সাজেদুল চৌধুরী রুবেল
এক
বছর দশেক আগে বন্ধু শরীফ ভাইসহ ডিঙ্গেল গিয়েছিলাম। দেখলাম, সমুদ্রতীরে দাঁড়িয়ে দুই আইরিশ ভদ্রলোক বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে। ছোট মাছ। ধরে ধরে ছেড়ে দিচ্ছিল। আমার হিউমার সেন্সকে প্রকাশ করার সুযোগ পেলাম। তাই দুষ্টুমি মাখিয়ে বললাম, ‘তোমরা এগুলো ছেড়ে দিচ্ছো কেনো! আমরা তো এসব খাই।’ বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এ প্রজাতির ছোট মাছ খাওয়া বা ধরা দুটোই আইনবিরোধী। ‘কোনো গার্ড বা পুলিশ তো আর দেখছে না, গাড়ির বুটে করে নিয়ে যাও। ’
উত্তরে বলল, দেখুক বা না দেখুক বেআইনি কাজ আমরা করতে যাব কেন! এ দুই লোককে জোর করে বা ভয়ভীতি দেখিয়ে আইন মানার জন্য বাধ্য করা হয়নি। তাদের নৈতিক শিক্ষাই তাদের আইনের প্রতি বিশ্বস্ত করে তুলেছে। অর্থাৎ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বেআইনি কাজে লিপ্ত হয়নি। এই যে লিপ্ত না হওয়া, এর জন্য যে স্বচ্ছ মন-মানসিকতা ও নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন তাই আমাদের মাঝে চর্চা করতে হবে। একটি সুন্দর, সৎ ও সভ্য সমাজ গঠনকল্পে তা খুবই জরুরি।
দুই
গল্পটা কোথায় পড়েছিলাম ঠিক মনে নেই। তবে গল্পটি মনে আছে। এক শিক্ষক ক্লাসে এসে ব্ল্যাকবোর্ডে একটি রেখা টেনে দেন। রেখাটিকে না মুছে ছোট করার জন্য বলেন সবাইকে। কিন্ত না মুছে রেখাটিকে ছোট করার উপায় কী! কারো মাথায়ই কোনো বুদ্ধি এলো না। ফলে শিক্ষক এ রেখাটির নিচে আরেকটি রেখা টানলেন যা আগেরটির চেয়ে একটু বড়। ব্যাস আগের রেখাটি মোছা ছাড়াই ছোট হয়ে গেল। বস্তুত কাউকে ছোট করতে বা হারাতে হলে তার বিরুদ্ধে সমালোচনা বা কুৎসা রটানোর প্রয়োজন হয় না। তাকে স্পর্শ না করেও তা পারা যায়! নিজেকে বড় করে বা মহৎ হিসেব গড়ে তুলতে পারলে এমনিতেই অন্যজন ছোট হয়ে পড়ে।
তিন
আমি সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলাম একজন সাধারণ কনস্ট্রাকশন কর্মী হিসেবে। ছেলেবেলা থেকেই হোস্টেলে হোস্টেলে সময় কেটেছে। জীবনে কোনোদিন কাজ করার সময় হয়ে ওঠেনি। তাই সিঙ্গাপুরে কনস্ট্রাকশনের মতো জায়গায় কাজ করা ছিল আমার জন্য খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাজে ভুলভ্রান্তি হয়ে যেত। বার্মিজ সুপারভাইজার ধৈর্যচ্যুত হয়ে বিগবসকে কমপ্লেইন করল। আমাকে ‘বাঙ্গালা, বাঙ্গালা’ বলে কাছে ডেকে নিয়ে বস খুব তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভরে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার কঠিন হুমকি দিলেন। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। অনেক কষ্ট সামলে নিয়ে একটু সাহস করে বসকে বললাম, ‘জীবনে কোনোদিন কাজ করিনি। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। মাস্টার্স শেষ করেই তোমার এখানে চলে এলাম। দয়া করে আমাকে একটু সময় দাও। আর ভুলভ্রান্তি হবে না।’
- তুমি মাস্টার্স পাস! আর এখানে এসে লেবারের কাজ করছো! কম্পিউটার জানো? তাহলে তোমাকে অফিসে জব দিয়ে দিতাম। কম্পিউটার জানা ছিল না। নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিলাম। খুব আফসোস হলো। বসের প্রস্তাবটিকে আমার হাত থেকে স্বর্গের চাবি গড়িয়ে যাওয়ার মতো মনে হচ্ছিল। যাই হোক, এর পর থেকে কম্পিউটার শেখার ভূত মাথায় চাপল। বন্ধুবর যায়েদ আহমদের (বর্তমানে সপরিবারে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী) আপ্রাণ প্রচেষ্টায় শিখেও ফেললাম। দুমাসের মাথায় বসকে জানালে তিনি অফিসে যোগদান করতে বলেন। সেখানে আমি চার থেকে সাড়ে বছর চাকরি করি। একপর্যায়ে বসের সঙ্গে আমার নখ আর গোশত সম্পর্ক হয়ে ওঠে। যে কোন কাজে-কর্মে আমাকে ছাড়া ভরসা পেতেন না। বলতে গেলে এডমিন জাতীয় সবাই দায়িত্বই আমার ওপর ছিল। এমনকি যে সুপারভাইজার আমার ওপর অভিযোগ এনছিল তার বেতনটাও আমার সিগনেচারে ড্র হতো। সুতরাং ভুল যে মানুষকে সবসময় ভুল পথে পরিচালিত করে তা নয়, মাঝেমধ্যে ভুল ফুল হয়েও ফোটে। ব্যক্তিজীবনে যেমন তা সত্য তেমনি সাংগঠনিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক জীবনেও তা সমানভাবে প্রযোজ্য।
