১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে এমনিতেই আতঙ্কিত ছিল সাধারণ মানুষ। বুধবারের (৭ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনের ঘটনার পর আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সাধারণ মানুষ ‘অতি’ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়নি। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে রাজধানীজুড়ে বাড়তি চাপ থাকে। গাড়ির হর্ন আর তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ হন নগরবাসী। কিন্তু বৃহস্পতিবার ছিল এক ভিন্ন আবহ। যানবাহনের বাড়তি চাপ নেই, যানজট নেই। পুরো নগরজুড়ে চলছে যেন ‘ছুটির আমেজ’।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, সাহাবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিল ও পল্টন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে, যাত্রীবাহী বাস ও অনান্য যানবহন কম থাকার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষের।
‘সকালে রিকশা নিয়ে বারাইচি (বের হইছি) এখন সন্ধ্যা হয়া (হয়ে) যাওচে (যাচ্ছে) মাত্র ২৫০ ট্যাকা (টাকা) কামাই (আয়) করছি। এরমধ্যে গ্যারেজে রিকশার জমা (ভাড়া) দেয়া নাগবি (লাগবে) ১৪০ ট্যাকা (টাকা)। খাবারের জন্য দেয়া নাগবি (লাগবে) ১২০ ট্যাকা। সারাটা দিন কাটে (চলে) গেল আয় ইনকাম নাই। আল্লায় জানে কী হবি।’ সংবাদকে কথাগুলো বলছিলেন শওকত আলী।
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার শওকত আলী (৪৮)। তিন দিন আগে ঢাকায় এসেছেন। প্রথম দিন বিশ্রাম নিয়েছেন, পরের দিন রিকশা পান নাই। বৃহস্পতিবার রিকশা হাতে পেয়েছেন। কিন্তু সারাদিন পরও তার খরচের টাকা হয়নি এজন্য চিন্তা করছেন। বৃহস্পতিবার বিজয়নগর মোড়ে দেখা হলে তিনি আক্ষেপ করে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সাতদিন থাকার নিয়তে ঢাকাত আনু (আসলাম)। বেটিট্যাক (মেয়েটা) কলেজোত (কলেজে) ভর্তি করাম (করাবো)। কিন্তু আয়-ইনকাম যদি না থাকে তাহলে তো বাড়িত যায়্যা (গিয়ে) সুদের ওপর ট্যাকা নিবার নাগবি (লাগবি)।’
পাশেই দাঁড়ানো গাইবান্ধার ছবেদ আলী বলেন, ‘হামরা (আমরা) তো রাজনীতির কিচ্ছু বুঝি না, ইনকাম (আয়) না করলে প্যাট (পেট) চালামো (চালাবো) কিভাবে।’
এসব এলাকায় গাড়ির চাপ অন্য দিনের তুলনায় অনেক কম। তবে সড়কে রিকশা, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির বেশি লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে গণপরিবহনে উঠতে পারলেও কেউ কেউ মোটরসাইকেল ও রিকশাযোগে গন্তব্যে রওনা হন। জনসাধারণের ধারণা; বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে যানবাহন অনেক কমেছে। বিএনপির কার্যালয়ের ঘটনার পর অনেকে আতঙ্কে বাড়তি সতর্কতা নিয়ে চলাচল করছেন। এ কারণে রাস্তায় মানুষ কম। ফলে অনেকটা ‘থমথমে নগরী’।
সাইফুল নামের এক উবার চালক বলেন, ‘সকাল থেকেই অন্যদিনের তুলনায় লোকজন কম। গন্ডোগোলের ভয়ে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছে। তাই অন্যদিনের তুলনায় রাস্তাঘাট ফাঁকা। যেখানে গুলিস্তানের যানজটেই আধাঘণ্টা লাগে, আজ ফ্লাইওভার থেকে একটানে জিপিও আসলাম। মনে হচ্ছে ছুটির দিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অর্ধেক টাকা আয় করতে পারিনি। এমন অবস্থায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি।’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আসিফ আদনান সংবাদকে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ তো শনিবার। আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় এত গাড়ি কম কেন বুঝলাম না। আমি মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল যাব কিন্ত গাড়ি পাচ্ছি না। এখন বাইকে যাবো ভাবছি। কিন্তু কেমন যেন ছুটির দিন মনে হচ্ছে।’
