প্রীতি রাহা
পথশিশু। পথই তাদের সব। তাদের জীবিকা নির্বাহের দায় শুধুই নিজের। থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই তাদের।
দেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লক্ষাধিক হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউনিসেফের বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছর ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ‘সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঢাকাসহ দেশের নয়টি বিভাগের বিভিন্ন স্থানে যেখানে পথশিশুদের চলাফেরা বেশি সেখানে এই জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে। ৫-৭ বছর বয়সী ৭ হাজার ২০০ শিশুর কাছে প্রত্যক্ষভাবে গিয়ে এই জরিপটি সম্পন্ন করা হয়েছে। এই জরিপের তথ্যানুযায়ী, এই পথশিশুদের অধিকাংশই ছেলে যাদের সংখ্যা শতাংশের হিসেবে ৮২। তাদের মধ্যে ১৩ শতাংশ শিশু তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। আবার তাদের মধ্যে এতিম বা তাদের বাবা-মা বেঁচে আছে কিনা তা তাদের জানা নেই এমন সংখ্যা ৬ শতাংশ।
মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মাঝে থাকে- অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বাসস্থান। দুঃখের ব্যাপার যে, আমাদের দেশের এত উন্নতি ঘটা সত্ত্বেও পথশিশুদের সংখ্যা দিন দিন কমছে না; বরং বাড়ছেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুসারে, প্রতি ১০ জন পথশিশুর মধ্যে ৯ জন বিভিন্ন কাজে যুক্ত আছে। তাদের মধ্যে ভিক্ষাবৃত্তি ও ভিক্ষুকের সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করছে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ পথশিশু। ময়লা কুড়িয়ে জীবনযাপন করছে ২০ দশমিক ৯ শতাংশ পথশিশু। ঝাড়ু দেয়া ও পরিচ্ছন্নতার কাজে যুক্ত আছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশু। পথশিশুদের ১৬ শতাংশ যুক্ত আছে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন সেক্টর ও নির্মাণকাজে। অপরদিকে, অপরাধ ও যৌনকর্মী হিসেবে যুক্ত রয়েছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ পথশিশু।
এই পথশিশুদের মধ্যে প্রতি তিনজনের প্রায় একজন (৩০ শতাংশের বেশি) জীবনের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। তারা খোলা জায়গায় ঘুমিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে নিরাপত্তার বড় অভাব। পথশিশুদের প্রায় অর্ধেক মাটিতে ঘুমায়। একটি বালিশও তাদের থাকে না। তাদের বালিশের জায়গায় হয়তো থাকে একটি পাটের ছালা (ব্যাগ), শক্ত কোন কাগজ, প্লাস্টিকের টুকরা কিংবা ভাগ্য ভালো হলে একটি পাতলা কম্বল।
পথশিশুদের প্রতি সহিংসতার প্রতি তিনটি ঘটনার একটি (৩০ দশমিক ৪ শতাংশ) রাতে তাদের ঘুমের সময় ঘটে থাকে। প্রায় ৭ শতাংশ শিশু সম্পূর্ণ একা একা ঘুমায়। অপরদিকে, ১৭ শতাংশ শিশু একসঙ্গে কয়েকজন মিলে ঘুমায়। এতে করে তারা মনে মনে সুরক্ষা ও স্বস্তির খোঁজ করে।
পথশিশুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয় পথচারীদের দ্বারা। জরিপে উল্লেখ আছে, পথশিশুদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই পথচারীদের দ্বারা নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হয়েছে। আমাদের দেশে মেয়েরা এমনিতেই তেমন নিরাপদ নয়; সেখানে পথশিশু মেয়ে হলে তো কথাই নেই। যেহেতু আমাদের দেশে পথশিশুদের মাঝে মেয়ে পথশিশু বিদ্যমান; তাই তারাও নিরাপদ নয়। মেয়ে পথশিশুরাও মাঝে মাঝে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
