শঙ্কর প্রসাদ দে
জি-২০ হলো বিশ্ব মোড়লদের ক্লাব। সোজা কথায়, জি-২০ নেতৃত্বের ইশারায় পৃথিবীব্যাপী অর্থনীতি, কূটনীতি, রাজনীতি ও সমর ক্ষমতার প্রয়োগ আজকের বাস্তবতা। গত ৯-১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জোটটির শীর্ষ সম্মেলন। সদস্য দেশ ২০টি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বাংলাদেশসহ ৯টি আমন্ত্রিত দেশ ও ১১টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রপ্রধানদের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এক নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান। এটি সৌজন্যমূলক অনুষ্ঠান হলেও আমন্ত্রণপত্রে দ্রৌপদী মুর্মুকে ইন্ডিয়ার পরিবর্তে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিটি উপমহাদেশের অতীত বর্তমানকে সামনে নিয়ে এসেছে এবং উপমহাদেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যেতে পারে তারও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
ভারতের বর্তমান শাসক দল বিজেপির অভিযোগ হলো- প্রাচীনকালের বা মধ্যযুগের কোন পর্যায়ে ইন্ডিয়া নামের অস্তিত্ব ছিল না। এমনকি দশম শতক থেকে শুরু হওয়া সুলতানাত ও মুঘল আমলেও ইন্ডিয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। মুসলিম শাসকরা হিন্দুস্তান নামেই শাসন চালিয়েছেন।
বলা হয়ে থাকে- ইতালিয়ান নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ সালের আগস্টে ইন্ডিয়া যাতায়াতের সহজ সাগরপথ আবিষ্কারের জন্য রানী ইসাবেলার দেয়া ৩টি জাহাজ নিয়ে নোঙর তুলেছিলেন। ভিন্নমত হলো- তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাতায়াতের নৌপথ আবিষ্কারের জন্য নোঙর তুলেছিলেন। অথচ বাহামা দ্বীপে পৌঁছে দেখলেন এটি ইন্ডিয়া নয় এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজও নয়। এইটিই আজকের আমেরিকা।
ল্যাটিন ভাষা থেকে ইন্ডিয়া শব্দের উৎপত্তি। প্রাচীন গ্রিকরা সিন্ধু নদের অববাহিকার অধিবাসীদের ‘ইন্দাস’ বলতো। ধারণা করা যায় ‘ইন্দাস’ শব্দ থেকে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দের উৎপত্তি। বুঝা যাচ্ছে ইউরোপ হচ্ছে ইন্ডিয়া শব্দের আঁতুড়ঘর। ১৬০০ খৃষ্টাব্দে বেশ কিছু বৃটিশ ব্যবসায়ী ভারতবর্ষে ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’। আসলে কোম্পানিটি নিবন্ধনের সময় বঙ্গোঁপসাগরের উপকূলীয় বন্দর চট্টগ্রাম কলকাতা ও মাদ্রাজকে লক্ষ্য করে মেমোরেন্ডাম দাখিল করে। পুরো ভাতরবর্ষে ব্যবসা করা যাবে এমন কিছু মাথায় থাকলে কোম্পানির নাম হয়তো ‘ইন্ডিয়া কোম্পানি’ রাখা হতো।
যাই হোক, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্ষমতা নিয়ে ফার্সির পরিবর্তে ইংরেজি প্রচলন শুরু করে। এর অবধারিত ফল হলো মুঘলদের ব্যবহৃত হিন্দুস্তান শব্দের পরিবর্তে ইন্ডিয়া শব্দের ব্যবহার। বর্তমান বিজেপি নেতৃত্ব মনে করে ইন্ডিয়া শব্দটি গোটা জাতীয় পরিচয়কে সংকটে ফেলেছে। ভারতবর্ষ ইংরেজ আমল ছাড়া কখনই ইন্ডিয়া ছিল না। সমালোচকরা বলতে চাইছেন ইন্ডিয়া শব্দটি পরিবর্তন করে মোদি সরকার হিন্দুত্ববাদী দর্শনের রাষ্ট্রীয় চরিত্র দিতে চাইছে। এ সমালোচনা ধোপে টিপে না। তেমনটা হলে ইন্ডিয়া শব্দটি বাদ দিয়ে হিন্দুস্তান শব্দটি প্রতিস্থাপনের উদ্যেগ নেয়া হতো।
