কামরুন্নাহার
দেশের এক-পঞ্চমাংশ ধান উৎপাদন হয় হাওর এলাকায়
সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ ও ব্র্াহ্মণবাড়িয়া হচ্ছে হাওরবেষ্টিত জেলা। এই সাত জেলার মোট জমির পরিমাণ ১৯ লাখ ৩৭ হাজার হেক্টর। হাওরের সংখ্যা মোট ৩৭৩টি। এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ বোরো ধান উৎপাদিত হয়। এছাড়া আউশ ও আমন ধান হয়ে থাকে। পরিবেশ, জীবজগত ও উদ্ভিদজগত এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য হাওর মূলবান। এগুলো স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কিত। হাওর কৃষক, জেলে ও নৌকা চালকের মতো বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত লাখ লাখ মানুষের জীবিকাকে সমর্থন করে। এটি মাছের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির আঁধার। হাওর থেকে দেশের মৎস্যের শতকরা ২৫ ভাগ আহরণ করা হয়। এখানে প্রায় ১,২৭,৪৮২ হেক্টর মৎস চাষের এলাকা রয়েছে। যেখানে প্রায় প্রতি বছর ৫৭,১১৯ টন মাছ উৎপাদন হয়। দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় অনেক মাছ এখনও এই হাওরে টিকে আছে। এখানে মিঠা পানির মাছ প্রায় ১৫০ প্রজাতির। তাই হাওর অঞ্চলকে দারিদ্র ও দুর্যোগের দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত করতে এখাতের উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাওর অঞ্চল এক ফসলি এলাকা। বোরো ধান চাষ এই অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। এখানে ৭,১০,০০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫.৩ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদিত হয়। যা জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ১৬ শতাংশ এবং গড়ে জাতীয় জিডিপির ৬.৮ শতাংশ। এখানে স্বল্পমেয়াদি ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে এবং যান্ত্রিক চাষ অনুস্মরণ করে বন্যার আগাম প্রভাব এড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। এই প্রচেষ্টা যদি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে কৃষকদের অল্প সময়ের মধ্যে ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা যাবে। হাওর মহাপরিকল্পনার অনেক প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে, যা কার্যকর হলে দারিদ্র পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে। স্থানীয় সরকার ফসল চাষের জন্য কৃষকদের সুদমুক্ত বা স্বল্প সুদে ঋণ দিতে পারে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে হাওর অঞ্চলের ফসল আমাদের দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। হাওর দেশের এক-পঞ্চমাংশ ধান উৎপাদন করে সারাদেশের মানুষের খাদ্যের জোগান দিচ্ছে। ব্যাপক ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে। বছরে একটি মাত্র ফসল হলেও প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ টন ধান উৎপাদন করে হাওর। এই সীমাহীন বিশাল হাওরের দুঃখ কিংবা গর্ব যাই হোক বলা হয়ে থাকে-‘এক ফসলি ধান; হাওরবাসীর প্রাণ। বিরল এই বিচিত্র দেশী জাতের অনেক ধান এখনও এ হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত হয়। কৃষিবিদের মতে, দেশে আবাদযোগ্য পতিত জমিসহ উপকূল ও হাওর অঞ্চলের এক ফসলি জমিকে দুই বা তিন ফসলি জমিতে পরিণত করতে পারলে বছরে ৫০ লাখ টন বাড়তি খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব হতো।