বিবিএস-এর তথ্যানুসারে, মেয়ে পথশিশুদের গড় বয়স সাড়ে ১০ বছর এবং ছেলে পথশিশুদের গড় বয়স ১২ বছর ৭ মাস। অপরদিকে, ৫-৯ বছর বয়সী ছেলে-মেয়ে উভয় পথশিশুর সংখ্যা ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। ১০-১৪ বছর বয়সী ছেলে-মেয়ে উভয় পথশিশুর সংখ্যা ৫৪ শতাংশ এবং ১৫-১৭ বছর বয়সী ছেলে-মেয়ে উভয় পথশিশুর সংখ্যা ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
অভিভাবকহীন সম্পূর্ণ স্বাধীন জীবনের কারণে পথশিশুরা চলে যাচ্ছে বিপথে। তারা মাদকের বাহক হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের সহায়তাকারীও হয় অনেক সময়। জরিপে দেখা যায়, প্রায় চারভাগের একভাগ পথশিশু ধুমপান করে এবং ১২ শতাংশ পথশিশু মাদকে আসক্ত। উল্লেখ্য, ৬৪ শতাংশ পথশিশু তাদের পরিবারের কাছে ফিরিতেও ইচ্ছুক নয়।
আমাদের দেশে পথশিশুরা সর্বক্ষেত্রেই বঞ্চিত হচ্ছে। তারা সারাদিনে চারদিকে ঘুরে যা আয় করে তাতে তাদের তিনবেলার খাবার নিশ্চিত করা কখনোই সম্ভব নয়। তাদের শরীরের পুষ্টির কথা তোলা একাহ্নে রসিকতা ছাড়া আর কিছু নয়। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শতভাগ এগিয়ে আছে পথশিশুরা। যেখানে তাদের তিনবেলা আহারের নিশ্চয়তা নেই, সেখানে তাদের স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার সম্ভাবনা অলীক স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়। জরিপে দেখা হেছে, ১০-১৭ বছর বয়সী মেয়ে পথশিশুদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ মেয়ে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বা ঋতুস্রাব সম্পর্কে সচেতন। ব্যাপক আকারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে আমাদের দেশের মেয়ে পথশিশুরা।
করোনাকালীন সময়ে এই পথশিশুরাই ছিল সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে। তাদের মধ্যে ছিল না কোন সচেতনতাবোধ। এক্ষেত্রে পথশিশুদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ যখন তাদের দুমুঠো খাওয়ার চিন্তায় জীবন হাঁসফাঁস করেছে সেখানে কিসের করোনা আর কিসের মরণের চিন্তা।
চলতি বছরে গোটা দেশে শুরু হয়েছে ডেঙ্গু দুর্ভোগ। এই ডেঙ্গুতেও ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির মাঝে আছে তারা। ঘুমানোর সময় মাথায় যাদের বালিশ জোটে না, তারা মশারি পাবে কোথায়? রাতে থাকার জন্য যাদের একটি দরজাসহ ঘর নেই; একটি বিছানা নেই শোবার জন্য সেখানে তাদের ডেঙ্গুর ভয় পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে এভাবেই পড়ে থাকে তারা। কখনো ফুটপাতে, কখনোবা উদ্যানের বেঞ্চে, কখনো খোলা আকাশের নিচে ব্যস্ততাহীন রাস্তায়। এই পথশিশুদের কেউ কেউ নেশা করে ক্ষুধা মেটায়; কখনোবা খেতে পায় একটু খানিক। অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই, খোঁজ করারও কেউ নেই। পথশিশুদের মধ্যে কারো কারো এই পৃথিবীতে কেউ নেই, আবার কারো সব থেকেও নেই।
ছেলে পথশিশুদের চেয়ে মেয়ে পথশিশুদের জীবন অনেক কঠিন। তাদের রয়েছে পদে পদে নিরাপত্তাহীনতার ফাঁদ। একটি পত্রিকার প্রতিবেদন পড়ে জানা যায়, বারবার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক সময় মেয়ে পথশিশুরা পতিতাবৃত্তি পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করে ফেলছে।
পথশিশুদের জীবন এভাবে অরক্ষিত আর অনিরাপদ করে রাখা যায় না। রাষ্ট্রকে এ বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। পথশিশুদের জন্য একটি সুষ্ঠু সমাধান সবারই কাম্য। কারণ এই রাষ্ট্রে সব মানুষের ভালোভাবে বেঁচে থাকার এবং নিরাপত্তার অধিকার আছে।
[লেখক: প্রাবন্ধিক]
প্রীতি রাহা
