তাজুল ইসলাম
জলবায়ু সংকট এ প্রজন্মের পরিচিত সংকটগুলোর মধ্যে একটি। ইতিমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী শিশুদের অধিকারের ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলেছে। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট প্রতিটি মানুষের কাছে একটি স্পষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যে সমস্যাগুলি তাদের প্রভাবিত করে এবং তারা পরিস্থিতিগত সুন্দর সুরাহা খুঁজে পাচ্ছে না। এটি ক্রান্তীয় সমস্যা হওয়ার কারণে, শুধুমাত্র একটি সম্প্রদায় বা কিছু মানুষ এই সমস্যার সমাধান করতে পারে না বা পারবে না।
‘গ্লোবাল সেন্টার অল অ্যাডাপটেশন’ কয়েক বছর আগে নেদারল্যান্ডসে এর সদর দফতরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সংগঠনটি ইতিমধ্যে একটি প্রধান প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুললোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে? এমন অনেক সংগঠন এখন কাজ করে যাচ্ছে পৃথিবীব্যাপী।
শিশুর নিরাপত্তা দৃষ্টিতে দেখলে, জলবায়ু সংকট অভূতপূর্ব অনুপাতে শিশুর অধিকার সংকট তৈরি করছে। যদিও শিশুদের অধিকার এবং সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে না, তা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক দশকগুলিতে শিশুদের জীবনযাত্রার মান এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষার কিঞ্চিৎ উন্নতি সাধন হয়েছে। অন্যদিকে, শিশুরা এমন একটি বিশ্বে বেড়ে উঠছে, যেখানে তারা ক্রমবর্ধমান সংখ্যক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে এবং বিপদ, ঝুঁকি নিয়ে বেড়ে উঠছে। এই বিপদ কেবল তাদের ভবিষ্যত জীবনের জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং তাদের অগ্রগতিকে হুমকিস্বরুপ হয়ে বাঁধা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের শিশু ও তরুণদের জন্য সবচেয়ে বড? হুমকিস্বরূপ। বিজ্ঞান আমাদের যা বলেছে এবং আমরা সারা বিশ্বের যে চিত্র গুলো দেখি, তার ভিত্তিতে এটা বলা যায় যে- জলবায়ু পরিবর্তন বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিসাধনের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর অধিকার সংকট তৈরি করছে। সাধারণত পানি সংকট, স্বাস্থ্য সংকট,শিক্ষা সংকট, সুরক্ষা সংকট, যা শিশুর অধিকার সংকট তৈরি করছে। এই সংকট গুলোই শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন করছে, যেমনটি জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে বর্ণিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, এই অধিকার সংকট কেবলমাত্র শুরু হয়েছে। সামনে এই সংকটের সমাধান হয়তো দূর বহুদূর। আইপিসিসির মতে, প্রতিকূল প্রভাব এড?াতে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন অর্ধেক করতে হবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ দেশই এই লক্ষ্য পূরণের পথে নেই। আমরা কি সত্যিকারের রূপান্তরমূলক কর্মের মাধ্যমে শিশুদের একটি বাসযোগ্য গ্রহ দিতে পারি না? জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিশুরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। ‘শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকির পরিচয়’ রিপোর্ট অনুসারে, ৮২০ মিলিয়ন শিশু (বিশ্বব্যাপী শিশুদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি) বর্তমানে তাপ তরঙ্গের উচ্চ সংস্পর্শে রয়েছে। বৈশ্বিক গড? তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং আবহাওয়ার ধরণ আরও অনিয়মিত হওয়ার কারণে এটি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত- বন্যা, খরা এবং বৈরী আবহাওয়া শিশুদের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে
শিশুরা যে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তার কথা যদি বলি, শুরুতে বলতে হবে পানি সংকটের কথা। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত- বন্যা, খরা এবং বৈরী আবহাওয়া শিশুদের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। বিশ্বে আনুমানিক ৪১৫ মিলিয়নেরও বেশি শিশু পানি সংকট বা পানি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস করছে। যেখানে খরা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস এবং পানির চাপ সমন্ধনীয় ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া সারা বিশ্বে স্বাস্থ্য সংকট জলবায়ু পরিবর্তনের আরেকটি দৃশ্যমান সংকট। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে প্রায় ২৬ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। বায়ু দূষণ ও পরিবেশগত বিষাক্ত পদার্থগুলো বিশ্বব্যাপী শিশুদের সবচেয়ে বড? ঘাতক এবং জলবায়ু পরিবর্তনে শিশুরা যে অগণিত স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হয় তা আরও বাড?িয়ে তোলে? একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বহন করা রোগের বৈশ্বিক বোঝার প্রায় ৯০ শতাংশই বহন করে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুরা। তৃতীয়ত খাদ্য নিরাপত্তা। একটি উন্নত মানের জীবনযাত্রার সুযোগ সবার থাকা প্রয়োজন। আধুনিক বিশ্বে, আমরা সত্যিই হতবাক কারণ আমরা এটি প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। আমরা জানি যে, খাদ্য নিরাপত্তা সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে জড?িত এবং এটি পুষ্টির সঙ্গে প্রাসঙ্গিকভাবে সম্পর্কিত। মূলত ফসলের ক্ষতির সংস্পর্শে আসার ফলে শিশুরা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। যার কারণে অনেক শিশুই অপুষ্টিতে, অনাহারে মরছে।