আসলে বিজেপি সরকার প্রাচীন ইতিহাসকে সামনে আনতে চাইছে। বোম্বাই বাদ দিয়ে মুম্বাই, মাদ্রাজ বাদ দিয়ে চেন্নাই নাম পুনর্বহাল করার মধ্যে ধর্মীয় কোন গন্ধ নেই। আছে শুধু ইতিহাস ঐতিহ্য আর মর্যাদাবোধের পুনরুত্থান। একই কথা ইন্ডিয়া বাদ দিয়ে ভারত শব্দটি বেছে নেয়ার মধ্যে ধর্ম নেই, আছে ইতিহাস, যা এক হাজার বছরের বিদেশী শাসকদের হাতে অপহৃত ও লাঞ্ছিত হয়েছে।
ভারত শব্দ ভারতবর্ষ শব্দটির সংক্ষিপ্ত রূপ। সম্রাট ভরত কোন ধর্মীয় ঋষি বা সন্ন্যাসী ছিলেন না। মহাভারতের বিখ্যাত চরিত্র বনকন্যা শকুন্তলাকে দেখে হরিণ শিকারে ব্যস্ত রাজা দুষ্মন্ত উতলা হলেন। রাজদৃষ্টি বলে কথা। গান্ধর্ব রীতি অর্থাৎ মালা বদলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে শকুন্তলাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলেন এবং যথাসময়ে আশ্রমে জন্ম নেয়া রাজপুত্রের নাম রাখা হলো ভরত। পিতা দুষ্মন্তের রাজ্য অত বড় ছিল না।
ভরত সিংহাসনে বসে সাম্রাজ্যের পরিধি বিস্তৃত করলেন আফগানিস্তান থেকে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত। ভরত বংশের অপর নাম কুরুবংশ। ব্রহ্ম দেশ থেকে তিব্বত পর্যন্ত পাহাড়ি ভূমির মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি। রাজা ভরত নিজেই সাম্রাজ্যের নাম রেখেছিলেন ভারতবর্ষ। অবশ্য পরবর্তী সময়ে আর্য নৃপতিরা ভারতবর্ষের পরিধি ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত করে। এ পর্বে এসে ভারতবর্ষ ও ইন্দোচীন মিলে সাম্রাজ্যের নাম হয় আর্যাবর্ত। এজন্য এখনো থাই রাজপরিবারের পদবি ‘রাম’। মালয়েশিয়ায়, বালিতে, কম্বুডিয়ায় হিন্দু মন্দির দেখলে বুঝা যায়, এক সময় দক্ষিণ এশিয়ায় ছিল কার্যত ভারতীয় শাসন ব্যবস্থা।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের। খ্রিস্টীয় ১ম সহস্রাব্দে খ্রিস্টান, ইহুদি, জরথুষ্ট্রবাদ (অগ্নি উপাসক) ইসলাম এসেছে নিজ নিজ প্রয়োজনে। প্রয়োজনটা ছিল মূলত ব্যবসায়ীক। বহুধা বিভক্ত সামন্ত রাজারা সমর বিদ্যায় পিছিয়ে ছিল বলে পরাজিত হয় মুসলমানদের হাতে। মুসলিম নৃপতিরা ভারতবর্ষ নাম পাল্টিয়ে নাম রাখল হিন্দুস্তান। জিজিয়া করের মতো এই নাম পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন ছিল না।
অষ্টম শতকে শঙ্করার্য বৌদ্ধদের ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত না করলে ইতিহাস অন্যরকম হতো। হিন্দু-বৌদ্ধ প্রতিরোধের মুখে মুসলিম আক্রমণকারীদের পিছু হঠার সম্ভাবনা থাকত। যাই হোক মুসলমানদের হাত থেকে ব্রিটিশ ক্ষমতা নিয়ে ইংরেজি চালু করায় আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সঙ্গে ভারতীদের পরিচয় ঘটে। সমস্যা দেখা দিল ইতিহাস ঐতিহ্যে। হিন্দুদের বেদ, মুসলমানদের কোরআন ও বৌদ্ধদের ত্রিপিটকে জ্ঞান বিজ্ঞানের যেটুকু আভাস ছিল তা উপেক্ষিত হলো।
আমাদের দেশের মতো ভারতেও রাষ্ট্রপতি পদটি নিতান্তই সাংবিধানিক। মন্ত্রিপরিষদ যা সিদ্ধান্ত নেয় রাষ্ট্রপতি তা পাঠ করে থাকেন বা দস্তখত দিয়ে থাকেন। বুঝা যাচ্ছে ভারতীয় মন্ত্রিসভা দেশের নাম ইন্ডিয়া সংশোধন করে ভারত রাখতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে স্বল্প সময়ের জন্য সংসদ অধিবেশনও আহ্বান করা হয়েছে। ধরে নেয়া হচ্ছে এই অধিবেশনে ইন্ডিয়া পরিবর্তিত হবে ভারত নামে। আধুনিক ভারত ফিরে পাবে তার হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। ধর্মীয় অনুভূতি বা চরম পন্থার বালাই এখানে পুরোপুরিই অনুপস্থিত। কারণ শকুন্তলা পুত্র সম্রাট ভরত কোন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন না।
[লেখক : আইনজীবী]
শঙ্কর প্রসাদ দে
রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
জি-২০ হলো বিশ্ব মোড়লদের ক্লাব। সোজা কথায়, জি-২০ নেতৃত্বের ইশারায় পৃথিবীব্যাপী অর্থনীতি, কূটনীতি, রাজনীতি ও সমর ক্ষমতার প্রয়োগ আজকের বাস্তবতা। গত ৯-১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জোটটির শীর্ষ সম্মেলন। সদস্য দেশ ২০টি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বাংলাদেশসহ ৯টি আমন্ত্রিত দেশ ও ১১টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রপ্রধানদের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এক নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান। এটি সৌজন্যমূলক অনুষ্ঠান হলেও আমন্ত্রণপত্রে দ্রৌপদী মুর্মুকে ইন্ডিয়ার পরিবর্তে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিটি উপমহাদেশের অতীত বর্তমানকে সামনে নিয়ে এসেছে এবং উপমহাদেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যেতে পারে তারও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
ভারতের বর্তমান শাসক দল বিজেপির অভিযোগ হলো- প্রাচীনকালের বা মধ্যযুগের কোন পর্যায়ে ইন্ডিয়া নামের অস্তিত্ব ছিল না। এমনকি দশম শতক থেকে শুরু হওয়া সুলতানাত ও মুঘল আমলেও ইন্ডিয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। মুসলিম শাসকরা হিন্দুস্তান নামেই শাসন চালিয়েছেন।
বলা হয়ে থাকে- ইতালিয়ান নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ সালের আগস্টে ইন্ডিয়া যাতায়াতের সহজ সাগরপথ আবিষ্কারের জন্য রানী ইসাবেলার দেয়া ৩টি জাহাজ নিয়ে নোঙর তুলেছিলেন। ভিন্নমত হলো- তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাতায়াতের নৌপথ আবিষ্কারের জন্য নোঙর তুলেছিলেন। অথচ বাহামা দ্বীপে পৌঁছে দেখলেন এটি ইন্ডিয়া নয় এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজও নয়। এইটিই আজকের আমেরিকা।
ল্যাটিন ভাষা থেকে ইন্ডিয়া শব্দের উৎপত্তি। প্রাচীন গ্রিকরা সিন্ধু নদের অববাহিকার অধিবাসীদের ‘ইন্দাস’ বলতো। ধারণা করা যায় ‘ইন্দাস’ শব্দ থেকে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দের উৎপত্তি। বুঝা যাচ্ছে ইউরোপ হচ্ছে ইন্ডিয়া শব্দের আঁতুড়ঘর। ১৬০০ খৃষ্টাব্দে বেশ কিছু বৃটিশ ব্যবসায়ী ভারতবর্ষে ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’। আসলে কোম্পানিটি নিবন্ধনের সময় বঙ্গোঁপসাগরের উপকূলীয় বন্দর চট্টগ্রাম কলকাতা ও মাদ্রাজকে লক্ষ্য করে মেমোরেন্ডাম দাখিল করে। পুরো ভাতরবর্ষে ব্যবসা করা যাবে এমন কিছু মাথায় থাকলে কোম্পানির নাম হয়তো ‘ইন্ডিয়া কোম্পানি’ রাখা হতো।
যাই হোক, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্ষমতা নিয়ে ফার্সির পরিবর্তে ইংরেজি প্রচলন শুরু করে। এর অবধারিত ফল হলো মুঘলদের ব্যবহৃত হিন্দুস্তান শব্দের পরিবর্তে ইন্ডিয়া শব্দের ব্যবহার। বর্তমান বিজেপি নেতৃত্ব মনে করে ইন্ডিয়া শব্দটি গোটা জাতীয় পরিচয়কে সংকটে ফেলেছে। ভারতবর্ষ ইংরেজ আমল ছাড়া কখনই ইন্ডিয়া ছিল না। সমালোচকরা বলতে চাইছেন ইন্ডিয়া শব্দটি পরিবর্তন করে মোদি সরকার হিন্দুত্ববাদী দর্শনের রাষ্ট্রীয় চরিত্র দিতে চাইছে। এ সমালোচনা ধোপে টিপে না। তেমনটা হলে ইন্ডিয়া শব্দটি বাদ দিয়ে হিন্দুস্তান শব্দটি প্রতিস্থাপনের উদ্যেগ নেয়া হতো।