রোববার, ০১ অক্টোবর ২০২৩
পথশিশু। পথই তাদের সব। তাদের জীবিকা নির্বাহের দায় শুধুই নিজের। থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই তাদের।
দেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লক্ষাধিক হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউনিসেফের বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছর ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ‘সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঢাকাসহ দেশের নয়টি বিভাগের বিভিন্ন স্থানে যেখানে পথশিশুদের চলাফেরা বেশি সেখানে এই জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে। ৫-৭ বছর বয়সী ৭ হাজার ২০০ শিশুর কাছে প্রত্যক্ষভাবে গিয়ে এই জরিপটি সম্পন্ন করা হয়েছে। এই জরিপের তথ্যানুযায়ী, এই পথশিশুদের অধিকাংশই ছেলে যাদের সংখ্যা শতাংশের হিসেবে ৮২। তাদের মধ্যে ১৩ শতাংশ শিশু তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। আবার তাদের মধ্যে এতিম বা তাদের বাবা-মা বেঁচে আছে কিনা তা তাদের জানা নেই এমন সংখ্যা ৬ শতাংশ।
মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মাঝে থাকে- অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বাসস্থান। দুঃখের ব্যাপার যে, আমাদের দেশের এত উন্নতি ঘটা সত্ত্বেও পথশিশুদের সংখ্যা দিন দিন কমছে না; বরং বাড়ছেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুসারে, প্রতি ১০ জন পথশিশুর মধ্যে ৯ জন বিভিন্ন কাজে যুক্ত আছে। তাদের মধ্যে ভিক্ষাবৃত্তি ও ভিক্ষুকের সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করছে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ পথশিশু। ময়লা কুড়িয়ে জীবনযাপন করছে ২০ দশমিক ৯ শতাংশ পথশিশু। ঝাড়ু দেয়া ও পরিচ্ছন্নতার কাজে যুক্ত আছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশু। পথশিশুদের ১৬ শতাংশ যুক্ত আছে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন সেক্টর ও নির্মাণকাজে। অপরদিকে, অপরাধ ও যৌনকর্মী হিসেবে যুক্ত রয়েছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ পথশিশু।
এই পথশিশুদের মধ্যে প্রতি তিনজনের প্রায় একজন (৩০ শতাংশের বেশি) জীবনের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। তারা খোলা জায়গায় ঘুমিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে নিরাপত্তার বড় অভাব। পথশিশুদের প্রায় অর্ধেক মাটিতে ঘুমায়। একটি বালিশও তাদের থাকে না। তাদের বালিশের জায়গায় হয়তো থাকে একটি পাটের ছালা (ব্যাগ), শক্ত কোন কাগজ, প্লাস্টিকের টুকরা কিংবা ভাগ্য ভালো হলে একটি পাতলা কম্বল।
পথশিশুদের প্রতি সহিংসতার প্রতি তিনটি ঘটনার একটি (৩০ দশমিক ৪ শতাংশ) রাতে তাদের ঘুমের সময় ঘটে থাকে। প্রায় ৭ শতাংশ শিশু সম্পূর্ণ একা একা ঘুমায়। অপরদিকে, ১৭ শতাংশ শিশু একসঙ্গে কয়েকজন মিলে ঘুমায়। এতে করে তারা মনে মনে সুরক্ষা ও স্বস্তির খোঁজ করে।
পথশিশুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয় পথচারীদের দ্বারা। জরিপে উল্লেখ আছে, পথশিশুদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই পথচারীদের দ্বারা নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হয়েছে। আমাদের দেশে মেয়েরা এমনিতেই তেমন নিরাপদ নয়; সেখানে পথশিশু মেয়ে হলে তো কথাই নেই। যেহেতু আমাদের দেশে পথশিশুদের মাঝে মেয়ে পথশিশু বিদ্যমান; তাই তারাও নিরাপদ নয়। মেয়ে পথশিশুরাও মাঝে মাঝে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