মৌলিক অধিকার একটি দেশ থেকে অন্য দেশে ভিন্ন। কিন্তু মানুষের জন্য কোথাও বিপরীত নীতি নেই। সব নীতি প্রণয়ন হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। শিশুদের অধিকার নীতিগুলো ও কল্যাণ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। বিশ্বের সর্বাধিক দেশ তাদের নীতি বা বিশেষ নীতির মাধ্যমে শিশু অধিকার নিশ্চিত করে। শিক্ষা, পরিবেশ, অর্থনীতি, মানবাধিকার, সরকারি নীতি, ইত্যাদির মতো প্রতিটি সেক্টর জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। পরিবেশের অবনতি শিশুদের স্কুলে যাওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাবের মাধ্যমে।
এ বিশ্বের প্রতিটি শিশু বাসযোগ্য গ্রহের দাবিদার। সম্প্রতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বেশিরভাগ মানবসৃষ্ট সমস্যার কারণে পৃথিবী নামক এই গ্রহটি মানুষের জন্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড?ছে। ১৯০১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে, বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৯ সেমি বেড়েছে যা গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১.৭ মিমি। কয়েক দশক ধরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার বাড?ছে; ২০০৬ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর ৩.৬ মিমি বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শিশুরা তাদের ঘরবাড়ি হারায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাসমান পানির স্তর বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ, এই সমস্যাটি শেষ পর্যন্ত শিশু অধিকার খাতে ঘনিষ্ঠভাবে প্রভাব ফেলে। বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকির মুখে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে এমন দেশগুলোর প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে ১৫ নম্বরে রাখা হয়েছে। তাই এটা বাংলাদেশের জন্য বেশ উদ্বেগজনক। এই খাতে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দরকার যাতে এই সমস্যাগুলো থেকে বাঁচতে তা ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করে। মূলত রাষ্ট্রের এখন শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি কাজ হয়ে পড়েছে।
[লেখক : সদস্য, সোশ্যাল রিসার্চ গ্রুপ,
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়]
তাজুল ইসলাম
সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩
জলবায়ু সংকট এ প্রজন্মের পরিচিত সংকটগুলোর মধ্যে একটি। ইতিমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী শিশুদের অধিকারের ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলেছে। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট প্রতিটি মানুষের কাছে একটি স্পষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যে সমস্যাগুলি তাদের প্রভাবিত করে এবং তারা পরিস্থিতিগত সুন্দর সুরাহা খুঁজে পাচ্ছে না। এটি ক্রান্তীয় সমস্যা হওয়ার কারণে, শুধুমাত্র একটি সম্প্রদায় বা কিছু মানুষ এই সমস্যার সমাধান করতে পারে না বা পারবে না।
‘গ্লোবাল সেন্টার অল অ্যাডাপটেশন’ কয়েক বছর আগে নেদারল্যান্ডসে এর সদর দফতরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সংগঠনটি ইতিমধ্যে একটি প্রধান প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুললোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে? এমন অনেক সংগঠন এখন কাজ করে যাচ্ছে পৃথিবীব্যাপী।
শিশুর নিরাপত্তা দৃষ্টিতে দেখলে, জলবায়ু সংকট অভূতপূর্ব অনুপাতে শিশুর অধিকার সংকট তৈরি করছে। যদিও শিশুদের অধিকার এবং সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে না, তা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক দশকগুলিতে শিশুদের জীবনযাত্রার মান এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষার কিঞ্চিৎ উন্নতি সাধন হয়েছে। অন্যদিকে, শিশুরা এমন একটি বিশ্বে বেড়ে উঠছে, যেখানে তারা ক্রমবর্ধমান সংখ্যক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে এবং বিপদ, ঝুঁকি নিয়ে বেড়ে উঠছে। এই বিপদ কেবল তাদের ভবিষ্যত জীবনের জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং তাদের অগ্রগতিকে হুমকিস্বরুপ হয়ে বাঁধা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের শিশু ও তরুণদের জন্য সবচেয়ে বড? হুমকিস্বরূপ। বিজ্ঞান আমাদের যা বলেছে এবং আমরা সারা বিশ্বের যে চিত্র গুলো দেখি, তার ভিত্তিতে এটা বলা যায় যে- জলবায়ু পরিবর্তন বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিসাধনের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর অধিকার সংকট তৈরি করছে। সাধারণত পানি সংকট, স্বাস্থ্য সংকট,শিক্ষা সংকট, সুরক্ষা সংকট, যা শিশুর অধিকার সংকট তৈরি করছে। এই সংকট গুলোই শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন করছে, যেমনটি জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে বর্ণিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, এই অধিকার সংকট কেবলমাত্র শুরু হয়েছে। সামনে এই সংকটের সমাধান হয়তো দূর বহুদূর। আইপিসিসির মতে, প্রতিকূল প্রভাব এড?