alt

উপ-সম্পাদকীয়

গুরু রবিদাস: মানবতাবাদী সাধক

বাবুল রবিদাস

: শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৩

আজ থেকে কমপক্ষে সাড়ে ছয়শ বছর আগের কথা। তখন দেশে চলছে মুসলমান নবাব-বাদশাহদের শাসন। হিন্দুদের মধ্যে তখন ধর্মীয় কুসংস্কারে তথা অস্পৃশ্যতা, বর্ণভেদ ও জাতিভেদ প্রবল হয়ে উঠছে। ফলে নিম্নর্ণের প্রান্তিক মানুষ বাধ্য হয়ে দলে-দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।

এ সময় হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে মানবতাবাদী সাধকদের আবির্ভাব হয়। এদের বলা হত ভক্তিবাদী বা সুফিবাদী সাধক। তাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমানে কোন ভেদাভেদ ছিল না। উভয় ধর্মের মানুষ তাদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করত। তারা জাতিভেদে ও ছোঁয়া-ছুত মানতেন না। মানুষকে তারা জাতি-ধর্ম সম্প্রদায় দিয়ে বিচার করতেন না। তারা বলতেন সব মানুষ একই ঈশ্বর বা আল্লাহর সন্তান। তাই তারা ভাই ভাই। কেউ ছোট বা বড় নয়। জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব মানুষকে তারা শিষ্য করে বুকে তুলে নিতেন। পুরুত্ব বা মোল্লাদের তারা মানবতাবিরোধী বলে বর্জন করতে বলতেন। তারা তাদের নীতি ও উপদেশ সম্পর্কে অনেক গান, পদ ও দোঁহা রচনা করে গেছেন। সেসব সম্পর্কে জানতে হলে আরও বিভিন্ন প্রকার বই পড়তে ও জানতে হবে।

গুরু রামানন্দ ছিলেন মানবতাবাদী আন্দোলনের প্রবক্তা। তার শিষ্যদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিসম্পন্ন ছিলেন কবীর ও গুরু রবিদাস। গুরু রবিদাস আনুমানিক ১৩৭৭ সালের মাঘী পূর্ণিমায় বেনারস থেকে পশ্চিমে তিন-চার কিলোমিটারের মধ্যে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডে অবস্থিত ম-ুয়া-ডিহিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার কাছেই ছিল ভক্ত-সাধক কবীরের জন্মস্থান লহরতারা গ্রাম।

রোববারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে তার নাম ‘রবিদাস’ রাখা হয়। তার পিতার নাম মানদাস; মাতার নাম করমাদেবী; স্ত্রীর নাম সোনা এবং পুত্রের নাম বিজয় দাস।

গুরু রবিদাস ‘মুচি’ পরিবারে জন্মেছিলেন। তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় মুচিরা ছিল সমাজের একেবারে নীচুতলায়। তাই তাকে কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় না। কাজেই কোন গুরুর কাছে থেকে তিনি শিক্ষালাভের সুযোগ পাননি। কবীরের মতো রবিদাসও নিরক্ষর ছিলেন। কিন্তু তিনি নিজের চেষ্টা ও বিভিন্ন পন্ডিত ব্যক্তির কাছে শুনে শুনে বেদ, উপনিষদ, গীতা, ভাগবত, পুরাণ প্রভৃতি শাস্ত্রগ্রন্থে অসীম পান্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। তিনি এক মৌলবির কাছ থেকে ফারসি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন। তিনি ফারসি ভাষাতেও অনেক পদ রচনা করেছেন।

গুরু রবিদাস সহজসরল ভাষায় মানবজীবনকে সরল ও সুন্দর করার উদ্দেশ্যে উপদেশ দিতেন। তিনি তার পৈতৃক পেশা চামড়ার তথা জুতা তৈরি ও মেরামতের কাজ করেই খুশি ছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই দরিদ্র। ধনী হওয়ার বা বেশি অর্থ রোজগারের কোন আগ্রহ তার ছিল না। তার জীবনে সবচেয়ে বড় কথা হল, ‘কর্মই পরম ধর্ম।’ এ কথা যেমন তিনি মুখে বলতেন, তেমনি কাজেও তা দেখাতেন। কঠোর দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেও তিনি সাধুসন্তদের সেবা থেকে বিরত থাকেননি।

গুরু রবিদাসের মহান ব্যক্তিত্ব, মানবতাবাদী উদার বিচার-ধারা এবং ভক্তি-সাধনার দ্বারা তৎকালীন জনসাধারণই নয়; কবীর, নানক প্রভৃতি বিখ্যাত সন্তগণও যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছিলেন। এসব সাধকগণও ‘গুরু রবিদাসের’ অনেক গুণগান করেছেন। তার খ্যাতি দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। সারা ভারতবর্ষের লাখ লাখ লোক তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল। তার মধ্যে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোক ছিল।