বিবিএস-এর তথ্যানুসারে, মেয়ে পথশিশুদের গড় বয়স সাড়ে ১০ বছর এবং ছেলে পথশিশুদের গড় বয়স ১২ বছর ৭ মাস। অপরদিকে, ৫-৯ বছর বয়সী ছেলে-মেয়ে উভয় পথশিশুর সংখ্যা ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। ১০-১৪ বছর বয়সী ছেলে-মেয়ে উভয় পথশিশুর সংখ্যা ৫৪ শতাংশ এবং ১৫-১৭ বছর বয়সী ছেলে-মেয়ে উভয় পথশিশুর সংখ্যা ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
অভিভাবকহীন সম্পূর্ণ স্বাধীন জীবনের কারণে পথশিশুরা চলে যাচ্ছে বিপথে। তারা মাদকের বাহক হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের সহায়তাকারীও হয় অনেক সময়। জরিপে দেখা যায়, প্রায় চারভাগের একভাগ পথশিশু ধুমপান করে এবং ১২ শতাংশ পথশিশু মাদকে আসক্ত। উল্লেখ্য, ৬৪ শতাংশ পথশিশু তাদের পরিবারের কাছে ফিরিতেও ইচ্ছুক নয়।
আমাদের দেশে পথশিশুরা সর্বক্ষেত্রেই বঞ্চিত হচ্ছে। তারা সারাদিনে চারদিকে ঘুরে যা আয় করে তাতে তাদের তিনবেলার খাবার নিশ্চিত করা কখনোই সম্ভব নয়। তাদের শরীরের পুষ্টির কথা তোলা একাহ্নে রসিকতা ছাড়া আর কিছু নয়। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শতভাগ এগিয়ে আছে পথশিশুরা। যেখানে তাদের তিনবেলা আহারের নিশ্চয়তা নেই, সেখানে তাদের স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার সম্ভাবনা অলীক স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়। জরিপে দেখা হেছে, ১০-১৭ বছর বয়সী মেয়ে পথশিশুদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ মেয়ে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বা ঋতুস্রাব সম্পর্কে সচেতন। ব্যাপক আকারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে আমাদের দেশের মেয়ে পথশিশুরা।
করোনাকালীন সময়ে এই পথশিশুরাই ছিল সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে। তাদের মধ্যে ছিল না কোন সচেতনতাবোধ। এক্ষেত্রে পথশিশুদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ যখন তাদের দুমুঠো খাওয়ার চিন্তায় জীবন হাঁসফাঁস করেছে সেখানে কিসের করোনা আর কিসের মরণের চিন্তা।
চলতি বছরে গোটা দেশে শুরু হয়েছে ডেঙ্গু দুর্ভোগ। এই ডেঙ্গুতেও ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির মাঝে আছে তারা। ঘুমানোর সময় মাথায় যাদের বালিশ জোটে না, তারা মশারি পাবে কোথায়? রাতে থাকার জন্য যাদের একটি দরজাসহ ঘর নেই; একটি বিছানা নেই শোবার জন্য সেখানে তাদের ডেঙ্গুর ভয় পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে এভাবেই পড়ে থাকে তারা। কখনো ফুটপাতে, কখনোবা উদ্যানের বেঞ্চে, কখনো খোলা আকাশের নিচে ব্যস্ততাহীন রাস্তায়। এই পথশিশুদের কেউ কেউ নেশা করে ক্ষুধা মেটায়; কখনোবা খেতে পায় একটু খানিক। অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই, খোঁজ করারও কেউ নেই। পথশিশুদের মধ্যে কারো কারো এই পৃথিবীতে কেউ নেই, আবার কারো সব থেকেও নেই।
ছেলে পথশিশুদের চেয়ে মেয়ে পথশিশুদের জীবন অনেক কঠিন। তাদের রয়েছে পদে পদে নিরাপত্তাহীনতার ফাঁদ। একটি পত্রিকার প্রতিবেদন পড়ে জানা যায়, বারবার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক সময় মেয়ে পথশিশুরা পতিতাবৃত্তি পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করে ফেলছে।
পথশিশুদের জীবন এভাবে অরক্ষিত আর অনিরাপদ করে রাখা যায় না। রাষ্ট্রকে এ বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। পথশিশুদের জন্য একটি সুষ্ঠু সমাধান সবারই কাম্য। কারণ এই রাষ্ট্রে সব মানুষের ভালোভাবে বেঁচে থাকার এবং নিরাপত্তার অধিকার আছে।
[লেখক: প্রাবন্ধিক]