চার
শেষ গল্পটি বলেই লেখার ইতি টানব। এক বিবাহিত যুবক মানসিক অশান্তিতে ভুগছে। এ অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এক দরবেশ বাবার শরণাপন্ন হয়। তাকে তার অশান্তির কারণ ব্যাখ্যা করে। ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলল, কয়েক বছরের দাম্পত্য জীবন তাদের। তার স্ত্রী তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। তবু সে তার এক সহকর্মীর প্রেমে পড়ে যায়। ওই মেয়েও তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। যুবক স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে সহকর্মীকে বিয়ে করতে চায়। সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি আকস্মিকভাবে তাকে ঘৃণা করতে শুরু করে তবে তার কাজটি করতে সহজ হয়। স্ত্রীর মনে অলৌকিক কেরামতিতে তার ওপর ঘৃণার উদ্ভব ঘটনোর জন্যই সাধক বাবার কাছে যুবকের আগমন। সব শুনে সাধক বললেন, উপরওয়ালার ঈশারায় সবই সম্ভব। তবে তার আগে তোমাকে দুটো কথা বলি। প্রথমত- ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে যদি তোমার স্ত্রীকে তোমার ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা করা হয় তবে সে ভবিষ্যতে আর কোনোদিন তোমাকে ভালোবাসবে না। তার চোখে তুমি হবে পৃথিবীর জঘন্যতম ব্যক্তিত্ব। দ্বিতীয়ত- যে সুন্দরী মেয়ের ভালোবাসায় মজে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছ সেই মেয়ে বিয়ের পর ভবিষ্যতে তোমাকে একইভাবে ভালোবাসবে তার কি নিশ্চয়তা আছে! এমনও তো হতে পারে ওই মেয়ে উল্টো তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কাউকে ভালোবেসে আবারও বিয়ে করছে। বস্তুত ভবিষ্যতে কী হবে, কী ঘটবে তুমি কিছুই জানো না। তবে এতটুক নিশ্চিতভাবে জানো যে তোমার স্ত্রী তোমাকে আগের মতো এখনো অনেক ভালোবাসে। সাধকের কথা শুনে যুবকের চোখ খুলে গেল। আবেগের মোহ কাটিয়ে বিপথগামিতা থেকে ফিরে এলো। ভবিষ্যত যেহেতু জানা নেই তাই বর্তমানকেই প্রাধান্য দিল। মূল কথা- পারিবারিক বন্ধন, এর সম্পর্কোন্নয় ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আবেগকে ঠাঁই না দিয়ে বর্তমানের আলোকে যেমন ভেবেচিন্তে বাস্তব সিদ্ধান্তে পৌঁছা উচিত ঠিক তেমনি সামাজিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও তা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। গল্পে গল্পে, ঘটনায় ঘটনায় ব্যক্তি চিত্রের মধ্য দিয়ে প্রকৃত অর্থে এখানে একটি সুন্দর সমাজের আকুতি প্রকাশ পেয়েছে। এ আকুতিতে সাড়া দিয়ে মানুষ যদি হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, কুৎসা-সমালোচনা তথা সব অসুরতা বাদ দিয়ে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধাবোধ, নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ, উদারতা, মহত্ত্ব, ঐক্য ও বন্ধন, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভৃতি সুকুমার প্রবৃত্তির মাধ্যমে একটি সুন্দর, শ্বাশত, সম্প্রীতি ও সৌহার্দপূর্ণ এবং শীতল সমাজ রচনা করতে সক্ষম হয় তবে তা হবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ।
[লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, লিমরিক, আয়ারল্যান্ড]
সাজেদুল চৌধুরী রুবেল
শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
এক
বছর দশেক আগে বন্ধু শরীফ ভাইসহ ডিঙ্গেল গিয়েছিলাম। দেখলাম, সমুদ্রতীরে দাঁড়িয়ে দুই আইরিশ ভদ্রলোক বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে। ছোট মাছ। ধরে ধরে ছেড়ে দিচ্ছিল। আমার হিউমার সেন্সকে প্রকাশ করার সুযোগ পেলাম। তাই দুষ্টুমি মাখিয়ে বললাম, ‘তোমরা এগুলো ছেড়ে দিচ্ছো কেনো! আমরা তো এসব খাই।’ বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এ প্রজাতির ছোট মাছ খাওয়া বা ধরা দুটোই আইনবিরোধী। ‘কোনো গার্ড বা পুলিশ তো আর দেখছে না, গাড়ির বুটে করে নিয়ে যাও। ’
উত্তরে বলল, দেখুক বা না দেখুক বেআইনি কাজ আমরা করতে যাব কেন! এ দুই লোককে জোর করে বা ভয়ভীতি দেখিয়ে আইন মানার জন্য বাধ্য করা হয়নি। তাদের নৈতিক শিক্ষাই তাদের আইনের প্রতি বিশ্বস্ত করে তুলেছে। অর্থাৎ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বেআইনি কাজে লিপ্ত হয়নি। এই যে লিপ্ত না হওয়া, এর জন্য যে স্বচ্ছ মন-মানসিকতা ও নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন তাই আমাদের মাঝে চর্চা করতে হবে। একটি সুন্দর, সৎ ও সভ্য সমাজ গঠনকল্পে তা খুবই জরুরি।
দুই
গল্পটা কোথায় পড়েছিলাম ঠিক মনে নেই। তবে গল্পটি মনে আছে। এক শিক্ষক ক্লাসে এসে ব্ল্যাকবোর্ডে একটি রেখা টেনে দেন। রেখাটিকে না মুছে ছোট করার জন্য বলেন সবাইকে। কিন্ত না মুছে রেখাটিকে ছোট করার উপায় কী! কারো মাথায়ই কোনো বুদ্ধি এলো না। ফলে শিক্ষক এ রেখাটির নিচে আরেকটি রেখা টানলেন যা আগেরটির চেয়ে একটু বড়। ব্যাস আগের রেখাটি মোছা ছাড়াই ছোট হয়ে গেল। বস্তুত কাউকে ছোট করতে বা হারাতে হলে তার বিরুদ্ধে সমালোচনা বা কুৎসা রটানোর প্রয়োজন হয় না। তাকে স্পর্শ না করেও তা পারা যায়! নিজেকে বড় করে বা মহৎ হিসেব গড়ে তুলতে পারলে এমনিতেই অন্যজন ছোট হয়ে পড়ে।
তিন
আমি সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলাম একজন সাধারণ কনস্ট্রাকশন কর্মী হিসেবে। ছেলেবেলা থেকেই হোস্টেলে হোস্টেলে সময় কেটেছে। জীবনে কোনোদিন কাজ করার সময় হয়ে ওঠেনি। তাই সিঙ্গাপুরে কনস্ট্রাকশনের মতো জায়গায় কাজ করা ছিল আমার জন্য খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাজে ভুলভ্রান্তি হয়ে যেত। বার্মিজ সুপারভাইজার ধৈর্যচ্যুত হয়ে বিগবসকে কমপ্লেইন করল। আমাকে ‘বাঙ্গালা, বাঙ্গালা’ বলে কাছে ডেকে নিয়ে বস খুব তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভরে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার কঠিন হুমকি দিলেন। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। অনেক কষ্ট সামলে নিয়ে একটু সাহস করে বসকে বললাম, ‘জীবনে কোনোদিন কাজ করিনি। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। মাস্টার্স শেষ করেই তোমার এখানে চলে এলাম। দয়া করে আমাকে একটু সময় দাও। আর ভুলভ্রান্তি হবে না।’
- তুমি মাস্টার্স পাস! আর এখানে এসে লেবারের কাজ করছো! কম্পিউটার জানো? তাহলে তোমাকে অফিসে জব দিয়ে দিতাম। কম্পিউটার জানা ছিল না। নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিলাম। খুব আফসোস হলো। বসের প্রস্তাবটিকে আমার হাত থেকে স্বর্গের চাবি গড়িয়ে যাওয়ার মতো মনে হচ্ছিল। যাই হোক, এর পর থেকে কম্পিউটার শেখার ভূত মাথায় চাপল। বন্ধুবর যায়েদ আহমদের (বর্তমানে সপরিবারে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী) আপ্রাণ প্রচেষ্টায় শিখেও ফেললাম। দুমাসের মাথায় বসকে জানালে তিনি অফিসে যোগদান করতে বলেন। সেখানে আমি চার থেকে সাড়ে বছর চাকরি করি। একপর্যায়ে বসের সঙ্গে আমার নখ আর গোশত সম্পর্ক হয়ে ওঠে। যে কোন কাজে-কর্মে আমাকে ছাড়া ভরসা পেতেন না। বলতে গেলে এডমিন জাতীয় সবাই দায়িত্বই আমার ওপর ছিল। এমনকি যে সুপারভাইজার আমার ওপর অভিযোগ এনছিল তার বেতনটাও আমার সিগনেচারে ড্র হতো। সুতরাং ভুল যে মানুষকে সবসময় ভুল পথে পরিচালিত করে তা নয়, মাঝেমধ্যে ভুল ফুল হয়েও ফোটে। ব্যক্তিজীবনে যেমন তা সত্য তেমনি সাংগঠনিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক জীবনেও তা সমানভাবে প্রযোজ্য।