১৫২৮ সালে ১৫১ বছর বয়সে ‘গুরু রবিদাস’ চিতোরে দেহ রক্ষা করেন। কারো কারো মতে তিনি দেহ রক্ষা করেন কাশীতে। এ কথা সঠিক বলে মনে হয় না; কারণ মীরাবাঈ-এর অনুরোধে গুরু রবিদাস শেষ-জীবনে চিতোরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। চিতোরের রাণী ঝালী এবং মীরাবাঈ উভয়েই গুরু রবিদাসের শিষ্যা ছিলেন।

গুরু রবিদাস নিজেও বহু পদ ও দোঁহা রচনা করে গেছেন। তার পদ ও দোঁহাসমূহের মধ্য দিয়া তার বাণী ভক্তজনের হৃদয়ে সাকার হয়ে রয়েছে। ‘গুরু গ্রন্থসাহেব’ তার অনেক বাণী লিপিবদ্ধ আছে।

[লেখক: আইনজীবী]

আকস্মিক বন্যা প্রতিরোধ ও প্রস্তুতির কৌশল

পতিতাবৃত্তি কি অপরাধ?

বন্যা-পরবর্তী কৃষকের সুরক্ষা করণীয়

নদী সংস্কার : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

নিজের চরকায় তেল দেবার নাম দেশপ্রেম

রম্যগদ্য : ডাক্তারি যখন আইসিইউতে

ডায়াবেটিস ও মুখের স্বাস্থ্য

বাঙালির ইলিশচর্চা

এসডিজি অর্জনে চ্যালেঞ্জ হতে পারে কুষ্ঠ রোগ

প্রসঙ্গ : পরিসংখ্যানের তথ্য বিকৃতি

বোরো ধান বিষয়ে কিছু সতর্কতা এবং সার ব্যবস্থাপনা

বন্যার জন্য ভারত কতটুকু দায়ী

গ্রাফিতিতে আদিবাসীদের বঞ্চনার চিত্র

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

পুলিশের সংস্কার হোক জনগণের কল্যাণে

জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের মনস্তত্ত্ব

উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে হবে

বন্যার বিভিন্ন ঝুঁকি ও করণীয়

প্রশ্নে জর্জরিত মানুষ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবির্ভাব

রম্যগদ্য : এ-পাস, না ও-পাস?

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি, উত্তরণের উপায়

গৃহকর্মী নির্যাতনের অবসান হোক

মাঙ্কিপক্স : সতর্কতা ও সচেতনতা

সবার আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে

শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে

বাদী কিংবা বিবাদীর মৃত্যুতে আইনি ফলাফল কী?

নদ-নদীর সংজ্ঞার্থ ও সংখ্যা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

রাষ্ট্র সংস্কার ও পরিবেশ ন্যায়বিচার

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য কি দূর হবে

আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তহীন কাজ

নিষ্ঠার সাথে নিজের কাজটুকু করাই দেশপ্রেম

দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে

ছবি

ইসমাইল হানিয়ের করুণ মৃত্যু

ক্যাপিটল : মার্কিনিদের গণতন্ত্রের প্রতীক

হাওর উন্নয়নে চাই সমন্বিত উদ্যোগ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

গুরু রবিদাস: মানবতাবাদী সাধক

বাবুল রবিদাস

শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৩

আজ থেকে কমপক্ষে সাড়ে ছয়শ বছর আগের কথা। তখন দেশে চলছে মুসলমান নবাব-বাদশাহদের শাসন। হিন্দুদের মধ্যে তখন ধর্মীয় কুসংস্কারে তথা অস্পৃশ্যতা, বর্ণভেদ ও জাতিভেদ প্রবল হয়ে উঠছে। ফলে নিম্নর্ণের প্রান্তিক মানুষ বাধ্য হয়ে দলে-দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।