এখনও এ হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত হয়। কৃষিবিদের মতে, দেশে আবাদযোগ্য পতিত জমিসহ উপকূল ও হাওর অঞ্চলের এক ফসলি জমিকে দুই বা তিন ফসলি জমিতে পরিণত করতে পারলে বছরে ৫০ লাখ টন বাড়তি খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব হতো। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় হাওরাঞ্চলের অনবদ্য অবদান ও ভূমিকার জন্য আগামীদিনের খাদ্য ও মৎস ভান্ডার হিসেবে হাওরাঞ্চলকে স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে। বিশালকার এই প্রাকৃতিক পলল ভূমির জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি হলেও গুরুত্ব অনুধাবনের অবহেলায় আজও একটি ‘হাওরবিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠিত হয়নি। পাহাড়ের পলিবাহিত পানিকে হাওরের শত্রু না ভেবে অকাল বন্যার কবল থেকে ফসল রক্ষার উৎপাদন সময় কমিয়ে বা এগিয়ে আনার কথা ভাবতে হবে। কম সময়ে উন্নত জাতের অধিক ফলনশীল ধান চাষ করা দরকার। চীনের দুঃখ হোয়াংহু নদী আর হাওরবাসীর দুঃখ বাঁধ। বাঁধগুলোকে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের নেতৃত্বে স্থায়ীভাবে নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে। মেঘালয় থেকে আগত ঢলের পানি যে স্থানটিতে প্রথমে এসে পড়ে সেখানটায় মাটি খনন করে জলাধার বানাতে হবে। তাহলে প্রথমে পানির ঢল এসে সেখানে জমা হবে এবং পানি প্রবাহের চাপ কমবে। হাওরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী, খাল-বিল, ডোবা, খন্তাগুলো খনন এবং অকাল বন্যারোধী বাঁধগুলো স্থায়ীভাবে নির্মাণ করলে হাওরের ৮০ ভাগ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বাংলাদেশেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পেছনে হাওরবাসীর অনন্য অবদান রয়েছে। দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ৩০-৩৫ শতাংশ মাছের সরবরাহ আসে এই হাওরের পাললিক জলাশয় থেকে। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অনেকদিন হাওর ছিল দৃষ্টির আড়ালে। প্রধানমন্ত্রী হাওরে খাদ্য উৎপাদন নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন হাওরবাসীর প্রত্যাশা সমন্বিত ও পরিকল্পিত উপায়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে ১০ বছরে পাল্টে যাবে হাওরের অর্থনৈতিক চেহারা। হাওরাঞ্চলের কিশোরী ও নারীদের কর্মমুখী করার জন্য হাঁস, মুরগি, কবুতরসহ গৃহপালিত পশু পালনসহ হস্ত ও কুটির শিল্পখাতে নারীদের উৎসাহিত করা যেতে পারে। ধান, মাছ, গবাদিপশু, পাখি, জলজ প্রাণী, জীববৈচিত্র্য, পর্যটন, কালোমাটি, জ্বালানি কাঠ, বালি, পাথর, মুক্তাসহ আরো অনেক অজানা সম্পদ লুকিয়ে আছে হাওরের মাটির নিচে। হাওর প্রকৃতির অপরূপ লীলা নিকেতন, ফলে প্রতিক্ষণ উপভোগ্য। বৈশাখের ফসল তোলার মৌসুমে প্রকৃতির নতুন রূপ, হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার ব্যস্ততা প্রকৃতিবান্ধব সারল্যে ভরপুর। শীতে কুয়াশাচ্ছন্ন হাওরের অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরণ। বর্ষায় হাওরের মধ্যে ছোট ছোট দ্বীপের মতো বাড়িগুলো অপূর্ব সুন্দর লাগে। শেষ বিকেলের সূর্যাস্তের মায়াবতী দৃশ্য কিংবা বিকেলের স্নিগ্ধতায় দূরের পাহাড়ের হৃদয়কাড়া সৌন্দর্য সবকিছুকে বিধাতা যেন অঢেল অকৃপণ হাতে সাজিয়েছেন। বিশাল এই হাওরকে কেন্দ্র করে আমাদের পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ হতে পারে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগমে। মোট কথা, প্রকল্পভিত্তিক বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলে হাওরের প্রকৃতি ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে। হাওরের দিগন্ত বিস্মৃত মুক্ত এলাকাজুড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে লুক্কায়িত সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলে কাজে লাগালে দেশের অথনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
[লেখক: প্রভাষক, অর্থনীতি, মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজ, নেত্রকোণা]
