একটানে জিপিও আসলাম। মনে হচ্ছে ছুটির দিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অর্ধেক টাকা আয় করতে পারিনি। এমন অবস্থায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আসিফ আদনান সংবাদকে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ তো শনিবার। আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় এত গাড়ি কম কেন বুঝলাম না। আমি মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল যাব কিন্ত গাড়ি পাচ্ছি না। এখন বাইকে যাবো ভাবছি। কিন্তু কেমন যেন ছুটির দিন মনে হচ্ছে।’

পলটনে আকাশ নামের আরেক পথচারী বলেন, ‘এই এলাকায় অন্যদিন রাস্তার যে অবস্থা থাকে তাতে অনেক সময় রাস্তায় হাঁটা মুশকিল হয়ে যায়। কিন্তু আজ অনেকটাই ফাঁকা। যানজট নেই। গাড়ির জটলা নেই, অনেকটা ছুটির দিনের মতো লাগছে।’

আজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে মিরপুরের বাসিন্দা জাহানারা হায়দারের মেয়ে-জামাই নাতি, নাতনি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে তিনি ‘অত্যন্ত চিন্তিত’। সমাবেশের আগের দিন কি হবে, গাড়ি চলবে কী না, ব্যক্তিগত গাড়ি বের করলে কোন সমস্যা হবে কি না এসব নিয়ে পরিচিত সবার কাছে জানতে চাইছেন। মিরপুরে সাড়ে এগারোতে বেশ কয়েকজন ছোট বড়ো ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দোকন পাট খুলবেন অবস্থা বুঝে। ঝামেলা হলেও সমাবেশস্থলে হবে মিরপুরে কিছু হবে না বলে মনে করছেন তারা। অনেকেই বললেন, আসলে ১০ তারিখ কী হবে, এ নিয়ে তারা আতঙ্কে। দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকছে। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে।

রামপুরার বাসিন্দা মো. দুলাল মিয়া নামে একজন জানান, ‘দশ তারিখ আমার মেয়ের বিয়ে ছিল। আমরা দুই পরিবার বসে আবার বিয়ের তারিখ পরিবর্তন করেছি। দশ তারিখ কী হবে জানি না, তবে আমরা এখন আতঙ্কে আছি।’ ‘বিয়ের গাড়িতে যদি কেউ হামলা করে তাহলে তো আমরা শেষ। তাই শুভ কাজে গিয়ে সবাই জীবন দিতে হতে পারে।’ বলেও জানান তিনি।

সমাবেশ নিয়ে মোহাম্মদ পুর এলাকায় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় বড়ো রকমের কোন কিছুই হবে না। তাদের ধারণা, দ্রব্যমূল্যের এই সময়ে মানুষের আন্দোলন নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। মোহাম্মদপুরের মুদি দোকানি আজিজার রহমান বলেন, ‘ওই সমাবেশ নিয়ে মাঝে মাঝে দুই দলের নেতাকর্মীদের কথাবার্তা টিভিতে দেখছি। সমস্যা যা ওইদিকে (পল্টন), এইদিকে তো কোন সমস্যা হবে না। দোকানও বন্ধ রাখাও লাগবেনা মনে হয়। তবে, কয়েকদিন ধরে বেচা-কেনার মানুষ কম। মানুষ কী ঢাকায় কম আসছে নাকি’

ঢাকার আদাবরে থেকে রিক্সা চালক আমিনুল বলেন, ‘রাজনীতি নিয়ে হামার কোন টেনশন নাই। আরও বাহে, হামার (আমার) চিন্তা বেটিটাক (মেয়ে) বিয়া কীভাবে দিম (দিব) সেটা। বিএনপির মিটিং নিয়ে চিন্তা করে মোর (আমার) লাভ আছে।’

২ বছর ধরে মোটরসাইকেল রাইড করেন কবীর উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সমাবেশ ১০ তারিখ হলেও দুই একদিন আগেই পথে পথে ঝামেলায় পড়তে হবে। তবে, ওইদিন কী হবে জানি না। ঝামেলা হলে বাড়ি থেকে বের হবো না। খামাখা ঝামেলায় পড়ে লাভ কী।’

পুরানা পল্টন এলাকার রিকশাচালক মো. ফিরোজ আলি মনে করেন, বিএনপির সমাবেশে বিশৃঙ্খলা হবে বলে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘গ্যাঞ্জাম তো লাগবেই। সারা বছরই তো এই দল ওই দল নিয়ে মারামারি কাটাকাটি লেগে থাকে। এটাই এখন রাজনীতিতে স্বাভাবিক হয়ে গেছে।’

যতই সমস্যা হোক না কেন, তিনি রিকশা নিয়ে বের হবেন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি কাজ না করি তাহলে খেতে পাবো না। দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে আমার পরিবার। আমি যদি আয় না করি তাহলে তাদেরকে খাওয়াবো কিভাবে?

‘একদল আরেক দলের সঙ্গে মারামারি করবে, আর আমাদের হবে সমস্যা।’

পুরানা পল্টনে চা বিক্রি করেন নাসির হোসেন। বিএনপির সমাবেশের দিন দোকান খুলবেন কিনা-জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘শুনছি, সেদিন নাকি সবকিছু বন্ধ থাকবে। যদি সবকিছু বন্ধ থাকে তাহলে তো দোকান খুলতে পারবো না। ’

back to top