এ সময় হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে মানবতাবাদী সাধকদের আবির্ভাব হয়। এদের বলা হত ভক্তিবাদী বা সুফিবাদী সাধক। তাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমানে কোন ভেদাভেদ ছিল না। উভয় ধর্মের মানুষ তাদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করত। তারা জাতিভেদে ও ছোঁয়া-ছুত মানতেন না। মানুষকে তারা জাতি-ধর্ম সম্প্রদায় দিয়ে বিচার করতেন না। তারা বলতেন সব মানুষ একই ঈশ্বর বা আল্লাহর সন্তান। তাই তারা ভাই ভাই। কেউ ছোট বা বড় নয়। জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব মানুষকে তারা শিষ্য করে বুকে তুলে নিতেন। পুরুত্ব বা মোল্লাদের তারা মানবতাবিরোধী বলে বর্জন করতে বলতেন। তারা তাদের নীতি ও উপদেশ সম্পর্কে অনেক গান, পদ ও দোঁহা রচনা করে গেছেন। সেসব সম্পর্কে জানতে হলে আরও বিভিন্ন প্রকার বই পড়তে ও জানতে হবে।

গুরু রামানন্দ ছিলেন মানবতাবাদী আন্দোলনের প্রবক্তা। তার শিষ্যদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিসম্পন্ন ছিলেন কবীর ও গুরু রবিদাস। গুরু রবিদাস আনুমানিক ১৩৭৭ সালের মাঘী পূর্ণিমায় বেনারস থেকে পশ্চিমে তিন-চার কিলোমিটারের মধ্যে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডে অবস্থিত ম-ুয়া-ডিহিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার কাছেই ছিল ভক্ত-সাধক কবীরের জন্মস্থান লহরতারা গ্রাম।

রোববারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে তার নাম ‘রবিদাস’ রাখা হয়। তার পিতার নাম মানদাস; মাতার নাম করমাদেবী; স্ত্রীর নাম সোনা এবং পুত্রের নাম বিজয় দাস।

গুরু রবিদাস ‘মুচি’ পরিবারে জন্মেছিলেন। তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় মুচিরা ছিল সমাজের একেবারে নীচুতলায়। তাই তাকে কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় না। কাজেই কোন গুরুর কাছে থেকে তিনি শিক্ষালাভের সুযোগ পাননি। কবীরের মতো রবিদাসও নিরক্ষর ছিলেন। কিন্তু তিনি নিজের চেষ্টা ও বিভিন্ন পন্ডিত ব্যক্তির কাছে শুনে শুনে বেদ, উপনিষদ, গীতা, ভাগবত, পুরাণ প্রভৃতি শাস্ত্রগ্রন্থে অসীম পান্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। তিনি এক মৌলবির কাছ থেকে ফারসি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন। তিনি ফারসি ভাষাতেও অনেক পদ রচনা করেছেন।

গুরু রবিদাস সহজসরল ভাষায় মানবজীবনকে সরল ও সুন্দর করার উদ্দেশ্যে উপদেশ দিতেন। তিনি তার পৈতৃক পেশা চামড়ার তথা জুতা তৈরি ও মেরামতের কাজ করেই খুশি ছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই দরিদ্র। ধনী হওয়ার বা বেশি অর্থ রোজগারের কোন আগ্রহ তার ছিল না। তার জীবনে সবচেয়ে বড় কথা হল, ‘কর্মই পরম ধর্ম।’ এ কথা যেমন তিনি মুখে বলতেন, তেমনি কাজেও তা দেখাতেন। কঠোর দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেও তিনি সাধুসন্তদের সেবা থেকে বিরত থাকেননি।

গুরু রবিদাসের মহান ব্যক্তিত্ব, মানবতাবাদী উদার বিচার-ধারা এবং ভক্তি-সাধনার দ্বারা তৎকালীন জনসাধারণই নয়; কবীর, নানক প্রভৃতি বিখ্যাত সন্তগণও যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছিলেন। এসব সাধকগণও ‘গুরু রবিদাসের’ অনেক গুণগান করেছেন। তার খ্যাতি দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। সারা ভারতবর্ষের লাখ লাখ লোক তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল। তার মধ্যে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোক ছিল।

১৫২৮ সালে ১৫১ বছর বয়সে ‘গুরু রবিদাস’ চিতোরে দেহ রক্ষা করেন। কারো কারো মতে তিনি দেহ রক্ষা করেন কাশীতে। এ কথা সঠিক বলে মনে হয় না; কারণ মীরাবাঈ-এর অনুরোধে গুরু রবিদাস শেষ-জীবনে চিতোরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। চিতোরের রাণী ঝালী এবং মীরাবাঈ উভয়েই গুরু রবিদাসের শিষ্যা ছিলেন।

গুরু রবিদাস নিজেও বহু পদ ও দোঁহা রচনা করে গেছেন। তার পদ ও দোঁহাসমূহের মধ্য দিয়া তার বাণী ভক্তজনের হৃদয়ে সাকার হয়ে রয়েছে। ‘গুরু গ্রন্থসাহেব’ তার অনেক বাণী লিপিবদ্ধ আছে।

[লেখক: আইনজীবী]

back to top