পলটনে আকাশ নামের আরেক পথচারী বলেন, ‘এই এলাকায় অন্যদিন রাস্তার যে অবস্থা থাকে তাতে অনেক সময় রাস্তায় হাঁটা মুশকিল হয়ে যায়। কিন্তু আজ অনেকটাই ফাঁকা। যানজট নেই। গাড়ির জটলা নেই, অনেকটা ছুটির দিনের মতো লাগছে।’
আজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে মিরপুরের বাসিন্দা জাহানারা হায়দারের মেয়ে-জামাই নাতি, নাতনি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে তিনি ‘অত্যন্ত চিন্তিত’। সমাবেশের আগের দিন কি হবে, গাড়ি চলবে কী না, ব্যক্তিগত গাড়ি বের করলে কোন সমস্যা হবে কি না এসব নিয়ে পরিচিত সবার কাছে জানতে চাইছেন। মিরপুরে সাড়ে এগারোতে বেশ কয়েকজন ছোট বড়ো ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দোকন পাট খুলবেন অবস্থা বুঝে। ঝামেলা হলেও সমাবেশস্থলে হবে মিরপুরে কিছু হবে না বলে মনে করছেন তারা। অনেকেই বললেন, আসলে ১০ তারিখ কী হবে, এ নিয়ে তারা আতঙ্কে। দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকছে। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে।
রামপুরার বাসিন্দা মো. দুলাল মিয়া নামে একজন জানান, ‘দশ তারিখ আমার মেয়ের বিয়ে ছিল। আমরা দুই পরিবার বসে আবার বিয়ের তারিখ পরিবর্তন করেছি। দশ তারিখ কী হবে জানি না, তবে আমরা এখন আতঙ্কে আছি।’ ‘বিয়ের গাড়িতে যদি কেউ হামলা করে তাহলে তো আমরা শেষ। তাই শুভ কাজে গিয়ে সবাই জীবন দিতে হতে পারে।’ বলেও জানান তিনি।
সমাবেশ নিয়ে মোহাম্মদ পুর এলাকায় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় বড়ো রকমের কোন কিছুই হবে না। তাদের ধারণা, দ্রব্যমূল্যের এই সময়ে মানুষের আন্দোলন নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। মোহাম্মদপুরের মুদি দোকানি আজিজার রহমান বলেন, ‘ওই সমাবেশ নিয়ে মাঝে মাঝে দুই দলের নেতাকর্মীদের কথাবার্তা টিভিতে দেখছি। সমস্যা যা ওইদিকে (পল্টন), এইদিকে তো কোন সমস্যা হবে না। দোকানও বন্ধ রাখাও লাগবেনা মনে হয়। তবে, কয়েকদিন ধরে বেচা-কেনার মানুষ কম। মানুষ কী ঢাকায় কম আসছে নাকি’
ঢাকার আদাবরে থেকে রিক্সা চালক আমিনুল বলেন, ‘রাজনীতি নিয়ে হামার কোন টেনশন নাই। আরও বাহে, হামার (আমার) চিন্তা বেটিটাক (মেয়ে) বিয়া কীভাবে দিম (দিব) সেটা। বিএনপির মিটিং নিয়ে চিন্তা করে মোর (আমার) লাভ আছে।’
২ বছর ধরে মোটরসাইকেল রাইড করেন কবীর উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সমাবেশ ১০ তারিখ হলেও দুই একদিন আগেই পথে পথে ঝামেলায় পড়তে হবে। তবে, ওইদিন কী হবে জানি না। ঝামেলা হলে বাড়ি থেকে বের হবো না। খামাখা ঝামেলায় পড়ে লাভ কী।’
পুরানা পল্টন এলাকার রিকশাচালক মো. ফিরোজ আলি মনে করেন, বিএনপির সমাবেশে বিশৃঙ্খলা হবে বলে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘গ্যাঞ্জাম তো লাগবেই। সারা বছরই তো এই দল ওই দল নিয়ে মারামারি কাটাকাটি লেগে থাকে। এটাই এখন রাজনীতিতে স্বাভাবিক হয়ে গেছে।’
যতই সমস্যা হোক না কেন, তিনি রিকশা নিয়ে বের হবেন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি কাজ না করি তাহলে খেতে পাবো না। দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে আমার পরিবার। আমি যদি আয় না করি তাহলে তাদেরকে খাওয়াবো কিভাবে?
