alt

উপ-সম্পাদকীয়

স্মরণ

অভিভাবক আহমদুল কবির

মনজুরুল আহসান বুলবুল

: বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩
image

আহমদুল কবির; জন্ম : ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৩; মৃত্যু : ২৪ নভেম্বর, ২০০৩

একজন আহমদুল কবির। তার ক্ষুরধার ব্যক্তিত্ব, তীক্ষ্ম মেধা, তার দেশপ্রেম, তার সাহস এবং কঠিন সময়েও তার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এসব সবারই জানা। আমরা যারা তার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলাম তাদের কাছে তিনি ছিলেন এসব ছাপিয়ে অনেক কাছের মানুষ। আমি সেই পেশাদার সাংবাদিকদের একজন- যার মূল পেশাজীবনের শুরুতে পেয়েছিলাম আহমদুল কবিরের অভিভাবকত্ব। আমি বিশেষভাবে ‘অভিভাবক’ শব্দটির ওপর জোর দিচ্ছি। একজন তরুণ যত মেধাবীই হন না কেন পেশাজীবনের শুরুতে যদি সঠিক অভিভাবক না পান, যদি যোগ্য পেশাদার নেতৃত্ব না পান তাহলে তিনি পেশাদার সাংবাদিক জীবনের শক্ত ভিত গড়ে তুলতে পারেন না। আমি সৌভাগ্যবান এইক্ষেত্রে, অভিভাবক হিসেবে আহমদুল কবিরকে আর পেশার নেতৃত্বে বজলুর রহমানকে পাওয়া। দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ করি- আমি তখন ‘সংবাদ’ ছেড়ে ‘যুগান্তর’ হয়ে ‘একুশে টেলিভিশনে’ থিতু হওয়ার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে আকস্মিক বজ্রপাত। বিএনপি-জামায়াতের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে একুশে টেলিভিশন বন্ধ।

আমি সেই পেশাদার সাংবাদিকদের একজন- যার মূল পেশাজীবনের শুরুতে পেয়েছিলাম আহমদুল কবিরের অভিভাবকত্ব। আমি বিশেষভাবে ‘অভিভাবক’ শব্দটির ওপর জোর দিচ্ছি। একজন তরুণ যত মেধাবীই হন না কেন পেশাজীবনের শুরুতে যদি সঠিক অভিভাবক না পান, যদি যোগ্য পেশাদার নেতৃত্ব না পান তাহলে তিনি পেশাদার সাংবাদিক জীবনের শক্ত ভিত গড়ে তুলতে পারেন না

আমি আমার পুরো টিম নিয়ে বেকার। সবাই ভালো পেশাদার সাংবাদিক, বেতন-ভাতাও ভালো। নানা সমীকরণ চলছে। হঠাৎ একুশের ফোনে জনাব আহমদুল কবির, সেই জলদগম্ভীর কণ্ঠ ‘মানযূর, আজ সন্ধ্যায় বাসায় চলে এসো’। কী জন্য তলব কিছুই জানি না। হাজির হলাম তার ইন্দিরা রোডের বাসায়। তার প্রথম উদ্বেগ, আমি এখন কী করব? আমি যতই বলি আলোচনা চলছে, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, ততই তিনি মাথা নাড়েন। তার শেষ কথা, অপেক্ষা কর, কিছুই না হলে আমার সঙ্গে কথা বলো। শেষ পর্যন্ত কিছু হলো না। আমি তাকে বোঝালাম উঁচু বেতনের পুরো টিম সংবাদ নিতে পারবে না। তাই হলো, আমার পুরো টিম যোগ দিল এটিএন বাংলায়। কিন্তু তিনি আমাকে ছাড়লেন না। আমি আবার যোগ দিলাম সংবাদ-এ। বিপদের সময় যিনি বটবৃক্ষের মতো ছায়া দেন তিনিই তো প্রকৃত অভিভাবক। আমার প্রতি তার আস্থা ছিল অপরিসীম। সংবাদ-এ আমার প্রতিটি কাজে তার কঠোর পরামর্শ আজও সাংবাদিকতায় আমার সিদ্ধান্ত নেয়ার মূল শক্তি। দ্বিতীয় ঘটনা বলি- সংবাদ সেসময় সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান। সহসম্পাদক হিসেবে আমি যোগ দেই ওয়েজবোর্ডের তৃতীয় গ্রেডে। কর্মদক্ষতার কারণেই বাড়তি ইনক্রিমেন্ট হয়। দ্বিতীয় গ্রেড পর্যন্ত তেমন সমস্যা হয় না। জটিলতা হলো যখন আমি গ্রেড-১ পেলাম। হঠাৎ আমার পরিচিত, ঘনিষ্ঠ শুভানুধ্যায়ীদের চেহারা বদলে গেল। পরিস্থিতির চাপেই আমি গেলাম কবির সাহেবের রুমে। তিনি নিশ্চয়ই সব জানতেন। চোখ তুলে তাকালেন, বললেন, কী চাই?