কামরুন্নাহার
দেশের এক-পঞ্চমাংশ ধান উৎপাদন হয় হাওর এলাকায়
শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ ও ব্র্াহ্মণবাড়িয়া হচ্ছে হাওরবেষ্টিত জেলা। এই সাত জেলার মোট জমির পরিমাণ ১৯ লাখ ৩৭ হাজার হেক্টর। হাওরের সংখ্যা মোট ৩৭৩টি। এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ বোরো ধান উৎপাদিত হয়। এছাড়া আউশ ও আমন ধান হয়ে থাকে। পরিবেশ, জীবজগত ও উদ্ভিদজগত এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য হাওর মূলবান। এগুলো স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কিত। হাওর কৃষক, জেলে ও নৌকা চালকের মতো বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত লাখ লাখ মানুষের জীবিকাকে সমর্থন করে। এটি মাছের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির আঁধার। হাওর থেকে দেশের মৎস্যের শতকরা ২৫ ভাগ আহরণ করা হয়। এখানে প্রায় ১,২৭,৪৮২ হেক্টর মৎস চাষের এলাকা রয়েছে। যেখানে প্রায় প্রতি বছর ৫৭,১১৯ টন মাছ উৎপাদন হয়। দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় অনেক মাছ এখনও এই হাওরে টিকে আছে। এখানে মিঠা পানির মাছ প্রায় ১৫০ প্রজাতির। তাই হাওর অঞ্চলকে দারিদ্র ও দুর্যোগের দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত করতে এখাতের উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাওর অঞ্চল এক ফসলি এলাকা। বোরো ধান চাষ এই অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। এখানে ৭,১০,০০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫.৩ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদিত হয়। যা জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ১৬ শতাংশ এবং গড়ে জাতীয় জিডিপির ৬.৮ শতাংশ। এখানে স্বল্পমেয়াদি ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে এবং যান্ত্রিক চাষ অনুস্মরণ করে বন্যার আগাম প্রভাব এড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। এই প্রচেষ্টা যদি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে কৃষকদের অল্প সময়ের মধ্যে ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা যাবে। হাওর মহাপরিকল্পনার অনেক প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে, যা কার্যকর হলে দারিদ্র পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে। স্থানীয় সরকার ফসল চাষের জন্য কৃষকদের সুদমুক্ত বা স্বল্প সুদে ঋণ দিতে পারে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে হাওর অঞ্চলের ফসল আমাদের দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। হাওর দেশের এক-পঞ্চমাংশ ধান উৎপাদন করে সারাদেশের মানুষের খাদ্যের জোগান দিচ্ছে। ব্যাপক ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে। বছরে একটি মাত্র ফসল হলেও প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ টন ধান উৎপাদন করে হাওর। এই সীমাহীন বিশাল হাওরের দুঃখ কিংবা গর্ব যাই হোক বলা হয়ে থাকে-‘এক ফসলি ধান; হাওরবাসীর প্রাণ। বিরল এই বিচিত্র দেশী জাতের অনেক ধান এখনও এ হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত হয়। কৃষিবিদের মতে, দেশে আবাদযোগ্য পতিত জমিসহ উপকূল ও হাওর অঞ্চলের এক ফসলি জমিকে দুই বা তিন ফসলি জমিতে পরিণত করতে পারলে বছরে ৫০ লাখ টন বাড়তি খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব হতো।