‘একদল আরেক দলের সঙ্গে মারামারি করবে, আর আমাদের হবে সমস্যা।’
পুরানা পল্টনে চা বিক্রি করেন নাসির হোসেন। বিএনপির সমাবেশের দিন দোকান খুলবেন কিনা-জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘শুনছি, সেদিন নাকি সবকিছু বন্ধ থাকবে। যদি সবকিছু বন্ধ থাকে তাহলে তো দোকান খুলতে পারবো না। ’
বৃহস্পতিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২
১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে এমনিতেই আতঙ্কিত ছিল সাধারণ মানুষ। বুধবারের (৭ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনের ঘটনার পর আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সাধারণ মানুষ ‘অতি’ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়নি। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে রাজধানীজুড়ে বাড়তি চাপ থাকে। গাড়ির হর্ন আর তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ হন নগরবাসী। কিন্তু বৃহস্পতিবার ছিল এক ভিন্ন আবহ। যানবাহনের বাড়তি চাপ নেই, যানজট নেই। পুরো নগরজুড়ে চলছে যেন ‘ছুটির আমেজ’।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, সাহাবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিল ও পল্টন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে, যাত্রীবাহী বাস ও অনান্য যানবহন কম থাকার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষের।
‘সকালে রিকশা নিয়ে বারাইচি (বের হইছি) এখন সন্ধ্যা হয়া (হয়ে) যাওচে (যাচ্ছে) মাত্র ২৫০ ট্যাকা (টাকা) কামাই (আয়) করছি। এরমধ্যে গ্যারেজে রিকশার জমা (ভাড়া) দেয়া নাগবি (লাগবে) ১৪০ ট্যাকা (টাকা)। খাবারের জন্য দেয়া নাগবি (লাগবে) ১২০ ট্যাকা। সারাটা দিন কাটে (চলে) গেল আয় ইনকাম নাই। আল্লায় জানে কী হবি।’ সংবাদকে কথাগুলো বলছিলেন শওকত আলী।
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার শওকত আলী (৪৮)। তিন দিন আগে ঢাকায় এসেছেন। প্রথম দিন বিশ্রাম নিয়েছেন, পরের দিন রিকশা পান নাই। বৃহস্পতিবার রিকশা হাতে পেয়েছেন। কিন্তু সারাদিন পরও তার খরচের টাকা হয়নি এজন্য চিন্তা করছেন। বৃহস্পতিবার বিজয়নগর মোড়ে দেখা হলে তিনি আক্ষেপ করে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সাতদিন থাকার নিয়তে ঢাকাত আনু (আসলাম)। বেটিট্যাক (মেয়েটা) কলেজোত (কলেজে) ভর্তি করাম (করাবো)। কিন্তু আয়-ইনকাম যদি না থাকে তাহলে তো বাড়িত যায়্যা (গিয়ে) সুদের ওপর ট্যাকা নিবার নাগবি (লাগবি)।’
পাশেই দাঁড়ানো গাইবান্ধার ছবেদ আলী বলেন, ‘হামরা (আমরা) তো রাজনীতির কিচ্ছু বুঝি না, ইনকাম (আয়) না করলে প্যাট (পেট) চালামো (চালাবো) কিভাবে।’
এসব এলাকায় গাড়ির চাপ অন্য দিনের তুলনায় অনেক কম। তবে সড়কে রিকশা, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির বেশি লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে গণপরিবহনে উঠতে পারলেও কেউ কেউ মোটরসাইকেল ও রিকশাযোগে গন্তব্যে রওনা হন। জনসাধারণের ধারণা; বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে যানবাহন অনেক কমেছে। বিএনপির কার্যালয়ের ঘটনার পর অনেকে আতঙ্কে বাড়তি সতর্কতা নিয়ে চলাচল করছেন। এ কারণে রাস্তায় মানুষ কম। ফলে অনেকটা ‘থমথমে নগরী’।
সাইফুল নামের এক উবার চালক বলেন, ‘সকাল থেকেই অন্যদিনের তুলনায় লোকজন কম। গন্ডোগোলের ভয়ে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছে। তাই অন্যদিনের তুলনায় রাস্তাঘাট ফাঁকা। যেখানে গুলিস্তানের যানজটেই আধাঘণ্টা লাগে, আজ ফ্লাইওভার থেকে একটানে জিপিও আসলাম। মনে হচ্ছে ছুটির দিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অর্ধেক টাকা আয় করতে পারিনি। এমন অবস্থায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি।’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আসিফ আদনান সংবাদকে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ তো শনিবার। আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় এত গাড়ি কম কেন বুঝলাম না। আমি মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল যাব কিন্ত গাড়ি পাচ্ছি না। এখন বাইকে যাবো ভাবছি। কিন্তু কেমন যেন ছুটির দিন মনে হচ্ছে।’