সব শুনলেন, আবার প্রশ্ন : তুমি কী চাও।

আমি বললাম : আমার প্রমোশন নিয়ে যখন এত জটিলতা সেটা নিতে চাই না। তিনি আমার হাত থেকে আমার আবেদনটি নিয়ে না পড়েই ছিঁড়ে ফেলতে ফেলতে বললেন, তোমাকে প্রমোশন দিয়েছি আমি, তোমাকে প্রটেকশন দেয়ার দায়িত্ব আমার। যাও তুমি তোমার কাজ করো। আমার প্রমোশন বাতিল হয়নি। আহা এমন একজন অভিভাবক কোথায় পাব? কিন্তু এই অভিভাবকের জন্য কিছুই করতে পারিনি। তার জন্মশতবর্ষ ও তেমন করে পালন করা গেল না। পল্টন মোড় থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত সড়কটা ‘আহমেদুল কবির সড়ক’ করার প্রস্তাবটি সিটি করপোরেশনে পড়ে আছে কতদিন! আমাদের অক্ষমতা ক্ষমা করবেন। প্রিয় অভিভাবক, আপনার প্রতি বিনীত শ্রদ্ধা।

[লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক]

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

সাইবার নিরাপত্তা : অদৃশ্য যুদ্ধের সামনে আমাদের প্রস্তুতি

ছবি

বাহান্নর গর্ভে জন্ম নেয়া এক ঝড়ের পাখি

প্রবাসী শ্রমিক : অর্থের যন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের সহযোদ্ধা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ

ভোগবাদের বিরুদ্ধে পোপ ফ্রান্সিসের জলবায়ু বার্তা

রম্যগদ্য : হাসি নিষেধ...

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : দাবি ও সমাধানের পথ

সিরিয়ার পতন কিভাবে আমেরিকার স্বার্থকে হুমকিতে ফেলছে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার সন্ধানে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

স্মরণ

অভিভাবক আহমদুল কবির

মনজুরুল আহসান বুলবুল

image

আহমদুল কবির; জন্ম : ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৩; মৃত্যু : ২৪ নভেম্বর, ২০০৩

বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩

একজন আহমদুল কবির। তার ক্ষুরধার ব্যক্তিত্ব, তীক্ষ্ম মেধা, তার দেশপ্রেম, তার সাহস এবং কঠিন সময়েও তার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এসব সবারই জানা। আমরা যারা তার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলাম তাদের কাছে তিনি ছিলেন এসব ছাপিয়ে অনেক কাছের মানুষ। আমি সেই পেশাদার সাংবাদিকদের একজন- যার মূল পেশাজীবনের শুরুতে পেয়েছিলাম আহমদুল কবিরের অভিভাবকত্ব। আমি বিশেষভাবে ‘অভিভাবক’ শব্দটির ওপর জোর দিচ্ছি। একজন তরুণ যত মেধাবীই হন না কেন পেশাজীবনের শুরুতে যদি সঠিক অভিভাবক না পান, যদি যোগ্য পেশাদার নেতৃত্ব না পান তাহলে তিনি পেশাদার সাংবাদিক জীবনের শক্ত ভিত গড়ে তুলতে পারেন না। আমি সৌভাগ্যবান এইক্ষেত্রে, অভিভাবক হিসেবে আহমদুল কবিরকে আর পেশার নেতৃত্বে বজলুর রহমানকে পাওয়া। দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ করি- আমি তখন ‘সংবাদ’ ছেড়ে ‘যুগান্তর’ হয়ে ‘একুশে টেলিভিশনে’ থিতু হওয়ার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে আকস্মিক বজ্রপাত। বিএনপি-জামায়াতের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে একুশে টেলিভিশন বন্ধ।