চার
শেষ গল্পটি বলেই লেখার ইতি টানব। এক বিবাহিত যুবক মানসিক অশান্তিতে ভুগছে। এ অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এক দরবেশ বাবার শরণাপন্ন হয়। তাকে তার অশান্তির কারণ ব্যাখ্যা করে। ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলল, কয়েক বছরের দাম্পত্য জীবন তাদের। তার স্ত্রী তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। তবু সে তার এক সহকর্মীর প্রেমে পড়ে যায়। ওই মেয়েও তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। যুবক স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে সহকর্মীকে বিয়ে করতে চায়। সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি আকস্মিকভাবে তাকে ঘৃণা করতে শুরু করে তবে তার কাজটি করতে সহজ হয়। স্ত্রীর মনে অলৌকিক কেরামতিতে তার ওপর ঘৃণার উদ্ভব ঘটনোর জন্যই সাধক বাবার কাছে যুবকের আগমন। সব শুনে সাধক বললেন, উপরওয়ালার ঈশারায় সবই সম্ভব। তবে তার আগে তোমাকে দুটো কথা বলি। প্রথমত- ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে যদি তোমার স্ত্রীকে তোমার ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা করা হয় তবে সে ভবিষ্যতে আর কোনোদিন তোমাকে ভালোবাসবে না। তার চোখে তুমি হবে পৃথিবীর জঘন্যতম ব্যক্তিত্ব। দ্বিতীয়ত- যে সুন্দরী মেয়ের ভালোবাসায় মজে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছ সেই মেয়ে বিয়ের পর ভবিষ্যতে তোমাকে একইভাবে ভালোবাসবে তার কি নিশ্চয়তা আছে! এমনও তো হতে পারে ওই মেয়ে উল্টো তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কাউকে ভালোবেসে আবারও বিয়ে করছে। বস্তুত ভবিষ্যতে কী হবে, কী ঘটবে তুমি কিছুই জানো না। তবে এতটুক নিশ্চিতভাবে জানো যে তোমার স্ত্রী তোমাকে আগের মতো এখনো অনেক ভালোবাসে। সাধকের কথা শুনে যুবকের চোখ খুলে গেল। আবেগের মোহ কাটিয়ে বিপথগামিতা থেকে ফিরে এলো। ভবিষ্যত যেহেতু জানা নেই তাই বর্তমানকেই প্রাধান্য দিল। মূল কথা- পারিবারিক বন্ধন, এর সম্পর্কোন্নয় ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আবেগকে ঠাঁই না দিয়ে বর্তমানের আলোকে যেমন ভেবেচিন্তে বাস্তব সিদ্ধান্তে পৌঁছা উচিত ঠিক তেমনি সামাজিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও তা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। গল্পে গল্পে, ঘটনায় ঘটনায় ব্যক্তি চিত্রের মধ্য দিয়ে প্রকৃত অর্থে এখানে একটি সুন্দর সমাজের আকুতি প্রকাশ পেয়েছে। এ আকুতিতে সাড়া দিয়ে মানুষ যদি হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, কুৎসা-সমালোচনা তথা সব অসুরতা বাদ দিয়ে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধাবোধ, নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ, উদারতা, মহত্ত্ব, ঐক্য ও বন্ধন, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভৃতি সুকুমার প্রবৃত্তির মাধ্যমে একটি সুন্দর, শ্বাশত, সম্প্রীতি ও সৌহার্দপূর্ণ এবং শীতল সমাজ রচনা করতে সক্ষম হয় তবে তা হবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ।
[লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, লিমরিক, আয়ারল্যান্ড]