পলটনে আকাশ নামের আরেক পথচারী বলেন, ‘এই এলাকায় অন্যদিন রাস্তার যে অবস্থা থাকে তাতে অনেক সময় রাস্তায় হাঁটা মুশকিল হয়ে যায়। কিন্তু আজ অনেকটাই ফাঁকা। যানজট নেই। গাড়ির জটলা নেই, অনেকটা ছুটির দিনের মতো লাগছে।’
আজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে মিরপুরের বাসিন্দা জাহানারা হায়দারের মেয়ে-জামাই নাতি, নাতনি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে তিনি ‘অত্যন্ত চিন্তিত’। সমাবেশের আগের দিন কি হবে, গাড়ি চলবে কী না, ব্যক্তিগত গাড়ি বের করলে কোন সমস্যা হবে কি না এসব নিয়ে পরিচিত সবার কাছে জানতে চাইছেন। মিরপুরে সাড়ে এগারোতে বেশ কয়েকজন ছোট বড়ো ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দোকন পাট খুলবেন অবস্থা বুঝে। ঝামেলা হলেও সমাবেশস্থলে হবে মিরপুরে কিছু হবে না বলে মনে করছেন তারা। অনেকেই বললেন, আসলে ১০ তারিখ কী হবে, এ নিয়ে তারা আতঙ্কে। দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকছে। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে।
রামপুরার বাসিন্দা মো. দুলাল মিয়া নামে একজন জানান, ‘দশ তারিখ আমার মেয়ের বিয়ে ছিল। আমরা দুই পরিবার বসে আবার বিয়ের তারিখ পরিবর্তন করেছি। দশ তারিখ কী হবে জানি না, তবে আমরা এখন আতঙ্কে আছি।’ ‘বিয়ের গাড়িতে যদি কেউ হামলা করে তাহলে তো আমরা শেষ। তাই শুভ কাজে গিয়ে সবাই জীবন দিতে হতে পারে।’ বলেও জানান তিনি।
সমাবেশ নিয়ে মোহাম্মদ পুর এলাকায় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় বড়ো রকমের কোন কিছুই হবে না। তাদের ধারণা, দ্রব্যমূল্যের এই সময়ে মানুষের আন্দোলন নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। মোহাম্মদপুরের মুদি দোকানি আজিজার রহমান বলেন, ‘ওই সমাবেশ নিয়ে মাঝে মাঝে দুই দলের নেতাকর্মীদের কথাবার্তা টিভিতে দেখছি। সমস্যা যা ওইদিকে (পল্টন), এইদিকে তো কোন সমস্যা হবে না। দোকানও বন্ধ রাখাও লাগবেনা মনে হয়। তবে, কয়েকদিন ধরে বেচা-কেনার মানুষ কম। মানুষ কী ঢাকায় কম আসছে নাকি’
ঢাকার আদাবরে থেকে রিক্সা চালক আমিনুল বলেন, ‘রাজনীতি নিয়ে হামার কোন টেনশন নাই। আরও বাহে, হামার (আমার) চিন্তা বেটিটাক (মেয়ে) বিয়া কীভাবে দিম (দিব) সেটা। বিএনপির মিটিং নিয়ে চিন্তা করে মোর (আমার) লাভ আছে।’
২ বছর ধরে মোটরসাইকেল রাইড করেন কবীর উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সমাবেশ ১০ তারিখ হলেও দুই একদিন আগেই পথে পথে ঝামেলায় পড়তে হবে। তবে, ওইদিন কী হবে জানি না। ঝামেলা হলে বাড়ি থেকে বের হবো না। খামাখা ঝামেলায় পড়ে লাভ কী।’
পুরানা পল্টন এলাকার রিকশাচালক মো. ফিরোজ আলি মনে করেন, বিএনপির সমাবেশে বিশৃঙ্খলা হবে বলে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘গ্যাঞ্জাম তো লাগবেই। সারা বছরই তো এই দল ওই দল নিয়ে মারামারি কাটাকাটি লেগে থাকে। এটাই এখন রাজনীতিতে স্বাভাবিক হয়ে গেছে।’
যতই সমস্যা হোক না কেন, তিনি রিকশা নিয়ে বের হবেন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি কাজ না করি তাহলে খেতে পাবো না। দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে আমার পরিবার। আমি যদি আয় না করি তাহলে তাদেরকে খাওয়াবো কিভাবে?
‘একদল আরেক দলের সঙ্গে মারামারি করবে, আর আমাদের হবে সমস্যা।’
পুরানা পল্টনে চা বিক্রি করেন নাসির হোসেন। বিএনপির সমাবেশের দিন দোকান খুলবেন কিনা-জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘শুনছি, সেদিন নাকি সবকিছু বন্ধ থাকবে। যদি সবকিছু বন্ধ থাকে তাহলে তো দোকান খুলতে পারবো না। ’