াতে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন অর্ধেক করতে হবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ দেশই এই লক্ষ্য পূরণের পথে নেই। আমরা কি সত্যিকারের রূপান্তরমূলক কর্মের মাধ্যমে শিশুদের একটি বাসযোগ্য গ্রহ দিতে পারি না? জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিশুরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। ‘শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকির পরিচয়’ রিপোর্ট অনুসারে, ৮২০ মিলিয়ন শিশু (বিশ্বব্যাপী শিশুদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি) বর্তমানে তাপ তরঙ্গের উচ্চ সংস্পর্শে রয়েছে। বৈশ্বিক গড? তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং আবহাওয়ার ধরণ আরও অনিয়মিত হওয়ার কারণে এটি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত- বন্যা, খরা এবং বৈরী আবহাওয়া শিশুদের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে
শিশুরা যে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তার কথা যদি বলি, শুরুতে বলতে হবে পানি সংকটের কথা। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত- বন্যা, খরা এবং বৈরী আবহাওয়া শিশুদের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। বিশ্বে আনুমানিক ৪১৫ মিলিয়নেরও বেশি শিশু পানি সংকট বা পানি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস করছে। যেখানে খরা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস এবং পানির চাপ সমন্ধনীয় ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া সারা বিশ্বে স্বাস্থ্য সংকট জলবায়ু পরিবর্তনের আরেকটি দৃশ্যমান সংকট। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে প্রায় ২৬ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। বায়ু দূষণ ও পরিবেশগত বিষাক্ত পদার্থগুলো বিশ্বব্যাপী শিশুদের সবচেয়ে বড? ঘাতক এবং জলবায়ু পরিবর্তনে শিশুরা যে অগণিত স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হয় তা আরও বাড?িয়ে তোলে? একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বহন করা রোগের বৈশ্বিক বোঝার প্রায় ৯০ শতাংশই বহন করে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুরা। তৃতীয়ত খাদ্য নিরাপত্তা। একটি উন্নত মানের জীবনযাত্রার সুযোগ সবার থাকা প্রয়োজন। আধুনিক বিশ্বে, আমরা সত্যিই হতবাক কারণ আমরা এটি প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। আমরা জানি যে, খাদ্য নিরাপত্তা সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে জড?িত এবং এটি পুষ্টির সঙ্গে প্রাসঙ্গিকভাবে সম্পর্কিত। মূলত ফসলের ক্ষতির সংস্পর্শে আসার ফলে শিশুরা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। যার কারণে অনেক শিশুই অপুষ্টিতে, অনাহারে মরছে।
মৌলিক অধিকার একটি দেশ থেকে অন্য দেশে ভিন্ন। কিন্তু মানুষের জন্য কোথাও বিপরীত নীতি নেই। সব নীতি প্রণয়ন হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। শিশুদের অধিকার নীতিগুলো ও কল্যাণ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। বিশ্বের সর্বাধিক দেশ তাদের নীতি বা বিশেষ নীতির মাধ্যমে শিশু অধিকার নিশ্চিত করে। শিক্ষা, পরিবেশ, অর্থনীতি, মানবাধিকার, সরকারি নীতি, ইত্যাদির মতো প্রতিটি সেক্টর জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। পরিবেশের অবনতি শিশুদের স্কুলে যাওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাবের মাধ্যমে।
এ বিশ্বের প্রতিটি শিশু বাসযোগ্য গ্রহের দাবিদার। সম্প্রতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বেশিরভাগ মানবসৃষ্ট সমস্যার কারণে পৃথিবী নামক এই গ্রহটি মানুষের জন্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড?ছে। ১৯০১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে, বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৯ সেমি বেড়েছে যা গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১.৭ মিমি। কয়েক দশক ধরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার বাড?ছে; ২০০৬ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর ৩.৬ মিমি বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শিশুরা তাদের ঘরবাড়ি হারায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাসমান পানির স্তর বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ, এই সমস্যাটি শেষ পর্যন্ত শিশু অধিকার খাতে ঘনিষ্ঠভাবে প্রভাব ফেলে। বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকির মুখে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে এমন দেশগুলোর প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে ১৫ নম্বরে রাখা হয়েছে। তাই এটা বাংলাদেশের জন্য বেশ উদ্বেগজনক। এই খাতে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দরকার যাতে এই সমস্যাগুলো থেকে বাঁচতে তা ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করে। মূলত রাষ্ট্রের এখন শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি কাজ হয়ে পড়েছে।
[লেখক : সদস্য, সোশ্যাল রিসার্চ গ্রুপ,
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়]