আমি সেই পেশাদার সাংবাদিকদের একজন- যার মূল পেশাজীবনের শুরুতে পেয়েছিলাম আহমদুল কবিরের অভিভাবকত্ব। আমি বিশেষভাবে ‘অভিভাবক’ শব্দটির ওপর জোর দিচ্ছি। একজন তরুণ যত মেধাবীই হন না কেন পেশাজীবনের শুরুতে যদি সঠিক অভিভাবক না পান, যদি যোগ্য পেশাদার নেতৃত্ব না পান তাহলে তিনি পেশাদার সাংবাদিক জীবনের শক্ত ভিত গড়ে তুলতে পারেন না

আমি আমার পুরো টিম নিয়ে বেকার। সবাই ভালো পেশাদার সাংবাদিক, বেতন-ভাতাও ভালো। নানা সমীকরণ চলছে। হঠাৎ একুশের ফোনে জনাব আহমদুল কবির, সেই জলদগম্ভীর কণ্ঠ ‘মানযূর, আজ সন্ধ্যায় বাসায় চলে এসো’। কী জন্য তলব কিছুই জানি না। হাজির হলাম তার ইন্দিরা রোডের বাসায়। তার প্রথম উদ্বেগ, আমি এখন কী করব? আমি যতই বলি আলোচনা চলছে, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, ততই তিনি মাথা নাড়েন। তার শেষ কথা, অপেক্ষা কর, কিছুই না হলে আমার সঙ্গে কথা বলো। শেষ পর্যন্ত কিছু হলো না। আমি তাকে বোঝালাম উঁচু বেতনের পুরো টিম সংবাদ নিতে পারবে না। তাই হলো, আমার পুরো টিম যোগ দিল এটিএন বাংলায়। কিন্তু তিনি আমাকে ছাড়লেন না। আমি আবার যোগ দিলাম সংবাদ-এ। বিপদের সময় যিনি বটবৃক্ষের মতো ছায়া দেন তিনিই তো প্রকৃত অভিভাবক। আমার প্রতি তার আস্থা ছিল অপরিসীম। সংবাদ-এ আমার প্রতিটি কাজে তার কঠোর পরামর্শ আজও সাংবাদিকতায় আমার সিদ্ধান্ত নেয়ার মূল শক্তি। দ্বিতীয় ঘটনা বলি- সংবাদ সেসময় সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান। সহসম্পাদক হিসেবে আমি যোগ দেই ওয়েজবোর্ডের তৃতীয় গ্রেডে। কর্মদক্ষতার কারণেই বাড়তি ইনক্রিমেন্ট হয়। দ্বিতীয় গ্রেড পর্যন্ত তেমন সমস্যা হয় না। জটিলতা হলো যখন আমি গ্রেড-১ পেলাম। হঠাৎ আমার পরিচিত, ঘনিষ্ঠ শুভানুধ্যায়ীদের চেহারা বদলে গেল। পরিস্থিতির চাপেই আমি গেলাম কবির সাহেবের রুমে। তিনি নিশ্চয়ই সব জানতেন। চোখ তুলে তাকালেন, বললেন, কী চাই?

সব শুনলেন, আবার প্রশ্ন : তুমি কী চাও।

আমি বললাম : আমার প্রমোশন নিয়ে যখন এত জটিলতা সেটা নিতে চাই না। তিনি আমার হাত থেকে আমার আবেদনটি নিয়ে না পড়েই ছিঁড়ে ফেলতে ফেলতে বললেন, তোমাকে প্রমোশন দিয়েছি আমি, তোমাকে প্রটেকশন দেয়ার দায়িত্ব আমার। যাও তুমি তোমার কাজ করো। আমার প্রমোশন বাতিল হয়নি। আহা এমন একজন অভিভাবক কোথায় পাব? কিন্তু এই অভিভাবকের জন্য কিছুই করতে পারিনি। তার জন্মশতবর্ষ ও তেমন করে পালন করা গেল না। পল্টন মোড় থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত সড়কটা ‘আহমেদুল কবির সড়ক’ করার প্রস্তাবটি সিটি করপোরেশনে পড়ে আছে কতদিন! আমাদের অক্ষমতা ক্ষমা করবেন। প্রিয় অভিভাবক, আপনার প্রতি বিনীত শ্রদ্ধা।

[লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক]

back to top