আসলে বিজেপি সরকার প্রাচীন ইতিহাসকে সামনে আনতে চাইছে। বোম্বাই বাদ দিয়ে মুম্বাই, মাদ্রাজ বাদ দিয়ে চেন্নাই নাম পুনর্বহাল করার মধ্যে ধর্মীয় কোন গন্ধ নেই। আছে শুধু ইতিহাস ঐতিহ্য আর মর্যাদাবোধের পুনরুত্থান। একই কথা ইন্ডিয়া বাদ দিয়ে ভারত শব্দটি বেছে নেয়ার মধ্যে ধর্ম নেই, আছে ইতিহাস, যা এক হাজার বছরের বিদেশী শাসকদের হাতে অপহৃত ও লাঞ্ছিত হয়েছে।
ভারত শব্দ ভারতবর্ষ শব্দটির সংক্ষিপ্ত রূপ। সম্রাট ভরত কোন ধর্মীয় ঋষি বা সন্ন্যাসী ছিলেন না। মহাভারতের বিখ্যাত চরিত্র বনকন্যা শকুন্তলাকে দেখে হরিণ শিকারে ব্যস্ত রাজা দুষ্মন্ত উতলা হলেন। রাজদৃষ্টি বলে কথা। গান্ধর্ব রীতি অর্থাৎ মালা বদলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে শকুন্তলাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলেন এবং যথাসময়ে আশ্রমে জন্ম নেয়া রাজপুত্রের নাম রাখা হলো ভরত। পিতা দুষ্মন্তের রাজ্য অত বড় ছিল না।
ভরত সিংহাসনে বসে সাম্রাজ্যের পরিধি বিস্তৃত করলেন আফগানিস্তান থেকে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত। ভরত বংশের অপর নাম কুরুবংশ। ব্রহ্ম দেশ থেকে তিব্বত পর্যন্ত পাহাড়ি ভূমির মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি। রাজা ভরত নিজেই সাম্রাজ্যের নাম রেখেছিলেন ভারতবর্ষ। অবশ্য পরবর্তী সময়ে আর্য নৃপতিরা ভারতবর্ষের পরিধি ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত করে। এ পর্বে এসে ভারতবর্ষ ও ইন্দোচীন মিলে সাম্রাজ্যের নাম হয় আর্যাবর্ত। এজন্য এখনো থাই রাজপরিবারের পদবি ‘রাম’। মালয়েশিয়ায়, বালিতে, কম্বুডিয়ায় হিন্দু মন্দির দেখলে বুঝা যায়, এক সময় দক্ষিণ এশিয়ায় ছিল কার্যত ভারতীয় শাসন ব্যবস্থা।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের। খ্রিস্টীয় ১ম সহস্রাব্দে খ্রিস্টান, ইহুদি, জরথুষ্ট্রবাদ (অগ্নি উপাসক) ইসলাম এসেছে নিজ নিজ প্রয়োজনে। প্রয়োজনটা ছিল মূলত ব্যবসায়ীক। বহুধা বিভক্ত সামন্ত রাজারা সমর বিদ্যায় পিছিয়ে ছিল বলে পরাজিত হয় মুসলমানদের হাতে। মুসলিম নৃপতিরা ভারতবর্ষ নাম পাল্টিয়ে নাম রাখল হিন্দুস্তান। জিজিয়া করের মতো এই নাম পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন ছিল না।
অষ্টম শতকে শঙ্করার্য বৌদ্ধদের ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত না করলে ইতিহাস অন্যরকম হতো। হিন্দু-বৌদ্ধ প্রতিরোধের মুখে মুসলিম আক্রমণকারীদের পিছু হঠার সম্ভাবনা থাকত। যাই হোক মুসলমানদের হাত থেকে ব্রিটিশ ক্ষমতা নিয়ে ইংরেজি চালু করায় আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সঙ্গে ভারতীদের পরিচয় ঘটে। সমস্যা দেখা দিল ইতিহাস ঐতিহ্যে। হিন্দুদের বেদ, মুসলমানদের কোরআন ও বৌদ্ধদের ত্রিপিটকে জ্ঞান বিজ্ঞানের যেটুকু আভাস ছিল তা উপেক্ষিত হলো।
আমাদের দেশের মতো ভারতেও রাষ্ট্রপতি পদটি নিতান্তই সাংবিধানিক। মন্ত্রিপরিষদ যা সিদ্ধান্ত নেয় রাষ্ট্রপতি তা পাঠ করে থাকেন বা দস্তখত দিয়ে থাকেন। বুঝা যাচ্ছে ভারতীয় মন্ত্রিসভা দেশের নাম ইন্ডিয়া সংশোধন করে ভারত রাখতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে স্বল্প সময়ের জন্য সংসদ অধিবেশনও আহ্বান করা হয়েছে। ধরে নেয়া হচ্ছে এই অধিবেশনে ইন্ডিয়া পরিবর্তিত হবে ভারত নামে। আধুনিক ভারত ফিরে পাবে তার হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। ধর্মীয় অনুভূতি বা চরম পন্থার বালাই এখানে পুরোপুরিই অনুপস্থিত। কারণ শকুন্তলা পুত্র সম্রাট ভরত কোন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন না।
[লেখক : আইনজীবী]