এখনও এ হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত হয়। কৃষিবিদের মতে, দেশে আবাদযোগ্য পতিত জমিসহ উপকূল ও হাওর অঞ্চলের এক ফসলি জমিকে দুই বা তিন ফসলি জমিতে পরিণত করতে পারলে বছরে ৫০ লাখ টন বাড়তি খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব হতো। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় হাওরাঞ্চলের অনবদ্য অবদান ও ভূমিকার জন্য আগামীদিনের খাদ্য ও মৎস ভান্ডার হিসেবে হাওরাঞ্চলকে স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে। বিশালকার এই প্রাকৃতিক পলল ভূমির জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি হলেও গুরুত্ব অনুধাবনের অবহেলায় আজও একটি ‘হাওরবিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠিত হয়নি। পাহাড়ের পলিবাহিত পানিকে হাওরের শত্রু না ভেবে অকাল বন্যার কবল থেকে ফসল রক্ষার উৎপাদন সময় কমিয়ে বা এগিয়ে আনার কথা ভাবতে হবে। কম সময়ে উন্নত জাতের অধিক ফলনশীল ধান চাষ করা দরকার। চীনের দুঃখ হোয়াংহু নদী আর হাওরবাসীর দুঃখ বাঁধ। বাঁধগুলোকে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের নেতৃত্বে স্থায়ীভাবে নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে। মেঘালয় থেকে আগত ঢলের পানি যে স্থানটিতে প্রথমে এসে পড়ে সেখানটায় মাটি খনন করে জলাধার বানাতে হবে। তাহলে প্রথমে পানির ঢল এসে সেখানে জমা হবে এবং পানি প্রবাহের চাপ কমবে। হাওরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী, খাল-বিল, ডোবা, খন্তাগুলো খনন এবং অকাল বন্যারোধী বাঁধগুলো স্থায়ীভাবে নির্মাণ করলে হাওরের ৮০ ভাগ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বাংলাদেশেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পেছনে হাওরবাসীর অনন্য অবদান রয়েছে। দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ৩০-৩৫ শতাংশ মাছের সরবরাহ আসে এই হাওরের পাললিক জলাশয় থেকে। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অনেকদিন হাওর ছিল দৃষ্টির আড়ালে। প্রধানমন্ত্রী হাওরে খাদ্য উৎপাদন নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন হাওরবাসীর প্রত্যাশা সমন্বিত ও পরিকল্পিত উপায়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে ১০ বছরে পাল্টে যাবে হাওরের অর্থনৈতিক চেহারা। হাওরাঞ্চলের কিশোরী ও নারীদের কর্মমুখী করার জন্য হাঁস, মুরগি, কবুতরসহ গৃহপালিত পশু পালনসহ হস্ত ও কুটির শিল্পখাতে নারীদের উৎসাহিত করা যেতে পারে। ধান, মাছ, গবাদিপশু, পাখি, জলজ প্রাণী, জীববৈচিত্র্য, পর্যটন, কালোমাটি, জ্বালানি কাঠ, বালি, পাথর, মুক্তাসহ আরো অনেক অজানা সম্পদ লুকিয়ে আছে হাওরের মাটির নিচে। হাওর প্রকৃতির অপরূপ লীলা নিকেতন, ফলে প্রতিক্ষণ উপভোগ্য। বৈশাখের ফসল তোলার মৌসুমে প্রকৃতির নতুন রূপ, হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার ব্যস্ততা প্রকৃতিবান্ধব সারল্যে ভরপুর। শীতে কুয়াশাচ্ছন্ন হাওরের অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরণ। বর্ষায় হাওরের মধ্যে ছোট ছোট দ্বীপের মতো বাড়িগুলো অপূর্ব সুন্দর লাগে। শেষ বিকেলের সূর্যাস্তের মায়াবতী দৃশ্য কিংবা বিকেলের স্নিগ্ধতায় দূরের পাহাড়ের হৃদয়কাড়া সৌন্দর্য সবকিছুকে বিধাতা যেন অঢেল অকৃপণ হাতে সাজিয়েছেন। বিশাল এই হাওরকে কেন্দ্র করে আমাদের পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ হতে পারে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগমে। মোট কথা, প্রকল্পভিত্তিক বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলে হাওরের প্রকৃতি ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে। হাওরের দিগন্ত বিস্মৃত মুক্ত এলাকাজুড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে লুক্কায়িত সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলে কাজে লাগালে দেশের অথনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
[লেখক: প্রভাষক, অর্থনীতি, মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজ, নেত্রকোণা]